ওটিটি প্ল্যাটফর্মে সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া বলিউডের সিনেমা ‘মিসেস’ এর রিচাকে ভারতে ঘরে ঘরে দেখতে পাওয়া যায়। সম্প্রতি দেশটিতে সরকারি এক জরিপে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। জরিপে দেখা গেছে, ভারতীয় নারীরা গড়ে দিনে সাত ঘণ্টার বেশি সময় ঘরের কাজ এবং পরিবারের সদস্যদের সেবাযত্নে ব্যয় করেন। এ জন্য তাঁদের কোনো পারিশ্রমিক দেওয়া হয় না। গৃহস্থালি কাজে একজন নারীর তুলনায় একজন পুরুষের অবদান অর্ধেকেরও কম।

মিসেস সিনেমার রিচার ঘরের কাজ করতে করতে নাজেহাল অবস্থা হয়। ব্লেন্ডারে চাটনি করলে হবে না, শিলপাটাতে বেটেই করতে হবে। রুটি আগে ভেজে রাখলে হবে না, চাই চুলা থেকে গরম-গরম নামানো ফুলকো রুটি। আজ রান্নার এই ভুল, কাল কাজের ওই ভুল। আর এসব করতে করতে নাচকে ঘিরে রিচার স্বপ্ন আর বাস্তবায়িত হয় না।

ওই জরিপে যে পরিসংখ্যান দেওয়া হয়েছে সেখানে দেখা গেছে, একজন নারী দৈনিক গড়ে ২৮৯ মিনিট বিনা পারিশ্রমিকে ঘরের কাজে ব্যয় করেন এবং ১৩৭ মিনিট বিনা পারিশ্রমিকে পরিবারের সদস্যদের সেবাদান কাজে ব্যয় করেন। সেখানে পুরুষ ৮৮ মিনিট ঘরের কাজে আর ৭৫ মিনিট সেবা দানে ব্যয় করেন।

ছয় বছর আগে ভারতে এ ধরনের একটি জরিপ হয়েছিল এবং সেখানেও একই ধরনের ফলাফল দেখতে পাওয়া গিয়েছিল। অথচ নারীর ক্ষমতায়নের জন্য ভারত সরকার থেকে কয়েকটি উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এই জরিপ বলেছে, ওই সব উদ্যোগ পরিস্থিতির খুব একটা উন্নয়ন ঘটাতে পারেনি।

ইন্ডিয়াস টাইম ইউস সার্ভের জরিপকারীরা সারা দেশে ৬ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীদের আগের দিন তাঁরা কী কাজ করেছেন, সে বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করেন। গত সপ্তাহে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। প্রথম জরিপটি হয়েছিল ২০১৯ সালে।

আগেরবারের সঙ্গে এবারের ফলাফলে দুটি মূল পার্থক্য হলো আগের বারের চেয়ে এবার ১৫ থেকে ৫৯ বছর বয়সী নারীরা বিনা মজুরিতে গৃহস্থালি কাজে ১০ মিনিট সময় কম ব্যয় করেছেন। আর মজুরিসহ কর্মক্ষেত্রে তাঁদের অংশগ্রহণ ৩ শতাংশের সামান্য বেশি বেড়েছে।

ওই জরিপের সারসংক্ষেপে এ বিষয় দুটির কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, নারীদের ‘বিনা মজুরির কাজ থেকে মজুরি দেওয়া হয়—এমন কাজের দিকে অগ্রসর হওয়া’ একটি ইতিবাচক লক্ষণ। তাঁরা এখনে গৃহস্থালি কাজে কম সময় দিয়ে মজুরি দেওয়া হয়—এমন কাজে বেশি সময় দিচ্ছেন।  

যদিও অর্থনীতিবিদরা মনে করেন, এটা আসলে প্রকৃত সত্য নয়। এমনকি যদি গৃহস্থালি কাজে নারীর অবদান সামান্য কমেও তার অর্থ এই নয় যে নারীদের সংগ্রাম কমে গেছে। তাঁদের এখনো পুরুষদের তুলনায় চাকরি এবং সংসারের কাজ নিয়ে অধিক হিমশিম খেতে হয়।

