হঠাৎ ‘ওরস বিরিয়ানি’র দিকে কেন ঝুঁকছে মানুষ
Published: 19th, March 2025 GMT
সারি করে বসানো হয়েছে চেয়ার। টেবিলে পেতে রাখা হয়েছে শানকি। শানকিতে ইফতারের পরিচিত পদ ছোলা, পেঁয়াজু কিংবা বেগুনি নেই। আছে ‘ওরস বিরিয়ানি’। সাইরেন বাজতেই শুরু হলো খাওয়া-দাওয়া। গতকাল মঙ্গলবার চট্টগ্রাম নগরের সিআরবি এলাকায় গিয়ে এ চিত্র চোখে পড়ল।
সিআরবিতে ‘ওরস হাইলে আইয়ুন’ নাম দিয়ে টাঙানো হয়েছে শামিয়ানা। প্রতিদিন ইফতারের সময় দুই থেকে আড়াই শ রোজাদার সেখানে মিলিত হচ্ছেন। ফুলপ্লেট ১২০, হাফপ্লেট ৭০ টাকায় ওরস বিরিয়ানির স্বাদ নিচ্ছেন তাঁরা। সঙ্গে আরও আছে ঐতিহ্যবাহী মেজবান। চেয়ার-টেবিলের পাশেই সাতটি ডেকচিতে চলে রান্না। প্রতিদিন ১১৫ কেজি গরুর মাংস, ১২০ কেজি চাল, ৫ কেজি আলু ও ১ কেজি গাজরের সংমিশ্রণে তৈরি হয় এই মুখরোচক পদ।
বিরিয়ানি তৈরির এই কর্মযজ্ঞে নেতৃত্ব দেন মোহাম্মদ হানিফ বাবুর্চি। তিনি জানান, গত প্রায় দেড় যুগ তিনি বিভিন্ন জায়গায় ওরস বিরিয়ানি রান্না করছেন। চাল, মাংস, আলু ও মসলার পরিকল্পিত ব্যবহারের ফলে এ খাবার ভোজনরসিকদের প্রিয় হয়ে উঠেছে। দরবার থেকে চলে এসেছে হোটেল-রেস্তোরাঁয়। সাত ডেকচিতে ইফতার থেকে সাহ্রি পর্যন্ত ২ হাজার ১০০ জন খেতে পারেন।
এবার পবিত্র রমজান শুরু হওয়ার পর নগর ও আশপাশের এলাকাগুলোতে ওরস বিরিয়ানি হঠাৎ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। সন্ধ্যা থেকে সাহ্রি পর্যন্ত অস্থায়ী দোকানগুলোতে চলছে মাংস কাটাকাটি, বিরিয়ানি তৈরি ও বেচাবিক্রি। নগরের অলিগলির রেস্তোরাঁ, হোটেলে ঢুঁ মারলেই এই ওরস বিরিয়ানির ঘ্রাণ নাকে লাগছে। দল বেঁধে বন্ধুরা যাচ্ছেন ওরস বিরিয়ানির স্বাদ নিতে।
গতকাল সন্ধ্যায় সিআরবিতে কথা হলো রাজ্জাক সরকার, সেলিম উদ্দিন ও রায়হান মাহমুদের সঙ্গে। তাঁরা তিন বন্ধু এসেছিলেন এই বিরিয়ানি চেখে দেখতে। ১২০ টাকা দরে তিন প্লেট বিরিয়ানি নিয়ে অপেক্ষা করছিলেন তাঁরা। ইফতারের পর একফাঁকে প্রথম আলোকে বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে ওরস বিরিয়ানি খাওয়ার ইচ্ছা ছিল তাঁদের। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে এই বিরিয়ানির ছবিসহ অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তাই শেষমেশ তাঁরাও চলে এলেন। খেতে কেমন লাগল, এমন প্রশ্নে সেলিম একশব্দে জবাব দিলেন, ‘দারুণ।’
তবরুক থেকে বিরিয়ানি
