সইং: মরদেহ ঘিরে করা হয় যে শোকনৃত্য
Published: 15th, March 2025 GMT
বিশাল মাঠের এক পাশে সাজিয়ে রাখা হয়েছে মরদেহ। এর পাশেই গান ও বাদ্যের তালে চলছে দলবদ্ধ নাচ। নাচ–গানে তুলে ধরা হচ্ছে প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন এবং সমাজে তাঁর অবদান। গতকাল শুক্রবার বিকেলে বান্দরবান জেলার শহরতলির ফাক্ষ্যংগ্রীপাড়ায় বৌদ্ধ মহাথের শীলওয়াইংসার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে দেখা যায় এ চিত্র।
অনুষ্ঠানে পরিবেশিত নাচ পরিচিত ‘সইং নৃত্য’ নামে। এটিকে মারমা ভাষায় বলা হয় ‘সইং তালাহ আখা’, যার অর্থ ‘শবদাহ নৃত্য’। সংক্ষেপে এটিকে ‘সইং আখা’ বলা হয়। মারমা ঐতিহ্যের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে এ নাচ। সইং নৃত্যের আয়োজন হয় মূলত খ্যাতিমান বৌদ্ধভিক্ষু, রাজা, হেডম্যানসহ (মৌজাপ্রধান) অভিজাত ব্যক্তিদের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায়। সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ কেবল নাচ-গানে।
বৌদ্ধ মহাথের শীলওয়াইংসার অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া শুরু হয়েছে গতকাল শুক্রবার। আজ শনিবারও দিনব্যাপী সইং তালাহ আখা চলবে। সেখানে হাজারো মানুষের ভিড় জমেছে, বসেছে মেলা। অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় গিয়ে দেখা যায়, একজন গায়ক দাঁড়িয়ে গান করছেন। তাঁর পাশেই বাজনা বাজাচ্ছেন কয়েকজন বাদক। বাঁশের মাচার ওপর রঙিন কাগজে সাজানো প্যাগোডা কাঁধে নিয়ে গান ও বাজনার তালে তালে নাচছে ৮ থেকে ১০ জনের একটি দল।
অনুষ্ঠানে কথা হয় তারাছা মৌজার হেডম্যানের সঙ্গে। তিনি জানান, এ ধরনের অনুষ্ঠানে ৩ থেকে ২০টি দল প্রতিযোগিতামূলকভাবে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সইং আখা পরিবেশন করে। নাচ-গান ও বাদকের তিনজন দলনেতা থাকেন। পয়ার ছন্দে করুণ সুরে গান পরিবেশিত হয়। এর সঙ্গে সামনে-পেছনে এবং উঁচু-নিচুতে নাচতে থাকেন শিল্পীরা। একটি দল ক্লান্ত হলে আরেকটি দল নাচে।
অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া আয়োজন কমিটির সদস্য ক্যসামং মারমা জানান, বৌদ্ধ মহাথের ও সমাজের অভিজাত ব্যক্তিদের মৃত্যুতে এই অভিজাত সইং নৃত্যের আয়োজন করা হয়। প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন এবং সমাজে তাঁর অবদান গান ও নাচে তুলে ধরা হয়। উৎসবমুখর আয়োজনে আগত হাজারো মানুষের কাছে মৃত ব্যক্তি স্মরণীয় হয়ে ওঠেন। ক্যসামং মারমা বলেন, অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ায় দিনে সইং নৃত্য শেষে রাতব্যাপী ঐতিহাসিক গীতিনাট্য ‘জ্যাত ও পাংখুং’ মঞ্চস্থ করা হচ্ছে। এ গীতিনাট্যে মারমা সমাজের কৃষ্টি-সংস্কৃতি, ইতিহাস-ঐতিহ্য ফুটে ওঠে। নাচ, গান ও নাটকের দৃশ্য দেখে মানুষ নিজেদের শিকড়ের সন্ধান পাচ্ছেন।
গানের মধ্য দিয়ে প্রয়াত ব্যক্তির কর্মজীবন তুলে ধরছেন এক গায়ক। তাঁর সঙ্গে চলছে বাদ্যবাজনা.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: অন ত য ষ ট ক র য় য়
এছাড়াও পড়ুন:
ইউনূস-তারেক সফল বৈঠকে স্বপ্নভঙ্গ হলো যাদের
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ১ ঘণ্টা ২০ মিনিটের বৈঠক দেশের রাজনীতির মোড় অনেকটাই ঘুরিয়ে দিয়েছে। নানা অনিশ্চয়তা, শঙ্কা, গুজব রাজনীতিকে ঘিরে ধরেছিল। একধরনের অনাস্থার পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল। এ বৈঠক অনিশ্চয়তা, শঙ্কার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে রাজনীতিতে আস্থার পরিবেশ সৃষ্টি করবে বলে আশা করা যায়।
পারস্পরিক যে কাদা ছোড়াছুড়ি, দুর্নাম করার রাজনীতি, সেখান থেকে বেরিয়ে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ তৈরিতে সহায়তা করবে অধ্যাপক ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠক। নির্বাচন নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কিছুদিন ধরে টানাপোড়েন চললেও বৈঠকটি অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ ও আন্তরিক পরিবেশে হয়েছে। এটা আমাদের রাজনীতিতে উদাহরণ হয়ে থাকবে।
