ট্রাম্পের শুল্ক ঝড়ে সবচেয়ে বড় ধাক্কা খাবে আমেরিকা
Published: 6th, April 2025 GMT
ট্রাম্পের আরোপ করা শুল্কগুলোর প্রভাব হবে ভয়াবহ। এর প্রভাব বহুদূর পর্যন্ত গড়াবে। আমার হিসাব অনুযায়ী, এই দফার শুল্কগুলো ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে আরোপিত শুল্কগুলোর তুলনায় ৫০ গুণ বেশি ক্ষতিকর হতে পারে। অর্থাৎ এই শুল্কগুলো আপনার–আমার জীবনে বড় ধরনের পরিবর্তন আনবে।
উদাহরণ হিসেবে আপনার ওয়াশিং মেশিনের কথাই ধরা যাক। ২০১৮ সালে ট্রাম্পের তুলনামূলকভাবে ছোট পরিসরের শুল্ক আরোপের কারণে ওয়াশিং মেশিনের দাম প্রায় ১০০ ডলার বেড়ে গিয়েছিল। ফলে সে সময় অনেক পরিবার নতুন মেশিন কেনার বদলে পুরোনো মেশিনই চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু এতে নতুন কিছু সমস্যা তৈরি হয়। পুরোনো মেশিনের ভারসাম্য ঠিক না থাকায় রাতের বেলায় বিকট শব্দ হওয়া, কাপড় ঠিকমতো না শুকানো এবং বিদ্যুৎ ও পানির বিল বেড়ে যাওয়ার মতো নতুন কিছু সমস্যা সামনে আসে।
অর্থাৎ শুল্কের প্রকৃত খরচ শুধু পকেট থেকে বের হওয়া অর্থের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। আপনি যখন কাপড় সঠিকভাবে ধোয়ার জন্য মেশিনের ভেতরের কাপড় আবার সাজান, সেটাও একধরনের খরচ। কাপড় ঠিকমতো না শুকানোর কারণে আপনি যখন হাত দিয়ে ভেজা টি-শার্ট নিংড়ে শুকানোর চেষ্টা করেন, সেটাও একধরনের মূল্য চুকানো।
শুল্কের সমস্যা শুধু দাম বাড়ানোর মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এগুলো আপনাকে এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করবে, যা ধীরে ধীরে আপনার জন্য বাড়তি সমস্যা তৈরি করবে।
ছোট শুল্ক ছোট সমস্যা তৈরি করে। বড় শুল্ক বড় সংকট তৈরি করে। যেমন ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ গাড়ির শুল্ক প্রত্যাশিতভাবে গাড়ির দাম প্রায় ৪ হাজার ডলার বাড়িয়ে দেবে। এর ফলে আমার মতো অনেকেই দ্বিতীয় গাড়ি কেনার পরিকল্পনা বাদ দিতে বাধ্য হবেন। এটি পুরোনো ওয়াশিং মেশিনের সমস্যার চেয়েও বড় সংকট তৈরি করবে। এখন আমাদের সন্তানদের বিভিন্ন কার্যক্রমে নিয়ে যাওয়া বা নিজের কাজের জন্য গাড়ির ব্যবহার একসঙ্গে সামলাতে হবে মাত্র একটি গাড়ি দিয়ে।
এটি শুধু গাড়ির ক্ষেত্রেই সীমাবদ্ধ নয়। যেহেতু এসব শুল্ক প্রায় সব ধরনের পণ্যের ওপর প্রভাব ফেলবে, তাই আপনি যা কিছু কিনবেন, তার দাম বাড়বে এবং আপনাকে নতুন করে হিসাব করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। হয়তো আপনাকে তাজা শাকসবজির বদলে সংরক্ষিত বাসি শাকসবজি কিনতে হতে পারে। দামি ও কার্যকর ওষুধের বদলে অপেক্ষাকৃত কম কার্যকর ওষুধ কিনতে হতে পারে। কিংবা চিনির পরিবর্তে কর্ন সিরাপ ব্যবহার করতে হতে পারে। দেখা যাবে, প্রতিটি ক্ষেত্রেই আপনি আগের চেয়ে বেশি ক্ষতির মুখে পড়বেন।
সম্ভবত ভোটাররা ভালো অর্থনৈতিক সময়ের স্মৃতি মনে রেখে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁর প্রথম মেয়াদে শুল্ক নিয়ে অনেক কথা হলেও বাস্তবে তার প্রভাব তেমন বেশি ছিল না। সেগুলো ছিল মাত্র সামান্য একটা ধাক্কার মতো। কিন্তু এবার এটি যেন বিশাল এক পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।শুল্ক শুধু আপনার কেনাকাটার সিদ্ধান্তকেই প্রভাবিত করে না, এটি ব্যবসাগুলোর উৎপাদন সিদ্ধান্তেও প্রভাব ফেলে। যেমন শুল্ক আপনাকে কম পছন্দের বিকল্প পণ্য কিনতে বাধ্য করে। তেমনি এটি ব্যবসাগুলোকে তাদের শ্রম ও মূলধন কম পছন্দনীয়, অর্থাৎ কম উৎপাদনশীল খাতে স্থানান্তর করতে বাধ্য করে।
