শত বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক হালাল মার্কেটে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। মধ্যপ্রাচ্যেসহ বিভিন্ন দেশের হালাল মার্কেটে বাংলাদেশি স্কিন কেয়ার, কসমেটিকস পণ্যের বিশাল চাহিদা বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু দেশে রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ আজারবাইজানে চলছে হালাল পণ্যের রপ্তানির কাজ। আগামী এপ্রিলে দুবাইয়ে অনুষ্ঠেয় দুবাই ডার্মায়ও বাংলাদেশি হালাল কসমেটিকস পণ্যের প্রদর্শন করা হবে। এই মেলায় বিশ্ব হালাল মার্কেটের বড় ধরনের শোডাউন হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

রবিবার (১৬ মার্চ) আনুষ্ঠানিকভাবে বিশাল এই রপ্তানিবাজারে প্রবেশের ঘোষণা দেয়া হয়। রাজধানীর বনানীর হোটেল শেরাটনে তারকা বেষ্টিত এক জাঁকজমকপূর্ণ আয়োজনের মাধ্যমে রিমার্কের ডিরেক্টর, মেগাস্টার শাকিব খান সবার সামনে ঐতিহাসিক এই ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন দেশসেরা ক্রিকেটার তাসকিন আহমেদ, সাব্বির রহমান, তানজিদ হাসান তামিম, রিমার্ক-হারল্যানের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ও জনপ্রিয় চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন এবং রিমার্ক পরিবারের সদস্যরা। 

রিমার্ক-হারল্যানের ডিরেক্টর, মেগাস্টার শাকিব খান তার উচ্ছ্বাস ব্যক্ত করে বলেন, “এতদিন এই খাতে বাংলাদেশের কোনো কোম্পানি না থাকলেও রিমার্ক এইচবি এবার তৈরি করল নতুন ইতিহাস। নকল-ভেজালে অতিষ্ট ক্রেতারা এখন একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে পারছেন। দেশে-বিদেশে গিয়ে বিপুল সংখ্যক মানুষ হালাল পণ্য পছন্দ করেন। আমরা উন্নতমানের হালাল পণ্য মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে আনার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যারা আমাদের পণ্য ব্যবহার করেছেন তারা বুঝেছেন এই পণ্যগুলো অতি উচ্চমানের। আমি মনে করি, এটাও আল্লাহর রহমত। কারণ, আপনারা দেখেছেন বিএসটিআই ৩৪টি পণ্যের পরীক্ষা করে দেখেছে আমদানিকৃত এসব পণ্যের অধিকাংশই ভেজাল ও নকল। সেখানে রিমার্ক-হারল্যান সাধারণ মানুষের স্বস্তির জায়গা নিশ্চিত করছে। রিমার্কের হাত ধরে বৈশ্বিক হালাল কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার ও পার্সোনাল কেয়ার পণ্যের শত বিলিয়ন ডলারের বাজারে প্রবেশ করল বাংলাদেশ। লিলি হালাল বিউটি সোপ ও অলিন হালাল লিপবামের মাধ্যমে সারা বিশ্বজুড়ে হালাল কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার ও পার্সোনাল কেয়ার পণ্যের বাজারে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে রিমার্ক।”

আরো পড়ুন:

ধর্ষণের বিচার চাইলেন শাকিব খান

সবকিছু ভেঙেচুরে বরবাদ হয়ে যাচ্ছে: বুবলী

আশা ব্যক্ত শাকিব খান বলেন, “এই অর্জন শুধু রিমার্কের নয়, এই অর্জন পুরো বাংলাদেশের। আমি শুরুতেই ধন্যবাদ দিতে চাই বিএসটিআই-কে, তাদের প্রত্যয়নের মাধ্যমেই আমরা পেয়েছিলাম হালাল সার্টিফিকেট আর তারই ধারাবাহিকতায় আজ আমরা বিশ্ব হালাল কসমেটিকস, স্কিন কেয়ার ও পার্সোনাল কেয়ার পণ্যের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করছি। হালাল পণ্যের ক্রমবর্ধমান বাজারে রিমার্কের হাত ধরে বাংলাদেশ শিগগির একটি শক্ত অবস্থান তুলে ধরে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখবে বলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি।”

এই শত বিলিয়ন ডলারের বৈশ্বিক হালাল মার্কেটে বাংলাদেশের প্রবেশ নিঃসন্দেহে গর্বের। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ বিভিন্ন দেশের হালাল মার্কেটে বাংলাদেশি স্কিন কেয়ার, কসমেটিকস পণ্যের বিশাল চাহিদা বাংলাদেশকে বহির্বিশ্বে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু দেশে রপ্তানি আদেশ পাওয়ার পর এখন মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোসহ আজারবাইজানে চলছে হালাল পণ্যের রপ্তানির কাজ।

সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হালাল কসমেটিকস ব্যবহারের প্রবণতা বাড়ছে বিশ্বজুড়ে। নিরাপদ হওয়ায় শুধু মুসলিম নয়, অমুসলিমদের মধ্যেও এইসব পণ্য ব্যবহারের হার বাড়ছে। তারই পরিপ্রেক্ষিতে মুসলিম দেশগুলোর পাশাপাশি অমুসলিম দেশগুলোতেও হালাল কসমেটিকস ও স্কিনকেয়ার পণ্যের ব্যবহার ও চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

প্রাথমিকভাবে সৌদি আরব, দুবাই, মালয়েশিয়া ও আজারবাইজানে কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে রিমার্ক। প্রায় ৮ শতাংশ গ্রোথ রেটের এই সম্ভাবনাময় বাজারে রিমার্ক তার উদ্ভাবনী দক্ষতা ও কঠোর মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে শিগগির তার কাজের পরিধি আরো বিভিন্ন দেশে বিস্তৃত করবে। প্রাথমিকভাবে লিলি ও অলিনের ৮টি ভিন্ন হালাল পণ্যের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে রিমার্ক যা অচিরেই শতাধিক হালাল পণ্যের এক বিশাল সম্ভারে উন্নীত করা হবে।   

উল্লেখ্য, বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করার প্রয়াসে কাজ করে যাচ্ছে রিমার্ক এলএলসি ইউএসএ-এর অ্যাফিলিয়েটেড প্রতিষ্ঠান রিমার্ক এইচবি। নকল ও ভেজালমুক্ত পণ্য ব্যবহার করে দেশের মানুষ যাতে গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড অব লিভিং অনুযায়ী সবরকম সুযোগ-সুবিধা পেতে পারে তাই রিমার্কের লক্ষ্য। রিমার্কের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত রয়েছেন মেগাস্টার শাকিব খান, জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী ও অভিনেতা তাহসান,  জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা পরীমণি, বিদ্যা সিনহা মিম, নুসরাত ফারিয়া, তানজিন তিশা, নাজিফা তুষি, সাবিলা নূর, কেয়া পায়েল, প্রার্থনা ফারদিন দিঘী, পূজা চেরি ও চিত্রনায়ক মামনুন হাসান ইমন ও সিয়াম আহমেদের মতো জনপ্রিয় ও দর্শকনন্দিত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব।

ঢাকা/রাহাত/শান্ত

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র জনপ র য় প রব শ

এছাড়াও পড়ুন:

সমান কাজ করেও কম মজুরি পান আদিবাসী নারীরা

দিন যায়, আসে নতুন দিন। প্রযুক্তি আর আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে যায় অনেক কিছুই। শুধু বদল হয় না সমাজের পিছিয়ে পড়া কিছু জনগোষ্ঠীর ভাগ্য। বিশেষ করে, আদিবাসী নারী শ্রমিকরা বঞ্চিত হচ্ছেন যুগ যুগ ধরে।

সমালোচনার মুখে ও সময়ের প্রয়োজনে অনেক ক্ষেত্রেই লিঙ্গ বৈষম্য কমেছে। নারী-পুরুষের মজুরি বৈষম্য দিনে দিনে কমছে। কিন্তু, গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার সাঁওতাল পল্লীর নারী শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন আগের মতোই।

দিনাজপুর-ঢাকা আঞ্চলিক মহাসড়কের পাশে গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার কাটামোড় এলাকার সাঁওতাল পল্লী জয়পুর পাড়া। সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গ্রামটি দেখতে বেশ সুন্দর। নিরিবিলি পরিবেশ, চারদিকে সবুজের সমারোহ। সবুজ ধানক্ষেত আর কিছু দূর পর পর সাঁওতালদের বাড়ি। কোথাও কোথাও উঁচু টিলার মাঝে বড় বড় পুকুর। পুকুর পাড়ে কিছু সাঁওতাল ঘর বেঁধে থাকছেন। পাশের বড় মাঠে খেলা করছে কিছু আদিবাসী শিশু। 

আরো পড়ুন:

গাজীপুরে পেশা বদলাচ্ছেন অনেক শ্রমিক 

ছোট্ট হাতে সংসারের হাল

পল্লীতে গিয়ে দেখা যায়, নারীদের পাশাপাশি পুরুষদের কেউ কেউ বাঁশের চটা তুলছেন, কেউ রান্নার জন্য গাছের ডাল কাটছেন। বাড়িতে পালন গরু-ছাগল দেখভাল করছেন পুরুষ ও নারী উভয়ই। নারীদের অধিকাংশই গরু-ছাগল চড়ানোসহ বিভিন্ন  কাজে বাড়ির বাইরে। যদিও ধান কাটা ও মাড়াই শুরু হয়নি তেমন। 

