একটি বেসরকারি ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। দিনের বেলা সেখানে চাকরি করেন। সন্ধ্যার পর থেকে করেন আরেকটি খণ্ডকালীন চাকরি। ওই চাকরিতে একটি ক্লাবে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সেখানে থাকতে হয় রাত প্রায় ১১টা-১২টা পর্যন্ত। এরপরও ঘরে ফেরেন না। আরও প্রায় ২-৩ ঘণ্টা ইজিবাইক চালিয়ে রোজগার করেন যুবক আমির খসরু চৌধুরী (৩২)।

খসরুর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার বাহুলী গ্রামে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে পটিয়া পৌর সদরের ব্যস্ত সড়কে যাত্রীর জন্য ইজিবাইক নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় আমির খসরুকে। এ সময় তাঁর সঙ্গে গিয়ে কথা হয়। আলাপে নিজের জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরেন খসরু।

পরে তাঁর কথার সূত্র ধরে গত রোববার রাতে যাওয়া হয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পটিয়া ক্লাবে। সেখানে একটি কম্পিউটারে ক্লাবের হিসাব-নিকাশ করতে দেখা যায় আমির খসরুকে। দুই দফা খসরুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর বাবার নাম শওকত আলী চৌধুরী। বাবা ২০০৪ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চাকরি করেছেন। পরে দেশে এসে জমি কেনাবেচায় সহায়তা করতেন। ২০০৯ সালে তিনি নানা ধরনের অসুস্থতায় কর্মহীন হয়ে পড়েন। এর পর থেকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।

পরিবারের খরচ চালানো একসময় আর সম্ভব হচ্ছিল না। এমনই দুঃসময়ে উপার্জনে নামতে হয় আমির খসরুকে। তখন খসরু একটি কলেজের স্নাতকের ছাত্র। ২০১৫ সালে পটিয়া ক্লাবের খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পটিয়া ক্লাব থেকে শুরুতে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পেতেন, যদিও এখন বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার টাকা।

চাকরির কারণে আর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম নগরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে পিয়ন পদে যোগদান করেন খসরু। সেখান থেকে বর্তমানে মাসে ২৪ হাজার টাকা করে পান। তবে পটিয়া থেকে নগরের অফিসে যাতায়াত, দুপুরের খাবারে প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বাকি টাকা সংসারে খরচ করেন তিনি।

আমির খসরু চৌধুরী জানান, ২০১৭ সালে তিনি বিয়ে করেছেন। তাঁর দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ভাইদের মধ্যে একজন আড়াই বছর ধরে পটিয়া সদরের একটি জুতার দোকানে চাকরি করেন। একজন বিয়ে করে আলাদাভাবে থাকেন। অপর দুই ভাই এইচএসসিতে পড়েন, যাঁদের পড়ালেখার খরচও চালাতে হয় খসরুকে।

খসরু বলেন, ২০২২ সালে তাঁর বাবার পিত্তথলির অস্ত্রোপচার হয়। তবে আবারও সমস্যা দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন আবারও অস্ত্রোপচার করতে হবে। একদিকে পরিবারের খরচ, অন্যদিকে বাবার নিয়মিত চিকিৎসা ব্যয়, সব মিলিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য দুই মাস আগে ইজিবাইক কেনেন। এ জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। প্রতি মাসে কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে ১১ হাজার টাকা করে।

খসরু বলেন, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমান। বাকি সময়টা উপার্জনের পেছনে ব্যয় করেন। ঘুম কম হওয়ায় অনেক সময় খারাপ লাগে তাঁর। তবু বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু করতে পারছেন, এতেই শান্তি।

পটিয়া ক্লাবে আমির খসরুর বিষয়ে কথা হয় ক্লাবের অ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমির খসরু সুনামের সঙ্গেই দীর্ঘদিন তাঁদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পরিবারের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ প্রশংসার দাবিদার। তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে কাজের পেছনে এত বেশি সময় দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: পর ব র র ন খসর খসর ক

এছাড়াও পড়ুন:

আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান

বলিউডের মিস্টার পারফেকশনিস্ট আমির খানকে নিয়ে রাজকুমার হিরানি নির্মাণ করেন আলোচিত সিনেমা ‘পিকে’। ২০১৪ সালে প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায় এটি। মুক্তির পর বক্স অফিসে সুপারডুপার হিট হয়।

এ সিনেমা মুক্তির আগে প্রকাশিত হয় আমিরের পোস্টার। সিনেমাটিতেও নগ্ন আমিরের দেখা মেলে। তারপর দারুণ আলোচনায় উঠে আসেন এই অভিনেতা। সমালোচনাও কম সইতে হয়নি তাকে। এখানেই শেষ নয়, হিন্দু ধর্মের প্রতি কটাক্ষ করার অভিযোগে তীব্র সমালোচনা মুখে পড়েন আমির। ভাঙচুর করা হয় প্রেক্ষাগৃহ।

প্রায় এক যুগ পর এসব বিষয় নিয়ে মুখ খুলেছেন আমির খান। ইন্ডিয়া টিভি চ্যানেলের ‘আপ কি আদালত’ শোয়ে এসব বিষয় নিয়ে কথা বলেন আমির। তার ভাষায়— “ধর্ম নয়, ধর্মের নামে যারা প্রতারণা করে ‘পিকে’ সেসব লোকদের সমালোচনা করেছে।”

আরো পড়ুন:

জোড়া লাগল অর্জুন-মালাইকার ভাঙা প্রেম!

অন্তঃসত্ত্বা কিয়ারাকে কী উপহার দিলেন রাম চরণ?

ব্যাখ্যা করে আমির খান বলেন, “তারা ভুল। আমরা কোনো ধর্মের বিরুদ্ধে নই। আমরা সমস্ত ধর্ম ও সমস্ত ধর্মের মানুষদের শ্রদ্ধা করি। যারা ধর্মকে ব্যবহার করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানিয়ে টাকা কামায়, তাদের বিষয়ে সচেতন করাই ‘পিকে’ সিনেমার উদ্দেশ্য ছিল। প্রতিটি ধর্মেই এমন লোক পাওয়া যায়।”

‘পিকে’ সিনেমায় পাকিস্তানি এক মুসলিম ছেলেরি প্রেমে পড়ে ভারতীয় হিন্দু ধর্মের অনুসারী এক নারী (আনুশকা শর্মা)। এটাকে ‘লাভ জিহাদ’ বলে অনেকে অভিযোগ করেন। এ বিষয়ে আমির খান বলেন, “সবসময়ই এটিকে লাভ জিহাদ বলা উচিত নয়। এটি মানবতা। মানবতা ধর্মের উর্ধ্বে।”

গত ৭-৮ বছরে দেশদ্রোহী, হিন্দুবিরোধী হওয়ার অভিযোগের মুখোমুখি হয়েছেন আমির খান। এ বিষয়ে তিনি বলেন, “আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম। আমি গর্বিত আমি একজন ভারতীয়। দুটোই একসঙ্গে সত্যি হতে পারে।”

ঢাকা/শান্ত

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কখন ক্ষেপণাস্ত্র এসে পড়ে, সেই আতঙ্কে দিন কাটছে তেহরানের মানুষের
  • ইসরায়েলি ক্ষেপণাস্ত্র কেড়ে নিল তরুণ ইরানি কবি আর তাঁর পুরো পরিবারকে
  • চট্টগ্রামে করোনায় আক্রান্ত এক ব্যক্তির মৃত্যু
  • আমি কারো সঙ্গে পাল্লা দিতে আসিনি: অপু বিশ্বাস
  • হামজাদের কোচিং স্টাফ বাড়ছে
  • ব্যক্তিগত মুহূর্ত নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতা, স্পষ্ট বার্তা দিলেন অপু
  • ব্যক্তিগত মুহূর্ত নিয়ে অসুস্থ প্রতিযোগিতায় আমি নেই: অপু বিশ্বাস
  • শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই
  • কালিয়াকৈরে বিএনপির দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি ধাওয়ায় আটক ২ নেতা, পরে ছাড়া পেলেন একজন
  • আমি গর্বিত আমি একজন মুসলিম: আমির খান