Prothomalo:
2025-05-01@00:47:36 GMT

এরদোয়ান কি ‘ভয়’ পাচ্ছেন

Published: 22nd, March 2025 GMT

প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান বছরটা শুরুই করেছিলেন কঠিন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখে। দুই দশক ধরে তুরস্কের ক্ষমতার শীর্ষে থাকার পরও এবার পরিস্থিতি তাঁর পক্ষে ছিল না।

দেশের মানুষ দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ক্ষুব্ধ। তার দল জনপ্রিয়তা হারাচ্ছিল। বিরোধীরা একজোট হয়েছিল ইস্তাম্বুলের মেয়র একরেম ইমামোগলুর পেছনে, যিনি স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছিলেন, তিনি প্রেসিডেন্ট হওয়ার লড়াইয়ে নামছেন।

তারপর বুধবার, ঠিক যখন ইমামোগলুকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিরোধী দলের প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করার কথা, তখনই পুলিশ তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করে। অভিযোগ দুর্নীতি ও সন্ত্রাসবাদে জড়িত থাকা।

এরদোয়ানের বিরোধীরা বলছেন, এটি ইমামোগলুর প্রচারণা শুরুর আগেই তাঁকে থামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা। বিশ্লেষক ও রাজনৈতিক নেতাদের মতে, এখানে শুধু প্রেসিডেন্ট পদের প্রশ্ন নয়, বরং বিষয়টা আরও বড়।

তুরস্ক বিশ্বের ২০টি বৃহত্তম অর্থনীতির একটি এবং ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য। সেই তুরস্ক কি আদৌ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে টিকে থাকতে পারবে কি না, সেটাই এখন প্রশ্ন। কারণ, রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে নির্বাচন প্রতিযোগিতার পথ রুদ্ধ করা মানে, দেশকে পুরোপুরি স্বৈরাচারী শাসনের দিকে নিয়ে যাওয়া।

২০০৩ সাল থেকে এরদোয়ান তুরস্কের রাজনীতিতে কর্তৃত্ব ধরে রেখেছেন—প্রথমে প্রধানমন্ত্রী, পরে ২০১৪ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে। তাঁর শাসনামলে তুরস্ক অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক উন্নতি করেছে। একাধিকবার তার দল জাস্টিস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি নির্বাচনে জয়ী হয়েছে।

কিন্তু গত এক দশকে, সমালোচকদের মতে, তিনি ক্ষমতা দৃঢ় করতে গণতন্ত্রকে দুর্বল করেছেন। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিভাগে নিজের অনুগতদের বসিয়েছেন, গণমাধ্যমকে নিয়ন্ত্রণে এনেছেন, বিরোধীদের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রীয় প্রসিকিউটর ও বিচারকদের ব্যবহার করেছেন।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এখন কি গণতন্ত্র ও স্বৈরতন্ত্রের মিশ্রণে তুরস্ক চলবে, নাকি মূলত স্বৈরতান্ত্রিক হয়ে উঠবে? একরাম ইমামোগলুকে এ রকমভাবে নির্বাচনে দাঁড়াতে না দিলে তুরস্ক পড়ে যাবে রাশিয়া বা বেলারুশের মতো দেশের কাতারে। এই দেশগুলোতে নির্বাচন হয়, কিন্তু নির্বাচনে কে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হবেন, তা ঠিক করেন প্রেসিডেন্ট নিজে।

এদিকে ইমামোগলুর গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে বিরোধী দলগুলোর বিক্ষোভ আহ্বানকে ‘নাটক’ বলে উড়িয়ে দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ান। এই রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে তুরস্ক আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে এসে দাঁড়িয়েছে। দেশটির সমর্থিত একটি বিদ্রোহী গোষ্ঠী এখন সিরিয়ার নতুন সরকার পরিচালনা করছে। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান প্রশাসন তাদের মিত্রদেশগুলোর গণতান্ত্রিক মান বজায় রাখার বিষয়ে তেমন আগ্রহ দেখাচ্ছে না। এ ছাড়া ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের কারণে ইউরোপীয় দেশগুলো প্রতিরক্ষা খাতে তুরস্কের ওপর আরও নির্ভরশীল হয়ে উঠছে।

এসব কৌশলগত কারণে এরদোয়ানের শাসনব্যবস্থা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহল থেকে খুব বেশি সমালোচনা না–ও আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ইমামোগলুর গ্রেপ্তার নিয়ে এখন পর্যন্ত খুব বেশি মন্তব্য করেননি। তবে ইউরোপীয় নেতারা উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

এরদোয়ানের বর্তমান দ্বিতীয় মেয়াদ শেষ হবে ২০২৮ সালে। তুরস্কের সংবিধান অনুযায়ী, একজন প্রেসিডেন্ট সর্বোচ্চ দুই মেয়াদ দায়িত্ব পালন করতে পারেন। তবে পার্লামেন্ট আগাম নির্বাচন ডাকলে তিনি তৃতীয়বারের মতো প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারবেন। বিশ্লেষকেরা বলছেন, আগাম নির্বাচনের সম্ভাবনা প্রবল।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে, ইস্তানবুল ২০ মার্চ ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ত রস ক র এরদ য় ন র জন ত

এছাড়াও পড়ুন:

চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা

‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’

এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন। 

এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী  বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’

প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’

প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’ 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