শীত শেষেও নিউমোনিয়ার ঝুঁকি কমেনি, সতর্ক থাকবেন যেভাবে
Published: 19th, March 2025 GMT
শীত শেষ। অনেকে ভাববেন, এ সময় নিউমোনিয়ার প্রসঙ্গ কেন? কিন্তু শীতের শেষ, মানে বসন্তে বা গ্রীষ্মের শুরুতেও অনেকে নানা ধরনের শ্বাসযন্ত্রের রোগে আক্রান্ত হন। মৌসুম পরিবর্তন রোগবালাইয়ের একটি নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। তা ছাড়া বসন্তের এ সময় ধুলাবালু বা গরমে অতিরিক্ত ঘাম জমে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দেখা দিতে পারে নিউমোনিয়া।
নিউমোনিয়া মানে ফুসফুসের সংক্রমণ। সাধারণত ব্যাকটেরিয়া বা ভাইরাসের সংক্রমণে নিউমোনিয়া হয়। এতে ফুসফুসের ভেতর সংক্রমণের কারণে প্রদাহ হয়।
উল্লেখযোগ্য ধরন
পরিবেশগত কারণে অর্জিত নিউমোনিয়া বা কমিউনিটি অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া একটি ধরন। এটি পরিবেশ বা সমাজের অন্য মানুষ থেকে ছড়ায়।
হাসপাতাল থেকে অর্জিত নিউমোনিয়া বা হসপিটাল অ্যাকোয়ার্ড নিউমোনিয়া আরেকটি ধরন। এটি নোসোকোমিয়াল নিউমোনিয়া নামেও পরিচিত।
বসন্তের এ সময় ধুলাবালু বা গরমে অতিরিক্ত ঘাম জমে শিশু ও বয়োবৃদ্ধদের দেখা দিতে পারে নিউমোনিয়া।ঝুঁকিতে কারা
৬৫ বছরের বেশি বয়সী মানুষ। ৫ বছরের নিচের শিশু। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের রোগী। দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগছেন যেমন কিডনি, হার্ট ফেইলিউর ইত্যাদি। ধূমপায়ী। আগে থেকেই অ্যাজমা, ব্রঙ্কাইটিসসহ ফুসফুসের কোনো রোগে ভুগছেন এমন ব্যক্তি। যেসব রোগী কেমোথেরাপি নিচ্ছেন বা ইমিউনোসাপ্রেসিভ ওষুধ গ্রহণ করছেন।
আরও পড়ুনকোন রঙের প্লাস্টিক সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, যা ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ায় ৩০০ শতাংশ পর্যন্ত০৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫লক্ষণ
প্রাথমিক লক্ষণ জ্বর। সঙ্গে কাশি ও শ্বাসকষ্ট।
হলুদ, সবুজ বা রক্তাক্ত শ্লেষ্মা হতে পারে।
সংক্রমণ যত বাড়ে, শ্বাসকষ্টও তত বাড়ে।
গভীরভাবে শ্বাস নেওয়ার সময় বুকে ব্যথা হয়।
বিভ্রান্তি বা পরিবর্তিত মানসিক অবস্থা।
শনাক্তকরণ
নিউমোনিয়া নির্ণয়ে সাধারণত রক্ত পরীক্ষা ও বুকের এক্স-রে করাই যথেষ্ট। ইউরিয়া, ক্রিয়েটিনিন, ইলেকট্রোলাইট, এবিজির মতো কিছু পরীক্ষাও করা হয়।
চিকিৎসা
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, ব্যাকটেরিয়াজনিত নিউমোনিয়ার চিকিৎসায় অ্যান্টিবায়োটিকের সঠিক প্রয়োগ। ১০ থেকে ১৪ দিন অ্যান্টিবায়োটিক দিতে হয়। জ্বরের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। প্রয়োজনে অক্সিজেন দিতে হবে। নিউমোনিয়া হলে রোগীকে প্রয়োজনমতো পানি খাওয়ানো উচিত। নিউমোনিয়া দ্রুত নির্ণয় করে চিকিৎসা শুরু করা উচিত।
প্রতিরোধ
ধূমপান ও মদ্যপান পরিহার করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন।
ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখুন।
স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস করুন।
হাঁচি–কাশির সময় রুমাল বা টিস্যু ব্যবহার করুন।
বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রতিবছর ইনফ্লুয়েঞ্জা এবং পাঁচ বছর পরপর নিউমোককাল ভ্যাকসিন নেওয়া জরুরি।
নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। নইলে অন্যরাও সংক্রমিত হতে পারেন।
বাইরে থেকে ফিরে হাত ধোয়ার অভ্যাস রাখুন।
অধ্যাপক ডা.
