ভালুকের শরীরে পচন, বন্ধ হল ময়মনসিংহের মিনি চিড়িয়াখানা
Published: 8th, April 2025 GMT
ভালুকের শরীরে পচন ধরার ঘটনায় ময়মনসিংহ নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করা হয়েছে। মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) বিকেলে পরিদর্শন শেষে ১২ বছর ধরে অবৈধভাবে চলা এই চিড়িয়াখানাটি সিলগালা করে ঢাকার বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিট। সেখান থেকে ৪৮টি বন্যপ্রাণী জব্দ করা হয়েছে।
বন্যপ্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটের পরিদর্শক নার্গিস সুলতানা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, “দেশি অথবা বিদেশি যেকোনো পশু পাখির জন্যই এখানকার পরিবেশ খুবই অস্বাস্থ্যকর। এরপরও নিয়ম বহির্ভূতভাবে ৪৮টি প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। এর মধ্যে ২৭টি আমরা নিয়ে যাচ্ছি। বাকি প্রাণীগুলো চিকিৎসার জন্য এখানেই থাকবে। এখন থেকে আর চিড়িয়াখানাটিতে দর্শণার্থী প্রবেশ করতে পারবেন না। চিড়িয়াখানাটির কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
অতিরিক্ত দুর্বল হওয়ার কারণে ভালুকটি নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয় বলে জানান বন্যপ্রাণী ও জীব বৈচিত্র কর্মকর্তা রথীন্দ্র্র কুমার বিশ্বাস। তিনি বলেন, “বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক ভালুকটির চিকিৎসা করবেন। যখন সুস্থ হবে তখন আমরা প্রাণীটিকে নিয়ে যাব।”
তিনি আরো বলেন, “জব্দকৃত প্রাণীগুলোর মধ্যে কিছু প্রাণীকে গাজীপুরের সাফারি পার্কে রাখা হবে। বাকি প্রাণীগুলো অবমুক্ত করা হবে। মিনি চিরিয়াখানাটি অবৈধভাবে পরিচালিত হয়ে আসছিল। যার কারণে কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব।”
আরো পড়ুন:
ঈদের ঢাকা: মিরপুরে জাতীয় চিড়িখানায় উৎসবের আমেজ
চট্টগ্রাম চিড়িয়াখানায় গরমে পশুর হাঁসফাঁস অবস্থা
জয়নুল আবেদিন উদ্যানের মিনি চিড়িয়াখানাতি গিয়ে দেখা গেছে, খাঁচায় থাকা দুইটি ভালুকের মধ্যে একটির শরীরে পচন ধরে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এমনকি প্রাণীটির পায়ের অংশবিশেষ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে।
কামাল হোসেন নামে চিড়িয়াখানার এক কর্মী বলেন, “নিজের পা নিজেই কামড়ে ছিঁড়ে ফেলেছে ভালুকটি। তারপর স্থানীয় প্রাণী সম্পদ হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ দিয়ে সারিয়ে তোলার চেষ্টা করছি। এরপরও ভালুকের পায়ের ক্ষত বাড়ছে।”
জানা যায়, ২০১৩ সালের দিকে নগরের জয়নুল আবেদিন উদ্যানের ভেতরে বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় মিনি চিড়িয়াখানাটি গড়ে তোলা হয়। হরিণ, ভালুক, কুমির, হনুমান, গাধা, অজগরসহ ২৪ প্রজাতির প্রাণী ছিল চিড়িয়াখানাটিতে। মেছো বাঘের মৃত্যুর পর বর্তমানে সেখানে ২৩ প্রজাতির ১১৪টি প্রাণী আছে। ৩০ টাকায় টিকিট কেটে দর্শনার্থীরা চিড়িয়াখানাটিতে ঢুকতে পারেন। ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের জায়গা ভাড়া নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে চিড়িখানাটি।
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা মো.
ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন হওয়ার আগে তৎকালীন পৌরসভার মেয়র প্রয়াত অ্যাডভোকেট মাহমুদ আল নূর তারেক মিনি চিড়িয়াখানাটির অনুমতি দেন বলে জানান পার্কটির কর্মকর্তা মিজানুর রহমান মামুন।
ঢাকা/মিলন/মাসুদ
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে টঙ্গীতে শ্রমিকদের বিক্ষোভ
বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়ার দাবিতে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিক্ষোভ করেছেন যমুনা অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানার শ্রমিকেরা। আজ মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে মিলগেট এলাকায় প্রথমে ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে পরে আঞ্চলিক সড়কে তাঁরা বিক্ষোভ করেন।
গাজীপুর শিল্প পুলিশের পরিদর্শক ইসমাইল হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, শ্রমিকেরা সড়কে অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ করলে তাঁদের সড়ক থেকে সরে যেতে বলা হলে তাঁরা উত্তেজিত হয়ে পড়েন। পরে সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
কারখানার শ্রমিক ও শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, টঙ্গীর যমুনা অ্যাপারেলস কারখানায় ২২ এপ্রিল বিশৃঙ্খলাসহ নানা অভিযোগে কারখানার ১১৪ শ্রমিককে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। শ্রম আইন অনুযায়ী তাঁদের সব পাওনা পরিশোধও করা হয়। শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে ২৩, ২৪ ও ২৫ এপ্রিল কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২৬ এপ্রিল কারখানা খুলে দেওয়া হলে সকালে শ্রমিকেরা কাজে যোগ দেন। এরপর ওই দিন চাকরিচ্যুত শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে কারখানার ভেতরে কর্মবিরতি শুরু করেন তাঁরা। এর পর থেকে শ্রমিক অসন্তোষ এড়াতে কারখানা বন্ধ করে দেয় কর্তৃপক্ষ।
আজ সকালে বন্ধ কারখানা খুলে দেওয়া ও ছাঁটাই করা শ্রমিকদের পুনর্বহালের দাবিতে বিক্ষোভ শুরু করেন শ্রমিকেরা। প্রথমে তাঁরা ঢাকা–ময়মনসিংহ মহাসড়কে অবস্থান নিলে পুলিশ তাঁদের সরিয়ে দেয়। পরে তাঁরা আঞ্চলিক সড়ক অবরোধ করেন। এ সময় শিল্প পুলিশ, থানা–পুলিশ ও যৌথ বাহিনীর সদস্যরা শ্রমিকদের ধাওয়া ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে ছত্রভঙ্গ করে দেন।
কারখানার শ্রমিকদের অভিযোগ, ১০ দিন আগে কারখানার কোয়ালিটি সেকশনের শ্রমিক মো. হুমায়ুন দুই দিনের ছুটি চেয়েছিলেন। ছুটি না পেয়ে হুমায়ুন নিজেই অনুপস্থিত থাকেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে কারখানার অ্যাডমিন অ্যান্ড কমপ্লায়েন্স কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান তাঁর সঙ্গে বাগ্বিতণ্ডায় জড়ান এবং হুমায়ুনকে মারধর ও গুম করার হুমকি দেন। একপর্যায়ে হুমায়ুনকে কারখানার নিচতলার গুদামঘরের বাথরুমে আটকে রাখা হয়। চার ঘণ্টা পর হুমায়ুন মুঠোফোনে সহকর্মীদের খবর দিলে তাঁরা তাঁকে উদ্ধার করেন। এ ঘটনার জেরে কারখানা কর্তৃপক্ষ ১১৪ শ্রমিককে ছাঁটাই করে। শ্রমিক ছাঁটাই, গুমের হুমকি ও বহিরাগতদের দিয়ে শ্রমিকদের ওপর হামলার অভিযোগে বিক্ষোভ করেন শ্রমিকেরা। এ সময় কারখানা খুলে দেওয়ার দাবি জানানো হয়।