কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির স্বাস্থ্য সহকারী আনছে অ্যাপল
Published: 4th, April 2025 GMT
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) প্রযুক্তিতে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিষ্ঠানগুলোর তুলনায় কিছুটা পিছিয়ে থাকলেও স্বাস্থ্যসেবায় নতুন মাত্রা যোগ করতে কাজ শুরু করেছে অ্যাপল। আইফোন, আইপ্যাড ও অ্যাপল ওয়াচ ব্যবহারকারীদের জন্য নিজেদের স্বাস্থ্যসেবা-সংক্রান্ত ইকোসিস্টেম পুনর্গঠনের মাধ্যমে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির স্বাস্থ্য সহকারী চালু করতে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি।
ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘মালবেরি’ কোড নামের এক প্রকল্পের আওতায় নিজেদের হেলথ অ্যাপের কার্যকারিতায় আমূল পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে অ্যাপল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির স্বাস্থ্য সহকারীটি কাজে লাগিয়ে ব্যবহারকারীরা স্বাস্থ্যবিষয়ক বিভিন্ন তথ্য জানতে পারবেন। আইওএস ১৯ অপারেটিং সিস্টেমের অংশ হিসেবে স্বাস্থ্য সহকারীটি যুক্ত করা হতে পারে।
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির স্বাস্থ্য সহকারী তৈরির মাধ্যমে ব্যবহারকারীর শারীরিক অবস্থা ও অভ্যাসের ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্য পরামর্শ দেবে অ্যাপল। এ জন্য অ্যাপল ওয়াচ, আইফোন ও অন্যান্য যন্ত্র থেকে সংগৃহীত স্বাস্থ্যসংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে মেশিন লার্নিং (এমএল) প্রযুক্তির মাধ্যমে এআই মডেলকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। এ ছাড়া বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও স্বাস্থ্য পরামর্শকদের তৈরি ভিডিও কনটেন্ট এবং প্রয়োজনীয় তথ্যও যুক্ত করা হবে।
অ্যাপলের নতুন এ উদ্যোগ কতটা সফল হবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। কারণ, এআই-নির্ভর স্বাস্থ্যসেবাগুলো সাধারণত বিনা মূল্যে পাওয়া যায় না। ফলে অ্যাপলের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির স্বাস্থ্য সহকারীটি অর্থের বিনিময়ে ব্যবহার করতে হলে অবশ্যই কার্যকর ও নির্ভরযোগ্য হতে হবে।
সূত্র: নিউজ ১৮
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ক ত র ম ব দ ধ মত ত ব যবহ র অ য পল
এছাড়াও পড়ুন:
আজও আছে পরতে পরতে সৌন্দর্য
কারুকার্যখচিত বিশাল ভবন। দেয়ালের পরতে পরতে মনোহর সৌন্দর্য। মনোরম পরিবেশে ভবনের চারপাশে দাঁড়িয়ে সুন্দরী পরীর আবক্ষ মূর্তি। ছবির মতো সাজানো ‘পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি’ এখন কালের সাক্ষী।
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে টাঙ্গাইলের নাগরপুরের কলমাই নদীতীরে ১৫ একর জমিতে জমিদারবাড়িটি। ঢুকতেই চোখে পড়ে পুরোনো মন্দির। লোকমুখে প্রচলিত, শরতের দিনে দেবী দুর্গার প্রতিমা তৈরিতে এখানে ব্যস্ত থাকতেন ভারতবর্ষের নামকরা কারিগররা। কালের বিবর্তনে স্থানটি এখন নির্জন। নেই আগের গৌরব-আভিজাত্যের ছাপ, এমনকি প্রতিমা তৈরির ব্যস্ততাও।
