বাংলাদেশে টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের জন্য চলমান সংস্কার এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে বলে জানিয়েছেন সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। গতকাল শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডেলে এ কথা লিখেছেন তিনি।

গুতেরেস লেখেন, উষ্ণ অভ্যর্থনার জন্য আমি প্রধান উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানাই। বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে রয়েছে। এ পরিস্থিতিতে সবার টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যতের জন্য জাতিসংঘ সহযোগিতা করবে।

চার দিনের সফরে গত বৃহস্পতিবার বিকেলে ঢাকা পৌঁছান জাতিসংঘ মহাসচিব। গতকাল প্রথমে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো.

তৌহিদ হোসেন, পরে প্রধান উপদেষ্টার রোহিঙ্গাবিষয়ক হাই-রিপ্রেজেনটেটিভ ড. খলিলুর রহমানের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন তিনি। এর পর প্রধান উপদেষ্টার তেজগাঁও কার্যালয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বৈঠক করেন গুতেরেস। বৈঠক শেষে দু’জন কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে যান।

ঢাকার জাতিসংঘ কার্যালয় প্রেস নোটে কক্সবাজারে দেওয়া জাতিসংঘ মহাসচিবের বিবৃতি গতকাল গণমাধ্যমে পাঠায়। এতে গুতেরেস বলেন, পবিত্র রমজানে আমি কক্সবাজারে এসেছি ‘সংহতি’ জানাতে। রোহিঙ্গা ও বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের প্রতি সংহতি, যারা রোহিঙ্গাদের এত উদারভাবে আশ্রয় দিয়েছে। আমি এখানে এসেছি এ দুর্দশার ওপর বিশ্ববাসীর নজর আনতে; সেই সঙ্গে সম্ভাবনার কথা জানাতে।
তিনি বলেন, এখানে ১০ লাখের বেশি বসবাসরত রোহিঙ্গারা গর্বিত। তারা স্থিতিস্থাপক। তাদের বিশ্বের সমর্থন প্রয়োজন। দশকের পর দশক ধরে বৈষম্য এবং নিপীড়নের পর গত আট বছর আগে রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার জেরে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গা এখানে এসেছিল। অনেকে সম্প্রতি এসেছে। মুসলিমবিরোধী ঘৃণা, মানবাধিকার লঙ্ঘন ও নৃশংসতা থেকে বাঁচতে পালিয়ে এসেছে তারা। গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গা ও তাদের পরিবার সুরক্ষা, মর্যাদা এবং নিরাপত্তার জন্য এখানে এসেছে। আমি আজ অনেকের সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি। তাদের সাহস ও দৃঢ় সংকল্পে অনুপ্রাণিত হয়েছি। অনেকেই মিয়ানমারে তাদের ওপর চালানো নির্যাতন এবং বাংলাদেশ যাত্রার মর্মান্তিক বর্ণনা দিয়েছে। রোহিঙ্গারা বাড়ি ফিরতে চায়। মিয়ানমার তাদের জন্মভূমি। তাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফেরত যাওয়াই এ সংকটের প্রাথমিক সমাধান।

মিয়ানমারের সব পক্ষের উদ্দেশে তিনি বলেন, আপনারা সর্বোচ্চ সংযম অবলম্বন করুন, আন্তর্জাতিক মানবিক আইন অনুসারে বেসামরিক নাগরিকদের সুরক্ষাকে অগ্রাধিকার দিন এবং সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা প্রতিহত করুন। রাখাইনসহ মিয়ানমারে ভয়াবহ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যতক্ষণ রাখাইনে সংঘাত ও পদ্ধতিগত নিপীড়ন বন্ধ না হচ্ছে, ততক্ষণ যাদের সুরক্ষা প্রয়োজন, তাদের অবশ্যই সমর্থন দিতে হবে।

জাতিসংঘ মহাসচিব বলেন, আমরা গভীর মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। আর্থিক সহায়তা ঘোষণা দিয়ে কমানোর ফলে আমরা এ বছর অনুদান নিয়ে নাটকীয় ঝুঁকির মধ্যে পড়তে যাচ্ছি। এতে একটি অসমাধানযোগ্য বিপর্যয় সৃষ্টি হবে। মানুষ কষ্ট পাবে ও মারাও যেতে পারে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, নষ্ট করার মতো সময় নেই।
তিনি বলেন, মানবিক সহায়তায় পরিবর্তন এসেছে। বাংলাদেশিদের জমি, বন, পানি ও স্বল্পসম্পদ ভাগাভাগি করে নেওয়ার অবশ্যই স্বীকৃতি দিতে হবে। আমি শেষ ২০১৮ সালে কক্সবাজারে এসেছিলাম। এখন ক্যাম্পগুলোতে অনেক উন্নতি দেখছি। তবে অনেক চ্যালেঞ্জও রয়ে গেছে।

