বাংলাদেশে আসবাবশিল্পকে এগিয়ে নিতে যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান মুখ্য ভূমিকা রেখেছে তাদের মধ্যে অন্যতম ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেড। বর্তমানে ব্রাদার্স ফার্নিচার একটি সুপরিচিত এবং বিশ্বাসযোগ্য নাম। ১৯৭০–এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে মো. হাবিবুর রহমান সরকারের হাত ধরে ঢাকার গুলশানের কেন্দ্রস্থলে একটি সাধারণ আসবাবপত্রের দোকান দিয়ে শুরু হয় তাদের যাত্রা। ‘ভাই ভাই ফার্নিচার’ নামের দোকানটি সেই সময়ে গুলশানের বিভিন্ন অফিস বিশেষ করে দূতাবাসভিত্তিক ফার্নিচার ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল।

সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন ডিজাইনের আধুনিক আসবাবপত্র তৈরি শুরু করলে সব ধরনের ক্রেতার কাছে বেশ গ্রহণযোগ্য হয়ে ওঠে প্রতিষ্ঠানটি। ক্রেতাদের চাহিদা এবং পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভাই ভাই ফার্নিচারের কর্নধার ১৯৮০ সালে ছোট ভাই ইলিয়াছ সরকারকে সঙ্গে নিয়ে প্রতিষ্ঠানের নাম পরিবর্তন করে রাখেন ‘ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেড’। দুই ভাইয়ের বলিষ্ঠ নেতৃত্বই ব্রাদার্স ফার্নিচারকে দেশের শীর্ষ ব্র্যান্ডে পরিণত করেছে। পরবর্তী সময়ে শরিফুজ্জামান সরকার ব্রাদার্স ফার্নিচারের পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি প্রতিষ্ঠানটির বিক্রয় ও বিপণন বিভাগের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় দেশব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করে প্রতিষ্ঠানটি।

ছোট একটি উদ্যোগ হিসেবে যাত্রা শুরু করলেও প্রতিষ্ঠানটির লক্ষ্য ছিল স্থানীয় বাজারে উচ্চমানের আসবাব তৈরি করা। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ক্রমাগত নতুনত্ব এবং গুণগত মানের ওপর জোর দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রাথমিক পর্যায়ে ঐতিহ্যবাহী কাঠের আসবাবপত্র তৈরি করে তারা দ্রুত গ্রাহকদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দেশীয় সংস্কৃতি এবং আধুনিক নকশার সংমিশ্রণে প্রতিষ্ঠানটি এমন সব আধুনিক এবং আরামদায়ক আসবাব তৈরি করতে শুরু করে, যা প্রতিটি ঘরে এনে দেয় আভিজাত্যের ছোঁয়া। বর্তমানে ব্রাদার্স ফার্নিচার কেবল দেশেই নয়, বরং আন্তর্জাতিক বাজারেও তাদের কার্যক্রম সম্প্রসারণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে।

পণ্যের বৈচিত্র্যের দিক দিয়ে ব্রাদার্স ফার্নিচারের রয়েছে নিজস্বতা ও আধুনিকতার মেলবন্ধনে বিশাল সমাহার। লিভিং রুম আসবাবপত্রের মধ্যে রয়েছে সোফা সেট, টি–টেবিল, বুকশেলফ এবং শোকেসসহ বিভিন্ন ধরনের আধুনিক এবং ঐতিহ্যবাহী ডিজাইনের পণ্য। বেডরুম আসবাবপত্রের তালিকায় আছে ডাবল এবং সিঙ্গেল বেড, ড্রেসিং টেবিল, ওয়ার্ডরোব এবং বেডসাইড টেবিলের মতো ফাংশনাল এবং স্টাইলিশ আসবাব। ডাইনিং রুমকে আকর্ষণীয় করে তুলতে রয়েছে ডাইনিং টেবিল, চেয়ার এবং কেবিনেটের মতো টেকসই এবং মার্জিত ডিজাইনের পণ্য। এ ছাড়া অফিসকে নান্দনিক করে তুলতে তাদের রয়েছে অফিস ডেস্ক, চেয়ার, ফাইল ক্যাবিনেট এবং কনফারেন্স টেবিলের মতো অফিস উপযোগী আসবাবপত্র।

শরিফুজ্জামান সরকার, পরিচালক, বিক্রয় ও বিপণন বিভাগ, ব্রাদার্স ফার্নিচার লিমিটেড.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আসব বপত র সরক র আসব ব

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