শেরপুরে হিমাগারে জায়গা না থাকায় বিপাকে পড়েছেন আলুচাষিরা। চার-পাঁচ দিন ধরে ট্রাকে আলু এনে হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পেরে ফিরে যাচ্ছেন তারা। এতে গচ্চা যাচ্ছে গাড়ি ভাড়া ও অন্যান্য খরচের টাকা।

শেরপুরের বিভিন্ন বাজারে মাত্র ৪০০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে আলু। হিমাগারে সংরক্ষণ করতে না পেরে কম দামে আলু বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন চাষিরা। এতে উৎপাদন খরচ না ওঠায় নিঃস্ব 
হওয়ার পথে অনেকে। একটু বেশি দামে বিক্রির আশায় হিমাগারে আলু রাখতে এসেও বিপাকে পড়েছেন কৃষক।
শেরপুর জেলায় মাত্র তিনটি হিমাগার রয়েছে। এর মধ্যে সরকারি দুটি ও ব্যক্তিমালিকানাধীন একটি। শেরপুর শেরীব্রিজ এলাকার সরকারি হিমাগার ও নকলা পাঠাকাটা এলাকার হিমাগারে মূলত বীজ আলু সংরক্ষণ করা হয়। এ দুটি হিমাগার আলুতে ভর্তি হয়ে গেছে। সেখানে ধারণ ক্ষমতার চেয়ে বেশি আলু নিচ্ছেন না কর্তৃপক্ষ। ফলে শত শত কৃষক জেলা শহরের বিসিক শিল্প নগরীর তাজ কোল্ড স্টোরেজে ভিড় করছেন। এই হিমাগারে আলুর ধারণের ক্ষমতা মাত্র ১০ হাজার টন। কিন্তু ইতোমধ্যে সেখানে সাড়ে আট হাজার টন আলু নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ফলে দেড় হাজার টন আলু রাখার 
জন্য শত শত আলুর গাড়ি গত চার-পাঁচ দিন ধরে অপেক্ষা করছে।

হিমাগার কর্তৃপক্ষের ভাষ্য– বর্তমানে বাইরে প্রায় দুই থেকে আড়াই হাজার টন আলু হিমাগারে ঢোকানোর জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু এত আলু নিতে পারবেন না তারা।
কৃষি বিভাগ ও বিএডিসির তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে শেরপুরে ৫ হাজার ২১২ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছিল। কিন্তু আবাদ হয়েছে ৫ হাজার ৩১৭ হেক্টর জমিতে। ৯৩ হাজার ৮১৬ টন আলু উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও এবার ফলন হয়েছে ৯৫ হাজার ৭০৬ টন। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ১ হাজার ৮৯০ টন বেশি। এদিকে জেলার বাইরে জামালপুরের বকশীগঞ্জ ও দেওয়ানগঞ্জ এলাকার কৃষকরাও বিসিকের তাজ হিমাগারে আলু সংরক্ষণ করেন। এ ছাড়া নেত্রকোনার কয়েকটি উপজেলা থেকেও আলু রাখা হয় তাজ হিমাগারে। ফলে এবার হিমাগার কর্তৃপক্ষ আলু সংরক্ষণে হিমশিম খাচ্ছেন। 
সরেজমিন দেখা গেছে, তাজ হিমাগারটি বিসিক শিল্প নগরীতে। এটি শহরের জেলখানা সড়কে। এ সড়কে যাতায়াত করেন শ্রীবরদী, বকশীগঞ্জ, দেওয়ানগঞ্জ, রাজীবপুর ও রৌমারী এলাকার লোকজন। শত শত হ্যান্ডট্রলি ও ট্রাক এ সড়কে দাঁড়িয়ে আছে।
কথা হয় নেত্রকোনা পূর্বধলা উপজেলার আলুচাষি মো.

