প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, ‘‘সন্দ্বীপে ফেরি সার্ভিস চালুর মাধ্যমে সন্দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ লাঘব হল। পাশাপাশি স্বাধীনতার এত বছর পর পর্যন্ত সন্দ্বীপের মানুষ যে অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হয়েছেন, সে কলঙ্ক মোচন হল।’’

সোমবার (২৪ মার্চ) দুপুরে সন্দ্বীপ উপজেলা কমপ্লেক্স মাঠে এক সুধী সমাবেশে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধান উপদেষ্টা এসব কথা বলেন।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘‘সন্দ্বীপ বাংলাদেশের প্রাচীন ও ঐতিহ্যবাহী দ্বীপ। দেশের বিভিন্ন জায়গায় উন্নতি হলেও স্বাধীনতার ৫৩ বছর পর্যন্ত এ দ্বীপ উপকূলটি অবহেলিত অবস্থায় রয়ে গেছে। আজ ফেরি সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দ্বীপবাসী একটি কলঙ্ক থেকে মুক্তি পেল। সন্দ্বীপকে নৌবন্দর ঘোষণা, গুপ্তছড়া ও কুমিরা ঘাট উন্মুক্ত করা এবং ঢাকা-সন্দ্বীপ বাস সার্ভিস চালু করা, ফেরিঘাট এলাকায় সংযোগ সড়ক নির্মাণ; নৌপথে ড্রেজিং-এর উদ্যোগগুলো সন্দ্বীপবাসীর দীর্ঘদিনের ভোগান্তি থেকে তাদের মুক্ত করবে।’’

বঙ্গোপসাগরের জলরাশিঘেরা প্রায় ৭৫০ বর্গকিলোমিটার জুড়ে রয়েছে সন্দ্বীপ উপজেলা। সীতাকুণ্ড থেকে জলপথে প্রায় ১৭ কিলোমিটার দূরের এ উপজেলার মানুষ দেশের মূল ভূখণ্ড থেকে বিচ্ছিন্ন জীবনযাপন করে আসছেন। স্পিড বোট, ট্রলারে করে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তারা পারাপার হতো। গর্ভবতী মহিলা বা মুমূর্ষু রোগীকে উন্নত চিকিৎসার জন্য শহরে আনার ক্ষেত্রে তাদের অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হত। ভাটার সময় অনেক ক্ষেত্রে অনেক পথ কাদাপানি মাড়িয়ে কূলে উঠতে হত। সন্দ্বীপবাসীর দুর্ভোগ ছিল অবর্ণনীয়। তাই তারা দীর্ঘদিন থেকে সন্দ্বীপ-সীতাকুণ্ড সরাসরি ফেরি চলাচলের দাবি জানিয়ে আসছিলেন।’’

এদিন সকালে সীতাকুণ্ড উপজেলার বাঁশবাড়িয়া ঘাটে এবং সন্দ্বীপ উপজেলার গুপ্তছড়া ঘাটে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা এম সাখাওয়াত হোসেন ফেরিঘাট ও ফেরিসেবার উদ্বোধন করেন। এ সময় তার সঙ্গে আরো ৫ জন উপদেষ্টা ও ২ জন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী উপস্থিত ছিলেন।

ফেরি চলাচল উপলক্ষে আজ থেকে ঢাকা-সন্দ্বীপ রুটে বিআরটিসির বাস চলাচলও উদ্বোধন করা হয়। সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বিআরটিসি এসি বাস সার্ভিস উদ্বোধন করেন।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফ-এর সভাপতিত্বে সভায় বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ফারুক ই আজম বীর প্রতীক, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অধ্যাপক ডা.

বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মিজ্ ফরিদা আখতার, বিশেষ সহকারী (স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়) খোদা বখশ চৌধুরী, বিশেষ সহকারী (স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়) ডা. মো. সায়েদুর রহমান সুধী সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন। উপদেষ্টাগণ তাদের বক্তৃতায় ফেরিঘাট ও ফেরিসেবার জন্য সবাইকে অভিনন্দন জানান। 

সন্দ্বীপ অংশে দুটি ঘাটের নাম ‘জুলাই-২৪’ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সৈকত ঘাট ও শহীদ মাহিন ঘাট নামকরণ করার জন্য নৌ পরিবহন উপদেষ্টা প্রস্তাব দেন। উপস্থিত সুধীজন সমস্বরে ‘হ্যাঁ’ সূচক জবাব দিয়ে ঘাটের নামকরণকে স্বাগত জানান। 

উল্লেখ্য, ‘জুলাই ২৪’-এর আন্দোলনে সন্দ্বীপের দুজন শহীদ হন। অনুষ্ঠানে এ দুই শহীদ পরিবারকে ১০ লাখ টাকা করে অনুদানের চেক প্রদান করা হয়। পরবর্তীতে দুই পরিবারকে আরো ২০ লাখ করে অনুদান দেওয়া হবে বলে ঘোষণা দেওয়া হয়।

