ঈদের ছুটি শেষে ফিরছে মানুষ, দৌলতদিয়া ঘাটে মানুষের ঢল
Published: 5th, April 2025 GMT
ঈদের লম্বা ছুটি শেষে রাজবাড়ীর দৌলতদিয়া ঘাটে ঢাকামুখী মানুষের ঢল নেমেছে। আজ শনিবার সকাল থেকে লঞ্চ এবং ফেরিঘাটে ভিড় পড়ে। বিশেষ করে কর্মজীবী মানুষ ছুটে চলেছে বেশি। সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত দৌলতদিয়া লঞ্চ এবং ফেরিঘাট ঘুরে এই চিত্র দেখা গেছে।
যাত্রী পারাপার নির্বিঘ্ন রাখতে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস, কোস্টগার্ড, নৌ পুলিশ এবং আনসার বাহিনীর সদস্যদের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
মেহেরপুর থেকে আসা সাজ্জাদ হোসেন পরিবারের সদস্যদের নিয়ে লঞ্চে নদী পাড়ি দিতে দৌলতদিয়া ঘাটে আসেন। তিনি গাজীপুরে ব্যবসা করেন। তিনি বলেন, ঈদের তিন দিন আগে স্ত্রী আর দুই সন্তান নিয়ে ঈদ করতে গ্রামের বাড়ি আসেন। পরিবারের সঙ্গে ঈদ করে এখন ফিরে যাচ্ছেন নিজ কর্মস্থলে। আগামীকাল রোববার থেকে ব্যবসার কাজ শুরু করবেন। নির্বিঘ্ন যাত্রার জন্য সকাল সকাল বাড়ি থেকে গাজীপুরে রওয়ানা হয়েছেন। কিন্তু ঘাটে এসে তাঁকে ভিড়ের মধ্যে পড়তেই হলো।
লঞ্চে যাতে ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন করা না হয় এ জন্য আরিচা লঞ্চ মালিক সমিতির পক্ষ থেকে সার্বক্ষণিক হ্যান্ড মাইক দিয়ে যাত্রীদের সতর্ক করা হচ্ছে।
দৌলতদিয়া ঘাটে ঈদের বিশেষ দায়িত্ব নিয়ে কাজের তদারকি করছেন বিআইডব্লিউটিএ–এর সহকারী পরিচালক (বন্দর) মো.
এদিকে যাত্রীদের নিরাপদে পারাপার নিশ্চিত করতে অন্যান্য বাহিনীর সঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের সদস্যরাও দায়িত্ব পালন করছেন। গোয়ালন্দ ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের স্টেশনমাস্টার মো. আবদুর রহমান বলেন, ঈদের আগে গত ২৭ মার্চ থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা দায়িত্ব পালন করছেন। প্রতিদিন সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত ১২ ঘণ্টা আট সদস্যের একটি দল কাজ করে যাচ্ছেন।
এদিকে দৌলতদিয়া ফেরিঘাটেও যানবাহনের পাশাপাশি যাত্রীদেরও চাপ দেখা গেছে। সকাল থেকেই ঘাট ছেড়ে যাওয়া প্রতিটি ফেরিতে মানুষের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো।
ফরিদপুরের মধুখালী থেকে নিজে মোটরসাইকেল চালিয়ে মানিকগঞ্জ যাচ্ছিলেন শাকিল মোল্লা। তিনি একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেন। শাকিল মোল্লা বলেন, ঈদের আগে স্ত্রী-সন্তানদের আগেই গ্রামের বাড়ি পাঠিয়ে দেন। ঈদ শেষে পরিবহনে গাদাগাদি করে যাওয়ার চেয়ে নিজের মোটরসাইকেল নিয়ে তিনি আজ একাই রওনা করেছেন। পরিবারের সদস্যদের পরে আসতে বলেছেন। প্রখর রৌদ আর গরমের মধ্যে যেতে কষ্ট হলেও জীবিকার প্রয়োজনে কর্মস্থলে যেতে হচ্ছে তাঁকে।
বিআইডব্লিটিসি দৌলতদিয়া কার্যালয়ের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিন বলেন, ঈদে যানবাহন এবং যাত্রী পারাপারের সুবিদার্থে ছোট বড় ১৭টি ফেরি চলছে। যানবাহনের খুব চাপ না থাকায় ১৭টি ফেরিই যথেষ্ট বলে তিনি মনে করেন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: দ লতদ য় র সদস সদস য
এছাড়াও পড়ুন:
দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
নভেম্বর থেকে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ পর্যটকদের জন্য খুলে দিয়েছে সরকার। সরকারি ঘোষণায় বলা হয়েছিল, কক্সবাজার থেকে প্রতিদিন দুই হাজার পর্যটক যেতে পারবেন। কিন্তু দুই দিনে একজন পর্যটকও যেতে পারেননি। কারণ, পর্যটকবাহী জাহাজ চলাচল বন্ধ। কবে থেকে জাহাজ চলাচল শুরু হবে, তা নিয়েও কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারছেন না।