শহিদুল্লার সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, তাজ হিমাগারে আলু সংরক্ষণের জন্য গত রোববার ৪২৩ বস্তা আলু নিয়ে এসেছেন। কিন্তু গত বুধবার দুপুর পর্যন্ত আলু হিমাগারে ঢুকাতে পারেননি। তিনি বলেন, এ অবস্থা জানলে আলুর আবাদই করতাম না।

নকলা উপজেলার নারায়ণখোলা গ্রামের কৃষক রফিকুল ইসলাম জানান, তাঁর জমিতে বীজ আলুর ব্লক হয়। তিনি স্থানীয় হিমাগারে আলু রাখার জায়গা পাননি। এখন তাজ হিমাগারে এসেও জায়গা পাচ্ছেন না। তাঁর প্রশ্ন, তাহলে শত শত মণ আলু কোথায় রাখবেন তিনি। যদি আলু রাখতে না পারেন বীজ আলু থাকবে না। এতে পরবর্তী বছর তাঁর আলু আবাদ করা বন্ধ হয়ে যাবে।
সদর উপজেলার বলায়েরচরের প্রান্তিক চাষি মফিদুল ইসলাম, চরশেরপুর এলাকার কৃষক পারভেজ মিয়া, দু’দিন অপেক্ষা করে হিমাগারে আলু রাখতে না পেরে ফিরে গেছেন। তারা বলেন, সরকারি ব্লকে আলু আবাদ করেও সরকারি হিমাগারে আলু রাখতে পারেননি তারা। এখন বেসরকারি হিমাগারেও জায়গা নেই। দু’দিনের গাড়ি ভাড়া দিতে হবে। তাই তাদের লোকসান গুনতে হবে। আবার ৪০০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করলে তারা ঋণের টাকাও শোধ করতে পারবেন না।

চরশেরপুর এলাকার কৃষক সাইফুল ইসলাম অভিযোগ করেন, হিমাগারে বুকিং কার্ড নিতে গিয়ে তিনি দেখেন ব্যবসায়ীরা আগেই কার্ড সংগ্রহ করেছেন। সাধারণ কৃষক হিমাগারে জায়গা পাচ্ছেন না। তাঁর অভিযোগ কিছু ব্যবসায়ী আগে থেকেই হিমাগার কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগসাজশ করে কেজিপ্রতি বেশি দাম দিয়ে আলু ঢুকিয়ে ফেলেছেন। এতে লোকসানের মুখে পড়েছেন প্রকৃত কৃষকরা।
নকলা উপজেলার কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, ‘গত বছর হিমাগারে জায়গা পেয়েছিলাম, কিন্তু এবার ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারণে আলু রাখতে পারছি না।’
তবে আলুচাষিদের অভিযোগ অসত্য বলে দাবি করেছেন তাজ কোল্ড স্টোরেজের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম। তিনি জানান, তারা প্রতি কেজি আলু ৫ টাকা ৮১ পয়সা দরে সংরক্ষণ করছেন। অথচ সরকারি মূল্যে ৬ টাকা ৭৫ পয়সা। তবু তাদের দোষ দেওয়া হয়। তাদের হিমাগারে ১০ হাজার টন আলু ধারণ ক্ষমতা। ইতোমধ্যেই সাড়ে ৮ হাজার টন আলু হিমাগারে তুলে ফেলেছেন। ধারণ ক্ষমতার 
তুলনায় চাহিদা বেশি থাকায় অনেক কৃষককে ফিরিয়ে দিতে হচ্ছে বলে জানান তিনি। এতে তারাও বেশ বিপদে আছেন।

শেরপুর খামারবাড়ির উপপরিচালক কৃষিবিদ শাখাওয়াত হোসেন বলেন, আলুর উৎপাদন বেশি হওয়ায় হিমাগারে সংরক্ষণের চাপ বেড়েছে। কৃষক যাতে ক্ষতির মুখে না পড়েন, সেজন্য বিশেষ ব্যবস্থায় তারা স্বল্প মেয়াদে ২-৩ মাস বাড়িতে আলু সংরক্ষণ করতে পারেন। তাঁর দাবি, শেরপুরে সবজি উদ্বৃত্ত হয়। এজন্য নতুন একটি হিমাগার নির্মাণের প্রস্তাব পাঠিয়েছেন তারা।
শেরপুর বিসিকের উপব্যবস্থাপক বিজয় কুমার দত্তের ভাষ্য, বেসরকারি হিমাগারটি বিসিকের ভেতরে। উদ্যোক্তাদের নতুন কোল্ড স্টোরেজ করতে উদ্বুদ্ধ করছেন তারা। যদি কেউ আগ্রহী হন তবে তাদের সর্বোচ্চ সহযোগিতা করা হবে।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: আল উপজ ল র ল ইসল ম আল চ ষ এল ক র ব যবস শত শত সরক র ক ষমত

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