কক্সবাজার পৌরসভার সমুদ্র উপকূলীয় কুতুবদিয়াপাড়ায় জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারের ৫৪ জন শিশুর হাতে ঈদের নতুন পোশাক তুলে দিয়েছে প্রথম আলো বন্ধুসভা। একই সঙ্গে কুতুবদিয়াপাড়া, সমিতিপাড়া, ফদনারডেইল, মোস্তাইক্যাপাড়ার হতদরিদ্র আরও ১৯০ পরিবারে প্রায় আড়াই লাখ টাকার ঈদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করা হয়।

এ উপলক্ষে আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে নতুন পোশাক ও খাদ্যসামগ্রী তুলে দেন কক্সবাজার সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী।

বন্ধুসভা কক্সবাজার জেলা কমিটির উপদেষ্টা উম্মে সাদিয়া হোসেন সিকদারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল, প্রথম আলো কক্সবাজারের নিজস্ব প্রতিবেদক আব্দুল কুদ্দুস, বন্ধুসভার সহসভাপতি মো.

নুরুল আবছার প্রমুখ। সঞ্চালনায় ছিলেন বন্ধুসভার সাধারণ সম্পাদক উলফাতুল মোস্তফা।

প্রতিটি প্যাকেটে ছিল ৫ কেজি চাল, ১ লিটার ভোজ্যতেল, ৪ প্যাকেট নুডলস, ৪ প্যাকেট লাচ্ছা সেমাই, ১ কেজি ডাল, ১ কেজি ছোলা, ১ কেজি পেঁয়াজ, ১ কেজি চিনি, আধা কেজি লবণ, ৫০ গ্রাম কিশমিশ ও ৭৫ গ্রাম দুধ। এসব খাদ্যসামগ্রী বন্ধুসভাকে সরবরাহ করে জেলা প্রশাসন।

খাদ্যসামগ্রী হাতে পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েন ৭৫ বছর বয়সী বৃদ্ধা নাজের আহমদ। পশ্চিম কুতুবদিয়াপাড়াতে মেয়ের ঘরের থাকেন তিনি। আগে শুঁটকি মহালে কাজ করতেন। এখন কাজ করার মতো শক্তি নেই।

নাজের আহমদের পৈতৃক বাড়ি সাগরদ্বীপ কুতুবদিয়া উপজেলার আলী আকবরডেইল ইউনিয়নের খুদিয়ারটেক এলাকাতে। একানব্বইয়ের প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে তাঁর মা-বাবা, স্ত্রী, ২ ছেলে ২ মেয়েকে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এরপর চার ছেলে নিয়ে তিনি কুতুবদিয়া থেকে কক্সবাজার শহরের কুতুবদিয়াপাড়ায় সরকারি খাসজমিতে মাথা গোঁজার ঠাঁই করে নেন।

নাজের আহমদ বলেন, রোজার মাসে খুব কষ্টে দিন কাটছিল। ঈদ নিয়ে চিন্তায় ছিলাম, প্রথম আলোর খাদ্যসহায়তা পেয়ে চিন্তা দূর হলো।

ঈদের নতুন জামা পেয়ে মহাখুশি কুতুবদিয়া পাড়ার রবিউল হাসান (১২)। তার বাবা আবুল সেলিম মাছ ধরার ট্রলারের জেলে। কয়েক মাস ধরে বেকার। মা শুঁটকি মহালে কাজ করে যা আয় করেন, তা দিয়ে সংসার চলে না। রবিউল বলে, ‘বাবা বলেছিল এবারের ঈদে নতুন জামা কিনে দিতে পারবেন না। তাই মন খারাপ ছিল। এখন আমি খুব খুশি। নতুন জামা পরে বন্ধুদের সঙ্গে শহরে ঘুরতে পারব।’

একই কথা জানায় সমিতিপাড়ার মেয়ে তামান্না মুনি (১১)। সাগরে মাছ ধরতে গিয়ে তার বাবা নিখোঁজ হন। মা শুঁটকি মহালে কাজ করলেও মাসখানেক ধরে বেকার।

