বাংলাদেশের ক্রিকেটে কয়েকজন খেলোয়াড়কে সমর্থকেরা ট্রল করে ‘লর্ড’ তকমা দিয়েছেন। বারবার সুযোগ পাওয়ার পরও কাজে লাগাতে ব্যর্থ হওয়া কিংবা পারফরম্যান্সে ধারাবাহিকতার অভাবের কারণেই তাঁদের সঙ্গে এমন রসিকতা সমর্থকদের।

ভারতের ক্রিকেটেও এমন একজন আছেন, যাঁর নামের আগে ‘লর্ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়। আইপিএলে গত রাতে সেই ‘লর্ড’–এর পারফরম্যান্সের পর ফেসবুক-এক্স-ইনস্টাগ্রাম এ ধরনের মিম দিয়ে ছেয়ে গেছে, এমনকি ক্রিকেট–বিষয়ক ওয়েবসাইট ইএসপিএন ক্রিকইনফোও এক প্রতিবেদনে তাঁকে ‘লর্ড’ সম্বোধন করেছে!

কার কথা বলা হচ্ছে, এতক্ষণে নিশ্চয় বুঝতে পেরেছেন। শার্দূল ঠাকুর, যাঁকে ভারতীয় ক্রিকেটে অনেকেই চেনেন ‘লর্ড’ শার্দূল ঠাকুর কিংবা ‘লর্ড’ ঠাকুর নামে।

৩৩ বছর বয়সী এই পেসার আইপিএলে যাযাবর ক্রিকেটারদের একজন। ধারাবাহিক নয় বলেই কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজিতে লম্বা সময় স্থায়ী হতে পারেননি। এবারের মৌসুমে খেলছেন লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টসের হয়ে, ১০ বছরের আইপিএল ক্যারিয়ারে যেটি তাঁর ষষ্ঠ ফ্র্যাঞ্চাইজি। এর আগে খেলেছেন পাঞ্জাব কিংস, রাইজিং পুনে সুপার জায়ান্টস, চেন্নাই সুপার কিংস, দিল্লি ক্যাপিটালস ও কলকাতা নাইট রাইডার্সে।

তবে যে পরিস্থিতিতে লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস শার্দূলের ওপর আস্থা রেখেছে, তাতে ফ্র্যাঞ্চাইজিটির কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি নিশ্চয় কৃতজ্ঞ। তাঁর জন্য কৃতজ্ঞতার প্রকাশের সবচেয়ে সুন্দর ও যথার্থ ভাষা হতে পারত আস্থার প্রতিদান দেওয়া এবং সেটাই তিনি দিয়ে যাচ্ছেন।

কীভাবে?

২০২৫ আইপিএলের মেগা নিলামে অবিক্রীত ছিলেন শার্দূল। অনেকেই হয়তো ভেবেছিলেন, এবারের মৌসুমে তাঁর খেলা হবে না। কিন্তু লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস পেসার মহসিন খানের হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ায় কপাল খুলে যায় শার্দূলের। সুখবরটা পান গত শনিবার আসর শুরুর দিনেই। ‘নিবন্ধিত খেলোয়াড়দের পুল’ থেকে তাঁকে ভিত্তিমূল্য ২ কোটি রুপিতে দলে ভেড়ায় শার্দূল।

নিলামে উপেক্ষিত এই বোলারই আইপিএলের চলমান মৌসুমে এখন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারি। ২ ম্যাচে তাঁর উইকেট ৬টি। ১ ম্যাচে ৪ উইকেট নিয়ে দুইয়ে আছেন চেন্নাইয়ের আফগান স্পিনার নুর আহমদ।

গত সোমবার নিজেদের প্রথম ম্যাচে দিল্লি ক্যাপিটালসের বিপক্ষে ২ উইকেট নেন শার্দূল। দুটিই ইনিংসের প্রথম ওভারে। এরপর আরেক ওভার করেন। কিন্তু কোনো এক অজানা কারণে সেদিন তাঁকে আর বোলিংয়েই আনেননি লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক ঋষভ পন্ত। লক্ষ্ণৌ শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি হেরে যায় ১ উইকেটে।

তবে গত রাতে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে লক্ষ্ণৌ। আইপিএলের সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাটিং লাইনআপ হিসেবে বিবেচিত সানরাইজার্স হায়দরাবাদকে তারা থামিয়েছে ১৯০ রানে, যেখানে নিয়মিত ২৫০ রানকে অভ্যাস বানিয়ে ফেলেছিল হায়দরাবাদ! নিকোলাস পুরান, মিচেল মার্শদের বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ে ১৯১ রানের লক্ষ্য ২৩ বল ও ৫ উইকেট হাতে রেখে টপকে গেছে লক্ষ্ণৌ।