ভারতের অশোকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক অশ্বিনী দেশপান্ডে বলেছেন, নারীরা কীভাবে তাঁদের সময় কাটান, সেটা গভীরভাবে বুঝতে হলে টিইউএস জরিপের তথ্য পাশাপাশি ভারতের ফিমেল লেবার ফোর্স পার্টিসিপেশন রেট (এফএলএফপিআর) পর্যালোচনা করা উচিত। এফএলএফপিআর ১৫ বা তার বেশি বয়সের নারীদের শ্রম বাজারে অংশগ্রহণের হিসাব করে।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এফএলএফপিআর ২৩ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০২২-২৩ সালে ৩৭ শতাংশ হয়েছে।

অধ্যাপক অশ্বিনী বলেন, কাজের সুযোগ বেড়েছে শুধু এই কারণে ভারতের শ্রমবাজারে নারীর অংশগ্রহণ বাড়েনি। বরং অর্থনৈতিক দুর্দশার কারণেও চাপে পড়ে নারীরা অর্থ উপার্জনের জন্য বাইরে কাজ করতে যাচ্ছেন।

অর্থনীতির এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘নারীরা একটি চাকরি করার জন্য গৃহস্থালি কাজে তাঁদের সময় কম ব্যয় করার অপেক্ষা করছেন না। বরং গবেষণায় দেখা গেছে, নারীরা পারিবারিক আয় বাড়াতে আর্থিক মূল্য আছে—এমন কাজ করতে চাইছেন। এর ফলে তাদের দ্বিগুণ কাজ করতে হচ্ছে, বাইরে অর্থের বিনিময়ে কাজ এবং ঘরে বিনা পারিশ্রমিকের কাজ।’

শুধু ভারতীয় নারীদের এ অবস্থা নয় বরং পুরো বিশ্বের বাস্তবতা এটাই। বিশ্বে গড়ে নারীরা পুরুষদের তুলনায় প্রায় তিন ঘণ্টা বেশি সময় গৃহস্থালি ও সেবাদান কাজ করেন।

ভারতীয় নারীদের ক্ষেত্রে এই ব্যবধান প্রায় ৪ ঘণ্টা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ঘর র ক জ ক জ করত ক জ কর গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন

মাকিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে চুক্তি বাতিলকারী দেশগুলোর জন্য একটি স্পষ্ট বার্তা নিয়ে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং বিশ্বজুড়ে কূটনৈতিক প্রচারণা চালাচ্ছেন। আর তার সেই বার্তাটি হচ্ছে- মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এমন একটি দাঙ্গাবাজ দেশ, যাকে বিশ্বাস করা যায় না।

শুল্ক স্থগিতাদেশের সময় চীন ছাড়া সবদেশকে বাণিজ্য চুক্তিতে স্বাক্ষর করার জন্য ট্রাম্প যে ৯০ দিনের সময়সীমা দিয়েছেন, সেই সময়ের মধ্যে চীনা কর্মকর্তারা বিদেশী সরকারগুলোকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার জন্য দৌড়ঝাঁপ করছেন। মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একবার এই চুক্তিগুলো কার্যকর হয়ে গেলে, তিনি চান মার্কিন মিত্ররা ‘একটি দল হিসেবে চীনের সাথে যোগাযোগ করুক’, যাতে মার্কিন পক্ষ আলোচনায় আরো বেশি সুবিধা পায়।

দক্ষিণ কোরিয়া থেকে শুরু করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন পর্যন্ত মার্কিন মিত্ররা নিরাপত্তার জন্য ওয়াশিংটনের উপর নির্ভর করে এবং অর্থনৈতিকভাবে ট্রাম্পকে সন্তুষ্ট করার জন্য তাদের উৎসাহ রয়েছে। অবশ্য চীন আরো সমান তালে শুল্ক যুদ্ধের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ট্রাম্পের শেষ বাণিজ্য যুদ্ধের পর থেকে বেইজিং মার্কিন রপ্তানি থেকে তার অর্থনীতিকে মুক্ত করার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছে। দেশটিতে নিবেদিতপ্রাণ এবং সক্রিয় সৈন্য সংখ্যার বিচারে বিশ্বের বৃহত্তম সামরিক বাহিনী রয়েছে।