মন্দির ঘুরে দেখা যায়, এর কোথাও কোথাও ইট খসে পড়েছে। পুরোনো দিনের নকশা হারাচ্ছে তার সৌন্দর্য। মন্দিরের পেছনে বিশাল তিনটি মহল, যা সেকালে তিন তরফ নামে পরিচিত ছিল। মহলগুলোর আলাদা কোনো নাম পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে বড় মহলে বর্তমান পাকুটিয়া বিসিআরজি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ পরিচালিত হচ্ছে।
দোতলা ভবনের নির্মাণশৈলী মুগ্ধ করবে সবাইকে। যদিও সংস্কারের অভাবে ভবনটিতে ফাটল দেখা দিয়েছে। পাশেই অপূর্ব লতাপাতার কারুকার্যখচিত বিশাল আরেকটি ভবন, যার মাথায় ময়ূরের মূর্তি। এ ছাড়া কিছু নারী মূর্তিরও দেখা মেলে। জমিদার আমলের টিনের চৌচালা ঘরে অস্থায়ীভাবে সরকারি তহশিল অফিস স্থানান্তর হলেও, সেটি এখন স্থায়িত্ব পেয়েছে।
লতাপতায় আচ্ছন্ন ভবনের একাংশ বর্তমানে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র এবং আরেকাংশে একটি বেসরকারি দাতব্য সেবা সংস্থা কার্যক্রম চালাচ্ছে। ভবনটির পিলারের মাথায় এবং দেয়ালেও অসাধারণ নকশা মুগ্ধ করে।
দোতল আরেকটি মহল, যার সামনে বিশাল শান বাঁধানো সিঁড়ি। অন্য সব ভবনের সঙ্গে এটির নকশার যথেষ্ট মিল খুঁজে পাওয়া যায়। ভবনটির বারান্দা ও পুরোনো কাঠের দরজা সৌন্দর্য বাড়িয়ে তুলেছে কয়েক গুণ। ভবনটির মাথায় ময়ূরের সঙ্গে দুই পাশে দুই নারী মূর্তির দেখা মেলে। সিঁড়ি বেয়ে ছাদে গেলে গাছগাছালির সবুজে ঘেরা পুরো জমিদারবাড়ির সৌন্দর্য বিমোহিত করতে বাধ্য। যদিও ভবনের ভিন্ন অংশ খসে পড়ছে, হারাচ্ছে রূপ-লাবণ্য।
জমিদারবাড়ির পেছনে রয়েছে দীঘি ও দুটি পরিত্যক্ত কূপ। এ ছাড়া জমিদারবাড়ির বিশাল মাঠের এক কোণে নাটমন্দির। জানা যায়, নাগরপুরের সঙ্গে কলকাতার একটি বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এর পরিপ্রেক্ষিতে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে আসেন ধনাঢ্য ব্যক্তি রামকৃষ্ণ সাহা মণ্ডল। তিনিই ঊনবিংশ শতাব্দীর শুরুতে ব্রিটিশদের কাছ থেকে বিপুল অর্থের বিনিময়ে জমি কিনে জমিদারি শুরু করেন।
রামকৃষ্ণ সাহার দুই ছেলে বৃন্দাবন ও রাধাগোবিন্দ। রাধা নিঃসন্তান। তবে বৃন্দাবনের তিন ছেলে– ব্রজেন্দ্র মোহন, উপেন্দ্র মোহন ও যোগেন্দ্র মোহন দীর্ঘকাল রাজত্ব করেন। এভাবে পাকুটিয়া জমিদারবাড়ি তিন ভাইয়ের তরফে বিভক্ত থাকলেও, জমিদাররা সবাই ছিলেন প্রজানন্দিত। বৃন্দাবনের মেজ ছেলে উপেন্দ্রকে কাকা রাধাগোবিন্দ দত্তক নেন। ফলে উপেন্দ্র কাকার জমিদারির পুরো সম্পত্তি লাভ করেন।
দৃষ্টিনন্দন পাকুটিয়া জমিদারবাড়িতে প্রতিনিয়ত পর্যটকের ভিড় বাড়ছে। ইতিহাসের সাক্ষী বাড়িটি সংস্কার না হওয়ায় একদিকে যেমন সৌন্দর্য হারাচ্ছে, অন্যদিকে তরুণ প্রজন্মের কাছে অজানা থেকে যাচ্ছে ইতিহাস। জমিদারবাড়িটি পুরাকীর্তি হিসেবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের অধীনে নিয়ে সংস্কার ও সংরক্ষণের দাবি জোরালো হচ্ছে।