পাড়ার ক্রিকেটে হয় এমনটা। ব্যাটিংয়ে নেমে কেউ মারতে না পারলে মাঠের বাইরে থেকে জোর করে তাঁকে ফিরে আসতে বলা হয়। অপমানিত বোধ করে মাথা নিচু করে ব্যাটসম্যান ফিরে আসেন তখন। ক্রিকেটের আইনে যাকে বলে ‘রিটায়ার্ড আউট’। সাধারণত কেউ ইনজুরি বা অসুস্থতার কারণে ক্রিজ থেকে ফিরে এলে তাকে ‘রিটায়ার্ড হার্ট’ বলা হয়ে থাকে। কেননা তিনি সুস্থ হয়ে আবার ব্যাটিংয়ে নামতে পারেন। কিন্তু কেউ যখন আর ফিরে গিয়ে ব্যাটিং করার মতো অবস্থায় থাকেন না, তখন তাঁকে রিটায়ার্ড আউট হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। 

কিন্তু কেউ যদি ইনজুরি বা অসুস্থতা নেই, অথচ কোনো ব্যাটার ক্রিজে গিয়ে ফিরে আসাকেও রিটায়ার্ড আউট ধরে নেওয়া হয়। তেমনই এক ঘটনার সাক্ষী থাকলেন আইপিএলে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সের ব্যাটার তিলক ভর্মা। শুক্রবার লক্ষ্ণৌর বিপক্ষে মুম্বাইয়ের যখন ৭ বলে ২৪ রান দরকার, তখন স্লগে মারতে পারছিলেন না তিলক। ২৩ বলে তখন ২৫ রানে ছিলেন তিনি। তাঁকে ফিরে আসতে বলে নামানো হয় মিচেল স্যান্টনারকে। যদিও ম্যাচটি ১২ রানে হারে মুম্বাই। কিন্তু তিলককে এভাবে ফোর্স রিটায়ার্ড আউট করায় সমালোচিত মুম্বাইয়ের কোচ মাহেলা জয়াবর্ধনে। 

যদিও ম্যাচ শেষে তিনি জানিয়েছেন, এটা কৌশলের অংশ ছিল। ‘সে তখন হিট করতে পারছিল না। আমরা চাইছিলাম নতুন কাউকে নামিয়ে সেই সুযোগটা নেওয়ার। তা ছাড়া ক্রিকেটে এমনটা হয়েই থাকে। এটা কৌশলেরই অংশ।’

জয়াবর্ধনে তাঁর ক্যারিয়ারে এমন ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন। তবে সেটা ছিল ইতিবাচক, ২০০১ সালে কলম্বো টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৫০ রান করার পর স্বেচ্ছায় রিটায়ার্ড আউট নিয়েছিলেন। সেই ম্যাচে আত্তাপাত্তুও ২০০ করে একইভাবে চলে এসেছিলেন। কিন্তু ‘মারতে পারছেন না’ বলে অনিচ্ছায় ফিরে আসার ঘটনা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বিরল। আইপিএল, বিপিএলে অবশ্য হয়েছে এমনটা। 

২০১৯ সালের বিপিএলে চট্টগ্রামের বিপক্ষে কুমিল্লার সানজামুল ইসলামকে রিটায়ার্ড আউট করানো হয়েছিল। একই বছর আন্তর্জাতিক টি২০তে মালদ্বীপের বিপক্ষে ভুটানের সোনাম টোবগেকেও ফিরিয়ে আনা হয়েছিল। আইপিএলে এমন ঘটনা নতুন নয়। তিলককে দিয়ে মোট চারবার এমনটা হয়েছে সেখানে। 

সবার প্রথম ২০২২ সালে রাজস্থান রয়েলসের হয়ে ২৩ বলে ২৮ রান করা রবিচন্দ্র অশ্বিনকে ক্রিজে থাকা তাঁর সতীর্থ হেটমেয়ার ফিরে যেতে বলে রায়ান পরাগকে আসতে বলেছিলেন। সেই ম্যাচ অবশ্য জিতেছিল রাজস্থান। ২০২৩ সালে পাঞ্জাব কিংসের অর্থব তাইদিকে এভাবে আউট হয়ে আসতে হয়েছিল। একই বছর সাই সুর্দনকেই প্রত্যাশামতো ব্যাটিং করতে না পারায় ফিরিয়ে এনেছিল গুজরাট। ব্যাটারদের জন্য এটা লজ্জার হলেও দলের কাছে তা শুধুই কৌশল।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ত লক ভ র ম র ট য় র ড আউট

এছাড়াও পড়ুন:

এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!

চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।

জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।

প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।

পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।

জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।

মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