দিনে ব্যাংকে চাকরি, রাতে ইজিবাইক চালান খসরু
Published: 26th, March 2025 GMT
একটি বেসরকারি ব্যাংকের পিয়ন হিসেবে কর্মরত রয়েছেন তিনি। দিনের বেলা সেখানে চাকরি করেন। সন্ধ্যার পর থেকে করেন আরেকটি খণ্ডকালীন চাকরি। ওই চাকরিতে একটি ক্লাবে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর পদের দায়িত্বে রয়েছেন তিনি। সেখানে থাকতে হয় রাত প্রায় ১১টা-১২টা পর্যন্ত। এরপরও ঘরে ফেরেন না। আরও প্রায় ২-৩ ঘণ্টা ইজিবাইক চালিয়ে রোজগার করেন যুবক আমির খসরু চৌধুরী (৩২)।
খসরুর বাড়ি চট্টগ্রামের পটিয়া পৌরসভার বাহুলী গ্রামে। গত শুক্রবার রাত ১২টার দিকে পটিয়া পৌর সদরের ব্যস্ত সড়কে যাত্রীর জন্য ইজিবাইক নিয়ে অপেক্ষা করতে দেখা যায় আমির খসরুকে। এ সময় তাঁর সঙ্গে গিয়ে কথা হয়। আলাপে নিজের জীবনযুদ্ধের কথা তুলে ধরেন খসরু।
পরে তাঁর কথার সূত্র ধরে গত রোববার রাতে যাওয়া হয় উপজেলার ঐতিহ্যবাহী পটিয়া ক্লাবে। সেখানে একটি কম্পিউটারে ক্লাবের হিসাব-নিকাশ করতে দেখা যায় আমির খসরুকে। দুই দফা খসরুর সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, তাঁর বাবার নাম শওকত আলী চৌধুরী। বাবা ২০০৪ সাল পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতের দুবাইয়ে চাকরি করেছেন। পরে দেশে এসে জমি কেনাবেচায় সহায়তা করতেন। ২০০৯ সালে তিনি নানা ধরনের অসুস্থতায় কর্মহীন হয়ে পড়েন। এর পর থেকে সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল।
পরিবারের খরচ চালানো একসময় আর সম্ভব হচ্ছিল না। এমনই দুঃসময়ে উপার্জনে নামতে হয় আমির খসরুকে। তখন খসরু একটি কলেজের স্নাতকের ছাত্র। ২০১৫ সালে পটিয়া ক্লাবের খণ্ডকালীন চাকরিতে যোগ দেন তিনি। পটিয়া ক্লাব থেকে শুরুতে প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা পেতেন, যদিও এখন বেড়ে হয়েছে ৮ হাজার টাকা।
চাকরির কারণে আর পড়ালেখা করা সম্ভব হয়নি। ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে চট্টগ্রাম নগরে একটি বেসরকারি ব্যাংকে পিয়ন পদে যোগদান করেন খসরু। সেখান থেকে বর্তমানে মাসে ২৪ হাজার টাকা করে পান। তবে পটিয়া থেকে নগরের অফিসে যাতায়াত, দুপুরের খাবারে প্রতি মাসে ৯ হাজার টাকার মতো খরচ হয়। বাকি টাকা সংসারে খরচ করেন তিনি।
আমির খসরু চৌধুরী জানান, ২০১৭ সালে তিনি বিয়ে করেছেন। তাঁর দুই ছেলে রয়েছে। বড় ছেলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। ভাইদের মধ্যে একজন আড়াই বছর ধরে পটিয়া সদরের একটি জুতার দোকানে চাকরি করেন। একজন বিয়ে করে আলাদাভাবে থাকেন। অপর দুই ভাই এইচএসসিতে পড়েন, যাঁদের পড়ালেখার খরচও চালাতে হয় খসরুকে।
খসরু বলেন, ২০২২ সালে তাঁর বাবার পিত্তথলির অস্ত্রোপচার হয়। তবে আবারও সমস্যা দেখা দেওয়ায় সম্প্রতি চিকিৎসক পরামর্শ দিয়েছেন আবারও অস্ত্রোপচার করতে হবে। একদিকে পরিবারের খরচ, অন্যদিকে বাবার নিয়মিত চিকিৎসা ব্যয়, সব মিলিয়ে বাড়তি উপার্জনের জন্য দুই মাস আগে ইজিবাইক কেনেন। এ জন্য একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিতে হয়েছে। প্রতি মাসে কিস্তি পরিশোধ করতে হচ্ছে ১১ হাজার টাকা করে।
খসরু বলেন, প্রতিদিন ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মাত্র কয়েক ঘণ্টা ঘুমান। বাকি সময়টা উপার্জনের পেছনে ব্যয় করেন। ঘুম কম হওয়ায় অনেক সময় খারাপ লাগে তাঁর। তবু বাবাসহ পরিবারের সদস্যদের জন্য কিছু করতে পারছেন, এতেই শান্তি।
