বাসে জবি ছাত্রীকে হেনস্তা, মুচলেকা দিয়ে ছাড়া পেল মালিকপক্ষ
Published: 18th, March 2025 GMT
রাজধানীতে চলাচলকারী ভিক্টর ক্লাসিক বাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে ভিক্টর ক্লাসিকের ১০টি বাস আটকে রাখে।
এদিকে, বাসের মালিকপক্ষ দোষ স্বীকার করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বাসগুলো ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।
সোমবার (১৭ মার্চ) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে বাসগুলো আটকে দেন শিক্ষার্থীরা।
জানা যায়, জবির ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী গুলিস্তান থেকে বাসে ওঠার পর চালক ও সহকারী তাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করতে থাকেন এবং শারীরিকভাবে হেনস্তার চেষ্টা করেন। বাসের অন্যান্য যাত্রীদের বিষয়টি জানালেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার বন্ধুদেরকে জানালে তারা ভিক্টর ক্লাসিকের বাসগুলো আটকে রাখেন। তবে হেনস্থাকারী বাস চালক ও তার সহকারীকে পাওয়া যায়নি।
ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বন্ধু সিফাত সাকিব বলেন, “আমাদের ব্যাচের এক বন্ধুকে গুলিস্তান থেকে বাসে ওঠার সময় হেনস্তা করা হয়। আমরা ওই বাস ও বাসের হেলপারকে আর পাইনি। এজন্য আমরা ভিক্টর ক্লাসিকের ১০টি বাস আটকে রেখেছি।”
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা প্রায়ই শুনি আমাদের বোনেরা এমন হেনস্তার শিকার হয়। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমি যে হেনস্তার শিকার হয়েছি, তা যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে না হয়।”
এদিকে, বাস থেকে নেমে ভুক্তভোগী ছাত্রী জবি নিরাপত্তা সেলে অভিযোগ করেন। পরে জবি নিরাপত্তা সেল শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ করে এবং ভিক্টর ক্লাসিক মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় বসে। আলোচনায় শিক্ষার্থীদের করা দাবিগুলো আপত্তি ছাড়াই মালিকপক্ষ মেনে নেয়।
শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করার দায় ভিক্টর ক্লাসিক মালিক সমিতিকে নিতে হবে এবং অভিযুক্ত স্টাফদেরকে চাকরিচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্ত ভাড়া মওকুফ করতে হবে এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদেরকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে; ভিক্টর ক্লাসিকের সব বাসের স্টাফদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; নারী শিক্ষার্থী ও যাত্রীদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে কি না, তা লক্ষ্য রাখতে প্রতিটি বাসে অভিযোগ বক্স রাখতে হবে; জরুরি পুলিশ সহায়তার জন্য সরকারি ও মানবাধিকার সংস্থার হটলাইন নম্বর রাখতে হবে।
ভিক্টর ক্লাসিক মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো.
এ সময় শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা ঘটলে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান।
এ ব্যাপারে প্রক্টর তাজাম্মুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
গত বছর অক্টোবরে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে জবির আরেক ছাত্রী হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। সে সময়ও ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ১১টি বাস আটকে রেখেছিলেন।
ঢাকা/লিমন/মেহেদী
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
দীর্ঘ ৯ মাস পর শনিবার থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলের অনুমতি দিয়েছে সরকার। কিন্তু প্রথম দিন কোনো জাহাজ সেন্ট মার্টিনে না যাওয়ার কারণে পর্যটকেরা দ্বীপে যেতে পারেননি। হাজারো পর্যটক সেন্ট মার্টিনে যেতে না পেরে হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন। অন্যদিকে জাহাজমালিকেরা বলছেন, সরকারের বিভিন্ন শর্তের কারণে পর্যটকদের আগ্রহ না থাকায় জাহাজ চলাচল বন্ধ ছিল।
কক্সবাজার জেলা প্রশাসন সূত্র জানায়, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী দ্বীপটি পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে। ১ নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিনে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচলে সরকারের কোনো বাধা নেই। লিখিতভাবে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়েছে। তবে দিনে গিয়ে দিনেই চলে আসতে হবে; রাতে থাকা যাবে না।
এদিকে রাতে থাকার সুযোগ না থাকায় পর্যটকেরা যেতে আগ্রহী হচ্ছেন না। কারণ, দীর্ঘ সময় ভ্রমণ করে দ্বীপে গিয়ে আবার সেদিনই চলে আসতে হবে। এ কারণে জাহাজমালিকেরাও জাহাজ চালাতে অনীহা প্রকাশ করছেন। তাঁদের দাবি, দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসার সিদ্ধান্ত বাস্তবসম্মত নয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. শাহিদুল আলম বলেন, জাহাজমালিকেরা যদি জাহাজ চলাচল বন্ধ রাখেন, সেটা তাঁদের ব্যাপার। সেন্ট মার্টিনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সরকারের জারি করা ১২টি নির্দেশনা এবার কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করবে জেলা প্রশাসন।
শাহিদুল আলম বলেন, আগে টেকনাফ থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল করলেও নিরাপত্তার কারণে এখন কক্সবাজার শহর থেকে পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াত করবে।
সি ক্রুজ অপারেটরস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (স্কোয়াব) সাধারণ সম্পাদক হোসাইন ইসলাম বাহাদুর বলেন, কক্সবাজার শহরের নুনিয়ারছড়া ঘাট থেকে জাহাজ ছেড়ে গেলে সেন্ট মার্টিন পৌঁছাতে সাত থেকে আট ঘণ্টা সময় লাগে। ফলে পর্যটকেরা কিছুই ঘুরে দেখতে পারবেন না। দিনে গিয়ে দিনে ফিরে আসা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি ব্যবসার জন্যও তা অলাভজনক। এ কারণেই অনেক পর্যটক সেন্ট মার্টিন যেতে অনীহা প্রকাশ করেছেন।
হোসাইন ইসলাম আরও বলেন, রাতযাপন করার সুযোগ না থাকলে সেন্ট মার্টিনের পর্যটন মৌসুম জমে না। পর্যটকেরা রাতের সৈকত দেখতে চান, ঢেউয়ের শব্দ শুনতে চান। সেটাই তো সেন্ট মার্টিনের আসল আকর্ষণ।
পরিবেশ অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের পরিচালক মো. জমির উদ্দিন বলেন, সেন্ট মার্টিন দ্বীপে ভ্রমণের ক্ষেত্রে সরকারের নির্দেশনা কঠোরভাবে কার্যকর করা হবে। এ লক্ষ্যে পরিবেশ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।
আরও পড়ুনসেন্ট মার্টিনে নিষেধাজ্ঞা উঠছে কাল, তবে জাহাজ চলবে কি৩১ অক্টোবর ২০২৫