সি চিন পিংয়ের প্রতিশ্রুত অর্থের ২৫% এসেছে ৯ বছরে
Published: 27th, March 2025 GMT
চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের বাংলাদেশ সফরের সময় ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে ঢাকা-বেইজিং সম্পর্ক ‘কৌশলগত সহযোগিতায়’ উন্নীত হয়েছিল। সম্পর্কের বাঁকবদলের ওই সফরে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ, কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণসহ নানা অবকাঠামো নির্মাণসংক্রান্ত ২৭টি প্রকল্পে চীন ২ হাজার কোটি ডলার বরাদ্দের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চীনের প্রকল্পগুলোর মধ্যে ৯টি প্রকল্পের ঋণচুক্তি সই হয়েছে। এসব প্রকল্পের ব্যয় ৮০০ কোটি ডলার হলেও এ পর্যন্ত ছাড় হয়েছে ৫২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ প্রেসিডেন্ট সির প্রতিশ্রুতির প্রায় ৯ বছর পর ছাড় দেওয়া হয়েছে প্রায় ২৫ শতাংশ অর্থ।
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, আর ২৭ প্রকল্পের মধ্যে ৩০ শতাংশ প্রকল্পের কাজ এগিয়েছে।
এই প্রেক্ষাপটে সময় কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ২০২৩ সালের শেষ দিকে এসে একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে চীনকে। বাংলাদেশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চীনের একক ঠিকাদারের পরিবর্তে একাধিক ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নিতে পারে।পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, ঐতিহাসিক ওই সফরের প্রায় ৯ বছর পেরোলেও ঋণের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন গতি বেশ শ্লথ। এমন এক প্রেক্ষাপটে বেইজিংয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের আলোচনায় বাংলাদেশ ঋণের প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন দ্রুত করার তাগিদ দিতে পারে।
প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূস চার দিনের সরকারি সফরে গতকাল বুধবার চীনের হাইনান পৌঁছেছেন। প্রধান উপদেষ্টা ও তাঁর সফরসঙ্গীদের বহনকারী চায়না সাউদার্ন এয়ারলাইনসের একটি বিশেষ ফ্লাইট গতকাল বাংলাদেশ সময় বিকেল ৪টা ১৫ মিনিটে হাইনানের কিউনহায় বাও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করে। বেইজিংয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো.
অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্রে জানা গেছে, ২৭টি প্রকল্পের মধ্যে এখন পর্যন্ত ৯টি প্রকল্পের অর্থছাড়ের পর ৬টি প্রকল্প এখনো চলমান আছে। এই প্রকল্পগুলো হচ্ছে পদ্মা সেতুতে রেলসংযোগ, মহেশখালী থেকে চট্টগ্রাম পর্যন্ত জ্বালানি তেলের পাইপলাইন ও ‘মুরিং’ স্থাপন, বিদ্যুতের সঞ্চালন লাইনের উন্নয়ন, ঢাকা-আশুলিয়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ এবং দাসেরকান্দিতে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্প। আর শেষ হয়েছে কর্ণফুলী নদীর নিচে টানেল নির্মাণ, জাতীয় তথ্যপ্রযুক্তির নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণে তৃতীয় ধাপের উন্নয়ন এবং টেলিযোগাযোগ নেটওয়ার্ক উন্নয়ন।
সময় কমাতে নতুন প্রস্তাবগত ৯ বছরে চীনা ঋণে যত প্রকল্প নেওয়া হয়েছে, সেগুলোর বাণিজ্যিক চুক্তি করতেই দুই থেকে আড়াই বছর চলে গেছে।