বৈঠকটি সারা দেশের মানুষের মধ্যে নতুন করে আশার সঞ্চার করেছে। এখন মানুষ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে। মানুষের ধারণাকে বাস্তবে রূপদান করার দায়িত্ব সরকারের।
বিএনপি এর আগে ডিসেম্বরে নির্বাচন চাইলেও কিছুটা সরে এসে ফেব্রুয়ারির সময়সীমাকে মেনে নিয়েছে। সরকারও এপ্রিল থেকে সরে এসে নির্বাচন ফেব্রুয়ারিতে হতে পারে বলে মন্তব্য করেছে। উভয় পক্ষেরই কিছুটা সরে আসা, কিছুটা ছাড় দেওয়া—এটাই আমাদের রাজনীতি থেকে একদম হারিয়ে গিয়েছিল।
রাজনীতি মানেই প্রতিপক্ষের সঙ্গে শত্রুতা করতে হবে, এমন পরিস্থিতিতে আমাদের রাজনীতি পৌঁছে গিয়েছিল। কিন্তু শুধু কথায় কথায় উদার হলে হবে না। কাজে-কর্মেও উদারতা দেখাতে হবে। লন্ডনের বৈঠকে সেই উদারতার কিছু নমুনা আমরা দেখতে পেলাম।
আরও পড়ুনলন্ডনে ইউনূস-তারেকের আলোচনায় বিএনপিরই কি জিত১৩ জুন ২০২৫বৈঠক শেষে ব্রিফিংয়ে আলোচনার ফলাফল তুলে ধরা হয়েছে। তা নিয়ে আপাতত আলোচনার কিছু নেই। আমরা বরং রাজনীতিতে এ বৈঠকের প্রভাব নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করি। প্রথমত, এ বৈঠক সারা দেশের মানুষকে আশান্বিত করলেও রাজনীতির কোনো কোনো পক্ষ বা ব্যক্তি হতাশ হয়েছেন।
এসব গোষ্ঠীর মূল কাজ যেন বিএনপিকে যে কোনোভাবে ঠেকানো। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা হতাশ হয়েছেন তাদের মধ্যে রাজনীতিবিদ ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিরা আছেন। তাঁদের মূল লক্ষ্যই ছিল, যেকোনো প্রকারে বিএনপির রাজনীতিকে প্রতিহত করা। এ অংশ চাইছে না বিএনপির রাজনীতি সামনের দিকে এগিয়ে যাক। বিএনপির নেতৃত্বে নতুন করে বাংলাদেশের বিনির্মাণ হোক।
কেউ যদি সহজ রাজনীতির পথ পরিহার করে অহেতুক কুটিল ও ষড়যন্ত্রের রাজনীতি করে, তবে তারা নিজেরাই রাজনীতি থেকে হারিয়ে যায়। আওয়ামী লীগ ও জাসদ আমাদের সামনে রাজনীতি থেকে হারিয়ে যাওয়ার সবচেয়ে বড় উদাহরণ।বিএনপি যে শত ভাগ শুদ্ধ ও সঠিক রাজনীতি করছে, এটা বলা যাবে না। ভুল-ত্রুটি বিএনপিরও আছে। স্থানীয় পর্যায়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, দখল, হত্যাসহ নানা অভিযোগ রয়েছে। বিএনপি নিজ দলের নেতা-কর্মীদের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে। এই পর্যন্ত চার হাজারের মতো নেতা-কর্মীকে দল থেকে বহিষ্কার করেছে এসব কর্মকাণ্ডের জন্য। দেশের ইতিহাসে কোনো দল নিজেদের এতসংখ্যক নেতা-কর্মীকে বহিষ্কার করেনি। এ ধরনের অপরাধ শুধু বিএনপির নেতা-কর্মীরাই করছেন না। বিভিন্ন দলের নেতা-কর্মীরাও এর সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছেন। দুঃখজনক হলেও সত্যি যে এটা আমাদের রাজনৈতিক অপসংস্কৃতিতে পরিণত হয়েছে।
এখান থেকে বেরিয়ে আসতে হলে আমাদের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা লাগবে। রাজনৈতিক সংস্কৃতির পরিবর্তন করতে হবে। এটা সময়সাপেক্ষ বিষয়। বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের রাজনীতি এই অর্থনীতির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। তাই রাজনৈতিক সরকার লাগবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। কারণ, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না।
এ ধরনের পরিস্থিতি শুধু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী দিয়েই নিয়ন্ত্রণ করা যায় না। এর সঙ্গে রাজনৈতিক শক্তিরও প্রয়োজন হয়। বিকল্প অর্থনৈতিক কর্মসূচিও লাগে। এ জন্যই বিএনপি বারবার নির্বাচনের কথা বলে আসছে। আমরা মনে করি, নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় এলে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিসহ সার্বিক অবস্থান উন্নতি ঘটবে। বিএনপির বিকল্প অর্থনৈতিক পরিকল্পনা আছে।
বৈঠক শেষে যৌথ ঘোষণা