মহাকাশ আর জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে আমাদের আগ্রহের শেষ নেই। জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণার জন্য বিশ্বের অদ্ভুত এক দেশ হিসেবে চিলি বেশ আলোচিত। বিশ্বের বেশ কিছু উন্নত টেলিস্কোপ সেখানে স্থাপন করা হয়েছে। চিলির আতাকামা মরুভূমি ও আশপাশের অঞ্চল থেকে মহাকাশের নানা বস্তু ও তারার দিকে তাকানো সহজ বলেই কি সেখানে সব টেলিস্কোপ নির্মাণ করা হচ্ছে?

চিলিতে প্রথম জ্যোতির্বিদ্যা পর্যবেক্ষণের বিভিন্ন কাজ উনিশ শতকের শুরুতে দেখা যায়। ইউরোপীয় বিজ্ঞানীরা চিলির অবস্থানকে জ্যোতির্বিজ্ঞানের গবেষণার উপযোগী বলে মনে করেন। এরপর সেখানে বেশ কিছু আধুনিক মানমন্দির বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি করা হয়। এসব টেলিস্কোপের তথ্য বিজ্ঞানীরা নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করেন।

চিলির প্রথম আধুনিক মানমন্দিরের একটি হচ্ছে সেরো টোলোলো ইন্টার-আমেরিকান অবজারভেটরি (সিটিআইও)। এটি ১৯৬০–এর দশকে মার্কিন-ভিত্তিক ন্যাশনাল অপটিক্যাল অ্যাস্ট্রোনমি অবজারভেটরি প্রতিষ্ঠা করে। এই বিশাল টেলিস্কোপের মাধ্যমে জ্যোতির্বিজ্ঞান গবেষণায় চিলির উপস্থিতি বাড়তে থাকে। পরবর্তী সময়ে ইউরোপীয় সাউদার্ন অবজারভেটরিসহ (ইএসও) অনেক সংস্থা সেখানে কাজ শুরু করে। ১৯৬০–এর দশকে লা সিলা অবজারভেটরি তৈরি করা হয় সেখানে। ১৯৯৭ সালে সেখানে পারানাল অবজারভেটরি এবং আতাকামা লার্জ মিলিমিটার/সাবমিলিমিটার অ্যারে (আলমা) নামের আরেকটি বিশাল টেলিস্কোপের নির্মাণ শুরু হয়।

বিভিন্ন হিসাব থেকে দেখা যায়, চিলিতে বিশ্বের প্রায় ৭০ জ্যোতির্বিদ্যা–সংক্রান্ত অবকাঠামো তৈরি হয়েছে। এক্সট্রিমলি লার্জ টেলিস্কোপসহ (ইএলটি) বড় বড় প্রকল্প চলছে সেখানে। ইএলটিকে সবচেয়ে শক্তিশালী অপটিক্যাল টেলিস্কোপ বলা হচ্ছে। কয়েকটি কারণ চিলিকে টেলিস্কোপ স্থাপনের জন্য আদর্শ স্থান বলে মনে করা হয়।

চিলির আতাকামা মরুভূমি পৃথিবীর শুষ্কতম স্থানের মধ্যে একটি। এখানে তেমন বৃষ্টিপাত হয় না। উচ্চ উচ্চতা ও চরম শুষ্কতা মানে বায়ুমণ্ডলে খুব কম আর্দ্রতা থাকে। এতে টেলিস্কোপ মহাকাশের তীক্ষ্ণ ও পরিষ্কার ছবি তুলতে পারে ভালোভাবে। বাতাসে জলীয় বাষ্প থাকলে তা পর্যবেক্ষণকে প্রভাবিত করতে পারে। ইনফ্রারেড ও রেডিও জ্যোতির্বিদ্যায় তখন সমস্যা দেখা যায়। শুষ্ক পরিবেশের কারণে চিলিতে বেশির ভাগ মানমন্দির তৈরি করা হয়েছে। আরেকটি বড় কারণ হিসেবে দেখা যায়, চিলির বেশির ভাগ মানমন্দির আন্দিজ পর্বতমালা বা উচ্চ-উচ্চতার মালভূমিতে অবস্থিত। বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী রেডিও টেলিস্কোপ আলমা ৫ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। উচ্চ–উচ্চতায় অবস্থানের কারণে হালকা বাতাসের বায়ুমণ্ডল পাওয়া যায়। তখন ভালো পর্যবেক্ষণের সুযোগ থাকে।

জ্যোতির্বিদ্যা চর্চায় বড় বাধা হচ্ছে মানবসৃষ্ট আলো। চিলির দূরবর্তী মরুভূমিতে খুব কম মানুষের বসতি রয়েছে। সেখানে প্রায় কোনো কৃত্রিম আলোদূষণ নেই। দক্ষিণ গোলার্ধে চিলির অবস্থান জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের আকাশের একটি অনন্য অংশ পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দিচ্ছে। সেখান থেকে সহজে মিল্কিওয়ে গ্যালাক্সির কেন্দ্র, ম্যাগেলানিক ক্লাউড ও অন্যান্য গভীর-মহাকাশের বস্তু সহজে দেখা যায়। এসব উত্তর গোলার্ধ থেকে দৃশ্যমান নয়। এসব কারণে চিলিতে এত শক্তিশালী টেলিস্কোপ তৈরি করা হচ্ছে।

সূত্র: উইকিপিডিয়া

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ম নমন দ র অবস থ

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।

অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য

পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।

ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্য

যুক্তরাজ্য

২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।

জার্মানি

জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।

ফ্রান্স

INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।

ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