ইআরডির কর্মকর্তারা বলছেন, একটি প্রকল্পে ঋণের জন্য চীনের এক্সিম ব্যাংকে প্রস্তাব পাঠানো হলে চীনা কর্তৃপক্ষ প্রথমে প্রকল্পের সম্ভাব্য অর্থনৈতিক সুবিধা বিবেচনার সিদ্ধান্ত নেয়। তারা ঋণ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিলে একজন ঠিকাদারকে বাংলাদেশে ওই প্রকল্প বাস্তবায়নকারী মন্ত্রণালয় বা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। দুই পক্ষ বসে প্রকল্পের নকশা ও কার্যপরিকল্পনা চূড়ান্ত করার পর বাণিজ্যিক চুক্তি হয়। এভাবে পুরো কাজ করতে দুই থেকে আড়াই বছর চলে যায়।
এ প্রসঙ্গে এক কর্মকর্তা দাসেরকান্দিতে পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের প্রসঙ্গ টানেন। তিনি জানান, চীনা ঠিকাদার ২০২১ সালে এ প্রকল্পের নকশা ও কার্যপরিকল্পনা চূড়ান্ত করে বাণিজ্যিক চুক্তি করতে ২০২৩ সালের শেষ পর্যন্ত সময় নিয়েছেন। অর্থাৎ কাজে নামার আগেই চলে গেছে প্রায় আড়াই বছর।
এই প্রেক্ষাপটে সময় কমিয়ে আনতে বাংলাদেশ ২০২৩ সালের শেষ দিকে এসে একটি নতুন প্রস্তাব দিয়েছে চীনকে। বাংলাদেশের প্রস্তাবে বলা হয়েছে, চীনের একক ঠিকাদারের পরিবর্তে একাধিক ঠিকাদার দরপত্রে অংশ নিতে পারে। তাহলে প্রতিযোগিতার কারণে কাজে গতি আসতে পারে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প র প রস ত ব ৯ বছর
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাই–সেপ্টেম্বরে ঋণছাড়ে এগিয়ে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া, কোনো অর্থ দেয়নি চীন
চলতি অর্থবছরে বিদেশি ঋণছাড়ে পাল্লা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়া। অর্থবছরের তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) সবচেয়ে বেশি ঋণ ছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। এই সংস্থাটি দিয়েছে ৩২ কোটি ২২ লাখ ডলার।
এরপরেই আছে রাশিয়া। দেশটি ওই তিন মাসে ৩১ কোটি ৫৩ লাখ ডলার দিয়েছে। রাশিয়া মূলত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে। তবে চীন গত তিন মাসে কোনো অর্থ দেয়নি।
গত বৃহস্পতিবার অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) জুলাই-সেপ্টেম্বর (প্রথম প্রান্তিক) মাসের বিদেশি ঋণ পরিস্থিতির হালনাগাদ প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। তাতে এ তথ্য দেওয়া হয়েছে।
এবার দেখা যাক, তিন মাসে কারা কত দিল। বিশ্বব্যাংক ও রাশিয়ার পরে তৃতীয় স্থানে আছে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। এডিবি ছাড় করেছে ১৮ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। এ ছাড়া জাপান ও ভারত দিয়েছে যথাক্রমে ৪ কোটি ডলার ও ৬ কোটি ডলার।
ইআরডির হিসাব অনুসারে, ঋণ শোধ বেড়েছে। পাশাপাশি অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতিও বেড়েছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) প্রায় ১১৫ কোটি ডলার দিয়েছে উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা ও দেশ। অন্যদিকে একই সময়ে আগে নেওয়া ঋণের সুদ ও আসল বাবদ প্রায় ১২৮ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছে বাংলাদেশকে।
এদিকে ঋণ পরিশোধের পাল্লা ভারী হচ্ছে। চলতি অর্থবছরে জুলাই-সেপ্টেম্বরে পরিশোধিত ঋণের মধ্যে ৮২ কোটি ডলার আসল এবং ৪৬ কোটি ডলারের বেশি সুদ বাবদ পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের একই সময়ে বিদেশি ঋণের সুদাসল বাবদ সরকারকে প্রায় ১১২ কোটি ডলার পরিশোধ করতে হয়েছিল। জুলাই-সেপ্টেম্বর মাসে বিদেশি ঋণের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে মাত্র ৯১ কোটি ডলারের।