এ কে এম মূসা, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ, আলোক হেলথকেয়ার, মিরপুর ১০, ঢাকা
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: স ক রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কমাতে গুরুত্ব আরোপ
কাশ্মীরের পেহেলগামে হামলার পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে উত্তেজনা কার্যত সামরিক সংঘাতে রূপ নেওয়ার আশঙ্কা ক্রমেই বাড়ছে। এ পরস্থিতিতে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরিফ ও ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ফোন করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। বুধবার দুজনকে করা এ ফোন কলে তিনি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সৃষ্টি হওয়া উত্তেজনা কমানোর ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন। এছাড়া দুই
ফোনালাপের বিষয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর থেকে দেওয়া পৃথক বিবৃতিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে ফোনে কথা বলার সময় মার্কো রুবিও বলেন, তিনি পেহেলগাম হামলায় নিহতদের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছেন এবং যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে কাজ করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তবে তিনি আরও বলেন, ভারত যেন পাকিস্তানকে অভিযুক্ত করার আগে সতর্ক থাকে, কারণ এখনও পর্যন্ত ভারত এই হামলায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততার কোনও প্রমাণ প্রকাশ করেনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস এক বিবৃতিতে বলেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেহেলগামে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় প্রাণহানির জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সঙ্গে সহযোগিতার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি দক্ষিণ এশিয়ায় উত্তেজনা কমাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা বজায় রাখতে ভারতকে পাকিস্তানের সঙ্গে কাজ করার জন্য বলেছেন।
পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের সঙ্গে ফোনালাপে রুবিও- ২২ এপ্রিল ভারত-শাসিত কাশ্মীরের পর্যটন কেন্দ্র পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার নিন্দা করার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।
তিনি এক বিবৃতিতে বলেছেন, রুবিও এই অযৌক্তিক হামলার তদন্তে পাকিস্তানি কর্মকর্তাদের সহযোগিতার আহ্বান জানিয়েছেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ বলেন, ভারতের উস্কানিমূলক আচরণ শুধু উত্তেজনাই বাড়াচ্ছে এবং পাকিস্তানের সন্ত্রাসবিরোধী প্রচেষ্টাকে বিভ্রান্ত করছে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ভারতের ওপর দায়িত্বশীল আচরণ ও ভাষার ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাপ প্রয়োগ করে।
এর আগে গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে কাশ্মীরের পেহেলগাম জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে বন্দুকধারীদের হামলায় অন্তত ২৬ জন নিহত হন, যাদের প্রায় সবাই পর্যটক। হামলার দায় স্বীকার করে রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট নামে একটি সংগঠন। এটিকে পাকিস্তানভিত্তিক লস্কর-ই-তৈয়্যেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে মনে করা হয়।
এ ঘটনায় আরও বেশ কয়েকজনকে আহত হন। যাদের গুলি করে হত্যা করা হয়েছে, তারা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মীরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা। বর্তমানে এ ঘটনায় দুই দেশের মধ্যে চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
পেহেলগামের ভয়াবহ ওই হামলার জেরে ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে। দুই দেশের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সিন্ধু পানিবণ্টন চুক্তি স্থগিত করেছে ভারত। জবাবে সিমলা চুক্তি স্থগিত ও ভারতীয় বিমানের জন্য নিজেদের আকাশসীমা বন্ধের ঘোষণা দেয় পাকিস্তান।
তাছাড়া, হামলার পরে দুই দেশই ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেশী দেশের নাগরিকদের ভিসা বাতিল করে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেয়। সূত্র-এএফপি