মুসলমান মাত্রই পবিত্র রমজান মাসের মর্যাদা ও বরকত লাভ করতে চায়। তারা চায় আল্লাহর নৈকট্য ও সেসব পুরস্কার অর্জন করতে, যা এই মাসের ব্যাপারে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল ঘোষণা করেছেন। ফলে প্রত্যেক মুসলিম নিজের সাধ্যানুসারে ইবাদত-বন্দেগির চেষ্টা করে। কিন্তু কিছু ভুল এই লক্ষ্য অর্জনে প্রতিবন্ধক হয়ে ওঠে। নিম্নে এমন কয়েকটি ভুলের আলোচনা করা হলো।

১.

রোজার বিধান না শেখা: কোনো কাজ সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে হলে তার বিধান, নিয়ম ও পদ্ধতি সম্পর্কে অবগত হওয়া আবশ্যক। রোজা ইসলামি শরিয়তের একটি ফরজ বিধান। আর ইসলামি শরিয়তের নিয়ম হলো, ফরজ ইবাদত পালনের জন্য অপরিহার্য জ্ঞান অর্জন করাও ফরজ। তাই রোজার বিধানগুলো জেনে নেওয়া মুসলমানের জন্য ফরজ। রোজার বিধানের মধ্যে আছে এর নিয়ত করার সময় ও পদ্ধতি, সাহরি ও ইফতারের মাসয়ালা, কোন কোন কাজ করলে রোজা মাকরুহ হয়, কোন কাজ করলে তা ভেঙ্গে যায় এবং কোন কাজ করলে রোজার কোনো ক্ষতি হয় না ইত্যাদি বিষয়গুলো জানা। পাশাপাশি রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজান মাসে যেসব নফল ইবাদতগুলো করতেন সেগুলো সম্পর্কেও অবগত হওয়া। রোজার বিধানগুলো না জানলে সদিচ্ছা থাকার পরেও রোজা সঠিকভাবে পালন করা সম্ভব হয় না। যেমন কেউ রোজা কথা বিস্মৃত হয়ে কোনো কিছু খেয়ে ফেললে সে তার রোজা পূর্ণ করবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি রোজার কথা বিস্মৃত হয় এবং খায় বা পান করে সে তার রোজা পূর্ণ করবে। কেননা আল্লাহই তাকে খাইয়েছেন এবং পান করিয়েছেন।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১৫৫)

কিন্তু কেউ শরিয়তের বিধান না জানলে সে হয়তো সে দিনের রোজা পূর্ণ করবে না।

আরো পড়ুন:

রমজানে আল্লাহর ক্ষমা লাভের উপায় 

রোজার পূর্ণতার জন্য চোখের হিফাজত জরুরি

২. রোজা রেখেও পাপাচারে লিপ্ত হওয়া: রোজা হলো সংযম ও সাধনার মাস। তাই রোজাদারের জন্য পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম ত্যাগ করার পাশাপাশি যাবতীয় গুনাহ ত্যাগ করাও আবশ্যক। নতুবা রোজার উদ্দেশ্য সাধন হবে না। অনেকে রোজার বাহ্যিক বিধান তথা পানাহার ও স্ত্রী সঙ্গম ত্যাগ করলেও পরচর্চা, পরনিন্দা, গালমন্দ করা, মিথ্যা বলা ও বেপর্দা হওয়ার মতো গুনাহগুলো ত্যাগ করার প্রয়োজন বোধ করে না। এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে মহানবি (সা.)-এর বক্তব্য হলো, ‘যে ব্যক্তি মন্দ কথা ও মন্দ কাজ ত্যাগ করল না তার পানাহার ত্যাগে আল্লাহর কোনো প্রয়োজন নেই।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৮০৪)

