সিলেট বিমানবন্দরের ভিআইপি গেট দিয়ে বেরিয়ে যাওয়ার সিঁড়িতে পৌঁছাতে পৌঁছাতেই ভিড়ে চিঁড়েচ্যাপ্টা হওয়ার জোগাড় হামজা চৌধুরীর। বাফুফে কর্মকর্তা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আর উৎসুকদের ফাঁক গলে যখন সামনে আসলেন, চোখের সামনে শত শত ক্যামেরা, মোবাইল ফোন আর মানুষের ভিড়। সবাই হামজার কাছ থেকে কিছু শুনতে চান।

কিন্তু হামজা শোনাবেন কি, চারপাশের শব্দে কান ঝালাপালা হওয়ার অবস্থা। কে কী বলছে বোঝা ভার। মিনিট তিনেক ধরে সবাইকে শান্ত করার চেষ্টা চালালেন হামজার আশপাশে থাকা কয়েকজন। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে না আসায় ওই কোলাহলের মধ্যেই প্রশ্ন নিলেন হামজা, যার কিছু বোঝা গেল, কিছু বোঝাই গেল না। আগামী ২৫ মার্চ ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচ কেন্দ্র তাঁর বাংলাদেশে আসা। তা নিয়েই সিলেটি ভাষায় বললেন, ‘ইনশাআল্লাহ, আমরা উইন খরমু।’

প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের জার্সি গায়ে তুলতে যাওয়া হামজা যুক্তরাজ্য থেকে দেশের মাটিতে পা রেখেছেন বেলা পৌনে বারটার দিকে। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন এই ফুটবলারকে বরণ করে নিতে সকাল থেকেই সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ভিড় করেন বিপুলসংখ্যক ফুটবলপ্রেমী ও ফুটবল ফেডারেশনের কর্মকর্তা। ছিল অনেক গণমাধ্যমকর্মী ও ইউটিউবারদের উপস্থিতি।

হামজার দেশে ফেরা নিয়ে গত কয়েকদিন দেশের ফুটবলে আলোড়ন উঠলেও বিমানবন্দরে সংবাদ সম্মেলনের কোনো ব্যবস্থা করেনি বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। প্রিন্ট, অনলাইন ও ইলেকট্রনিক গণমাধ্যমের কর্মীদের পাশাপাশি প্রচুর ইউটিউবার ক্যামেরা হাতে বিমানবন্দরে হাজির হন। হামজাকে অভিনন্দন জানানো ব্যানার নিয়ে হাজির হওয়া সমর্থকেরাও জড়ো হন একই জায়গায়। সব মিলিয়ে বিমানবন্দরের ভিআইপি প্রবেশপথের সামনে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি তৈরি হয়।

এর মধ্যেই বিমানবন্দরে অবতরণের পর হামজাকে নিয়ে আসা হয় গণমাধ্যমের সামনে। ‘হামজা, হামজা’ স্লোগান এবং ভিড়ের সামনে তাঁকে বেশ হাসিখুশিই দেখা গেছে। তবে কোলাহলের কারণে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু করতে সময় লেগেছে। দেশে ফেরা এবং মানুষের ভিড় নিয়ে জিজ্ঞেস করা হলে হামজা বলেন, ‘অ্যামাজিং, অ্যামাজিং’। সঙ্গে ইংরেজিতে যোগ করেন, ‘অনেক দিন পর ফিরলাম। আমি রোমাঞ্চিত’।

হামজার বাংলাদেশ দলে অভিষেক হওয়ার কথা রয়েছে আগামী মঙ্গলবার এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে। এ বিষয়ে জিজ্ঞেস করা হলে প্রথমে হট্টগোলের কারণে বুঝতেই পারেননি হামজা। নিজেই পাল্টা জিজ্ঞেস করেন ‘আমি বুঝছি না, বুঝছি না’। এরপর আবার বুঝিয়ে বললে হামজা বলেন, ‘ইনশা আল্লাহ আমরা উইন খরমু। আমার বড় স্বপ্ন আছে। কোচ হাভিয়েরের সঙ্গে কাজ করব। ইনশা আল্লাহ আমরা উইন করিয়া প্রোগ্রেস করতে পারমু।’

এরপর আরও প্রশ্নের উত্তর দিতে চেয়েছিলেন হামজা। তবে বাফুফে কর্মকর্তারা তাঁকে সরিয়ে নিয়ে যান। সিলেট বিমানবন্দর থেকে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে হবিগঞ্জের দিকে রওনা দেন হামজা।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র স মন আল ল হ ফ টবল

