ঘুষ ছাড়া মেলে না ভূমিসেবা ঘুরে হয়রান গ্রাহকরা
Published: 15th, March 2025 GMT
ময়মনসিংহ জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমে দালাল ছাড়া মিলছে না জমির খতিয়ানের নকল (পর্চা)। এ ছাড়া ঘুষ না দিলে ভূমিসেবা মিলছে না বলে অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, অনলাইনে আবেদন করেও কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে কিংবা দালাল না ধরলে মিলছে না ভূমিসেবা। পর্চার জন্য ঘুরতে হচ্ছে মাসের পর মাস। ভোগান্তি থেকে বাদ যাচ্ছেন না আইনজীবী কিংবা মুক্তিযোদ্ধারাও। ভূমিসংক্রান্ত যে কোনো সেবা পেতে ঘুষ দিতে হচ্ছে তাদের।
জেলা প্রশাসকের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, জমির খতিয়ানের পর্চা সংগ্রহ করতে হলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে আগে নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হতো। আবেদনের ৭ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে রেকর্ড রুমের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী কমিশনারের দপ্তর থেকে গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী পর্চা সরবরাহ করা হতো। মানুষ যাতে সহজে ও দ্রুত সময়ে পর্চা পেতে পারেন, তার জন্য ২০২১ সাল থেকে দেশে অনলাইনে ভূমিসেবা কার্যক্রম চালু করে সরকার। এর মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করে ডাকযোগে পর্চা পাওয়ার ব্যবস্থা চালু হয়। পরের বছর এই সেবা চালু করা হয়। একজন গ্রাহক পর্চা পেতে অনলাইনে আবেদন ফরম পূরণ করলে দুটি অপশন আসে। একটি ডাকযোগে, আরেকটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে সশরীরে তা সংগ্রহ করা। ডাকযোগে পেতে গ্রাহককে ১৪০ টাকা ফি দিতে হয়। আর জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে নিতে হলে গ্রাহককে দিতে হয় ১০০ টাকা ফি। তবে প্রতিশ্রুত ফি দিয়ে পর্চা পাচ্ছেন না গ্রাহকরা।
অনলাইনে আবেদন করে সিএস, এসএ, আরওআর এবং বিআরএসের খতিয়ানের পর্চার জন্য মাসের পর মাস রেকড রুমে ঘুরছেন অনেকে। তাদের অভিযোগ, রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান ও অন্য কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে অথবা দালাল না ধরলে মিলছে না খতিয়ানের পর্চা।
ভোগান্তির বর্ণনা দিয়ে ফুলবাড়িয়া উপজেলার কৃষক রঞ্জু মিয়া বলেন, ‘পারিবারিক জমি বিক্রির জন্য বিআরএসের খতিয়ানের পর্চা উঠাতে অনলাইনে আবেদন করেছি গত ২৬ জানুয়ারি। আবেদনের পর থেকে জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমে খোঁজ করে আসছি। রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান কালক্ষেপণ করে ঘুরাচ্ছেন। মোখলেছুর রহমান অতিরিক্ত টাকা ঘুষ চেয়েছেন অথবা অফিসে যারা এসব কাজ করেন, সেসব দালালের মাধ্যমে নিতে বলেছেন। কিন্তু ১০০ টাকার পরিবর্তে দালাল ৩ হাজার টাকা চাচ্ছেন। এ অবস্থায় টাকা ছাড়া খতিয়ানের পর্চা তুলতে পারছি না।’
হালুয়াঘাটের কৃষ্টনগরের কৃষক রবি মিয়া জানান, পারিবারিক ৮০ শতাংশ বাড়ির জমির জাল দলিল করে চাচাতো ভাই সাবজুল গং দখলে নিয়েছেন। পৈতৃক সম্পত্তি ফিরে পেতে আদালতে আইনি ব্যবস্থা নিতে গেলে ওই জমির সিএস ও আরওআরের খতিয়ানের নকল দরকার হয়। এসব কাগজ তোলার জন্য তিন মাস আগে জেলা প্রশাসকের দপ্তরের রেকর্ড রুমে অনলাইনে আবেদন করেছেন। আবেদনের পর থেকেই জেলা প্রশাসনের রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমানসহ অন্য কর্মচারীদের কাছে ধরনা দিচ্ছেন। কিন্তু তিন মাস পেরিয়ে গেলেও মিলছে না জমির কাগজপত্রাদি। তাঁর অভিযোগ, অন্তত আটবার হালুয়াঘাটের প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে টাকা খরচ করে জেলা প্রশাসনের রেকর্ড রুমে আসা-যাওয়া করেছেন। এ পর্যন্ত আসা-যাওয়াসহ অন্যান্য খরচ বাবদ ৫ হাজার টাকার বেশি খরচ হয়েছে। রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান অন্য কর্মচারীর মাধ্যমে আড়াই হাজার টাকা ঘুষ চেয়েছেন। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা দিতে না পারায় এখনও জমির খতিয়ানের নকল দেওয়া হয়নি। নকল না পাওয়ায় আদালতে মামলাও করতে পারছেন না তিনি।
শুধু রবি মিয়া নন, অনলাইনে এমন অনেকে আবেদন করে সিএস, এসএ, আরওআর এবং বিআরএসের খতিয়ানের নকলের জন্য মাসের পর মাস রেকর্ড রুমে ঘুরছেন। তাদের অভিযোগ, রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান ও অন্য কর্মচারীদের ঘুষ না দিলে অথবা দালাল না ধরলে মিলছে না খতিয়ানের নকল।
ভোগান্তিতে পড়েছেন খোদ আইনজীবীও। ময়মনসিংহ জেলা জজ আদালতের সিনিয়র আইনজীবী আব্দুল কাদের বলেন, ‘রেকর্ড রুম থেকে ঘুষ ছাড়া কোনো ভূমিসেবা পাওয়া যাচ্ছে না। মাসের পর মাস ঘুরতে হয়। আমরাই সহজে কোনো সেবা পাই না। আর গ্রামের অসহায় সাধারণ মানুষের অবস্থা তো আরও খারাপ। আদালতে মামলার কাজে জমির খতিয়ানের নকল প্রতিনিয়ত উঠাতে হয়। কিন্তু সহজে পাওয়া যায় না। দালাল ধরলে কিংবা অফিসের লোকজনের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দিলে সহজেই মেলে এসব কাগজপত্র।’
জমির পর্চা তুলতে ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রজব আলী শেখ। তাঁর ভাষ্য, তারা মুক্তিযোদ্ধারাও এই রেকর্ড রুম থেকে সময়মতো সেবা পাচ্ছেন না। বিষয়টি নিয়ে সরকারের দায়িত্বশীলদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া দরকার। তবে ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন রেকর্ডকিপার মোখলেছুর রহমান। তিনি বলেন, সার্ভারে জটিলতার কারণে সময়মতো সেবা দেওয়া যাচ্ছে না। কতদিন ধরে সার্ভার জটিলতা দেখা যাচ্ছে– এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মাঝেমধ্যে সমস্যা হয়, আবার সমস্যা ছেড়ে দেয়।
বিষয়টি নিয়ে কথা হয় জেলা প্রশাসক মুফিদুল আলমের সঙ্গে। তাঁর ভাষ্য, ভূমিসেবা কার্যক্রমে কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারী ঘুষ নিলে কিংবা অনিয়ম করলে বা অভিযোগ পেলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ম স র পর ম স র র কর ড র ম র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।