৩. কিছু সুন্নত পালন না করা: রমজান মাসে অজ্ঞতাবশত কিছু সুন্নত পরিত্যাগ করা হয়। যেমন মিসওয়াক না করা। ইসলামি শরিয়ত রমজান মাসে মিসওয়াক করতে নিষেধ করেনি, বরং তা রোজাদার ব্যক্তির জন্যও সুন্নত। অসংখ্য হাদিসে মহানবি (সা.) তাঁর উম্মতকে মিসওয়াক করতে উদ্বুদ্ব করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘আমি যদি আমার উম্মতের জন্য কষ্টকর মনে না করতাম, তবে আমি প্রত্যেক নামাজের সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৮৮৭)

আবার কেউ কেউ পেটে পানি যাওয়ার ভয়ে ঠিক মতো কুলি করে না, নাকে পানি দেয় না। অথচ হাদিসে শুধু গড়গড়া করতে নিষেধ করা হয়েছে এবং নাকে পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করতে বলা হয়েছে। মহানবি (সা.) বলেন, ‘তোমরা যথাযথভাবে ওজু কর, হাতের আঙুল খিলাল কর এবং নাকে পানি দাও, তবে তুমি রোজাদার হলে ভিন্নকথা।’ (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস : ১২৯)

৪. আজান শোনার পরেও খাওয়া: অনেককে দেখা যায় মুয়াজ্জিন আজান শুরু করার পরও পানাহার করতে থাকে। তাদের ধারণা প্লেটের খাবার আজান হওয়ার পরেও খাওয়া যায়। একটি ভুল ধারণা। সাহরির সময় শেষ হওয়ার পর জেনে-বুঝে সামান্য পানাহারই রোজা ভঙ্গের জন্য যথেষ্ট। তাই সাহরির সময় শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পানাহার ত্যাগ করতে হবে। এমনকি মুয়াজ্জিন আজান দিতে বিলম্ব করলেও। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই বেলাল রাতের (তাহাজ্জুদের) আজান দেয়। সুতরাং (তাঁর আজানের পর) তোমরা খাও এবং পান করো, যতক্ষণ না ইবনে উম্মে মাকতুমের আজান শোনো। কেননা সে ফজর উদিত না হলে আজান দেয় না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৯১৯)

৫. ইবাদতে অমনোযোগী থাকা: রমজান মাস ইবাদতের বসন্তকাল। এই সময়ে আল্লাহ ইবাদতের প্রতিদান বাড়িয়ে দেন। তারপরেও একদল মানুষ রমজান মাসেও ইবাদত-বন্দেগি থেকে বিমুখ হয়ে থাকে। কোনো সন্দেহ নেই এটা চরম দুর্ভাগ্যের বিষয়। এমন ব্যক্তিদের ব্যাপারে মহান আল্লাহর হুশিয়ারি হলো, ‘তাদের পর এলো অপদার্থ পরবর্তীরা, তারা নামাজ নষ্ট করল এবং প্রবৃত্তির অনুসরণ করল। সুতরাং তারা অচিরেই তাদের কুকর্মের শাস্তি প্রত্যক্ত করবে।’ (সুরা মারিয়াম, আয়াত : ৫৯)

৬. ইবাদতের ধারাবাহিকতা রক্ষা না করা: বেশির ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তারা রমজানের শুরুতে গুরুত্বের সঙ্গে নামাজ আদায়, তিলাওয়াত করাসহ অন্যান্য ইবাদতগুলো করে। কিন্তু দিনে দিনে ইবাদতের আগ্রহ হারিয়ে ফেলে এবং তা ছেড়ে দেয়। এটা সুন্নাহ পরিপন্থী। রাসুলুল্লাহ (সা.) কোনো আমল শুরু করলে তার ধারাবাহিকতা রক্ষা করতেন। তিনি বলেছেন, ‘আল্লাহ তাআলার কাছে সেই আমলই অধিক প্রিয় যা ধারাবাহিকভাবে করা হয়, যদি তা পরিমাণে কম হয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৭৮৩)