গত বুধবার ঘোষিত শুল্কের হার বেশির ভাগ শিল্পোন্নত দেশের তুলনায় প্রায় ১০ গুণ বেশি। এটি কুখ্যাত স্মুট-হাওলি শুল্কের চেয়েও বেশি, যা কিনা মহামন্দার সময়ের জন্য বেশি পরিচিত। তো ট্রাম্পের নতুন শুল্কনীতির ফলে মানুষ শুধু তাঁদের ওয়াশিং মেশিন বদলানোর সিদ্ধান্তই পুনর্বিবেচনা করবেন না (যেমনটা তাঁরা ২০১৮ সালে করেছিলেন), বরং তাঁরা তাঁদের ড্রায়ার, রেফ্রিজারেটর, চুলা, মুদিসামগ্রী, পোশাক, গাড়ি এবং দৈনন্দিন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়েও নতুন করে ভাববেন।
আমরা যে বিকল্প পণ্য বেছে নেব, তা অনেক সময় বেশ কষ্টদায়ক হবে। এই কারণেই বেশি শুল্ক মানুষের জন্য আরও ভোগান্তি সৃষ্টি করে। শুল্ক শুধু একটা নির্দিষ্ট পণ্যের দাম বাড়ায় না। এটি একসঙ্গে অনেক কিছুর ওপর প্রভাব ফেলে। সহজ ভাষায় বললে, শুল্ক যত বাড়বে, তার কারণে আমাদের খরচও তত বেশি বাড়বে। এটি এমনভাবে বাড়বে যে তা অনেক গুণ বেশি কষ্টদায়ক হয়ে উঠবে।
২০১৬ সালে ট্রাম্প নির্বাচিত হওয়ার আগে গড়ে শুল্কের হার ছিল প্রায় ১ দশমিক ৫ শতাংশ। এরপর তিনি ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম, ওয়াশিং মেশিন, সৌর প্যানেল এবং চীনের অনেক পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছিলেন। জো বাইডেন কিছু শুল্ক বহাল রেখেছিলেন। তবে ট্রাম্পের সাম্প্রতিক শুল্ক বৃদ্ধির ফলে বর্তমান শুল্কের হার ২০১৬ সালের তুলনায় প্রায় ১৫ গুণ বেশি হয়ে গেছে। গাণিতিকভাবে হিসাব করলে এর ফলে শুল্কজনিত কষ্ট ২২৫ গুণ বেড়ে গেছে। এটি ট্রাম্পের প্রথম দফার শুল্ক বৃদ্ধির খরচের চেয়ে ৫০ গুণের বেশি।
সম্ভবত ভোটাররা ভালো অর্থনৈতিক সময়ের স্মৃতি মনে রেখে ট্রাম্পকে ভোট দিয়েছেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, তাঁর প্রথম মেয়াদে শুল্ক নিয়ে অনেক কথা হলেও বাস্তবে তার প্রভাব তেমন বেশি ছিল না। সেগুলো ছিল মাত্র সামান্য একটা ধাক্কার মতো। কিন্তু এবার এটি যেন বিশাল এক পাহাড়ের মতো দাঁড়িয়ে আছে।
ফলে আগের তুলনায় এর প্রভাব অনেক বেশি হবে—এটি আরেকটি হালকা ধাক্কা নয়, বরং বড় ধরনের এক সংঘর্ষের মতো।
জাস্টিন ওলফারস মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ও জননীতির অধ্যাপক
নিউইয়র্ক টাইমস থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে অনুবাদ: সারফুদ্দিন আহমেদ
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র প রথম র জন য নত ন ক আপন ক সমস য আপন র
এছাড়াও পড়ুন:
নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
নাটোরে ছুরিকাঘাতে খোরশেদ আলম (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সদর উপজেলার তেগাছি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত খোরশেদ ওই এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে ও পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। অভিযুক্ত সালমান (১৭) একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালমানের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ আনেন খোরশেদ আলম। এ ঘটনায় সালমান ক্ষিপ্ত হয়ে খোরশেদকে কুপিয়ে জখম করে। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান আত্মগোপনে
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুর রহমান বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্ত সালমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মামলাসহ পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/আরিফুল/রাজীব