বাংলাদেশের টেকসই ও ন্যায়সংগত ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করিবার জন্য চলমান সংস্কার ও গণতান্ত্রিক উত্তরণে জাতিসংঘ সহযোগিতা করিবে বলিয়া সংস্থাটির মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস যেই বক্তব্য দিয়াছেন আমরা উহাকে স্বাগত জানাই। শুক্রবার অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সহিত বৈঠক শেষে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্স হ্যান্ডলে এই কথা লিখিয়াছেন তিনি। তিনি এমন সময়ে এই বক্তব্য দিলেন, যখন বাংলাদেশ রাজনীতি-অর্থনীতিসহ সকল ক্ষেত্রেই অস্বাভাবিক সময় পার করিতেছে। বিশেষত রাষ্ট্রব্যবস্থায় দীর্ঘ সময় ধরিয়া গাড়িয়া বসা স্বৈরতন্ত্রের শিকড় উৎপাটনের মাধ্যমে টেকসই ও জনবান্ধব শাসনপদ্ধতি প্রতিষ্ঠার কার্যকর পথ সন্ধান করিতেছে। এই পরিস্থিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা অত্যন্ত জরুরি হইয়া পড়িয়াছে। আমরা বিশ্বাস করি, শনিবার মধ্যাহ্নে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্বের পাশাপাশি যুবসমাজ ও নাগরিক প্রতিনিধিদের সহিত তিনি যেই মতবিনিময় করিয়াছেন উহাও বাংলাদেশকে শান্তিপূর্ণ উপায়ে কাঙ্ক্ষিত গণতান্ত্রিক উত্তরণে সহায়তা করিবে।
আন্তোনিও গুতেরেস শুক্রবার প্রধান উপদেষ্টা সমভিব্যহারে কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবিরে দীর্ঘ সময় কাটাইয়াছেন। সেইখানে প্রদত্ত ভাষণে তিনি বলিয়াছেন, বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের ওই নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর ‘দুর্দশার ওপর বিশ্ববাসীর নজর আনিতে’ তাঁহার সফর। তিনি যথার্থই বলিয়াছেন, দশকের পর দশক বৈষম্য ও নিপীড়নের পর আট বৎসর পূর্বে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত গণহত্যার জের হিসাবে বিপুলসংখ্যক রোহিঙ্গার যেই স্রোত সূচিত হইয়াছিল, উহা অদ্যাবধি বন্ধ হয় নাই। বর্তমানে এই সংখ্যা ১২ লক্ষ অতিক্রম করিয়াছে। সীমিত সামর্থ্যেও এই বৃহৎ বোঝা বাংলাদেশ স্কন্ধে তুলিয়া লইয়াছিল সম্পূর্ণ মানবিক কারণে। কথা ছিল, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কার্যকর তৎপরতায় রোহিঙ্গারা অচিরেই বাড়ি ফিরিতে পারিবেন। দুর্ভাগ্যবশত, অদ্যাবধি ইহা সম্ভবপর হয় নাই। ইহার ফলস্বরূপ কক্সবাজারের ন্যায় অর্থনৈতিকভাবে অত্যন্ত সম্ভাবনাময় একটা জেলা সামাজিক, সাংস্কৃতিক, নিরাপত্তা ও প্রতিবেশগত দিক হইতে ক্রমশ বিপন্ন দশায় নিপতিত হইতেছে। পাশাপাশি স্থানীয় বাঙালিদের সহিত রোহিঙ্গাদের দ্বন্দ্বও বাড়িতেছে। বৃহৎ শক্তিগুলির ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বে রোহিঙ্গাদের ব্যবহার করিবার যেই ঝুঁকি সৃষ্টি হইয়াছে, তাহা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তাকেও নাজুক করিয়া তুলিতেছে। আশার বিষয় হইল, এই সকল বিষয় সম্পর্কে জাতিসংঘ মহাসচিবও অবগত বলিয়া মনে হইতেছে, যেই কারণে শুক্রবার তিনি স্পষ্ট বলিয়াছেন, রোহিঙ্গাদের নিজ ভূমিতে নিরাপদ, স্বেচ্ছায় ও মর্যাদাপূর্ণভাবে ফেরত যাওয়াই এই সংকটের প্রাথমিক সমাধান।
জাতিসংঘ মহাসচিব যথার্থ বলিয়াছেন, রোহিঙ্গাদের লইয়া আমরা গভীর এক মানবিক সংকটের দ্বারপ্রান্তে। তাঁহার মতে, সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বেশ কয়েকটি দেশ, বিশেষ করিয়া ইউরোপের মানবিক সহযোগিতা নাটকীয়ভাবে হ্রাসের ঘোষণা এই আশঙ্কাকে বাস্তব করিয়া তুলিয়াছে। উক্ত সহায়তা হ্রাসের ফলে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শিবিরে খাদ্যের রেশন হ্রাসের ঝুঁকিতে আছে। তিনি বলিয়াছেন, ইহাতে একটি অসমাধানযোগ্য বিপর্যয় সৃষ্টি হইবে। মানুষ কষ্ট পাইবে ও মৃত্যুও বরণ করিতে পারে। এখনই আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তার বাধ্যবাধকতা রয়েছে, নষ্ট করার মতো সময় নাই। যেই মুহূর্তে রোহিঙ্গাদের প্রতি সংহতি পূর্বাপেক্ষা বেশি প্রয়োজন; সেই মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রভাবশালী কতিপয় সদস্যের এহেন সাহায্য হ্রাস নিঃসন্দেহে অনাকাঙ্ক্ষিত। আমরা মনে করি, এই পরিস্থিতি এড়াইতে জাতিসংঘ মহাসচিব প্রয়োজনীয় সকল কিছু করিবার যে প্রতিশ্রুতি দিয়াছেন তাহা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এখন আমরা বৃক্ষের পরিচয় ফলের মাধ্যমেই পাইতে চাহিব। বাংলাদেশ সরকারেরও দায়িত্ব হইবে, আসন্ন দিনগুলিতে এই বিষয়ে পুনঃপুন তাগিদ দান করা।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: বল য় ছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি