Prothomalo:
2025-05-01@05:01:25 GMT

রমজানে নবীজির (সা.) সফর হলে

Published: 17th, March 2025 GMT

যুদ্ধাভিযান ছাড়াও রমজানে নানা কারণে নবীজির (সা.) সফর হতো। এ-সময় তিনি কখনো রোজা রাখতেন, কখনো রাখতেন না, বরং খাওয়া-দাওয়া করতেন এবং অন্যদেরও আদেশ দিতেন রোজা না-রাখার। ইবনে আব্বাস তরফ থেকে তাউস বর্ণনা করেন, ‘নবীজি (সা.) রমজানে রোজা রেখে সফরে বের হলেন, পথে উসফান এলাকায় পৌঁছে পানির পাত্র আনতে বললেন। সবাইকে দেখাতে প্রকাশ্যে পানি পান করলেন তিনি। মক্কায় পৌঁছা অবধি তিনি পানাহার স্বাভাবিক রাখলেন। ইবনে আব্বাস বলতেন, ‘নবীজি (সা.

) রমজানের সফরে রোজা রেখেছেনও, আবার ভেঙেছেনও। সুতরাং এ-সময় যার ইচ্ছা রাখবে, যার ইচ্ছা রাখবে না। (বুখারি, হাদিস: ৪২৮৯)

 আল্লাহ বলেছেন, ‘আর যে অসুখে পড়বে হবে বা সফরে থাকবে, সে অন্য দিনগুলোতে সে-সময়ের (রোজার) সংখ্যা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ চান, কঠিন না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫)

 নবীজি (সা.) কখন রোজা রাখতেন

 আবু দারদা বলেন, ‘রমজানে আমরা প্রচণ্ড তাপের মধ্যে রাসুলের (সা.) সঙ্গে সফরে বের হলাম। খরতাপ এত বেশি ছিল যে, আমাদের কেউ কেউ মাথায় হাত দিচ্ছিল। রাসুল (সা.) ও আবদুল্লাহ বিন রাওয়াহা ছাড়া আমাদের কেউ সেদিন রোজাদার ছিলেন না। (মুসলিম, হাদিস: ১,১২২)

হাদিসটি প্রমাণ করে যে, যদি কষ্টের সম্ভাবনা না থাকে, রোজা না রাখার মতো কিছু না ঘটে, তবে রোজা রাখাই ভালো। (রদ্দুল মুহতার, ২/৪২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ৩/৪০৩)

তবে রোজা না রাখার কারণ থাকলে না রাখাই ভালো। যেমন নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহ পছন্দ করেন তার দেওয়া সহজটা যাপন করা হোক, পাপে লিপ্ত হওয়াকে পছন্দ করেন না। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ৫,৮৬৬)

আরও পড়ুনমহানবী (সা.)-কে ভালোবাসার ৭টি নিদর্শন০৬ মার্চ ২০২৫

কখন রোজা রাখা তিনি পছন্দ করতেন না

 মক্কা বিজয়কালে রমজান মাসে নবীজি (সা.) রোজা রাখেননি। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘রোজা রেখে তিনি ‘কুদাইদ’ ও ‘উসফান’ এলাকার মধ্যবর্তী জলাধারে নেমে রোজা ভেঙে ফেললেন, এরপর মাস শেষ হওয়া অবধি তিনি খাবার-পানি স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করেছেন করেছেন। (বুখারি, হাদিস: ৪,২৭৫)

 আনাস (রা.) বলেন, ‘আমরা তখন নবীজির (সা.) সঙ্গে ছিলাম, আমাদের মধ্যকার অনেকে নিজের কাপড় দিয়ে ছায়া নিচ্ছিল। যারা রোজা ছিলেন তারা নিষ্ক্রিয় থাকলেন, আর যারা খাবার পানি গ্রহণ করলেন তারা বাহন হাঁকিয়ে কাজে আত্মনিয়োগ করলেন এবং প্রচুর শ্রম দিলেন তারা। নবীজি (সা.) বললেন, পানাহারকারীরা আজ সওয়াব নিয়ে গেছে।’ (বুখারি, হাদিস: ২৭৩৩)

 তাই জিহাদ বা ইসলামের জন্য শক্তি খরচ করতে হবে এমন সময়ে রোজা রাখা আলেমগণ মাকরুহ বলেছেন। কারণ, তাতে দুর্বল হয়ে মূল উদ্দেশ্য সিদ্ধিতে অসফল হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়। (রদ্দুল মুহতার, ২/৪২১; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া, ৩/৪০৩)

আরও পড়ুন  যেমন ছিল মহানবীর (সা.) সাহরি১১ মার্চ ২০২৫

কখন রোজা রাখতে নিষেধ করেছেন

 যদি রোজা রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে এবং পানাহার আবশ্যক হয়, তখন পানাহার করা বাধ্যতামূলক। আল্লাহ কারও ওপর বিধান চাপিয়ে দেন না, এমনকি নিজের ওপর তেমন বিধান বানিয়ে নেওয়াও বৈধ নয়। কঠিন অবস্থায় রোজা পালনকারীকে লক্ষ্য করে নবীজি (সা.) বললেন, ‘এরা পাপী, এরা পাপী।’ (মুসলিম, হাদিস: ১,১১৪)

 এক ব্যক্তি এমন কঠিন দুঃসাধ্য সময়ে রোজা রেখেছে এবং একদল তাকে ঘিরে ছায়া দিচ্ছে। নবীজি (সা.) তা দেখে বললেন, ‘(এভাবে) সফরে রোজা রাখা কোনো পুণ্যের কাজ নয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ২,৪০৭)

 আবু সাইদ খুদরি বলেন, রোজা রেখে আমরা নবীজির (সা.) সঙ্গে মক্কা সফরে বের হলাম। যাত্রা বিরতিকালে তিনি বললেন, ‘তোমরা শত্রুপক্ষের কাছাকাছি পৌঁছে গেছ, পানাহার তোমাদের শরীর সবল করবে।’ সুতরাং ‘অবকাশ’ দেখে আমাদের কেউ রোজা রেখেছেন, কেউ রাখেন নি। অন্য স্থানে গিয়ে তিনি আমাদের বললেন, ‘ভোরে তোমরা শত্রুর মুখোমুখি হবে, পানাহার তোমাদের জন্য বলদায়ক হবে, সুতরা, তোমরা পানাহার করো।’ এবার পানাহার ছিল বাধ্যতামূলক। আমরা সবাই খাবার-পানি গ্রহণ করলাম। (মুসলিম, হাদিস: ১,১২০)

 কঠিন শত্রুর মুখোমুখি হলে, শক্তিমত্তা প্রদর্শনের বিকল্প না থাকলে এবং রোজা রাখলে দুর্বল হয়ে পড়ার সমূহ আশঙ্কা থাকলে, রোজা রাখা সংগত নয়। একদল আলেম বলেছেন, এ-সময় রোজা রাখা নিষিদ্ধ। তবে ঐকমত্য বিধান যে, রোজা রাখলে তা শুদ্ধ হয়ে যাবে এবং পুনরায় কাজা আদায় করতে হবে না—তবে গুনাহগার হবে।

আরও পড়ুনযেমন ছিল মহানবীর (সা.) ইফতার১০ মার্চ ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ আম দ র বল ছ ন বলল ন রমজ ন

এছাড়াও পড়ুন:

নোয়াখালীর কৃষকেরা কেন হাইব্রিড ধানবীজ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন

দুই একর জমিতে জিংকসমৃদ্ধ ব্রি-৭৪ জাতের ধান চাষ করেছেন নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলার পূর্ব চরবাটা এলাকার কৃষক মো. মোস্তফা। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি উদ্ভাবিত এই জাতের প্রতি হেক্টরে ফলন হয়েছে ৯ দশমিক ২৩ মেট্রিক টন, যা বাজারে থাকা যেকোনো হাইব্রিড ধানের চেয়ে বেশি।