শি ট্রাম্পের সাথে ফোনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন এবং তার সরকার ‘পাল্টাপাল্টি’ শুল্ক বাতিলের দাবি জানাচ্ছে। তবে যুক্তরাষ্ট্র জোর দিয়ে বলছে যে, অন্য পক্ষ, অর্থাৎ চীনকে উত্তেজনা কমানোর প্রথম পদক্ষেপ নিতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তাব প্রত্যাখ্যানের মাধ্যমে, চীন নিজেকে নিয়মভিত্তিক ব্যবস্থার একজন চ্যাম্পিয়ন হিসেবে উপস্থাপন করছে এবং অন্যান্য দেশকে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে বেইজিংয়ের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানাচ্ছে।

সাংহাইয়ের ফুদান বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর আমেরিকান স্টাডিজের পরিচালক উ জিনবো বলেন, “এটি কেবল চীন-মার্কিন সম্পর্কে নয়। এটি আসলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা সম্পর্কে।”

গত বছর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রাজনীতিবিদদের সাথে দেখা করার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেওয়া উ জানান, অন্যান্য সরকারেরও বুঝতে হবে বেইজিংয়ের প্রচেষ্টা তাদের উপকার করেছে। 

তিনি বলেন, “যদি চীন আমেরিকার বিরুদ্ধে না দাঁড়াত, তাহলে আমেরিকা কীভাবে তাদের ৯০ দিনের বিরতি দিত।  চীনের উপর শুল্ক আরোপের ফলে ট্রাম্প অন্যান্য দেশের উপর শুল্ক আরোপ বন্ধ করার জন্য আবরণ পেয়েছেন। তাদের এটা উপলব্ধি করা উচিত।”

চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং ই সোমবার ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত ব্রিকস ব্লকের দেশগুলোকে ট্রাম্পের দাবি প্রতিহত করার জন্য বেইজিংয়ের সাথে যোগ দিতে আহ্বান জানিয়েছেন। 

তিনি বলেছেন, “আপনি যদি নীরব থাকেন, আপস করেন এবং পিছু হটতে চান, তাহলে এটি কেবল বুলিকে আরো আক্রমণাত্মক হয়ে উঠতে সাহায্য করবে।”

তার এই বক্তব্যের কয়েক ঘন্টা পরে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ইংরেজি সাবটাইটেলসহ একটি ভিডিওতে ওয়াশিংটনকে ‘সাম্রাজ্যবাদী’ শক্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। সেখানে দাবি করা হয়েছে, গত শতাব্দীতে জাপানি রপ্তানি সীমিত করার মার্কিন পদক্ষেপ তোশিবার মতো কোম্পানিগুলোকে মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে।

ওয়াং ই বলেছেন, “একজন ধর্ষকের কাছে মাথা নত করা ঠিক তৃষ্ণা নিবারণের জন্য বিষ পান করার মতো, এটি কেবল সংকটকে আরো গভীর করে তোলে। চীন পিছু হটবে না যাতে দুর্বলদের কণ্ঠস্বর শোনা যায়।”

ঢাকা/শাহেদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বগুড়ায় সারজিসের উপস্থিতিতে মারামারির ঘটনায় বৈষম্যবিরোধী ৪ নেতা হাসপাতালে
  • অমিতাভের চিরকুট কিংবা ফ্যাশন নিয়ে রাধিকার ১০ প্রশ্নের জবাব, ১০ ছবি
  • মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস
  • একজন চা শ্রমিকের দিনে আয় ১৭৮ টাকা
  • বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 
  • নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতির মেয়ে
  • ফরিদপুর জেলা এনসিপি’র কমিটি গঠনের দায়িত্বে মহিলা আ’লীগ সভাপতি মেয়ে
  • ৫০ পেরোনো নারীর খাদ্যাভ্যাস যেমন হতে হবে
  • যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে বিশ্বকে ঐক্যবদ্ধ করতে কাজ করছে চীন