ঈদ ও রামনবমী উদ্যাপন নিয়ে সতর্ক পশ্চিমবঙ্গ সরকার, বড় মিছিল করার ঘোষণা বিজেপির
Published: 25th, March 2025 GMT
প্রতিবারের মতো এবারও ভারতের পশ্চিমবঙ্গে মার্চের শেষ এবং এপ্রিল মাসের গোড়ায় ঈদ এবং রামনবমী উদ্যাপিত হতে যাচ্ছে। এ নিয়ে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনার আশঙ্কা করছে পুলিশ। মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে এপ্রিলের গোড়ায় রামনবমী পর্যন্ত বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে বলে পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন।
অন্যদিকে হিন্দুত্ববাদী সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) ধর্মীয় শাখা বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এবং বিজেপির তরফ থেকে জানানো হয়েছে, ৬ এপ্রিল রামনবমীর দিন এবং তার আগে শোভাযাত্রা ও মিছিলের আয়োজন করা হয়েছে।
বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বিধানসভায় বিরোধীদলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারী জানিয়েছেন, নানা প্রতিবন্ধকতার বিরুদ্ধে গিয়ে তাঁরা রামনবমী পালন করবেন।
আগামী বছর এই সময় পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন। তার আগে মাঠপর্যায়ে নিজেদের ক্ষমতা প্রদর্শনের একটা বড় সুযোগ রামের জন্মদিন বা রামনবমী উদ্যাপন। প্রতিবারই এই দিনটা আসে ঈদের পরেই এবং পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় রামনবমীর প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায় রমজান চলাকালে। ফলে সব সময়ই গন্ডগোলের একটা আশঙ্কা থাকে। এবারও আছে।
পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বিষয়টি প্রশাসনের মাথায় থাকে। নতুন করে কিছু করার বা বলার নেই। প্রতিবারই যে নিরাপত্তাব্যবস্থা থাকে, এবারও তা থাকবে। প্রশাসনের তরফে শান্তিপূর্ণভাবে ঈদ ও রামনবমী উদ্যাপনের আবেদন জানানো হয়, এবারও হবে। নির্বাচন দেরি আছে। ফলে এর সঙ্গে বিষয়টিকে জুড়ে ভাবনাচিন্তা করা হচ্ছে না।
বিশ্ব হিন্দু পরিষদের তরফে একাধিক মিছিলের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে, যা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গা থেকে বেরোবে। বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেছেন, তাঁরা তাঁদের মতো মিছিল করবেন এবং কোনো রকম বাধা বরদাশত করা হবে না।
গত রোববার এক অনুষ্ঠানে বিজেপির রাজ্য সভাপতি বলেন, রামনবমী মিছিল নিয়ে কেউ বাধা দিতে এলে শান্তিপূর্ণভাবে তার মোকাবিলা এবং প্রতিরোধ করা হবে। যেকোনো ধরনের বাধার মোকাবিলা করতে হবে। এমনকি প্রশাসনও বাধা দিলে তার বিরোধিতা করতে হবে। ধর্মীয় ভাবাবেগে আঘাত সহ্য করা হবে না।
এর আগে শুভেন্দু অধিকারীও বলেছিলেন, রাজ্যের রামনবমী উদ্যাপনে বাধা দেওয়া হচ্ছে, যা মেনে নেওয়া হবে না। রামনবমী উপলক্ষে সারা রাজ্যে ১ কোটি মানুষকে পথে নামার আহ্বান জানিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
রামনবমীতে নানা ধরনের অস্ত্র হাতে মিছিল করা হয়। অনেক ক্ষেত্রেই বিভিন্ন অঞ্চলে মিউজিক বক্স বাজিয়ে গান চালানো, স্লোগান বা ছোটখাটো বাদানুবাদ থেকে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। এর থেকে মার্চের শেষ ও এপ্রিলের গোড়ায় মাঝারি ধরনের সহিংসতার ঘটনা ঘটে।
পুলিশের কর্মকর্তা বলেন, ‘সবকিছু মাথায় রেখে এই সময়ে নিরাপত্তাব্যবস্থা অনেকটাই জোরদার করা হয়। তবে আগামী বছরে নির্বাচনের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা আরও জোরদার করা হবে বলে আমার মনে হয় না। কারণ, নির্বাচনের অনেক দেরি আছে। নির্বাচনের সঙ্গে এই সময়ের উৎসব-অনুষ্ঠানকে মিলিয়ে দেখা হয় না।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।