ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দেওয়া কেউ রাজনীতি করার নৈতিক অধিকার রাখে না: আখতার
Published: 5th, April 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সদস্যসচিব আখতার হোসেন বলেছেন, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ যে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তাতে কোনোভাবেই দলটির পুনর্বাসনকে আমরা মেনে নেবো না। এনসিপির কোনো প্রোগ্রামে কোনোভাবেই যদি আওয়ামী লীগের কেউ যুক্ত হবার মতো সাহসও দেখায়, আমরা তাদেরকে প্রতিহত করব। আমরা মনে করি, যারা বাংলাদেশে ফ্যাসিবাদ চাপিয়ে দিয়েছে, তারা রাজনীতি করবার নৈতিক কোনো অধিকার রাখে না।
শুক্রবার রাতে রংপুর চেম্বার ভবনে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সংগঠকদের নিয়ে আয়োজিত আলোচনা সভা শেষে সাংবাদিকের প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।
আখতার হোসেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম হিসেবে বাংলাদেশে আবির্ভূত হয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগেই জাতীয় নাগরিক পার্টির সূচনা হয়েছে। আমরা মনে করি, জাতীয় নাগরিক পার্টি, বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটি প্রত্যেকটি ভিন্ন স্বতন্ত্র সংগঠন। জাতীয় নাগরিক পার্টি রাজনৈতিক দল হিসেবে তাদের যে কার্যক্রম আছে সেগুলো পরিচালনা করবে। একটি পলিটিক্যাল প্লাটফর্ম এবং সিভিল সোসাইটির প্লাটফর্ম হিসেবে জাতীয় নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন অভ্যুত্থানের যে আকাঙ্খা আছে, সেগুলো বাস্তবায়নে কাজ করে যাবে।
তিনি বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটিতে যারা বর্তমানে কার্যকরী ভূমিকা পালন করছেন; তারা অবশ্যই তাদের মতো সিদ্ধান্ত গ্রহণের মধ্যদিয়ে তাদের সংগঠনকে পরিচালনা করছেন। আমরা মনে করি, জাতীয় নাগরিক পার্টিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং জাতীয় নাগরিক কমিটির অনেকেই যুক্ত হবার মধ্যদিয়ে তাদের (হাসনাত-সারজিসরা) যে কার্যক্রম সেটার সমাপ্তি হয়েছে। আমরা বর্তমানে জাতীয় নাগরিক পার্টি নিয়ে কাজ করছি।
এ সময় থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও আমাদের অন্তবর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড.
বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতি প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে আখতার হোসেন বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে যে অবস্থায় পর্যবসিত হয়েছে, তাতে করে চব্বিশের অভ্যুত্থানে যারা গণহত্যা চালিয়েছে, তাদের বিচার করাটা সব থেকে জরুরি বিষয়। এই বিচার শুধুমাত্র কোনো ব্যক্তির নয়, দল হিসেবে যে আওয়ামী লীগ বাংলাদেশে মানবতাবিরোধী অপরাধ চাপিয়ে দিয়েছে তার বিচার করতে হবে। এবং একইসঙ্গে অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কারের উদ্যোগ, রাজনৈতিক দলগুলোর জনগণের যে দাবি তার প্রতি একাত্ম হওয়া প্রয়োজন। কারণ, অন্তর্বর্তী সরকারের স্বদিচ্ছা এবং রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতার ভিত্তিতেই বাংলাদেশে প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব। এ সময় দেশে নতুন সংবিধানের বাস্তবতা রয়েছে উল্লেখ করে গণপরিষদ নির্বাচনের ব্যাপারে সব রাজনৈতিক দলকে বিতর্ক থেকে বেরিয়ে এসে গণপরিষদের পক্ষে থাকার জন্য আহ্বান জানান তিনি।
এর আগে ড. মুহম্মদ ইউনূসকে পাঁচ বছরের জন্য বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখার আকাঙ্খা তুলে ধরে ফেসবুকে দেওয়া একটি স্ট্যাটাস প্রসঙ্গে কথা বলেন এনসিপির উত্তরাঞ্চলের মূখ্য সংগঠক সারজিস আলম। তিনি বলেন, প্রফেসর ড. মুহম্মদ ইউনুসকে বাংলাদেশে একটি নির্বাচিত সরকারের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পাঁচ বছর দেখার আকাঙ্খা আমার আছে এবং আজীবন থাকবে। আমি জানি না বাংলাদেশের কোনো নির্বাচিত সরকারের ততোটা উদারতা থাকবে কিনা। বিগত সরকারের সময়ে অনুষ্ঠিত সবশেষ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ হলে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের রংপুর-৩ আসনে তৃতীয় লিঙ্গের প্রার্থীর কাছে পরাজিত হতেন বলেও মন্তব্য করেন সারজিস আলম।
আগামীতে রংপুরে জাতীয় পার্টির ঘাঁটি থাকবে না বলে দাবি করেন তিনি। এ সময় জাতীয় নাগরিক পার্টির যুগ্ম মুখ্য সংগঠক ফারজানা দিনাসহ বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদ, বৈষম্যেবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জাতীয় নাগরিক কমিটির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন ত ক সরক র র এনস প আখত র
এছাড়াও পড়ুন:
করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ
রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ।
ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।
জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’
এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।
তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।
গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ।