নেতৃত্বের কাড়াকাড়ি বা ব্যানারবাজি জুলাই আন্দোলনে ছিল না
Published: 15th, March 2025 GMT
জুলাই আন্দোলনে বিভিন্ন অংশীজন, সাধারণ মানুষসহ নানা জায়গা থেকে সহায়তা আসার কথা জানিয়েছেন সেই আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। জুলাই অভ্যুত্থানের এই শীর্ষ নেতা বলেন, আন্দোলনে ছাত্রদল, ছাত্রশিবির ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর একটা ভূমিকা ছিল। বেশির ভাগ আন্দোলন ভন্ডুল হয়ে যায় নেতৃত্বের কাড়াকাড়ি অথবা ব্যানারবাজির কারণে। এই আন্দোলনে এই বিষয়গুলো ছিল না।
আন্দোলনে ছাত্রলীগের (এখন নিষিদ্ধ সংগঠন) বিদ্রোহী একটা অংশেরও ভূমিকা ছিল বলে জানান অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ থেকে পদত্যাগ করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়কের দায়িত্ব নেওয়া নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেছেন, ‘ছাত্রলীগ থেকে বের হয়ে আন্দোলনে অংশ নেওয়াদের আমরা বিদ্রোহী বা বিপ্লবী ছাত্রলীগ বলি। ছাত্রলীগের বিদ্রোহী অংশ বের না হলে আন্দোলনটা বড় হতো না।’
জুলাই অভ্যুত্থান নিয়ে লেখা একটি বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠানে অতিথি বক্তা ছিলেন নাহিদ ইসলাম। অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সাবেক সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়ার গণ-অভ্যুত্থানবিষয়ক বই ‘জুলাই: মাতৃভূমি অথবা মৃত্যু’ বইয়ের প্রকাশনা অনুষ্ঠান আজ শনিবার বিকেলে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের কবি সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হয়। বইটি প্রকাশ করেছে প্রথমা প্রকাশন।
জুলাই–আগস্টের উত্তাল দিনগুলোর কথা স্মরণ করে নাহিদ বলেন, আন্দোলনে সব ছাত্রসংগঠনের একটা বোঝাপড়া একদম শুরু থেকেই ছিল। তারা (ছাত্র সংগঠনগুলো) তাদের মতো করে লোকবল পাঠিয়েছে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গেও একধরনের অলিখিত সমঝোতা ছিল। যদিও কখনো বসে পরিকল্পনা করা হয়নি।
অনুষ্ঠানে নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘ব্যক্তিগতভাবে আমার মনে হয়েছে, আমরা যারা এই আন্দোলনে সামনের দিকে ছিলাম, আমার জায়গা থেকে, কথা বলার সময় এখনো আসেনি। সেই সময়টা আরও পরে আসবে, যখন সব কথা বলা যাবে। আবার এটাও সত্য যদি আমরা এখন কিছু কথা বলে না রাখি, তাহলে অনেক ঘটনার বিভিন্ন ইন্টারপ্রিটেশন (ব্যাখ্যা) হবে বা হচ্ছেও। সেই জায়গা আসিফ (উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ) এই কাজটা করেছেন। এটা সবার জন্যই সহায়ক হবে। আসিফের বইতে মোটামুটি একটা সংক্ষিপ্ত বর্ণনা আছে। এই আন্দোলনটা একটা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে এগিয়েছে, আবার পরিকল্পনার বাইরে গিয়েও ঘটনাপ্রবাহ এগিয়েছে। মানুষকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কানেক্ট করতে হবে, এটাই ছিল এই আন্দোলনের মূল পরিকল্পনা। শুরুতেই আন্দোলনের নেতৃত্ব ও কৌশলের বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের চিন্তাভাবনা ছিল।’
নাহিদ বলেন, গত ৭-৮ বছর ক্যাম্পাসে ছাত্রদের পক্ষের বিভিন্ন ইস্যুতে রাজনৈতিক দলের বাইরে গিয়ে একেবারে সাধারণ শিক্ষার্থীদের জায়গা থেকে বিভিন্ন সময়ে তাঁরা আন্দোলন করেছেন। তাঁদের একটা ছাত্রসংগঠন ছিল ছাত্রশক্তি। এই সংগঠনের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক আখতার হোসেন (এখন এনসিপির সদস্যসচিব) ক্যাম্পাসে পরিচিতমুখ ছিলেন। কিন্তু আন্দোলনের শুরুতে বোঝাপড়া ছিল যে আখতার হোসেন সামনের দিকে থাকবেন না। এমনকি এমন ব্যাপারও ছিল যে তিনিও সামনের দিকে থাকবেন না।.
