খরচই ওঠে না, ভেঙে ফেলা হচ্ছে সিনেমা হল
Published: 16th, March 2025 GMT
দুপুরের কড়া রোদ্দুর মাথায় গলে পড়ছে। কোনোমতে গামছা প্যাঁচিয়ে জিরানোর ছলে কী যেন ভাবছিলেন হাতুড়ি পিটিয়ে দেয়াল ভাঙার শব্দ শুনতে শুনতে। ষাটোর্ধ্ব বয়সী রিকশাচালক আবুল মিয়া এই শহরেই রিকশা চালান তিন যুগের বেশি সময় ধরে। চোখের সামনেই তাঁর কৈশোর-যৌবনের বিনোদনের জায়গাটা ভাঙা হচ্ছে। জানালেন বেদের মেয়ে জোছনা ছবিটা তাঁর খুব প্রিয়। এই শহরে সিনেমাটি যখন আসে টানা ১০ বার দেখেছেন। শেষে মায়ের বানানো গোবরের লাকড়ি বিক্রি করে সিনেমা দেখেছেন। তাঁর মতে সিনেমা দেখতে এত ভিড় অন্য কোনো সিনেমায় দেখেননি। একটা সময় পর নানা কারণে ছবি দেখা ছেড়ে দেন তিনি।
বেশির ভাগ অংশের ভাঙার কাজ শেষ, সামনের অংশটুকু গুঁড়িয়ে দিলেই আর চেনা যাবে না ময়মনসিংহ নগরীর পূরবী সিনেমা হলটি। এই বিনোদন কেন্দ্র ভাঙতে দেখে কৈশোরের স্মৃতিচারণ ও আক্ষেপ করলেন গোহাইলকান্দি এলাকার বাসিন্দা রিকশাচালক আবুল মিয়া।
মালিক পক্ষ জানায়, কয়েক বছর ধরে প্রতি শোতে পাঁচ-সাতজন দর্শক হয়। অনেক সময়
দর্শক না থাকায় শো বন্ধ থাকে। দিনের পর দিন স্টাফ খরচও না ওঠায় হল ভাঙার সিদ্ধান্ত
নিতে হয়েছে। সেখানে বহুতল ভবন করে দর্শক চাহিদার ওপর ভিত্তি করে প্রয়োজনে পূরবী সিনেপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে।
অনেকে বলছেন, আগেও যতগুলো সিনেমা হল ভাঙা হয়েছে কর্তৃপক্ষের ছিল একই উছিলা। সিনেপ্লেক্সের জায়গায় হয়েছে মোবাইল, প্রসাধনীর জমকালো দোকান। এর আগে ২০০২ সালের ৭ ডিসেম্বর অলকা, অজন্তা, ছায়াবাণী ও পূরবী সিনেমা হলে একজোগে বোমা হামলা হয়। এর পরই মূলত সিনেমা হলগুলোয় দর্শকসংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমতে থাকে। করোনার পর থেকে সেই সংখ্যা আরও বাড়ে। হলের নিচতলায় ৭০০ আসন, দ্বিতীয় তলায় ডি চেয়ার ছিল ৩২০টি এবং বক্স ছিল ২০টি। এ ছাড়া মানসম্মত সিনেমা তৈরি না হওয়ায় দর্শক হারিয়েছে সিনেমা হলগুলো।
গতকাল রোববার সরেজমিন দেখা গেছে, ৮-১০ জন শ্রমিক দেয়াল ভেঙে ইট, পাথর ও লোহা সরানোর কাজ করছেন। শ্রমিক মুকুল মিয়া বলেন, ‘গত ২৫ ডিসেম্বর থেকে হল ভাঙার কাজ শুরু করেছি। দৈনিক গড়ে ১২-১৪ জন শ্রমিক কাজ করছি। প্রথম-দ্বিতীয় তলার ছাদ এবং দেয়াল ভাঙা হয়েছে। সম্পূর্ণ ভাঙতে আরও কমপক্ষে তিন মাস সময় লাগবে।’
ঠিকাদার হারুন অর রশিদ বলেন, ‘১৫ লাখ টাকায় পূরবী সিনেমা হলের পুরাতন মালপত্র
ক্রয় করেছি। আমরা সেগুলো ভেঙে এখন জায়গা খালি করছি। সব মিলিয়ে আমাদের চার মাস
সময় লাগবে।’
স্থানীয় বাসিন্দা জলিল মিয়া জানান, এই হলটি দেখতে দেখতে বড় হয়েছেন তারা। এক