পটিয়া ক্লাবে আমির খসরুর বিষয়ে কথা হয় ক্লাবের অ্যাডহক কমিটির সদস্যসচিব মোজাম্মেল হকের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমির খসরু সুনামের সঙ্গেই দীর্ঘদিন তাঁদের প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছেন। পরিবারের প্রতি তাঁর দায়িত্ববোধ প্রশংসার দাবিদার। তবে পর্যাপ্ত বিশ্রাম না নিয়ে কাজের পেছনে এত বেশি সময় দেওয়া ঝুঁকিপূর্ণ।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: পর ব র র ন খসর খসর ক
এছাড়াও পড়ুন:
সংগীতশিল্পী দীপ মারা গেছেন
রাস্টফ ব্যান্ডের ভোকাল আহরার মাসুদ মারা গেছেন। সেমাবার (১৫ সেপ্টেম্বর) দিবাগত রাতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ভক্তদের কাছে দীপ নামে পরিচিত ছিলেন আহরার মাসুদ।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) সকাল ৮টায় ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে এ তথ্য জানানো হয়। তবে এ শিল্পীর মৃত্যুর কারণ সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।
আরো পড়ুন:
৫০ শয্যার থানচি হাসপাতাল চলছে একজন চিকিৎসকে
সিজেএফবি পারফরম্যান্স অ্যাওয়ার্ড ঘোষণা
রাস্টফ ব্যান্ডের ফেসবুক পেজে দীপের মৃত্যুর খবর জানিয়ে লেখা হয়, “এমন এক বেদনাদায়ক মুহূর্তে সঠিক শব্দ খুঁজে পাওয়া বা কোনো শব্দ খুঁজে পাওয়া—প্রায় অসম্ভব। প্রিয় ভোকালিস্ট, বন্ধু ও সহযাত্রী আহারার ‘দীপ’ মাসুদের মৃত্যুসংবাদ আমাদের স্তম্ভিত করেছে। আমরা শোকে ভেঙে পড়েছি, এখনো অবিশ্বাসের ভেতর ডুবে আছি। গত রাতেই তিনি আমাদের ছেড়ে চিরবিদায় নিয়েছেন।”
দীপের শূন্যতা ব্যাখ্যা করে লেখা হয়, “তার পরিবার, বন্ধু ও প্রিয়জনদের প্রতি আমাদের অন্তরের সমবেদনা ও প্রার্থনা। আপনাদের মতো আমরাও এই অপূরণীয় ক্ষতি বোঝার চেষ্টা করছি, চেষ্টা করছি দীপের অসাধারণ প্রতিভাকে সম্মান জানাতে এবং তার চেয়েও বড় কথা—মানুষ হিসেবে তিনি আমাদের কাছে যে অমূল্য ছিলেন, তাকে স্মরণ করতে। এই কঠিন সময়ে সবার কাছে অনুরোধ, দয়া করে পরিবার ও কাছের মানুষদের ব্যক্তিগত পরিসরকে সম্মান করুন এবং তার আত্মার শান্তির জন্য প্রার্থনা করুন। শান্তিতে ঘুমাও, দীপ। তোমার শূন্যতা চিরকাল বেদনাময় হয়ে থাকবে।”
তরুণদের কাছে জনপ্রিয় আরেকটি ব্যান্ড পাওয়ারসার্চও দীপের মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করেছে। ব্যান্ডের অফিশিয়াল ফেসবুক পেজে লেখা হয়েছে, “স্মরণ করছি আহরার মাসুদ দীপকে। কিছুক্ষণ আগে আমরা হারিয়েছি আমাদের প্রিয় ভাই, ঘনিষ্ঠ বন্ধু এবং এক সত্যিকারের শিল্পীকে। এক্লিপস, কার্ল, ক্যালিপসো ও সবশেষ রাস্টফ ব্যান্ডের অবিস্মরণীয় কণ্ঠ আহরার মাসুদ দীপ আমাদের মাঝে আর নেই। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
পাওয়ারসার্চ আরো লেখেন, “আহরার মাসুদ দীপ শুধু একজন ভোকালিস্টই ছিলেন না, তিনি ছিলেন শক্তি, সৃজনশীলতা আর আবেগের প্রতীক, যিনি তার চারপাশের সবাইকে অনুপ্রাণিত করেছেন; একই সাথে তার অত্যন্ত নমনীয় ব্যবহার, যা সবাইকে তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষীই করে ফেলত! শান্তিতে থাকো ভাই, তুমি সব সময় আমাদের গল্পের অংশ হয়ে থাকবে।”
ঢাকা/শান্ত