রোহিঙ্গাদের সামাজিক ঝুঁকি নিয়ে গুতেরেস বলেন, সীমিত সম্ভাবনার সঙ্গে সহিংসতা, অপরাধ ও অন্যান্য নিরাপত্তা সমস্যা স্বাভাবিকভাবেই বৃদ্ধি পায়। কিছু রোহিঙ্গা পরিবার মনে করে, বিপজ্জনক সমুদ্র ভ্রমণে সবকিছু ঝুঁকির মুখে ফেলা ছাড়া তাদের আর কোনো বিকল্প নেই। তাই আমাদের একটি বিশেষ দায়িত্ব রয়েছে। তা হলো রোহিঙ্গাদের কাছে সাহায্য পৌঁছানো এবং দেখানো যে, বিশ্ব তাদের ভুলে যায়নি। অনুকূল সময়ে দেওয়া সহায়তা যথেষ্ট ছিল না। অথচ এখন আমরা সে সময় থেকে অনেক দূরে।
তিনি বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান শেষ পর্যন্ত মিয়ানমারকেই খুঁজে বের করতে হবে। রোহিঙ্গাদের স্বেচ্ছায়, নিরাপদে ও টেকসই প্রত্যাবাসনের জন্য উপযুক্ত পরিবেশ না হওয়া পর্যন্ত আমরা হাল ছাড়ব না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।

গুতেরেস বলেন, রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি আগের চেয়েও বেশি প্রয়োজন; যেমন সংহতি প্রয়োজন বাংলাদেশের প্রতিও। পবিত্র রমজানে আমি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে আবেদন জানাচ্ছি, রোহিঙ্গা জনগণ ও তাদের আশ্রয়দাতাদের প্রতি সহযোগিতার মাধ্যমে সংহতি এবং সুনির্দিষ্ট সমর্থন করুন।
আরেক প্রেস নোটে কক্সবাজারে মহাসচিব বলেন, সফরে আমি দুটি স্পষ্ট বার্তা পেয়েছি। প্রথমত, রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরতে চায়। মিয়ানমারে শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা, রোহিঙ্গাদের অধিকার নিশ্চিত করা, অতীতে যে বৈষম্য ও নির্যাতন হয়েছে, তার অবসান নিশ্চিত করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের যথাসাধ্য চেষ্টা করতে হবে।

দ্বিতীয় বার্তা নিয়ে তিনি বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে আরও ভালো পরিবেশ চায়। দুর্ভাগ্যবশত, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষ করে ইউরোপের মানবিক সহযোগিতা নাটকীয়ভাবে হ্রাসের ঘোষণা দেয়। ফলে আমরা ক্যাম্পে খাদ্যের রেশন কমানোর ঝুঁকিতে আছি। এ পরিস্থিতি এড়াতে আমি সব কিছু করব বলে প্রতিশ্রুতি দিতে পারি। এ নিয়ে আমি সব দেশের সঙ্গে আলোচনা করব। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় রোহিঙ্গাদের ভুলে যাবে, তা মেনে নিতে পারি না।
ক্যাম্প পরিদর্শন শেষে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে ইফতার করেন প্রধান উপদেষ্টা ও জাতিসংঘ মহাসচিব। এর পর রাতে তারা দু’জনই ঢাকায় ফেরেন।

কক্সবাজার শুধু পর্যটন শহর নয়, অর্থনীতিরও কেন্দ্র
গতকাল দুপুরে কক্সবাজারে বিয়াম ফাউন্ডেশনের আঞ্চলিক কেন্দ্রের অডিটোরিয়ামে স্থানীয়দের সঙ্গে মতবিনিময়ে ড. ইউনূস বলেন, কক্সবাজার কেবল একটি পর্যটন শহর নয়, অর্থনীতিরও কেন্দ্র। এ দেশের মানুষ যথেষ্ট ভাগ্যবান। কারণ তাদের একটি সমুদ্র আছে, যা বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ব্যবসা করতে উদ্বুদ্ধ করে।

নেপাল ও ভারতের সেভেন সিস্টার্সের কোনো সমুদ্র নেই উল্লেখ করে তিনি পারস্পরিক সুবিধার্থে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দর ব্যবহারের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। প্রধান উপদেষ্টা লবণ উৎপাদনকারীদের কাছে জানতে চান, বিদেশিরা বাংলাদেশ থেকে লবণ নিতে আগ্রহী। কেন না কক্সবাজারের কৃষকদের উৎপাদিত লবণ এখন রপ্তানির সক্ষমতা অর্জন করেছে।
স্থানীয় জনগণকে ভবিষ্যতের সুযোগগুলো কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, কক্সবাজার অর্থনীতির একটি বৃহৎ শক্তি এবং এটি তথ্যপ্রযুক্তিরও শহর হতে পারে।
এ সময় ড. ইউনূস স্থানীয়দের কাছে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের প্রভাব সম্পর্কে জানতে চান। এ সময় রোহিঙ্গাদের প্রভাবসহ কক্সবাজারের উন্নয়নে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ বিভিন্ন প্রস্তাব ও দাবি তুলে ধরেন।
এদিকে আজ শনিবার সকালে ঢাকায় জাতিসংঘ কার্যালয়ে যাবেন গুতেরেস। সেখানে সংস্থাটির সব স্টাফের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন। এর পর দুপুরে হোটেলে ফিরে গোলটেবিল বৈঠকে যোগ দেবেন জাতিসংঘ মহাসচিব। পরে বাংলাদেশের যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সঙ্গে মতবিনিময় করবেন তিনি। বিকেলে যৌথ ব্রিফিং হওয়ার কথা রয়েছে। আর সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার ইফতার ও নৈশভোজে যোগ দেবেন গুতেরেস। আগামীকাল রোববার সকালে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে জাতিসংঘ মহাসচিবের।


