মুসলমান মাত্রই পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা ও বরকত লাভ করতে চায়। তারা চায় আল্লাহর নৈকট্য ও সেসব পুরস্কার অর্জন করতে, যা এই মাসের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ঘোষণা করেছেন। ফলে প্রত্যেক মুসলিম নিজের সাধ্যানুসারে ইবাদত-বন্দেগির চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু ভুল এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। নিম্নে এমন কয়েকটি ভুলের আলোচনা করা হলো।

১.

রোজার বিধান না শেখা: কোনো কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হলে তার বিধান, নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক। রোজা ইসলামি শরিয়তের একটি ফরজ বিধান। আর ইসলামি শরিয়তের নিয়ম হলো, ফরজ ইবাদত পালনের জন্য অপরিহার্য জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। তাই রোজার বিধানগুলো জেনে নেওয়া মুসলমানের জন্য ফরজ। রোজার বিধানের মধ্যে আছে এর নিয়ত করার সময় ও পদ্ধতি, সাহরি ও ইফতারের মাসয়ালা, কোন কোন কাজ করলে রোজা মাকরুহ হয়, কোন কাজ করলে তা ভেঙ্গে যায় এবং কোন কাজ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না ইত্যাদি বিষয়গুলো জানা। পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে যেসব নফল ইবাদতগুলো করতেন সেগুলো সম্পর্কেও অবগত হওয়া। রোজার বিধানগুলো না জানলে সদিচ্ছা থাকার পরেও রোজা সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। যেমন কেউ রোজা কথা বিস্মৃত হয়ে কোনো কিছু খেয়ে ফেললে সে তার রোজা পূর্ণ করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রোজার কথা বিস্মৃত হয় এবং খায় বা পান করে সে তার রোজা পূর্ণ করবে। কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৫)

কিন্তু কেউ শরিয়তের বিধান না জানলে সে হয়তো সে দিনের রোজা পূর্ণ করবে না।

আরো পড়ুন:

রমজানে আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপায় 

রোজার পূর্ণতার জন্য চোখের হিফাজত জরুরি

২. রোজা রেখেও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া: রোজা হলো সংযম ও সাধনার মাস। তাই রোজাদারের জন্য পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম ত্যাগ করার পাশাপাশি যাবতীয় গুনাহ ত্যাগ করাও আবশ্যক। নতুবা রোজার উদ্দেশ্য সাধন হবে না। অনেকে রোজার বাহ্যিক বিধান তথা পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম ত্যাগ করলেও পরচর্চা, পরনিন্দা, গালমন্দ করা, মিথ্যা বলা ও বেপর্দা হওয়ার মতো গুনাহগুলো ত্যাগ করার প্রয়োজন বোধ করে না। এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে মহানবি (সা.)-এর বক্তব্য হলো, ‘যে ব্যক্তি মন্দ কথা ও মন্দ কাজ ত্যাগ করল না তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)

৩. কিছু সুন্নত পালন না করা: রমজান মাসে অজ্ঞতাবশত কিছু সুন্নত পরিত্যাগ করা হয়। যেমন মিসওয়াক না করা। ইসলামি শরিয়ত রমজান মাসে মিসওয়াক করতে নিষেধ করেনি, বরং তা রোজাদার ব্যক্তির জন্যও সুন্নত। অসংখ্য হাদিসে মহানবি (সা.) তাঁর উম্মতকে মিসওয়াক করতে উদ্বুদ্ব করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৭)

আবার কেউ কেউ পেটে পানি যাওয়ার ভয়ে ঠিক মতো কুলি করে না, নাকে পানি দেয় না। অথচ হাদিসে শুধু গড়গড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। মহানবি (সা.) বলেন, ‘তোমরা যথাযথভাবে ওজু কর, হাতের আঙুল খিলাল কর এবং নাকে পানি দাও, তবে তুমি রোজাদার হলে ভিন্নকথা।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১২৯)

