জাতি নির্বাচনের মাঠে, সনদ বাস্তবায়নের দাবি কেন রাজপথে
Published: 11th, November 2025 GMT
সরকার সাত দিনের সময় দিয়েছে—আমরা এ রকম কোনো প্রস্তাব পাই নাই যে আমাদের এ রকম–এ রকম করতে হবে। এগুলো সব পত্রিকান্তরে প্রকাশিত খবর। আনুষ্ঠানিকভাবে আমরা কোনো প্রস্তাব পাইনি।
আমরা বলে রেখেছি, যদি যেকোনো ইস্যুতে প্রধান উপদেষ্টা আলোচনা করতে চান, আহ্বান করেন, আমরা যাব। এখন সনদ বাস্তবায়নের দাবি কেন রাজপথে যাবে? জাতির সঙ্গে সরকার এবং ঐকমত্য কমিশন কেন প্রতারণা করল, সেই জবাব তাদের দিতে হবে।
জাতি নির্বাচনের মাঠে নেমে গেছে। প্রার্থীরা মার্কা নিয়ে দলের পক্ষে প্রচারণায় নেমে গেছেন, জাতি এখন আর এগুলোর মধ্যে নাই। এখন নির্বাচন কমিশন তফসিল ঘোষণা করবে যথাসময়ে। সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে, এ অবস্থায় আছি।
জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে প্রণীত হয়েছে, সেই সনদ আমরা প্রতিপালনে, বাস্তবায়নে, প্রতিশ্রুতিবদ্ধ, অঙ্গীকারবদ্ধ—এই অবস্থায় আছি।
জাতীয় ঐকমত্য কমিশন জুলাই সনদ বাস্তবায়নের প্রক্রিয়া বর্ণনা করে যেই সুপারিশমালা প্রদান করেছে সরকারের কাছে, সেই সুপারিশের স্বাক্ষরকারীদের একজন প্রধান উপদেষ্টাও (অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস) বটে; কারণ তিনি জাতীয় ঐকমত্য কমিশনেরও সভাপতি। এখানে স্বার্থের দ্বন্দ্ব হয়েছে—যিনি বাস্তবায়ন করবেন, তিনি সুপারিশও করলেন।
এ প্রশ্নটা আমরা উত্থাপন করতাম না, যদি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ঐকমত্য কমিশনের আলোচনা শেষে যেভাবে জুলাই জাতীয় সনদ রচিত হয়েছে, প্রণীত হয়েছে এবং পরে ঐতিহাসিক অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে স্বাক্ষরিত হয়েছে, সেই সনদে যদি কোনো ব্যত্যয় না করতেন। হুবহু সেই সনদ বাস্তবায়নের জন্য যদি প্রস্তাব দিতেন, তাহলে আমরা এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন উত্থাপন করতাম না।
কিন্তু প্রদত্ত সুপারিশে দেখা গেছে, ৪৮টি প্রস্তাব দিয়েছে তফসিলভুক্ত করে এবং একটি আদেশ জারি করা হবে, সেই আদেশের তফসিলে এই ৪৮টা বিষয়ে প্রস্তাব করা হচ্ছে এগুলো সংবিধান সংশোধনী-সংক্রান্ত গণভোটের জন্য। কিন্তু এই ৪৮টা দফার বিপরীতে রাজনৈতিক দলসমূহের যে মতামত এবং ঐকমত্য, নোট অব ডিসেন্ট (ভিন্নমত)—এগুলো কোনো কিছুরই উল্লেখ নাই। আমাদের মূলকথা হলো, কমিশনে আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যে ঐকমত্য সৃষ্টি হয়েছিল, তার মাধ্যমেই জুলাই সনদ রচিত হয়েছে। এটা প্রধান উপদেষ্টার সব সময়ের বক্তব্য এবং জাতির উদ্দেশ্যে তিনি এই বক্তব্যই প্রদান করেছেন যে রাজনৈতিক দলগুলো যেভাবে ঐকমত্যে পৌঁছাবে, সেগুলোই একটি সনদে অন্তর্ভুক্ত করে, সেটা বাস্তবায়ন করবে পরবর্তী নির্বাচিত জাতীয় সংসদ। আমরা সেই অবস্থানে ছিলাম, আছি।
হঠাৎ করে এটার আইনি ভিত্তি কী হবে? বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া কী হবে—এটা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপিত হলে, যেসব রাজনৈতিক দল প্রশ্ন উত্থাপন করেছিল সবার উদ্দেশ্যে বলেছিলাম—ঠিক আছে বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আলাপ-আলোচনা হতে পারে। সেই আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে সিদ্ধান্ত হলো এটার বিষয়ে একটি প্রজ্ঞাপন হবে, গেজেট নোটিফিকেশন হবে, দলগুলো যেভাবে নোট অব ডিসেন্ট দিয়েছে, সেগুলো যদি জনগণের ম্যান্ডেটপ্রাপ্ত হয়, তাহলে সেই বিষয়গুলো তারা সেভাবেই বাস্তবায়ন করবে। আর যেসব বিষয়ে সবাই ঐকমত্য হয়েছে, সেগুলো অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে।