ট্রাভিস হেড, অভিষেক শর্মা, হাইনরিখ ক্লাসেনদের এত ‘অল্পতেই’ বেঁধে ফেলার কৃতিত্বটা শার্দূল ঠাকুরের। কাল তাঁর বোলিং কোটা পূরণ করিয়েছেন লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক পন্ত। ৪ ওভারে ৩২ রান দিয়ে ৪ উইকেট নিয়েছেন শার্দূল। ৯৭ ম্যাচের আইপিএল ক্যারিয়ারের এটিই তাঁর সেরা বোলিং। শুধু কি তা–ই? কাল মোহাম্মদ শামিকে আউট করে আইপিএল ইতিহাসের ২৫তম বোলার হিসেবে ১০০ উইকেটের মাইলফলকও ছুঁয়েছেন।

বল হাতে ব্যবধান গড়ে দেওয়ায় ব্যাটসম্যানের দিনেও ম্যাচসেরার পুরস্কারটা তাই শার্দূলের হাতেই উঠেছে। কাল ম্যাচসেরার পুরস্কার নিতে গিয়ে পেয়ে গেছেন সর্বোচ্চ উইকেটশিকারির প্রতীক ‘পার্পল ক্যাপ’। গত কয়েক মাসের মেহনতের ফসল হিসেবেই হয়তো ক্যাপটা আপাতত তাঁর মাথায় শোভা পাচ্ছে।

অথচ মেগা নিলামে দল না পাওয়ায় শার্দূল নিজেও হাল ছেড়ে দিয়েছিলেন। ইংল্যান্ডে কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে যাওয়ারও পরিকল্পনা করেছিলেন। কাল পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে সেই কথাই জানালেন, ‘সত্যি বলতে, এবারের আইপিএলে খেলতে পারব ভাবিনি। নিজস্ব (ভিন্ন) পরিকল্পনা করে রেখেছিলাম। কাউন্টি ক্রিকেট খেলতে যাওয়ার পরিকল্পনাও ছিল। রঞ্জি ট্রফি চলার সময় জহির খান (লক্ষ্ণৌর পেস বোলিং পরামর্শক) একদিন আমাকে ডেকে পাঠালেন এবং বললেন, “সম্ভাব্য বদলি হিসেবে তোমাকে দলে নেওয়া হতে পারে। তাই খেলা থেকে মনোযোগ সরিয়ে নিয়ো না। যদি তোমাকে নেওয়া হয়, তাহলে শুরু থেকেই খেলানো হবে।”’

শার্দূলের ক্যারিয়ারের চোটও কয়েকবার হানা দিয়েছে। ২০১৯ সালে প্রথমবার পায়ের অস্ত্রোপচার করাতে হয়েছিল। গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে লন্ডনে অ্যাঙ্কেলের অস্ত্রোপচার করান। পুরোপুরি সেরে ওঠার পর নিজেকে ভেঙেচুরে নতুন করে গড়েছেন শার্দূল। আগে একটা উইকেট পেলেই বুনো উদ্‌যাপন করতেন, কাল ৪ উইকেট শিকারের পরেও ছিলেন নির্লিপ্ত।

আইপিএল নিলামে অবিক্রীত থাকার পর শার্দূলকে নিয়ে আরও বেশি করে ট্রল করা শুরু হয়। এমনকি মাঠেও বাজে অভিজ্ঞতা হয়েছে। সর্বশেষ বিজয় হাজারে ট্রফির একটি ম্যাচে বাউন্ডারির কাছে ফিল্ডিং করছিলেন শার্দূল। তখন গ্যালারিতে থাকা কয়েকজন দর্শক তাঁর নাম ধরে ‘আনসোল্ড, আনসোল্ড’ বলতে থাকেন। সেই দর্শকদের দিকে তিনি ফিরেও তাকাননি। এ নিয়ে কোনো অভিযোগও করেননি। জবাবটা হয়তো বল হাতেই দিতে চেয়েছিলেন এবং সেটা দিয়েছেনও।

শার্দূল যে আগের তুলনায় এখন অনেক আত্মবিশ্বাসী, সেটা বোঝা গেছে তাঁর কথাতেও, ‘উত্থান-পতন জীবনেরই অংশ। তবে আমি সব সময় নিজের দক্ষতার ওপর আস্থা রেখেছি।’

মৌসুমজুড়ে লক্ষ্ণৌ নিশ্চয় বদলে যাওয়া এই ‘লর্ড’ শার্দূল ঠাকুরকেই দেখতে চাইবে!

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স প র জ য় ন টস উইক ট

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