দক্ষিণ এশিয়ায় প্রায় ২১০ কোটি মানুষ বসবাস করে। অঞ্চলটি তাপপ্রবাহ, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, বন্যা, নদীভাঙন, ভূমিধস, মৌসুমি বৃষ্টি, বজ্রপাত, টর্নেডো, ধূলিঝড়, শৈত্যপ্রবাহ, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ার মতো চরম আবহাওয়ার জন্য অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে এই দুর্যোগের সংখ্যা ও তীব্রতা ক্রমে বাড়ছে, যা কার্যকর আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা উন্নয়নের গুরুত্ব আরও বাড়িয়ে তুলছে। এ অঞ্চলের অনেক দেশ তাদের আবহাওয়া পূর্বাভাসের জন্য মূলত বহিরাগত প্রযুক্তি ও সমাধান প্রদানকারী বিদেশি কোম্পানির ওপর নির্ভরশীল।

বহিরাগত প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতার ফলে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থায় বেশ কয়েকটি গুরুতর সমস্যা দেখা যাচ্ছে। 
প্রথমত, বেশির ভাগ দেশ উন্নত আবহাওয়া মডেল, স্যাটেলাইট ডেটা বিশ্লেষণ এবং পূর্বাভাসের সরঞ্জামগুলোর জন্য বাণিজ্যিক প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল। এটি ব্যয়বহুল এবং দীর্ঘ মেয়াদে টেকসই নয়। অধিকন্তু, এই মডেলগুলো সবসময় স্থানীয় জলবায়ুগত বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সম্পূর্ণ সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। ফলে নির্ভুল পূর্বাভাস অনেকটা অসম্ভব। 

দ্বিতীয়ত, প্রায় সব দেশ আধুনিক আবহাওয়া মডেলিং পরিচালনার জন্য উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং অবকাঠামো (এইচপিসি) এবং তাৎক্ষণিক তথ্য সংযোজন ও বিশ্লেষণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত। উচ্চ রেজলিউশনের আবহাওয়া পূর্বাভাস তৈরি করতে গেলে প্রচুর পরিমাণে তথ্য বিশ্লেষণ করতে হয়, যা শক্তিশালী কম্পিউটিং ক্ষমতা ছাড়া সম্ভব নয়।
তৃতীয়ত, তথ্যপ্রবাহ এবং আন্তঃদেশীয় সমন্বয়ের ঘাটতি দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে দুর্বল করে তুলছে। অধিকাংশ দেশই আবহাওয়া, সমুদ্রবিজ্ঞান, হাইড্রোলজি এবং জলবায়ুসংক্রান্ত রিয়েল টাইম তথ্য ভাগ করে নেওয়ার জন্য কোনো সমন্বিত কেন্দ্রীয় ডেটাবেজ পরিচালনা করে না। ফলে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অনেক সময় দেরিতে সরবরাহ হয়, যা দুর্যোগ প্রস্তুতির জন্য বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায়। 
চতুর্থত, দক্ষ আবহাওয়াবিদ, জলবায়ু বিজ্ঞানী এবং ডেটা বিশ্লেষকদের সংখ্যা এ অঞ্চলে খুবই সীমিত। আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন গবেষণা ও উন্নয়নের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে পর্যাপ্ত বিনিয়োগের অভাব রয়েছে। এ ছাড়াও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও আবহাওয়া সংস্থার মধ্যে সহযোগিতার ঘাটতি দক্ষ জনশক্তি তৈরির পথে একটি বিরাট বাধা।

পঞ্চমত এবং প্রধানত অনেক অঞ্চলে মাফিয়া সিন্ডিকেটের কার্যক্রমও একটি বড় বিপদ। সরকারের প্রকল্পগুলোতে যন্ত্রপাতি ক্রয় প্রক্রিয়ায় অবৈধ তৎপরতা এবং দুর্নীতি প্রায় পরিলক্ষিত হয়। সিন্ডিকেটগুলো প্রায়ই কম মূল্যে নিচু মানের অপ্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অবকাঠামো তৈরিতে বেশি প্রলুব্ধ হয়। বিদেশি প্রযুক্তি ক্রয়, বিদেশ গমন, টেন্ডার এগুলোতে নির্দিষ্ট সিন্ডিকেট সবাইকে জিম্মি করে রাখে। তারা প্রতিষ্ঠান, দেশ ও প্রজন্মের বারোটা বাজায়।

এই পরিস্থিতিতে দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও স্বনির্ভর করে তুলতে স্থানীয় গবেষণা ও উন্নয়নের ওপর জোর দিতে হবে। স্থানীয় জলবায়ু বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ পূর্বাভাস মডেল তৈরি করা হলে পূর্বাভাসের নির্ভুলতা বৃদ্ধি পাবে। 

উন্নত কম্পিউটিং অবকাঠামোতে বিনিয়োগও একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। উচ্চক্ষমতাসম্পন্ন কম্পিউটিং কেন্দ্র স্থাপন করা গেলে উন্নত পূর্বাভাসের জন্য বিশাল তথ্য সেট বিশ্লেষণ সহজ হবে। মানবসম্পদ উন্নয়নের ক্ষেত্রে আবহাওয়া বিজ্ঞান, সমুদ্রবিজ্ঞান এবং পূর্বাভাস প্রযুক্তিতে উচ্চতর শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ বাড়াতে হবে।
পাশাপাশি ন্যাশনাল ওশানোগ্রাফিক অ্যান্ড মেরিটাইম ইনস্টিটিউট (নোয়ামি), সাউথ এশিয়ান এবং সাউথ এশিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (সামা)-এর মতো সংস্থাগুলোকে কাযর্কর রাখতে হবে।
আঞ্চলিক তথ্য বিনিময় ব্যবস্থার উন্নয়নও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর মধ্যে তথ্য ভাগাভাগির একটি কার্যকর ব্যবস্থা গড়ে তুলতে হবে, যাতে রিয়েল টাইম আবহাওয়া ও সমুদ্রবিজ্ঞান সম্পর্কিত তথ্য সহজলভ্য হয়। সার্ক, বিমসটেক এবং অন্যান্য আঞ্চলিক সংস্থার সহযোগিতার মাধ্যমে একটি সমন্বিত আবহাওয়া তথ্যকেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা গেলে তথ্যপ্রবাহ এবং পূর্বাভাসের নির্ভুলতা বাড়বে। যদিও বহিরাগত প্রযুক্তি সরবরাহকারীর ওপর নির্ভরশীলতা কমানো জরুরি। তবে বিশ্বব্যাপী আবহাওয়া সংস্থা যেমন ডব্লিউএমও, ইসিএমডব্লিউএফ, কোপারনিকাস ডেটা ব্যবহার করার কৌশলগত সহযোগিতা বাড়াতে হবে। এটি নিশ্চিত করতে হবে যে প্রশিক্ষণ ও উচ্চশিক্ষা যেন যথাযথ কাজে লাগানো সম্ভব হয়। 

উচ্চতর প্রশিক্ষণের মাধ্যমে উন্নত ডেটা সেট তৈরি এবং বৈশ্বিক মানসম্পন্ন পূর্বাভাস প্রস্তুত করা সম্ভব হবে, যা স্থানীয় পূর্বাভাসের নির্ভুলতা বাড়াতে সহায়তা করবে। একই সঙ্গে আন্তর্জাতিক পূর্বাভাস মডেলের সঙ্গে স্থানীয় মডেলগুলোর সমন্বয় ঘটানো গেলে আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থা আরও কার্যকর হবে।
দক্ষিণ এশিয়ার আবহাওয়া পূর্বাভাস ব্যবস্থাকে আরও কার্যকর ও আত্মনির্ভর করতে বহিরাগত প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে স্থানীয় প্রাতিষ্ঠানিক ও মানবসম্পদ শক্তিশালী করা অপরিহার্য। উন্নত কম্পিউটিং অবকাঠামোতে বিনিয়োগ, বৈজ্ঞানিক গবেষণা বাড়ানো এবং আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে এই অঞ্চল একটি স্বনির্ভর, কার্যকর ও জলবায়ু সহনশীল পূর্বাভাস ব্যবস্থা গড়ে তুলতে পারবে। 

ড.

মোহন কুমার দাশ: যুগ্ম সম্পাদক, সাউথ এশিয়ান মেটিওরোলজিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (সামা)
mohan.smrc@gmail.com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: প র ব ভ স ব যবস থ র ওপর ন র ভরশ ল সহয গ ত অবক ঠ ম ক র যকর র জন য সমন ব জলব য

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