কক্সবাজার শহরের বাঁকখালী নদীর নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ ঘাট থেকেই পর্যটকবাহী জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে সেন্ট মার্টিনে যাতায়াতের কথা। এ জন্য ১ হাজার ৭০০ জন ধারণক্ষমতার দুটি জাহাজ—এমভি কর্ণফুলী ও এমভি বার আউলিয়া চলাচলের অনুমতি পেয়েছে। কিন্তু গতকাল শনিবার ও আজ রোববার ওই রুটে কোনো জাহাজ চলেনি। আরও চারটি জাহাজ চলাচলের অনুমতির জন্য আবেদন করেছে।
সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, নভেম্বর মাসে পর্যটকেরা শুধু দিনের বেলায় সেন্ট মার্টিন ভ্রমণ করতে পারবেন, রাত যাপন করা যাবে না, তবে ডিসেম্বর ও জানুয়ারি মাসে রাতযাপনের সুযোগ থাকবে। বিআইডব্লিউটিএ ও পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন ছাড়া কোনো নৌযান সেন্ট মার্টিনে যেতে পারবে না। পর্যটকদের বাংলাদেশ ট্যুরিজম বোর্ডের স্বীকৃত ওয়েব পোর্টালের মাধ্যমে অনলাইনে টিকিট কিনতে হবে। প্রতিটি টিকিটে ট্রাভেল পাস ও কিউআর কোড থাকতে হবে। কিউআর কোডবিহীন টিকিট নকল বলে গণ্য হবে।
সেন্ট মার্টিনের পরিবেশ অক্ষুণ্ন রাখতে রাতের বেলায় সৈকতে আলো জ্বালানো, শব্দ সৃষ্টি, বারবিকিউ পার্টি, কেয়াবনে প্রবেশ, কেয়া ফল সংগ্রহ বা বিক্রি, সামুদ্রিক কাছিম, পাখি, প্রবাল, রাজকাঁকড়া, শামুক-ঝিনুকসহ জীববৈচিত্র্যের ক্ষতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সৈকতে মোটরসাইকেল বা সি-বাইকসহ মোটরচালিত যান চলাচলও বন্ধ। নিষিদ্ধ পলিথিন বহন এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক (চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিক চামচ, স্ট্র, সাবান ও শ্যাম্পুর মিনিপ্যাক, পানির বোতল ইত্যাদি) ব্যবহারে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
পর্যটক নেই, ফাঁকা ঘাটআজ সকাল সাতটায় নুনিয়াছটা বিআইডব্লিউটিএ জেটিঘাটে গিয়ে দেখা যায়, কোনো যাত্রী নেই। বাঁকখালী নদীতেও পর্যটকবাহী কোনো জাহাজ দেখা যায়নি। ঘাটে অবস্থান করছিলেন পরিবেশ অধিদপ্তর ও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। জানা যায়, গতকাল সকালে তিনজন পর্যটক টিকিট কেটে সেন্ট মার্টিন যাওয়ার চেষ্টা করেছিলেন, পরে জাহাজ না থাকায় ফিরে যান।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজার কার্যালয়ের উপপরিচালক খন্দকার মাহবুব পাশা প্রথম আলোকে বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য সেন্ট মার্টিন উন্মুক্ত করা হয়েছে। কিন্তু জাহাজ চলাচল বন্ধ থাকায় গত দুই দিনে কোনো পর্যটক যেতে পারেননি। নভেম্বরে দিনে গিয়ে দিনে ফেরার নিয়ম থাকায় সময় ও সুযোগ কম, আবার দীর্ঘ জাহাজযাত্রার কারণে অনেকেই নিরুৎসাহিত হচ্ছেন। তারপরও আমরা সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে ঘাটে অবস্থান করছি।’
জেলা প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, টানা ৯ মাস বন্ধ থাকার পর ১ নভেম্বর থেকে তিন মাসের জন্য কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন রুটে জাহাজ চলাচলের অনুমতি দেওয়া হয়। তবে উখিয়ার ইনানী নৌবাহিনীর জেটিঘাট কিংবা টেকনাফের কোনো স্থান থেকে এখনো জাহাজ চলাচলের অনুমতি নেই।
জেলা প্রশাসক মো. আবদুল মান্নান বলেন, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের সঙ্গে যোগাযোগ করে সংকট নিরসনের চেষ্টা চলছে।
গত ডিসেম্বরে সেন্ট মার্টিন দ্বীপ ছেড়ে কক্সবাজারের পথে পর্যটকবাহী একটি জাহাজ