ইউএনও নিলুফা ইয়াসমিন চৌধুরী বলেন, বন্ধুসভার সদস্যরা লেখাপড়ার পাশাপাশি সব সময় ভালো কাজের সঙ্গে থাকেন। আজকের কাজটি অনন্য এবং প্রশংসনীয় হয়েছে। উপযুক্ত মানুষের হাতে খাদ্যসহায়তা ও নতুন জামা তুলে দিতে পেরে তিনিও খুশি হয়েছেন।

পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর আকতার কামাল সবদিক থেকে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষগুলোকে মনে রাখার জন্য তিনি বন্ধুসভার সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বন্ধুসভার সহসভাপতি আবদুল নবী, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন, অর্থ সম্পাদক উগগ্যা মারমা, বন্ধুসভার কক্সবাজার সরকারি কলেজ সভাপতি সুরাজ দত্ত, সাধারণ সম্পাদক আয়েশা নূরী, কক্সবাজার সিটি কলেজ বন্ধুসভা সভাপতি সাইফুল ইসলাম, দপ্তর সম্পাদক রুয়াজ উদ্দিন প্রমুখ।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: নত ন জ ম ক জ কর

এছাড়াও পড়ুন:

বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা

নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীর এক বালু ব্যবসায়ীর (ঠিকাদার) বিরুদ্ধে ব্যবসায়িক অংশীদারের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ পাওয়া গেছে। অভিযোগকারীরা বলছেন, তাদের কয়েক কোটি টাকা ঠকিয়ে এখন লাপাত্তা এক সময়ের সহযোগী মতিউর রহমান নামের ওই বালু ব্যবসায়ী।
অভিযোগকারীরা জানান, মতিউর তাঁর লাইসেন্স ব্যবহার করে বালু উত্তোলন করে বিক্রির কথা বলে প্রতারণার ফাঁদ পাতেন, যা অন্যরা বুঝতে পারেননি। কথা ছিল সেই লাইসেন্সে বালু উত্তোলনের পর তা বিক্রি করে ভাগের টাকা বুঝিয়ে দেওয়া হবে অংশীদারদের। এই কথায় তিনি বিভিন্ন ব্যবসায়ীর কাছ থেকে কোটি টাকা আদায় করলেও তাদের টাকা বুঝিয়ে না দিয়ে এখন গা-ঢাকা দিয়েছেন। এ নিয়ে সর্বত্র আলোচনা চলছে।
জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার কুশিয়ারা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু তোলার হিড়িক পড়েছে। নদীর বালু তোলা নিয়ে চলছে নানা রকম প্রতারণা। তেমনি একটি প্রতারণার ফাঁদে পড়েছেন স্থানীয় কয়েকজন বালু ব্যবসায়ী। তাদের প্রায় দুই কোটি টাকা বেহাত হয়েছে মা এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী মতিউর রহমানের কারণে। প্রতিষ্ঠানের পরিচালক মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালুর অনুমতি পেয়েছেন বলে এলাকার প্রভাবশালী ব্যবসায়ীদের মধ্যে প্রচার করেন। পরে তিনি শেয়ার বিক্রির কথা জানান দেন। যার ভিত্তিতে ১৬টি শেয়ার তিনি বিক্রি করবেন বলে জানান। তিনি এ বিষয়ে প্রথমে যোগাযোগ করেন শেরপুর মুক্তানগর রিসোর্টের মালিক জাবেদ রনি আহমদের সঙ্গে।
আলোচনার পর জাবেদ রনি ও তাঁর বন্ধু ইমরান আহমদের কাছে থেকে ব্যাংক একাউন্ডের মাধ্যমে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা নেন মতিউর। এর বিপরীতে কোনো লাভ বা শেয়ার না দেওয়ায় তারা সিলেট চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে মামলা দায়ের করেন। মামলায় মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি হয়।