হাল আমলের ওরস বিরিয়ানি একসময় তবরুক হিসেবে মাজারে রান্না হতো। তবে সে ইতিহাসে ডুব দেওয়ার আগে বিরিয়ানির ইতিবৃত্ত জানা যাক। সুগন্ধি চালের সঙ্গে হরেক পদের মাংস, বিভিন্ন মসলা মিশিয়ে রান্না করা হয় বিরিয়ানি। ২০১৭ সালে ‘বিরিয়ানি’ নামে কুকবুক প্রকাশ করেন ভারতীয় লেখিকা প্রতিভা করণ। এ বইয়ে তিনি বিরিয়ানির উৎপত্তি, ভারতবর্ষে এটির আগমন ও অঞ্চলভেদে বৈচিত্র্য নিয়ে আলোচনা করেছেন। বইতে তিনি লিখেছেন: ১৬ শতকে মুসলিম শাসকেরা ভারতে সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। ওই সময় তাঁরা পারস্য থেকে ভারতবর্ষে বিরিয়ানি বানানোর কৌশল নিয়ে আসেন। বিরিয়ানি শব্দটি ফারসি ‘বিরিঞ্জ’ শব্দ থেকে এসেছে। এটি ভাতের ফারসি প্রতিশব্দ।
চলছে ওরস বিরিয়ানি রান্না। গতকাল দুপুরে নগরের সিআরবি এলাকায়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ওরস ব র য় ন স আরব ইফত র
এছাড়াও পড়ুন:
কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৩৫ কিলোমিটারজুটে যানজট
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার নিমশার থেকে দাউদকান্দি পর্যন্ত প্রায় ৩৫ কিলোমিটারজুড়ে যানজট দেখা দিয়েছে। এতে ভোগান্তিতে পড়েছেন মহাসড়কে চলাচলকারী যাত্রী ও চালকেরা। নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একটি কাভার্ড ভ্যান উল্টে যাওয়ায় আজ বৃহস্পতিবার ভোর থেকে এ যানজট দেখা দেয়।
হাইওয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার ভোরে মহাসড়কে কুমিল্লার চান্দিনা উপজেলার নূরীতলা এলাকায় একটি কাভার্ড ভ্যান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে উল্টে যায়। ফেনী থেকে রেকার এনে কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধারের কাজ শুরু করে পুলিশ।
সকাল সাড়ে ১০টায় এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত মহাসড়কে যানজট দেখা গেছে।
ঢাকাগামী রয়েল পরিবহনের চালক রমিজ উদ্দিন বলেন, সকাল সাড়ে ৮টায় ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা করে বুড়িচংয়ের নিমশার বাজারে যানজটে এক ঘণ্টা বসে থাকতে হয়েছে। ৫ মিনিট গাড়ি চললে ২০ মিনিট বসে থাকতে হয়। এভাবে ১০টা ৪০ মিনিটে চান্দিনায় পৌঁছেছি। এ সময়ে ঢাকার কাছাকাছি থাকার কথা ছিল।
নিমশার বাজারে আটকে থাকা প্রাইভেট কারের যাত্রী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ভোর থেকে যানজট অথচ সড়কে হাইওয়ে পুলিশ দেখছি না।
ইলিয়টগঞ্জ হাইওয়ে পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রুহুল আমিন বলেন, মহাসড়কের নূরীতলা এলাকায় উল্টে কাভার্ড ভ্যানটি আড়াআড়িভাবে পড়ে ছিল। পরে ঢাকামুখী লেনের বেশ কিছু গাড়ি উল্টো পথে ঢোকায় যানজটের সৃষ্টি হয়েছে। ফেনী থেকে ক্রেন এনে গাড়িটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে।
হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিওনের পুলিশ সুপার অতিরিক্ত ডিআইজি মো. খাইরুল আলম সমকালকে বলেন, দুর্ঘটনার কারণেই যানজট দেখা দিয়েছে। দুর্ঘটনা কবলিত কাভার্ড ভ্যানটি উদ্ধার করা হয়েছে। যান চলাচল স্বাভাবিক হচ্ছে।