সময় সিনেমার জোয়ার ছিল। তাই মানুষ হলের আশপাশে অনেক ভিড় জমাত। এখন ছবি না চলার কারণে মালিকপক্ষ হল ভাঙছে। এতে খারাপ লাগলেও মালিক তো আর বছরের পর বছর লোকসান গুনবেন না।
পূরবী সিনেমা হলের ম্যানেজার মোখতার হোসেনের ভাষ্য, দেশের নামকরা কয়েকটি হলের একটি ছিল পূরবী। স্বাধীনতার বেশ কয়েক বছর আগে হলটি নির্মাণ করা হয়েছিল। তখন ভালো ভালো ছবি নির্মিত হওয়ায় হলভর্তি দর্শক হতো। বিশেষ করে করোনার পর হলের দর্শক একেবারে ধস নামে। তিনি বলেন, ‘সবশেষ এক মাস আগে আমরা একবুক জ্বালা ছবিটি চালিয়েছিলাম। আমার কিছু আর জানা নেই।’
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
আফগানিস্তানে মধ্যরাতে শক্তিশালী ভূমিকম্পের আঘাত
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলীয় হিন্দুকুশ অঞ্চলে ৬ দশমিক ৩ মাত্রার একটি শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। যুক্তরাষ্ট্র ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা (ইউএসজিএস) এ তথ্য জানিয়েছে। দুই মাস আগেই দেশটিতে এক ভূমিকম্পে কয়েক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছিল।
ইউএসজিএস জানায়, রোববার দিবাগত রাতে আফগানিস্তানের হিন্দুকুশ অঞ্চলে মাজার-ই-শরিফ শহরের কাছে খোলম এলাকায় ভূমিকম্পটি আঘাত হানে। স্থানীয় সময় রাত ১২টা ৫৯ মিনিটে আঘাত হানা এই ভূমিকম্পের গভীরতা প্রথমে ১০ কিলোমিটার বলা হয়। পরে তা সংশোধন করে গভীরতা ২৮ কিলোমিটার বলে জানায় সংস্থাটি।
আফগানিস্তানের জাতীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা জানিয়েছে, হতাহত ও ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য পরে জানানো হবে।
উল্লেখ্য, গত ৩১ আগস্ট আফগানিস্তানের সাম্প্রতিক ইতিহাসে সবচেয়ে প্রাণঘাতী ভূমিকম্পটি আঘাত হেনেছিল। দেশটির পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা রিখটার স্কেলে ৬ মাত্রার ওই ভূমিকম্পে ২ হাজার ২০০ জনেরও বেশি মানুষ প্রাণ হারান।
আরও পড়ুনআফগানিস্তানে ভূমিকম্পে নিহত বেড়ে ২২০৫, খোলা আকাশের নিচে মানুষ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫আফগানিস্তানে প্রায়শই ভূমিকম্প আঘাত হানে। বিশেষ করে হিন্দুকুশ পর্বতমালা বরাবর, যেখানে ইউরেশীয় এবং ভারতীয় টেকটোনিক প্লেটগুলো মিলিত হয়েছে।
ব্রিটিশ ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থার ভূমিকম্পবিদ ব্রায়ান ব্যাপটির দেওয়া তথ্য মতে, ১৯০০ সাল থেকে উত্তর-পূর্ব আফগানিস্তানে রিখটার স্কেলে ৭ মাত্রার বেশি ১২টি ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে।
আরও পড়ুন৩৫ বছরে আফগানিস্তানে ভয়াবহ যত ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে০১ সেপ্টেম্বর ২০২৫