নিজের খেতে চোখজুড়ানো সোনালি ধান দেখে অনেক বেশি উচ্ছ্বসিত কৃষক মোস্তফা। কারণ, বাজার থেকে কেনা হাইব্রিড ধান থেকে বীজ করা যায় না। কিন্তু ব্রি উদ্ভাবিত এই ধান থেকে অনায়াসে বীজ তৈরি করতে পারবেন তিনি। এতে থাকবে না বীজ কেনা নিয়ে দুশ্চিন্তা। সেই সঙ্গে ধানগুলো জিংকসমৃদ্ধ হওয়ায় পরিবারের জিংকের ঘাটতিও দূর হবে। মোস্তফা বলেন, আগামী দিনে তিনি আরও বেশি পরিমাণ জমিতে এই ধান চাষ করবেন।

মোস্তফার মতো একই এলাকার আরেক কৃষক ওমর ফারুকও বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট(ব্রি) উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান ব্রি-৯২ চাষ করেছেন দুই একর জমিতে। বীজ ও সারসহ এ পর্যন্ত তাঁর খরচ হয়েছে ৬২ হাজার টাকা। খেতের ধান এরই মধ্যে পাকা শুরু করেছে। ফলনের যে অবস্থা দেখছেন, তাতে মনে হচ্ছে, একরে ফলন হবে কমপক্ষে ১৭০ মণ। যার বাজারমূল্য দেড় লাখ টাকার বেশি।

ওমর ফারুকের খেতে ব্রির এই উচ্চ ফলনশীল ধানের আবাদ দেখে এরই মধ্যে আশপাশের এলাকার অনেক কৃষক যোগাযোগ করেছেন বীজ নেওয়ার জন্য। কারণ, তাঁরা হাইব্রিড চাষ করে ঝুঁকিতে পড়তে চান না। নিজের বীজে নিজেই স্বয়ংসম্পন্ন হতে চান। তাই ওমর ফারুক ঠিক করেছেন, উৎপাদিত ধান থেকে ২৫ মণ রেখে দেবেন বীজের জন্য। এই বীজ বিক্রি করে বাড়তি আয় হবে তাঁর।

শুধু কৃষক হাজি মোস্তফা কিংবা ওমর ফারুকই নন, নোয়াখালীর সুবর্ণচরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার কৃষকেরা চলতি বোরো মৌসুমে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান চাষ করে সফলতার মুখ দেখেছেন। পাচ্ছেন হাইব্রিড ধানের চেয়েও বেশি ফলন। এর মধ্যে মোহাম্মদপুর গ্রামের কৃষক মাহফুজা বেগম ও আশরাফ হোসেন দম্পতির খেতে চাষ করা ডায়াবেটিক রোগীদের সহনীয় ব্রি-১০৫ জাতের ধানের ফলন পাওয়া গেছে হেক্টরপ্রতি ৮ দশমিক ২ টন, যা বাজারের হাইব্রিড বীজের সমান। এই ধানেরও বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন কৃষকেরা।

চলতি বোরো মৌসুমে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বৃহত্তর নোয়াখালী অঞ্চলে নতুন জাতের ব্রি ধানের ৪৯০টি প্রদর্শনী খামার করেছে। পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন-পিকেএসএফের স্থানীয় সহযোগী প্রতিষ্ঠান সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার মাধ্যমে এসব প্রদর্শনীতে ব্রি উদ্ভাবিত ৮ জাতের ধান চাষ করা হয়েছে। এই জাতের ধানগুলো উচ্চ ফলনশীল, রোগ প্রতিরোধী এবং বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ।