৭. রমজান মাসে বিয়ে-শাদিকে অপছন্দনীয় মনে করা: অনেকেই রমজান মাসে বিয়ে করাকে অপছন্দনীয় মনে করেন। আবার অনেকে অধিক সতর্কতার নামে স্বামী-স্ত্রী পৃথক বিছানায় রাত কাটান। ইসলামি শরিয়তের দৃষ্টিতে রমজান মাসে বিয়ে করা এবং স্বামী-স্ত্রী একই বিছানায় থাকার ভেতর কোনো সমস্যা নেই। এমনকি ব্যক্তি চাইলে সাহরির সময় শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত স্ত্রীর সঙ্গে সহবাসও করতে পারে। তবে সাহরির সময় শেষ হওয়ার পর স্ত্রীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রী সম্ভোগ বৈধ করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ।’ (সুরা বাকারা, আয়াত : ১৮৭)

৮. পানাহারে অপচয় করা: রমজান মাসের দিনের বেলা আল্লাহ পানাহার ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছেন যেন মুসলমান জীবনে সংযম শেখে এবং অসহায় ও দরিদ্র মানুষের কষ্ট অনুভব করতে পারে। কিন্তু বহু মানুষকে দেখা যায়, তারা রমজান মাসে পানাহারে সংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের পরিবর্তে অপচয় ও অপব্যয়ে লিপ্ত হয়। তারা এত বেশি পানাহার করে যে, ইবাদতের ইচ্ছা ও শক্তি কোনোটাই অবশিষ্ট থাকে না। মহান আল্লাহ মানুষকে প্রয়োজন মতো খাবার গ্রহণ করতে এবং অপচয় থেকে দূরে থাকতে বলেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা খাও এবং পান কর। অপচয় কর না। নিশ্চয়ই আল্লাহ অপচয়কারীকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩১)

৯. ইফতার ও সাহরিতে দোয়া না করা: হাদিসের ভাষ্যমতে, প্রতি রাতের শেষভাগে মহান আল্লাহ পৃথিবীর আকাশে অবতরণ করেন। তিনি প্রার্থনাকারীদের আহবান জানাতে থাকেন। এ সময় তিনি দোয়া কবুল করেন। অনুরূপ ইফতারের সময় দোয়া কবুলের বর্ণনাও এসেছে। তাই রোজাদারের উচিত এই দুই সময়ে দোয়ার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া। কিন্তু অনেককেই দেখা যায় তা করছে না। বিশেষত ইফতার মাহফিলগুলোতে ইফতারের পূর্ব মুহূর্তে নানা ধরনের পার্থিব আলোচনা ও গল্প চলতে থাকে, যা অত্যন্ত নিন্দনীয়। 

১০. শেষ দশকে কেনাকাটায় মত্ত থাকা: রমজান মাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সময় শেষ দশক। কিন্তু বহু মানুষ এই সময়কেই কেনাকাটার জন্য বেছে নেয়। তারা রোজা, নামাজ, তারাবি ও তিলাওয়াত ফেলে বাজারে বাজারে ঘুরতে থাকে, যা অতি নিন্দনীয়। মহানবি (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইবাদতের পরিমাণ বাড়িয়ে দিতেন। আয়েশা (রা.) বলেন, ‘রাসুলুল্লাহ (সা.) শেষ দশকে যে পরিমাণ মুজাহাদা (ইবাদতে শ্রমদান) করতেন অন্য সময় তা করতেন না।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ২২৭৫)

আল্লাহ সবাইকে ভুল-ত্রুটি পরিহার করে রমজান মাসে ইবাদত করার তাওফিক দিন। আমিন। 

ঢাকা/শাহেদ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর স য় ম স ধন রমজ ন রমজ ন ম স ত য গ কর শ ষ দশক ম সওয় ক বল ছ ন প ন কর র জন য করত ন ইফত র ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