মামলার বিবরণী থেকে জানা যায়, মামলায় আসামি মতিউর রহমান, বাদী ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদের নাম উল্লেখ করেছেন। মতিউর রহমান কুশিয়ারা নদীর বালু উত্তোলনের জন্য জগন্নাথপুর উপজেলার অন্তর্গত খানপুর মৌজার ১ নম্বর খতিয়ানে জমি লিজ নেওয়ার কথা জানান এবং সেখান থেকে বালু উত্তোলনের অনুমতি পেয়েছেন বলে অনুমতিপত্র দেখান। তবে বালু উত্তোলনের জন্য অনেক টাকার প্রয়োজন হবে। তাই ১৬টি শেয়ার (প্রতিটি শেয়ারের বাজার মূল্য ৩০ লাখ টাকা) বিক্রি করবেন। তখন বাদী ইমরান ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনি আহমদ আসামির কাছ থেকে চারটি শেয়ার ক্রয় করলে আলোচনা সাপেক্ষে ইমরান আহমদ ও ১ নম্বর সাক্ষী জাবেদ রনিকে প্রতিটি শেয়ারের মূল্য বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ছাড় দেন এবং চারটি শেয়ারের দাম একত্রে এক কোটি টাকা নির্ধারণ করেন। সে মোতাবেক ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি ৪ নম্বর সাক্ষীর বাড়িতে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে নগদ তিন লাখ টাকা আসামিকে দেওয়া হয়। যা আসামির ব্যবসায়িক প্যাডে করা চুক্তিপত্রে উল্লেখ রয়েছে।
পরবর্তী সময়ে বাকি ৯৭ লাখ টাকা বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষী পরিশোধ করার পর আসামি মতিউরের সঙ্গে ৩০০ টাকার ননজুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে চুক্তিপত্র সম্পাদন করতে সম্মত হন এবং চুক্তির শর্তমতে ব্যবসার লভ্যাংশ প্রতি মাস শেষে হিসাব করে চারটি শেয়ারের বিপরীতে ১৬ অংশ বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। আসামি নিজে ও তাঁর লোক মারফত ব্যাংকের মাধ্যমে ও নগদে সর্বমোট এক কোটি ২৯ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। যাতে বাদী ও ১ নম্বর সাক্ষীর চারটি শেয়ার বাবদ এক কোটি টাকা এবং অন্যান্য শেয়ারহোল্ডারদের ২৯ লাখ টাকা। কয়েক মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও ব্যবসার মাসিক হিসাব সম্পর্কে আসামি মতিউর অংশীজনের কোনো হিসাব বুঝিয়ে দেননি। একপর্যায়ে মতিউর রহমান গা-ঢাকা দেন।
ইমরান আহমদ চৌধুরী জানান, বালু ব্যবসায়ী মতিউর প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে এখন আত্মগোপনে রয়েছে। তাঁকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।
রনি আহমদ বলেন, কয়েক বন্ধু মিলে এক কোটি ২৯ লাখ টাকা তাঁকে দিয়েছেন। এ ছাড়া নগদে আরও ৫০ লাখ টাকা বিভিন্নজনের কাছে থেকে তাঁকে সংগ্রহ করে দিয়েছেন। সে নারায়ণগঞ্জের একজন ব্যবসায়ীর কাছে থেকে আর ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে যার চুক্তিনামার সাক্ষীও তিনি। 
অভিযোগ ও মামলার ব্যাপারে জানতে মা এন্টারপ্রাইজের মতিউর রহমানের মোবাইল ফোন নাম্বারে একাধিকবার কল করেও সাড়া মেলিনি।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সিলেটে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহর আটকে বিক্ষোভের ঘটনায় মামলা, আসামি ১৫৯
  • জাফলংয়ে দুই উপদেষ্টার গাড়িবহরে বাধা: ১৭ বিশিষ্ট নাগরিক ও ১৯ সংগঠনের নিন্দা
  • আপেল মাহমুদ অথবা রবিঠাকুরের কাদম্বিনীর গল্প
  • বালু ব্যবসার নামে প্রতারণা কোটি টাকা নিয়ে লাপাত্তা
  • বিজিএমইএ’র নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান
  • বিজিএমইএর নতুন সভাপতি মাহমুদ হাসান খান, সহসভাপতি হলেন যাঁরা
  • খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ
  • ৬ মাস ধরে খোলা আকাশের নিচে ৩১টি পরিবার
  • হু হু করে বাড়ছে অপরিকল্পিত ভবন, মিলছে না ময়লা ফেলার জায়গা
  • পরিবারের কাছে ফিরে গেলেন অভিনেতা সমু চৌধুরী