৩৭ নেতাকর্মীর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারকে কেন্দ্র করে গৃহদাহ শুরু হয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা বিএনপিতে। এ নিয়ে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েছেন উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক।
সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা সৈয়দ একে একরামুজ্জামান দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচনে অংশ নেন। ওই নির্বাচনে তাঁর পক্ষে নির্বাচনী প্রচার কার্যক্রমে সক্রিয় ছিলেন নাসিরনগর উপজেলাসহ ইউনিয়ন পর্যায়ের অর্ধশতাধিক পদধারী নেতাকর্মী। পরে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে ৩৭ নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়।
কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদককে না জানিয়ে অনেকটা গোপনে ওই বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের পাশাপাশি তাদের স্বপদে বহাল করায় দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হলেও গত ৩ এপ্রিল তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। এর পরই এ নিয়ে স্থানীয় বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়।
উপজেলা বিএনপির সভাপতি এমএ হান্নান ও সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজম চৌধুরীর স্বাক্ষর করা বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের চিঠিতে বলা হয়, জেলা ও উপজেলা বিএনপির সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদকের পাশাপাশি দলের বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়ার কাছে লিখিতভাবে ভুল স্বীকার করায় আলোচিত নেতাকর্মীদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারসহ দলীয় পদ ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
তবে উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কেএম বশির উদ্দিন তুহিন বলেন, বহিষ্কৃতদের কেউই ভুল স্বীকার করে তাঁর কাছে চিঠি পাঠাননি। এ ছাড়া কেন্দ্র ও বিভাগ পর্যায় থেকেও তাঁকে এই বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেওয়া হয়নি।
এ প্রসঙ্গে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারপত্রে স্বাক্ষর করা উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক আলী আজম চৌধুরী বলেন, বিভাগীয় ও জেলা নেতাদের মৌখিক নির্দেশে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়েছে। এই নির্দেশ যদি উপজেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক না মানেন তাহলে কি দলের কার্যক্রম থেমে থাকবে?
তবে বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্তকে অযৌক্তিক ও দলের গঠনতন্ত্রবিরোধী হিসেবে আখ্যায়িত করে পূর্বভাগ ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আইয়ুব খান বলেন, বহিষ্কৃতদের দলে ফিরিয়ে আনার কোনো যুক্তি নেই। ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক দুলাল মিয়া বলেন, ‘যারা টুঙ্গিপাড়ায় গিয়ে শেখ মুজিবের মাজারে ফুল দিয়ে এসেছে, তাদের দলে ফিরিয়ে আনা মানেই হলো দলের আদর্শের সঙ্গে বিশ্বাস ঘাতকতা করা। চাতলপাড় ইউনিয়ন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি কামরুল হাসান বাবু বলেন, দলকে বিপদে ফেলে যারা আওয়ামী লীগের সঙ্গে হাত মিলিয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে তারা বিএনপির কেউ নয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ ন ত কর ম উপজ ল
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