৪. আজান শোনার পরেও খাওয়া: অনেককে দেখা যায় মুয়াজ্জিন আজান শুরু করার পরও পানাহার করতে থাকে। তাদের ধারণা প্লেটের খাবার আজান হওয়ার পরেও খাওয়া যায়। একটি ভুল ধারণা। সাহরির সময় শেষ হওয়ার পর জেনে-বুঝে সামান্য পানাহারই রোজা ভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। তাই সাহরির সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানাহার ত্যাগ করতে হবে। এমনকি মুয়াজ্জিন আজান দিতে বিলম্ব করলেও। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বেলাল রাতের (তাহাজ্জুদের) আজান দেয়। সুতরাং (তাঁর আজানের পর) তোমরা খাও এবং পান করো, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুমের আজান শোনো। কেননা সে ফজর উদিত না হলে আজান দেয় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯১৯)

৫. ইবাদতে অমনোযোগী থাকা: রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। এই সময়ে আল্লাহ ইবাদতের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন। তারপরেও একদল মানুষ রমজান মাসেও ইবাদত-বন্দেগি থেকে বিমুখ হয়ে থাকে। কোনো সন্দেহ নেই এটা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর হুশিয়ারি হলো, ‘তাদের পর এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামাজ নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই তাদের কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ত করবে।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৫৯)

৬. ইবাদতের ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা: বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা রমজানের শুরুতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ আদায়, তিলাওয়াত করাসহ অন্যান্য ইবাদতগুলো করে। কিন্তু দিনে দিনে ইবাদতের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং তা ছেড়ে দেয়। এটা সুন্নাহ পরিপন্থী। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো আমল শুরু করলে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে সেই আমলই অধিক প্রিয় যা ধারাবাহিকভাবে করা হয়, যদি তা পরিমাণে কম হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৮৩)

৭. রমজান মাসে বিয়ে-শাদিকে অপছন্দনীয় মনে করা: অনেকেই রমজান মাসে বিয়ে করাকে অপছন্দনীয় মনে করেন। আবার অনেকে অধিক সতর্কতার নামে স্বামী-স্ত্রী পৃথক বিছানায় রাত কাটান। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে রমজান মাসে বিয়ে করা এবং স্বামী-স্ত্রী একই বিছানায় থাকার ভেতর কোনো সমস্যা নেই। এমনকি ব্যক্তি চাইলে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসও করতে পারে। তবে সাহরির সময় শেষ হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

৮. পানাহারে অপচয় করা: রমজান মাসের দিনের বেলা আল্লাহ পানাহার ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন যেন মুসলমান জীবনে সংযম শেখে এবং অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারে। কিন্তু বহু মানুষকে দেখা যায়, তারা রমজান মাসে পানাহারে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অপচয় ও অপব্যয়ে লিপ্ত হয়। তারা এত বেশি পানাহার করে যে, ইবাদতের ইচ্ছা ও শক্তি কোনোটাই অবশিষ্ট থাকে না। মহান আল্লাহ মানুষকে প্রয়োজন মতো খাবার গ্রহণ করতে এবং অপচয় থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান কর। অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

৯. ইফতার ও সাহরিতে দোয়া না করা: হাদিসের ভাষ্যমতে, প্রতি রাতের শেষভাগে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। তিনি প্রার্থনাকারীদের আহবান জানাতে থাকেন। এ সময় তিনি দোয়া কবুল করেন। অনুরূপ ইফতারের সময় দোয়া কবুলের বর্ণনাও এসেছে। তাই রোজাদারের উচিত এই দুই সময়ে দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু অনেককেই দেখা যায় তা করছে না। বিশেষত ইফতার মাহফিলগুলোতে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে নানা ধরনের পার্থিব আলোচনা ও গল্প চলতে থাকে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। 

১০. শেষ দশকে কেনাকাটায় মত্ত থাকা: রমজান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় শেষ দশক। কিন্তু বহু মানুষ এই সময়কেই কেনাকাটার জন্য বেছে নেয়। তারা রোজা, নামাজ, তারাবি ও তিলাওয়াত ফেলে বাজারে বাজারে ঘুরতে থাকে, যা অতি নিন্দনীয়। মহানবি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে যে পরিমাণ মুজাহাদা (ইবাদতে শ্রমদান) করতেন অন্য সময় তা করতেন না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৭৫)

