আগামী সপ্তাহে উদযাপন করা হবে মুসলিম উম্মাহর সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। জামাতের সঙ্গে ঈদের নামাজ আদায় করবেন কোটি কোটি মুসলমান। প্রতিবছরের মতো এবারও রমজানের শেষভাগে পুরো বাংলাদেশে চলছে সাজ সাজ রব। দেশের বিভিন্ন স্থানে ঈদগাহগুলো প্রস্তুত করা হচ্ছে। রাজধানীতে হাইকোর্ট প্রাঙ্গণে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ঈদের প্রধান জামাত আয়োজনের প্রস্তুতি এখন শেষ পর্যায়ে। 

প্রতিবছর জাতীয় ঈদগাহে ভিআইপি গ্যালারিতে রাষ্ট্রপতি, প্রধান বিচারপতি, মন্ত্রিপরিষদের সদস্যদের জন্য স্থান বরাদ্দ থাকে। এ বছর ভিআইপি গ্যালারিতে স্থান বরাদ্দ রাখা হয়েছে প্রধান উপদেষ্টার জন্য। আশপাশের এলাকায় সর্বোচ্চ নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

শুক্রবার (২৮ মার্চ) সকালে জাতীয় ঈদগাহে গিয়ে দেখা গেছে, মাঠ প্রস্তুত করতে কাজ করছেন ১২০ জন শ্রমিক। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি নিয়ে ব্যস্ত সবাই।

ইতোমধ্যে মাঠে শামিয়ানা টাঙানো হয়েছে। মাইক, ফ্যান, সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ অন্যান্য কাজ প্রায় সম্পন্ন হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতে নিযুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান আগামীকাল শনিবার (২৯ মার্চ) ঈদগাহর সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) কাছে হস্তান্তর করবে।

জাতীয় ঈদগাহের নিরাপত্তার জন্য কদম ফোয়ারার সামনে পুলিশের ওয়াচ টাওয়ার বসানোর প্রস্তুতি চলছে। প্রতিটি ফটকে থাকবে পুলিশি নিরাপত্তা ও সিসি ক্যামেরা। 

জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ৩০ হাজার মুসল্লি একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারবেন। প্রায় ৫ হাজার নারী মুসল্লির নামাজ আদায়েরও ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

জাতীয় ঈদগাহ প্রস্তুতের কাজে নিয়োজিত শ্রমিক আব্দুর রহিম এ প্রতিবেদককে বলেছেন, “আমি দুই সপ্তাহ ধরে এখানে কাজ করছি। মূল কাজ প্রায় শেষ। এখন ছোট ছোট কাজগুলো করা হচ্ছে।” 

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন সূত্র জানিয়েছে, প্রায় ৩০ হাজার বর্গমিটারের জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে এরইমধ্যে সব ধরনের প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এবার ঈদগাহের প্যান্ডেলের ক্ষেত্রফল ২৫ হাজার ৪০০ বর্গমিটার। ময়দানে শামিয়ানা টাঙানো শেষ হয়েছে। নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ শেষ। কয়েকশ বৈদ্যুতিক পাখা লাগানো হয়েছে। সাজসজ্জার কাজও শেষ পর্যায়ে। ঈদগাহ এলাকায় নিরাপত্তার জন্য দুটি আলাদা নিয়ন্ত্রণ কক্ষ তৈরি করা হয়েছে। ময়দানের মূল ফটকের পাশেই অজুখানায় একসঙ্গে ১২০ জনের অজু করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টাসহ বিশিষ্টজনরা জাতীয় ঈদগাহে প্রবেশ করবেন হাইকোর্টের প্রধান ফটক দিয়ে। সর্বসাধারণের জন্য খোলা থাকবে ঈদগাহ ময়দানের প্রধান ফটক। প্রধান ফটকে নিরাপত্তা তল্লাশির ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। ভিআইপিদের জন্য ঈদগাহের ভেতরে প্রায় ৩ হাজার বর্গফুট জায়গা আলাদা নিরাপত্তাবেষ্টনীর মধ্যে থাকবে। মাজার-সংলগ্ন রাস্তাটি নারীদের জন্য সংরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে জাতীয় ঈদগাহে ঈদুল ফিতরের প্রধান জামাত হবে।

এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ড.

মো. জিল্লুর রহমান বলেছেন, জাতীয় ঈদগাহের প্রস্তুতি প্রায় শেষ। ভিআইপি গ্যালারি বাড়ানো, কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পানি খাওয়ার সুবিধা, মোবাইল টয়লেট বৃদ্ধিসহ কিছু ক্ষেত্রে পরিসর বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় ঈদগাহের জামাতে অংশ নেবেন রাষ্ট্রপতি, প্রধান উপদেষ্টা, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য, বিচারপতি, কূটনীতিক, সরকারি উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা।

ঢাকা/এএএম/রফিক

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ত য় ঈদগ হ র র প রস ত ত উপদ ষ ট ব যবস থ র জন য ভ আইপ ময়দ ন

এছাড়াও পড়ুন:

সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ

সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়। 

গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’ 

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।

টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন। 

এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’ 

সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।

সম্পর্কিত নিবন্ধ