কয়েকজন সাঁওতাল নারীকে কাজের ফাঁকে বিশ্রাম নিতে দেখা যায়। তারদের সঙ্গে কথা হয় এ প্রতিবেদকের। তারা রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমরাও পুরুষের মতো জমিতে বীজ বপন, চারা উত্তোলন, রোপণ, সার দেওয়া, নিড়ানি ও ধান কেটে ঘরে তোলা পর্যন্ত সব কাজ করি। কিন্তু, এখনো সেই আগের মতোই মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছি আমরা।” 

গোবিন্দগঞ্জের সাপমারা ইউনিয়নের জয়পুর পাড়া গ্রামের কর্মজীবী সাঁওতাল নারী মমতা হেমব্রম। তিনি বলেন, “পুরুষরা কাজ করে মজুরি পান ৫০০ টাকা আর আমাদেরকে দেওয়া হয় ৪৫০ টাকা। ক্ষেত-খামারের কাজ অনেক কঠিন। পুরুষ-নারী তো সমান কাজ করি। আমরা সমান মজুরি চাই, কিন্তু চাইলেও তো তারা দেন না।” 

একই গ্রামের সাবিনা হাসদা। তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, “এই অঞ্চলে অধিকাংশ পুরুষ ও নারী ধান-আখ ও মাছ চাষ ও গরু-ছাগল লালনপালন করেন। কাজ একই হলেও আমাদের মজুরি পুরুষের চেয়ে কম। আমরা সমান মজুরি চাই।”

সুরুজ মনি টুডু নামের আরেক নারী বলেন, “আমরা পুরুষের সমান কাজ করি, তাই আমরা এই মে দিবস থেকেই সমান মজুরি চাই। আপনার মাধ্যমে সংশ্লিষ্টদের কাছে সমান মজুরি নিশ্চিত করার দাবি করছি।” 

সাপমারা গ্রামের দেলু মারমা বলেন, “আমাদের সব কাজই কৃষিনির্ভর। সে কারণে পুরুষের পাশাপাশি নারীদের কাজ করতে হয়। তা না হলে সংসার চলে না। আমরাও চাই, পুরুষ এবং নারী যেন সমান মজুরি পান।”

পুকুর পাড়েই বাস করেন অমেদা হাজদা। তিনি আক্ষেপ করে বলেন, “সব জায়গায় পুরুষের দাম বেশি, নারীদের দাম কম। সে কারণে তাদের মজুরি বেশি, আমাদের কম। আমাদেরকেও পুরুষের সমান দাম দেবে, সমান মজুরি দেবে, এটাই আমাদের দাবি।”

সাহেবগঞ্জ-বাগদা ফার্ম ভূমি উদ্ধার সংগ্রাম কমিটির সভাপতি ফিলিমন বাস্কে রাইজিংবিডিকে বলেন, “এই এলাকার অধিকাংশ নারী তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন নন। কর্মপরিবেশ, কর্মঘণ্টা বিষয়ে তাদের ধারণাই নেই। অনেকে জানলেও কাজ হারানোর ভয়ে ন্যায্য মজুরির বিষয়ে মুখ খুলতে চান না। সংগঠনের পক্ষ থেকে আমরা সমঅধিকারের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি।”

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ গাইবান্ধার সাধারণ সম্পাদক রিকতু প্রসাদ বলেন, “গাইবান্ধার নারীরা আজও মজুরি বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। বিশেষ করে, গোবিন্দগঞ্জের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর নারীরা। নারী-পুরুষ সবাই শ্রমিক, বৈষম্য করতেই তাদের আলাদা চোখে দেখা হয়। মে দিবসে মুখে যতই বলি না কেন, পুরুষশাসিত সমাজে এখনো পরিবর্তন আসেনি। সমাজ থেকে মজুরি বৈষম্য দূর করার জোর দাবি জানাই।”

বাংলাদেশ নারী মুক্তি কেন্দ্রের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিলুফার ইয়াসমিন শিল্পী রাইজিংবিডিকে বলেন, সব ক্ষেত্রেই নারীরা অবহেলিত এবং বঞ্চিত। মুখে সবাই নারীর অধিকার নিয়ে কথা বলেন, কিন্তু বাস্তবে দেখা যায় উল্টো। সাঁওতাল তথা আদিবাসী নারীদের সমান মজুরি পাওয়া সাংবিধানিক অধিকার। তারা এ দেশেরই নাগরিক। তাদের সমান মজুরি নিশ্চিত করতে করা প্রয়োজন।

ঢাকা/মাসুম/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