রাজধানীতে চলাচলকারী ভিক্টর ক্লাসিক বাসে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) এক নারী শিক্ষার্থীকে হেনস্তার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে ভিক্টর ক্লাসিকের ১০টি বাস আটকে রাখে।

এদিকে, বাসের মালিকপক্ষ দোষ স্বীকার করে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলে বাসগুলো ছেড়ে দেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১৭ মার্চ) রাত ১০টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে থেকে বাসগুলো আটকে দেন শিক্ষার্থীরা।

জানা যায়, জবির ইংরেজি বিভাগের এক ছাত্রী গুলিস্তান থেকে বাসে ওঠার পর চালক ও সহকারী তাকে উদ্দেশ্য করে অশালীন মন্তব্য করতে থাকেন এবং শারীরিকভাবে হেনস্তার চেষ্টা করেন। বাসের অন্যান্য যাত্রীদের বিষয়টি জানালেও কেউ এগিয়ে আসেননি। পরে ভুক্তভোগী ছাত্রী বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তার বন্ধুদেরকে জানালে তারা ভিক্টর ক্লাসিকের বাসগুলো আটকে রাখেন। তবে হেনস্থাকারী বাস চালক ও তার সহকারীকে পাওয়া যায়নি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীর বন্ধু সিফাত সাকিব বলেন, “আমাদের ব্যাচের এক বন্ধুকে গুলিস্তান থেকে বাসে ওঠার সময় হেনস্তা করা হয়। আমরা ওই বাস ও বাসের হেলপারকে আর পাইনি। এজন্য আমরা ভিক্টর ক্লাসিকের ১০টি বাস আটকে রেখেছি।”

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ভুক্তভোগী নারী শিক্ষার্থী বলেন, “আমরা প্রায়ই শুনি আমাদের বোনেরা এমন হেনস্তার শিকার হয়। আমি এ ঘটনার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই। আমি যে হেনস্তার শিকার হয়েছি, তা যেন আর কোনো মেয়ের সঙ্গে না হয়।”

এদিকে, বাস থেকে নেমে ভুক্তভোগী ছাত্রী জবি নিরাপত্তা সেলে অভিযোগ করেন। পরে জবি নিরাপত্তা সেল শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিক্ষোভ করে এবং ভিক্টর ক্লাসিক মালিক সমিতির সঙ্গে আলোচনায় বসে। আলোচনায় শিক্ষার্থীদের করা দাবিগুলো আপত্তি ছাড়াই মালিকপক্ষ মেনে নেয়।

শিক্ষার্থীদের দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে- শিক্ষার্থীদের হেনস্থা করার দায় ভিক্টর ক্লাসিক মালিক সমিতিকে নিতে হবে এবং অভিযুক্ত স্টাফদেরকে চাকরিচ্যুত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে; আসন্ন ঈদ-উল-ফিতর পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সমস্ত ভাড়া মওকুফ করতে হবে এবং পরবর্তীতে শিক্ষার্থীদেরকে যথোপযুক্ত মর্যাদা দিতে হবে; ভিক্টর ক্লাসিকের সব বাসের স্টাফদের নিয়মিত কাউন্সিলিংয়ের ব্যবস্থা করতে হবে; নারী শিক্ষার্থী ও যাত্রীদেরকে যথাযথ মূল্যায়ন হচ্ছে কি না, তা লক্ষ্য রাখতে প্রতিটি বাসে অভিযোগ বক্স রাখতে হবে; জরুরি পুলিশ সহায়তার জন্য সরকারি ও মানবাধিকার সংস্থার হটলাইন নম্বর রাখতে হবে। 

ভিক্টর ক্লাসিক মালিক সমিতির সহ-সভাপতি মো.

আসলাম ও সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক মানিক শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো বাস্তবায়নে লিখিত প্রতিশ্রুতিতে স্বাক্ষর করেছেন।

এ সময় শিক্ষার্থীরা ভবিষ্যতে এ রকম ঘটনা ঘটলে আরো কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে বলে জানান।

এ ব্যাপারে প্রক্টর তাজাম্মুল হকের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি। 

গত বছর অক্টোবরে ভিক্টর ক্লাসিক বাসে জবির আরেক ছাত্রী হেনস্তার শিকার হয়েছিলেন। সে সময়ও ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা ১১টি বাস আটকে রেখেছিলেন।

ঢাকা/লিমন/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