সিলেটে পৌঁছে হামজা বললেন, ইনশা আল্লাহ আমরা উইন খরমু
Published: 17th, March 2025 GMT
সিলেট বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিঁড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ভিড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার জোগাড় হামজা চৌধুরীর। বাফুফে কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর উৎসুকদের ফাঁক গলে যখন সামনে আসলেন, চোখের সামনে শত শত ক্যামেরা, মোবাইল ফোন আর মানুষের ভিড়। সবাই হামজার কাছ থেকে কিছু শুনতে চান।
কিন্তু হামজা শোনাবেন কি, চারপাশের শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। কে কী বলছে বোঝা ভার। মিনিট তিনেক ধরে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা চালালেন হামজার আশপাশে থাকা কয়েকজন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ওই কোলাহলের মধ্যেই প্রশ্ন নিলেন হামজা, যার কিছু বোঝা গেল, কিছু বোঝাই গেল না। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ কেন্দ্র তাঁর বাংলাদেশে আসা। তা নিয়েই সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমরা উইন খরমু।’
প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তুলতে যাওয়া হামজা যুক্তরাজ্য থেকে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন বেলা পৌনে বারটার দিকে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফুটবলারকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক ফুটবলপ্রেমী ও ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা। ছিল অনেক গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের উপস্থিতি।
হামজার দেশে ফেরা নিয়ে গত কয়েকদিন দেশের ফুটবলে আলোড়ন উঠলেও বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনের কোনো ব্যবস্থা করেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের কর্মীদের পাশাপাশি প্রচুর ইউটিউবার ক্যামেরা হাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। হামজাকে অভিনন্দন জানানো ব্যানার নিয়ে হাজির হওয়া সমর্থকেরাও জড়ো হন একই জায়গায়। সব মিলিয়ে বিমানবন্দরের ভিআইপি প্রবেশপথের সামনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।
এর মধ্যেই বিমানবন্দরে অবতরণের পর হামজাকে নিয়ে আসা হয় গণমাধ্যমের সামনে। ‘হামজা, হামজা’ স্লোগান এবং ভিড়ের সামনে তাঁকে বেশ হাসিখুশিই দেখা গেছে। তবে কোলাহলের কারণে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করতে সময় লেগেছে। দেশে ফেরা এবং মানুষের ভিড় নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে হামজা বলেন, ‘অ্যামাজিং, অ্যামাজিং’। সঙ্গে ইংরেজিতে যোগ করেন, ‘অনেক দিন পর ফিরলাম। আমি রোমাঞ্চিত’।
হামজার বাংলাদেশ দলে অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে আগামী মঙ্গলবার এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে হট্টগোলের কারণে বুঝতেই পারেননি হামজা। নিজেই পাল্টা জিজ্ঞেস করেন ‘আমি বুঝছি না, বুঝছি না’। এরপর আবার বুঝিয়ে বললে হামজা বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ আমরা উইন খরমু। আমার বড় স্বপ্ন আছে। কোচ হাভিয়েরের সঙ্গে কাজ করব। ইনশা আল্লাহ আমরা উইন করিয়া প্রোগ্রেস করতে পারমু।’
এরপর আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়েছিলেন হামজা। তবে বাফুফে কর্মকর্তারা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। সিলেট বিমানবন্দর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হবিগঞ্জের দিকে রওনা দেন হামজা।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র স মন আল ল হ ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।