এছাড়াও পড়ুন:

লবণ শ্রমিকদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়

“প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাঠে কাজ করি। লবণ তুলি, বস্তা ভরি। কিন্তু যে মজুরি পাই, তা দিয়ে এক বেলার চাল-ডালও কেনা যায় না। লবণ চাষের কাজ করলেও আমাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায়।” 

এ কথা কক্সবাজারের কুতুবদিয়া উপজেলার তাবলেরচর এলাকার লবণ শ্রমিক জাহেদ আলমের। হাজারো লবণ শ্রমিক দিনভর কড়া রোদে ঘাম ঝরালেও মিলছে না ন্যায্য মজুরি। নিদারুণ কষ্টে দিনাতিপাত করছেন জাহেদ আলমের মতো শত শত লবণ শ্রমিক। 

উত্তর ধুরুংয়ের লবণ চাষি রশীদ আহমদ বলেন, “এবার সাড়ে ৫ কানি জমিতে লবণ চাষ করেছি। এই বছর আবহাওয়া ভালো ছিল, উৎপাদনও হয়েছে। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় আমরা লোকসানে যাচ্ছি। প্রতিমণ লবণের উৎপাদন খরচ পড়ে ৩৫০ টাকার মতো, অথচ বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৮৫ টাকায়। এই লোকসান শ্রমিকদের মজুরিতেও প্রভাব পড়েছে।”

তিনি জানান, মজুরি দিতে না পারায় একদিকে শ্রমিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, অন্যদিকে চাষিরাও হতাশ হয়ে পড়ছেন।

আরমান হোসেন নামে আরেক শ্রমিক বলেন, “লবণের কাজ করেই জীবিকা নির্বাহ করে আসছি। লবণের দাম কম পেলেই চাষিরা আমাদের পারিশ্রমিকের ওপর লোকসান চাপিয়ে দেয়। এতে আমরা ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হই। এই অনিয়ম দূর হোক।” 

চাষিরা বলছেন, একদিকে জমির ইজারা, পলিথিন, লবণ পরিবহন, শ্রমিক মজুরি-সব খরচ বেড়েছে। অন্যদিকে বাজারে সিন্ডিকেট করে দাম নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে প্রতি মণ লবণে তারা ১৭০ টাকার মতো লোকসান গুণছেন। এই লোকসানের কারণে লবণ শ্রমিকরাও দিশেহারা হয়ে পড়ছেন।

লেমশীখালীর চাষি বেলাল উদ্দিন আকাশ বলেন, ‘‘গত বছর এই সময় প্রতি মণ লবণ বিক্রি করেছি ৪৫০ টাকায়। এখন পাই ১৮৫ টাকা। এতে শ্রমিকের মজুরি দিতেও আমরা হিমশিম খাচ্ছি।” 

চাষি আবুল বশর ও সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘‘সিন্ডিকেট করেই দাম নামিয়ে দেওয়া হচ্ছে যাতে লবণ উৎপাদন কমে যায়। পরে বিদেশ থেকে লবণ আমদানি করার সুযোগ তৈরি হয়। অথচ এতে মাঠের হাজারো শ্রমিকের জীবিকা হুমকির মুখে পড়ছে।”

মহেশখালী লবণ চাষি ঐক্য সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি শাহাব উদ্দিন বলেন, ‘‘মজুরি না পেয়ে অনেক শ্রমিক লবণের মাঠ ছাড়ছেন। এইভাবে চলতে থাকলে শ্রমিক সংকট হবে।”

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) কক্সবাজার লবণশিল্প উন্নয়ন প্রকল্পের উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. জাফর ইকবাল ভূঁইয়া বলেন, “চাষিদের ন্যায্য দাম না পাওয়ার কারণে উৎপাদনে অনীহা দেখা দিচ্ছে। এর ফলে শ্রমিকদেরও চাহিদা কমে যাচ্ছে। বাজারে দাম কমে যাওয়ার পেছনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” 

বাংলাদেশ ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি মৌসুমে কক্সবাজার জেলার সদর, কুতুবদিয়া, মহেশখালী, পেকুয়া, চকরিয়া, ঈদগাঁও, টেকনাফ এবং চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলায় প্রায় ৬৮ হাজার একর জমিতে লবণ চাষ হচ্ছে। গত ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত এসব অঞ্চলে উৎপাদিত হয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজার মেট্রিক টন লবণ। মৌসুম শেষে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ২৬ লাখ ১০ হাজার মেট্রিক টন, যা দেশের বার্ষিক চাহিদার সমান।

সম্পর্কিত নিবন্ধ