কৃষকেরা জানান, এত দিন তাঁরা বাজার থেকে বিভিন্ন কোম্পানির হাইব্রিড ও দেশীয় উফশী (উচ্চ ফলনশীল) জাতের ধানের বীজ কিনে আবাদ করে আসছেন। এবার এসবের বাইরে ব্রি উদ্ভাবিত উফশী ২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ ধান আবাদ করেছেন অনেকে। এর মধ্যে হাইব্রিড বীজের প্রতি কেজির দাম ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। আর ব্রির উফশী ধানের বীজ ৫০-১০০ টাকায় পাওয়া যায়। এর মধ্যে প্রতি একর জমিতে চাষ করতে হাইব্রিড ধানের বীজ লাগে ৬ কেজি এবং উফশী জাতের বীজ লাগে ১০ কেজি। এসব বীজের মধ্যে হাইব্রিড প্রতি একরে উৎপাদন হয় ৯০ মণ, উফশী (উচ্চ ফলনশীল) ব্রি-২৮, ২৯, ৫০ ও ৫৫ উৎপাদন হয় ৭০-৭৫ মণ।

পিকেএসএফের কৃষি ইউনিট পরিচালিত সাগরিকা সমাজ উন্নয়ন সংস্থার কৃষিবিদ শিবব্রত ভৌমিক প্রথম আলোকে বলেন, নোয়াখালী অঞ্চলের ৯৫ শতাংশ কৃষক বোরো মৌসুমে মূলত বাজারের হাইব্রিড ধানের ওপর নির্ভর থাকেন। আর দেশীয় উদ্ভাবিত ব্রি ধান জাত আবাদ করেন মাত্র ৫ শতাংশ কৃষক। সাম্প্রতিক সময়ে দেখা গেছে, হাইব্রিড ধান রোগবালাইয়ে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এতে অনেক কৃষকই লোকসানের মুখে পড়ছেন। তবে এ ক্ষেত্রে ব্রি উদ্ভাবিত নতুন ব্রি-ধানগুলোর ফলন হাইব্রিডের মতো ফলন দেয় এবং কিন্তু রোগবালাই নেই বললেই চলে। এতে কৃষকের খরচ কমে। লাভ হয়, আর বীজও থাকে নিজের হাতে।

ব্রির উচ্চফলনশীল জাতের নতুন জাতের ধান চাষের কথা বলতে গিয়ে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মীরা রানী দাশ প্রথম আলোকে বলেন, ব্রি-উদ্ভাবিত বিভিন্ন পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ ধানগুলো চাষাবাদে কৃষকদের মধ্যে তাঁরা ব্যাপক আগ্রহ লক্ষ করছেন। এর প্রধান কারণ হলো, এসব ধান চাষ করলে একদিকে পুষ্টির ঘাটতি পূরণ হবে, অন্যদিকে কৃষকেরা নিজেরা নিজেদের বীজ সংরক্ষণ করতে পারবেন। তা ছাড়া ব্রি উদ্ভাবিত এসব ধানে রোগবালাইয়ের আক্রমণ হাইব্রিডের তুলনায় কম এবং ফলন হাইব্রিডের সমান কিংবা ক্ষেত্রবিশেষে হাইব্রিড থেকেও বেশি।

এ বিষয়ে ব্রির ফেনীর সোনাগাজীর আঞ্চলিক কার্যালয়ের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা আমিনুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, ‘ব্রি এ পর্যন্ত ১১৫টি জাত আবিষ্কার করেছে। আগে আমাদের উদ্দেশ্য ছিল খাদ্যের অভাব দূর করা, ফলন বাড়ানো। বর্তমানে আমাদের উদ্দেশ্য খাদ্য ও পুষ্টির নিরাপত্তা। খাবার যাতে পুষ্টিমানসম্পন্ন হয়। অধিকাংশই আমিষ ও ভিটামিনের উৎস মাছ, মাংস, ডিম এবং ফলমূল। কিন্তু এসব সবাই কিনে খেতে পারেন না। যেহেতু ভাত প্রধান খাদ্য, এখন আমাদের যে জাতগুলো, এগুলো উদ্ভাবনে পুষ্টির দিকে বেশি মনোযোগ দেওয়া হয়েছে।’ নতুন জাতগুলো পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, সেই সঙ্গে হাইব্রিডের প্রতি নির্ভরতা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে বলে তাঁরা আশা করছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