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘একটা স্বতঃস্ফূর্ত গণ-অভ্যুত্থান এবং নানা মানুষের অংশগ্রহণ ও অবদান ছিল। আমরা নিজেরাও জানি না, কোথা থেকে কত সহযোগিতা তখন এসেছে। আমি বললে সেটা আমার গল্পই হবে আসলে। আসিফ যখন বইটা লিখছেন, তখন এটা আসিফেরই গল্প। আমাদের প্রত্যেকেরই এই অভ্যুত্থানে আলাদা আলাদা গল্প আছে। এই আলাদা আলাদা গল্পগুলো একটা কালেকটিভ স্টোরি (সামগ্রিক গল্প) তৈরি করবে। আমরা নিশ্চয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কেন্দ্রিক গল্প বলছি। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মাদ্রাসাশিক্ষার্থীরাও নেমে এসেছিলেন। আমি তো এখনো জানি না কুমিল্লা, নরসিংদী বা ঢাকার বাইরে আন্দোলনটা কীভাবে সংগঠিত হয়েছে। তাঁদের গল্পগুলো আরও বেশি করে আসা দরকার।’
এক দফার সিদ্ধান্ত মানুষই নিয়েছেনাহিদ ইসলাম তাঁর বক্তব্যে বলেন, ১৬ জুলাই তাঁরা বুঝতে পেরেছিলেন, আন্দোলনটা সরকারবিরোধী আন্দোলনের দিকে যাবে এবং নিয়ে যেতে হবে। কারণ ওই সরকারের হাতে ইতিমধ্যেই রক্তের দাগ লেগে গিয়েছিল। এরপর তাঁদের যে ৯ দফা, তার মধ্যে এক দফার বার্তাটা ছিল। কিন্তু তাঁরা প্রথমেই এক দফার দিকে যাননি।
এর কারণ বলতে গিয়ে নাহিদ বলেন, এক দফা বা সরকার পতনের বিষয়টা জনগণের ভেতর থেকে আসতে হয়। মানুষ যখন চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে নেবে, তখন আনুষ্ঠানিক ঘোষণাটা দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল তাঁদের। ৩ আগস্ট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এক দফার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু তার আগেই মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছিল। শহীদ মিনারে আসলে এক দফার বাইরে অন্য কিছু বলার ক্ষমতা কারও ছিল না। এ ছাড়া ৫ আগস্ট কিন্তু গণভবন ঘেরাওয়ের কর্মসূচি ছিল না। কর্মসূচিটা ছিল ‘লং মার্চ টু ঢাকা’, ঢাকায় আসতে হবে। ঢাকায় এসে কী করবে, সেই সিদ্ধান্ত মানুষই নেবে।
আন্দোলনের সময় গত বছরের ২৩ জুলাই ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) যে সংবাদ সম্মেলন হয়, সে প্রসঙ্গও তুলে ধরেন নাহিদ ইসলাম। তিনি বলেন, ‘ডিজিএফআই থেকে বলা হয়েছিল যেন আমরা বলি এটা বিএনপি–জামায়াতের আন্দোলন এবং সব অগ্নিসন্ত্রাস তারা করছে। কিন্তু সংবাদ সম্মেলনে থেকে আমি আরও বলি সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশাপাশি বিরোধীদলের নেতা–কর্মীদেরও নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। আমরা এটার নিন্দা জানাচ্ছি। ফলে এখানে একধরনের মিথষ্ক্রিয়া ঘটেছে এবং এর মধ্য দিয়ে আন্দোলনটা পরিণতির দিকে গেছে। ’
আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও আবু বাকের মজুমদার (এখন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের কেন্দ্রীয় আহ্বায়ক) আন্দোলনে মাঠের কর্মসূচির বিষয়টি মূলত দেখতেন বলে জানান নাহিদ। তিনি বলেন, এই দুজনের সঙ্গে রিফাত রশিদ (এখন এনসিপির নেতা), হাসিব আল ইসলাম (এখন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা) ও আবদুল কাদের (এখন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের নেতা) সমন্বয় করতেন। পেছন থেকে সহযোগিতা করেছেন মাহফুজ আলম (বর্তমান তথ্য উপদেষ্টা) ও আখতার হোসেন। পরে এসে যুক্ত হন নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী (এখন এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক)।
নাহিদ ইসলাম বলেন, ‘আরেকটা ফ্যাসিবাদ তৈরি হবে না, এ রকম একটা রাষ্ট্রকাঠামো বা সমাজব্যবস্থা তৈরি করার জন্য কাজ করতে হবে। জুলাই থেকে আমরা শুরু করেছি, শিখেছি। এই গণতান্ত্রিক লড়াইটা আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে।’
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক ন হ দ ইসল ম উপদ ষ ট অন ষ ঠ স গঠন এনস প সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।