বিশাল মাঠের এক পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মরদেহ। এর পাশেই গান ও বাদ্যের তালে চলছে দলবদ্ধ নাচ। নাচ–গানে তুলে ধরা হচ্ছে প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন এবং সমাজে তাঁর অবদান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বান্দরবান জেলার শহরতলির ফাক্ষ্যংগ্রীপাড়ায় বৌদ্ধ মহাথের শীলওয়াইংসার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।

অনুষ্ঠানে পরিবেশিত নাচ পরিচিত ‘সইং নৃত্য’ নামে। এটিকে মারমা ভাষায় বলা হয় ‘সইং তালাহ আখা’, যার অর্থ ‘শবদাহ নৃত্য’। সংক্ষেপে এটিকে ‘সইং আখা’ বলা হয়। মারমা ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এ নাচ। সইং নৃত্যের আয়োজন হয় মূলত খ্যাতিমান বৌদ্ধভিক্ষু, রাজা, হেডম্যানসহ (মৌজাপ্রধান) অভিজাত ব্যক্তিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কেবল নাচ-গানে।

বৌদ্ধ মহাথের শীলওয়াইংসার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। আজ শনিবারও দিনব্যাপী সইং তালাহ আখা চলবে। সেখানে হাজারো মানুষের ভিড় জমেছে, বসেছে মেলা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, একজন গায়ক দাঁড়িয়ে গান করছেন। তাঁর পাশেই বাজনা বাজাচ্ছেন কয়েকজন বাদক। বাঁশের মাচার ওপর রঙিন কাগজে সাজানো প্যাগোডা কাঁধে নিয়ে গান ও বাজনার তালে তালে নাচছে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল।

অনুষ্ঠানে কথা হয় তারাছা মৌজার হেডম্যানের সঙ্গে। তিনি জানান, এ ধরনের অনুষ্ঠানে ৩ থেকে ২০টি দল প্রতিযোগিতামূলকভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সইং আখা পরিবেশন করে। নাচ-গান ও বাদকের তিনজন দলনেতা থাকেন। পয়ার ছন্দে করুণ সুরে গান পরিবেশিত হয়। এর সঙ্গে সামনে-পেছনে এবং উঁচু-নিচুতে নাচতে থাকেন শিল্পীরা। একটি দল ক্লান্ত হলে আরেকটি দল নাচে।

অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন কমিটির সদস্য ক্যসামং মারমা জানান, বৌদ্ধ মহাথের ও সমাজের অভিজাত ব্যক্তিদের মৃত্যুতে এই অভিজাত সইং নৃত্যের আয়োজন করা হয়। প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন এবং সমাজে তাঁর অবদান গান ও নাচে তুলে ধরা হয়। উৎসবমুখর আয়োজনে আগত হাজারো মানুষের কাছে মৃত ব্যক্তি স্মরণীয় হয়ে ওঠেন। ক্যসামং মারমা বলেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় দিনে সইং নৃত্য শেষে রাতব্যাপী ঐতিহাসিক গীতিনাট্য ‘জ্যাত ও পাংখুং’ মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। এ গীতিনাট্যে মারমা সমাজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। নাচ, গান ও নাটকের দৃশ্য দেখে মানুষ নিজেদের শিকড়ের সন্ধান পাচ্ছেন।

গানের মধ্য দিয়ে প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন তুলে ধরছেন এক গায়ক। তাঁর সঙ্গে চলছে বাদ্যবাজনা.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: অন ত য ষ ট ক র য় য়

এছাড়াও পড়ুন:

আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত

আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।

ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।

আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।

উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।

আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫

আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।

ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।

আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