আল্লাহ সবাইকে ভুল-ত্রুটি পরিহার করে রমজান মাসে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন। 

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন ম স ত য গ কর শ ষ দশক ম সওয় ক বল ছ ন প ন কর র জন য করত ন ইফত র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা

কারিগরি ক্ষতির (সিস্টেম লস) নামে গ্যাস অপচয় বাড়ছে। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে গ্যাস বিতরণ লাইনে অপচয় হয়েছে গড়ে ৬ দশমিক ২৮ শতাংশ গ্যাস। এতে আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ৩ হাজার ৭৯০ কোটি টাকা। আর গত অর্থবছরের (২০২৪-২৫) মার্চ পর্যন্ত অপচয় হয়েছে ৭ দশমিক ৪৪ শতাংশ। এতে আর্থিক ক্ষতি ৩ হাজার ২৮৬ কোটি টাকা। এর বাইরে সঞ্চালন লাইনে অপচয় হয়েছে ২ শতাংশ।

‘দেশের জ্বালানিনিরাপত্তা: চ্যালেঞ্জ ও করণীয়; গণমাধ্যমের ভূমিকা’ শীর্ষক এক সেমিনারে এসব তথ্য উপস্থাপন করেছে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস, খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। এতে বলা হয়, ২ শতাংশ অপচয় গ্রহণযোগ্য, তাই ওইটুকু সমন্বয় করেই আর্থিক ক্ষতির হিসাব করা হয়েছে। গ্যাসের অপচয় রোধে নিয়মিত অভিযান চালাচ্ছে ছয়টি গ্যাস বিতরণ সংস্থা।

পেট্রোবাংলা বলছে, গ্যাস অপচয়ের জন্য দায়ী হচ্ছে পুরোনো, জরাজীর্ণ পাইপলাইন; গ্যাস সরবরাহ লাইনের গ্যাসস্টেশন রাইজারে লিকেজ (ছিদ্র); তৃতীয় পক্ষের উন্নয়নকাজে পাইপলাইন ছিদ্র হওয়া এবং আবাসিক খাতে প্রচুর অবৈধ সংযোগ। তবে এসব অপচয় রোধে বেশ কিছু উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানায় পেট্রোবাংলা। এর মধ্যে রয়েছে গ্যাস সরবরাহব্যবস্থায় মিটারিং/ মনিটরিং ব্যবস্থাপনা কার্যকর করা; লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে কারিগরি ক্ষতি নিয়ন্ত্রণে রাখা; অবৈধ সংযোগ বিচ্ছিন্ন ও উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরদার করা এবং আবাসিক গ্রাহকদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা।

দেশের গ্যাস খাতের চিত্র তুলে ধরে সেমিনারে মূল নিবন্ধ উপস্থাপন করেন বুয়েটের সাবেক অধ্যাপক ইজাজ হোসেন। তিনি বলেন, দেশে গ্যাসের উৎপাদন কমতে কমতে ১৫ বছর আগের জায়গায় চলে গেছে। গ্যাস অনুসন্ধান জোরদারের কোনো বিকল্প নেই। গ্যাস চুরি ও অপচয় কমাতে হবে। সঞ্চালন ও বিতরণ মিলে কারিগরি ক্ষতি প্রায় ১০ শতাংশ, যা অনেক বেশি। সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতি কোনোভাবেই ২ শতাংশ হওয়ার কথা নয়। এটা ভালো করে দেখা উচিত।

শিল্পে নতুন সংযোগে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করা হবে

পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান মো. রেজানুর রহমান বলেন, সঞ্চালন লাইনে কারিগরি ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে দেখা হচ্ছে। অবৈধ সংযোগ বন্ধে পেট্রোবাংলা তৎপর আছে, খোঁজ পেলেই বিচ্ছিন্ন করা হবে। সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, শিল্পে নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে গ‍্যাসের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে, যেহেতু তারা বেশি দাম দেবে। তাই অগ্রাধিকার বিবেচনা করে তিনটি তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। প্রথম ধাপের তালিকায় থাকছে, যেসব কারখানায় এখনই সংযোগ দেওয়া যাবে। এগুলো পরিদর্শন প্রায় শেষের দিকে, আগামী সপ্তাহে শেষ হয়ে যাবে।