ঢাকা/রেজাউল/এনএইচ

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম হ ম মদ পর বহন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

মাঠ নিয়ে শ্রাবণের আফসোস

আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেও বসুন্ধরা কিংসের গোলরক্ষক মেহেদী হাসান শ্রাবণ নিজের সেরাটা দেওয়ার চেষ্টা করেছেন। ফেডারেশন কাপের ফাইনালে আবাহনীর বিপক্ষে টাইব্রেকারে কিংসের জয়ের নায়ক ক্যারিয়ার নিয়ে কথা বলেছেন সমকালের সঙ্গে। শুনেছেন সাখাওয়াত হোসেন জয়

সমকাল: দু’দিনের ফাইনালের অভিজ্ঞতাটা কেমন হলো?
শ্রাবণ: (হাসি) না, এটা খুব কঠিন ছিল। আমরা সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিয়েছি এক দিন ফাইনাল খেলব, জিতব এবং উদযাপন করব। কিন্তু প্রাকৃতিক কারণে খেলা অনেকক্ষণ বন্ধ ছিল। বাকি ১৫ মিনিট আরেক দিন। এটা একটা নতুন অভিজ্ঞতা। একই চাপ দু’বার নিতে হলো।

সমকাল: এই মাঠের সমস্যার কারণেই কি এমনটা হয়েছে?
শ্রাবণ: অবশ্যই। এত বড় একটা টুর্নামেন্টের ফাইনাল খেলা যে মাঠে, সেখানে ফ্লাডলাইট নেই। যদি ফ্লাডলাইটের সুবিধা থাকত, ওই দিনই খেলাটা শেষ করা যেত। আমার মনে হয়, দেশের ফুটবলের কিছু পরিবর্তন করা উচিত। বিশেষ করে আমরা যখন জাতীয় দলের হয়ে বিদেশে খেলতে যাই, তখন দেখি অন্যান্য দেশের মাঠ খুব গতিশীল। আমাদের দেশের মাঠগুলো আন্তর্জাতিক পর্যায়ের না। প্রায় সময়ই সমস্যা হয়। আমরা স্লো মাঠে খেলি। বিদেশে গতিশীল মাঠে খেলতে গিয়ে সমস্যায় পড়তে হয়। আমাদের লিগটা যদি আন্তর্জাতিক মানের মাঠে হতো।

সমকাল: পেনাল্টি শুটআউটের সময় কী পরিকল্পনা ছিল আপনার?
শ্রাবণ: আমি আগেও বলেছি যে অনুশীলনের সময় আগের ম্যাচের টাইব্রেকার নিয়ে কাজ করেছি। কে কোন দিকে মারে, সেগুলো ট্রেনিংয়ে দেখিয়ে দিয়েছেন কোচ। কোচের দিকনির্দেশনা অনুযায়ী কাজ করছি এবং সফল হয়েছি।

সমকাল: এমেকার শট ঠেকানোর পর মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছেন। এটি কি আগে থেকেই পরিকল্পনা ছিল?
শ্রাবণ: না, সেভ দেওয়ার পর মাথায় এলো। তাই এমি মার্টিনেজের মতো উদযাপন করেছি। বলতে পারেন, এটি কোনো পরিকল্পনা ছিল না। তৎক্ষণাৎ মাথায় এলো।

সমকাল: জাতীয় দল আর ক্লাব– দুটোর অভিজ্ঞতা যদি একটু বলতেন।
শ্রাবণ: ক্লাব আর জাতীয় দল– দুটো ভিন্ন বিষয়। ক্লাব হচ্ছে শুধু একটা ক্লাবকে প্রতিনিধিত্ব করা। আর জাতীয় দল তো পুরো বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করা। যারা ক্লাবে ভালো পারফরম্যান্স করে, তাদেরই জাতীয় দলে ডাকে। আর জাতীয় দলে ডাক পাওয়াটা একজন প্লেয়ারের সবচেয়ে বড় অর্জন।

সমকাল: আপনি একটি সেভ করেছেন। কিন্তু আবাহনীর মিতুল মারমা পারেননি। জাতীয় দলে বেস্ট ইলেভেনে থাকতে পারবেন?
শ্রাবণ: না না, ব্যাপারটা এমন না। ও (মিতুল) সেভ করতে পারেনি আর আমি পারছি– এটি কিন্তু বড় বিষয় না। ও কিন্তু সেমিফাইনালে সেভ করে দলকে ফাইনালে এনেছে। বরং অনুশীলনে কোচ যাঁকে ভালো মনে করেন, তাঁকেই শুরুর একাদশে রাখেন।

সমকাল: একজন গোলরক্ষক হিসেবে নিজেকে কোথায় দেখতে চান?
শ্রাবণ: আমি চাই দেশসেরা গোলরক্ষক হতে। আমার স্বপ্ন আছে, বিদেশে লিগে খেলব।    

সম্পর্কিত নিবন্ধ