এখানে আইনি ভিত্তির বিষয়ে আমরাই প্রস্তাব করেছিলাম যে এই সনদের পক্ষে জনগণ আছে কি নাই, সে সম্মতি নেওয়ার। কারণ, সব রাজনৈতিক দল মিলেও পুরো জাতিকে প্রতিনিধিত্ব করে না। কারণ, সব মানুষ রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকে না। জনগণ যেহেতু ভোট প্রদানের মধ্য দিয়ে সম্মতি দিতে পারে, এটা সংসদ নির্বাচন হোক, গণভোট হোক—সেটা (সনদ) আমরা জনগণের কাছে নিয়ে যাই।
সনদের পক্ষে যদি জনসম্মতি পাওয়া যায়, তাহলে সেটা সার্বভৌম ক্ষমতা বলে একটা সম্মতি হবে এবং পরবর্তী জাতীয় সংসদে নির্বাচিত সদস্যরা নৈতিকভাবে সেটা প্রতিপালনে বাধ্য থাকবেন। সে হিসেবে একই দিনে জাতীয় নির্বাচন ও গণভোট করাটাই যৌক্তিক, শ্রেয় এবং একই ব্যয়ের মধ্য দিয়ে, একই লোকবলের মধ্য দিয়ে সব আয়োজন একই দিনে করা যাবে। এখানে যৌক্তিকভাবে ধারণা করা যায় যে সবাই সংস্কারের পক্ষে। সুতরাং এর ফলাফল হবে একই, সেটা (জাতীয় নির্বাচনের) আগে হোক বা পরে হোক। তা ছাড়া আগে গণভোট আয়োজনের মতো অবস্থা, সময় বর্তমানে নাই। তাই একই দিনে দুটো নির্বাচন হলে সেটা যৌক্তিক, গ্রহণযোগ্য এবং সহজসাধ্য।
এখন এর বিপরীতে কেউ যদি বলে যে আমরা এটা (একই দিনে গণভোট-জাতীয় নির্বাচন) দিলাম, বিনিময়ে ওটা (উচ্চকক্ষ) দাও। সে ওইটা দেওয়ার তো কোনো বিষয় নাই। ইটস ক্লোজ অ্যান্ড ফাইনাল। এখন বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া নিয়ে আমরা মনে করি, এটা বাস্তবায়ন হবে জুলাই জাতীয় সনদ যেভাবে প্রণীত হয়েছে, রচিত হয়েছে, স্বাক্ষরিত হয়েছে—সেভাবে।
কিন্তু ঐকমত্য কমিশন এবং সরকার এখন সেটাতে বিকৃতি সাধন করেছে। কিছু কিছু বিষয় বাদ দিয়েছে। কিছু কিছু বিষয়ে অতিরিক্ত ঢুকিয়েছে। সে জন্য আমরা বলেছি, এটা প্রতারণার শামিল। সরকার কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রস্তাবের পক্ষে কথা বলছে। এখন বলছে, আমরা নিজেরা যেন এটা সমাধান করি। সমস্যা তো আমরা শুরু করিনি। সমস্যা শুরু করেছে ঐকমত্য কমিশন এবং সরকার নিজেই। যেটার এখতিয়ার তাদের নাই।
* সালাহউদ্দিন আহমদ, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রস ত ব একই দ ন প রক র ন কর ছ সনদ র গণভ ট ন করব দলগ ল ই সনদ সরক র অবস থ
এছাড়াও পড়ুন:
কথায় কথায় রাস্তায় যাবেন, বৃহত্তর দল যদি নামে সংঘর্ষ হবে: আমীর খসরু
বাংলাদেশের মানুষ সাংঘর্ষিক রাজনীতি দেখতে চায় না, স্থিতিশীলতা দেখতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী।
বিএনপির এই নেতা বলেন, প্রতিবাদের অধিকার সবার আছে তবে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধা দেখাতে হবে। তিনি আরও বলেন, ‘কথায় কথায় আপনি রাস্তায় যাবেন। এখন অন্য দল যদি আবার তার প্রতিবাদে আবার রাস্তায় যায় তাহলে কি হবে সংঘর্ষ হবে না? বৃহত্তর দল বাংলাদেশে যদি রাস্তায় নামে এগুলোর প্রতিবাদে, আমাদের সংঘর্ষ হবে। এইজন্য আমরা কি শেখ হাসিনা বিদায় করেছি?’
আজ শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ট্রেস কনসালটেন্সি নামে এক সংস্থার উদ্যোগে আয়োজিত প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।
রাজনৈতিক দলগুলো ‘অবসেসড’ হয়ে গেছে বলেন আমীর খসরু। কিছু কিছু রাজনীতিবিদদের মধ্যে এ ধরনের মনমানসিকতা ডেভেলপ করে গেছে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
আমীর খসরু আরও বলেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোকে বিশ্বাস করতে হবে যে যতটুকু ঐকমত্য হয়েছে তার বাইরে গিয়ে আবার নতুন ইস্যু সৃষ্টি করলে কিন্তু ঐকমত্যের শ্রদ্ধা দেখানো হচ্ছে না। বাস্তবায়নের ক্ষেত্রেও ঐকমত্য হতে হবে।’
প্রযুক্তিনির্ভর নির্বাচনী ইশতেহার প্রণয়নে রাজনৈতিক দলগুলোর ভূমিকা নিয়ে আলোচনায় বক্তব্য দেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম। রাজধানীর একটি হোটেলে আজ শনিবার।