সাংবাদিকদের অন্য এক প্রশ্নের জবাবে পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান বলেন, আমদানি করা তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) রূপান্তর করে পাইপলাইনে সরবরাহ করতে নতুন টার্মিনাল নির্মাণে অগ্রাধিকার পাচ্ছে স্থলভাগের টার্মিনাল। মহেশখালীর মাতারবাড়ী এলাকায় এটি করা হবে। এটি হলে কম দামের সময় বাড়তি এলএনজি কিনে মজুত করা যাবে। তবে এগুলো রাতারাতি করা যায় না, পাঁচ বছর সময় লাগতে পারে।

জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে

তেল-গ্যাস অনুসন্ধানে উৎপাদন অংশীদারত্ব চুক্তি (পিএসসি) নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পেট্রোবাংলার পরিচালক (পিএসসি) মো. শোয়েব। তিনি বলেন, স্থলভাগে গ্যাস অনুসন্ধানের জন্য তৈরি পিএসসির খসড়া জ্বালানি বিভাগে পাঠানো হয়েছে।

গ্যাস উৎপাদন ও সরবরাহ নিয়ে একটি নিবন্ধ উপস্থাপন করেন পরিচালক মো. রফিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ৫০টি কূপ সংস্কার, উন্নয়ন ও খননের প্রকল্পে ইতিমধ্যে ১৮টির কাজ শেষ হয়েছে। জাতীয় গ্রিডে নতুন করে দিনে ৭৮ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ৪টি কূপের কাজ চলমান। এ ছাড়া পেট্রোবাংলার বিভিন্ন প্রকল্পের কার্যক্রম তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (পরিকল্পনা) মো. আবদুল মান্নান পাটওয়ারী।

সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে

পেট্রোবাংলার আর্থিক দিক তুলে ধরেন সংস্থাটির পরিচালক (অর্থ) এ কে এম মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, গত অর্থবছরে পেট্রোবাংলার রাজস্ব আয় ৫৪ হাজার ১১৭ কোটি টাকা, এর মধ্যে অর্ধেক বকেয়া। গত মে পর্যন্ত গ্যাস বিল বকেয়া ২৭ হাজার ১৯৯ কোটি টাকা। এটি ধীরে ধীরে কমে আসছে। ১৩–১৫ হাজার কোটিতে বকেয়া নেমে এলে সন্তোষজনক। সবচেয়ে বেশি বকেয়া বিদ্যুৎ খাতে ১৬ হাজার ৫২৩ কোটি টাকা। এরপর সার কারখানায় বকেয়া আছে ৯৬৪ কোটি টাকা। তবে বিদেশি কোনো কোম্পানির কাছে বিল বকেয়া নেই পেট্রোবাংলার। সব বিল শোধ করা হয়ে গেছে।

গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা

পেট্রোবাংলা বলছে, এলএনজি আমদানি শুরুর পর থেকে লোকসান শুরু হয় সংস্থাটির। প্রতিবছর সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নিচ্ছে পেট্রোবাংলা। ২০১৮-১৯ সালে এলএনজি আমদানি শুরু হয়, ওই বছর ভর্তুকি ছিল ২ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এরপর এলএনজি আমদানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভর্তুকিও বাড়তে থাকে। গত অর্থবছরে তারা ভর্তুকি নিয়েছে ৮ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলা মোট ভর্তুকি নিয়েছে ৩৬ হাজার ৭১২ কোটি টাকা। পেট্রোবাংলার হিসাবে গত অর্থবছরে প্রতি ইউনিট গ্যাস সরবরাহে পেট্রোবাংলার খরচ হয়েছে ২৭ টাকা ৫৩ পয়সা। তারা বিক্রি করেছে ২২ টাকা ৯৩ পয়সায়। এর মানে প্রতি ইউনিটে লোকসান হয়েছে ৪ টাকা ৬০ পয়সা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গ্যাস অপচয়ে বছরে ক্ষতি ৩ হাজার কোটি টাকার বেশি: পেট্রোবাংলা