 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: গ ত র স বল ন সহয গ ত র জন য গতক ল ইউন স

এছাড়াও পড়ুন:

প্রাক্তন প্রেমিক মিঠুনের জন্মদিনে যে বার্তা দিলেন মমতা

ভারতের জনপ্রিয় অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। ভারতীয় বাংলা সিনেমা ইন্ডাস্ট্রি যেমন শাসন করেছেন, তেমনি বলিউডেও নিজের মেধার স্বাক্ষর রেখেছেন। অভিনয় গুণে মিঠুন কুড়িয়েছেন যশ-খ্যাতি।

১৯৫০ সালের ১৬ জুন জন্মগ্রহণ করেন মিঠুন। আজ পঁচাত্তর পূর্ণ করে ছিয়াত্তর বছর বয়সে পা দিতে যাচ্ছেন। বিশেষ দিনে মিঠুনকে নিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে কথা বলেছেন তার প্রাক্তন প্রেমিকা-অভিনেত্রী মমতা শঙ্কর।

জন্মদিন উপলক্ষে মিঠুনের উদ্দেশ্যে মমতা শঙ্কর বলেন, “প্রিয় মিঠুন, সুস্থ থাক। সবাইকে নিয়ে ভালো থাক। খুশিতে ও আনন্দে থাক। আরো ভালো ভালো কাজ আমাদের উপহার দে। সাই বাবার কাছে তোর জন্য সারাক্ষণই প্রার্থনা করি।”

আরো পড়ুন:

অক্ষয়ের সিনেমার আয় ৩৩২ কোটি টাকা ছাড়িয়ে

আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান

মিঠুনের সঙ্গে পরিচয়ের কথা মনে করে মমতা শঙ্কর বলেন, “মিঠুনের সঙ্গে আমার প্রথম দেখা মৃণালদার বাড়িতে। তখন ‘মৃগয়া’ নিয়ে প্রস্তুতি তুঙ্গে। আমার আর মিঠুনের জীবনের প্রথম সিনেমা এটি। কত স্মৃতি। কোনটা ছেড়ে কোনটা বলব।”

শুটিং সেটে এবং সেটের বাইরে মমতার সঙ্গে খুবই রসিকতায় মেতে উঠতেন মিঠুন। স্মৃতিচারণ করে মমতা শঙ্কর বলেন, “বাবা, মিঠুন, দারুণ বিচ্ছু। সারাক্ষণ ওর রসিকতা। সবার পিছনে লাগত। আমিও ছাড় পেতাম না। ২৪ ঘণ্টা ওর মাথার মধ্যে দুষ্টুবুদ্ধি ঘুরত। আমাকে খুব লেগ পুল করত। আর আমি রেগে যেতাম। সে কী বলব!”

২০২৬ সালে ‘মৃগয়া’ সিনেমার ৫০ বছর পূর্তি হবে। সেই সূত্রে মিঠুন-মমতারও অভিনয় ক্যারিয়ার ৫০ বছরে পা দেবে। এই বিষয়টা মমতার মনকে বেশ প্রফুল্ল করে তুলেছে!

ভারতীয় বাংলা সিনেমার গুণী অভিনেত্রী, নৃত্যশিল্পী মমতা শঙ্করের সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়িয়েছিলেন অভিনেতা মিঠুন চক্রবর্তী। বিয়ের দিন-তারিখও চূড়ান্ত হয়েছিল। ছাপানো হয়েছিল বিয়ের কার্ড। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সাতপাকে বাঁধা পড়েননি এই যুগল। মিঠুনের সঙ্গে বিয়ে ভাঙার পর মমতা চন্দ্রোদয়ের সঙ্গে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। সবকিছু ভুলে এখনো এ জুটির বন্ধুত্ব অটুট রয়েছে।

দেব প্রযোজিত ‘প্রজাপতি’ সিনেমায় একসঙ্গে অভিনয় করেন মিঠুন-মমতা। এ অভিনেত্রী বলেন, “মিঠুন আমার বন্ধু, সারাজীবন থাকবে। হ্যাপি বার্থ ডে মিঠুন। সব্বাইকে নিয়ে তুই খুব ভালো থাকিস।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