ফরিদপুরে সড়ক দুর্ঘটনা: বেশি হতাহত হলে তদন্ত কমিটি হয়, সুপারিশ বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেই
Published: 10th, April 2025 GMT
ফরিদপুরে গত দুই বছরে ঈদের আগে-পরে বড় তিনটি দুর্ঘটনায় অন্তত ২৯ জনের মৃত্যু হয়েছে। প্রতিটি ঘটনার পর জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে গঠন করা হয় তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে দুটি কমিটি সুপারিশসহ প্রতিবেদন দিয়েছে। কিন্তু কোনো সুপারিশ বাস্তবায়নে তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে ফরিদপুর সদর উপজেলার গেরদা ইউনিয়নের বাখুন্ডা এলাকায় ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কে একটি বাস দ্রুতগতিতে ওভারটেক করতে গিয়ে সড়কের পাশে থাকা খুঁটিতে ধাক্কা খেয়ে খাদে পড়ে গেলে সাতজন নিহত হন। এ ঘটনায় অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মিন্টু বিশ্বাসকে আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে জেলা প্রশাসন। কমিটিকে তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।
২০২৩ সালের ২৪ জুন ঈদুল আজহার আগে ভাঙ্গার মালিগ্রাম এলাকায় এক্সপ্রেসওয়েতে একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে সেতুর বিভাজকে ধাক্কা লেগে আগুন ধরে গেলে চালকসহ অন্তত আটজন নিহত হন। এ ঘটনায় তৎকালীন এডিএম বিপুল চন্দ্র দাসকে আহ্বায়ক করে ছয় সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি ২৬ জুন ছয় দফা সুপারিশসহ একটি প্রতিবেদন দেয়।
সুপারিশের মধ্যে ছিল এক্সপ্রেসওয়েতে কন্ট্রোল ক্যামেরা বসানো; ফিটনেসবিহীন গাড়ি চলাচল বন্ধে তদারকি; এক্সপ্রেসওয়ের প্রতিটি পয়েন্টে হাইওয়ে পুলিশের নজরদারি; লাইসেন্সবিহীন চালকদের গাড়ি না চালানো নিশ্চিত করা; যন্ত্রের মাধ্যমে গাড়ির গতি পরিমাপ; গতিসীমার ঊর্ধ্বে চলাচলকারী চালকদের শাস্তির আওতায় আনা এবং বিআরটিএর মাধ্যমে সারা দেশে সব যানবাহনে গতিনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানোর উদ্যোগ নেওয়া। এসব সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রশাসনের তেমন কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। গত মঙ্গলবার ফরিদপুরে যে বাস দুর্ঘটনায় সাতজনের প্রাণহানি হয়েছে, সেটির ফিটনেস ছিল না। চালক পালিয়ে যাওয়ায় তাঁর লাইসেন্স ছিল কি না, শনাক্ত করা যায়নি।
আরও পড়ুনহাসপাতালে অসুস্থ স্বজনকে দেখতে যাচ্ছিলেন, বাস পুকুরে পড়ে বাবা–ছেলে নিহত০৮ এপ্রিল ২০২৫এক্সপ্রেসওয়েতে ক্যামেরা বসানো ও বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে হাইওয়ে পুলিশের মাদারীপুর অঞ্চলের পুলিশ সুপার শাহীনূর আলম প্রথম আলোকে বলেন, ‘এক্সপ্রেসওয়েতে কন্ট্রোল ক্যামেরা বসানোর কোনো সুযোগ হাইওয়ে পুলিশের নেই। আমাদের জনবল–সংকট প্রকট। অবস্থা অনেকটা “ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সরদার”–এর মতো। সাধারণ একটি থানায় যেখানে ৭০ থেকে ৮০ জনের জনবল থাকে, সেখানে আমাদের থানায় দেওয়া হয় ২০ থেকে ২৫ জন। পাশাপাশি যানবাহনের সংকট রয়েছে। এই জনবল দিয়ে বিভিন্ন পয়েন্টে চেকপোস্ট বসানোর সুযোগ নেই।’
দুর্ঘটনার পরপরই চালকের নিবন্ধন ও গাড়ির ফিটনেস দেখতে দু-এক দিন মাঠে তদারক করে জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ। পরে তেমন কোনো তদারকি দেখা যায়নি। যানবাহনে গতিনিয়ন্ত্রক যন্ত্র বসানোর ব্যাপারে জানতে চাইলে ফরিদপুর বিআরটিএর সহকারী পরিচালক মো.
একইভাবে ২০২৪ সালের ১৬ এপ্রিল ফরিদপুর সদর উপজেলার কানাইপুরে বাস ও পিকআপ ভ্যানের সংঘর্ষে নারী-শিশুসহ ১৪ জন নিহত হন। ওই দুর্ঘটনায় করা কমিটি প্রতিবেদনে চালকের ঘুম ঘুম ভাব, যানবাহনের অধিক গতি, নিজস্ব লেন ছেড়ে অন্য লেনে চলাচল ও মহাসড়কে অবৈধ অটোরিকশা চলাচলের কারণ উল্লেখ করে। কিন্তু কোনো কারণ সামনে রেখে প্রশাসনের তেমন কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। অধিক গতি ও মহাসড়কের নিজস্ব লেন অতিক্রম করায় মঙ্গলবার দুর্ঘটনার কবলে পড়ে বাসটি। উচ্চ আদালতের নির্দেশনা সত্ত্বেও মহাসড়কে হরহামেশা চলাচল করছে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা।
আরও পড়ুনঅতিরিক্ত গতি ও চালকের ঘুম ঘুম ভাবে ফরিদপুরের দুর্ঘটনা২২ এপ্রিল ২০২৪সম্মিলিত উদ্যোগ না নিলে সুপারিশ বাস্তবায়ন হওয়া কঠিন। এবারের কমিটি যেসব সুপারিশ দেবে এবং আগে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল—সেগুলো নিয়ে সমন্বয় করে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাসের মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে একটি সভা করা হবে। সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে।মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা, ফরিদপুরের জেলা প্রশাসকজানতে চাইলে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান মোল্লা প্রথম আলোকে বলেন, সুপারিশ সাধারণত দুই ধরনের হয়। একটি তাৎক্ষণিকভাবে বাস্তবায়নযোগ্য, আরেকটি বিভিন্ন সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মতবিনিময়ের মাধ্যমে বাস্তবায়ন করা হয়। সম্মিলিত উদ্যোগ না নিলে সুপারিশ বাস্তবায়ন হওয়া কঠিন। তিনি বলেন, এবারের কমিটি যেসব সুপারিশ দেবে এবং আগে যেসব সুপারিশ করা হয়েছিল—সেগুলো নিয়ে সমন্বয় করে সংশ্লিষ্ট সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, বাসের মালিক ও শ্রমিকদের নিয়ে একটি সভা করা হবে। সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হবে। পাশাপাশি নিয়মিত মনিটরিং করা হবে। তাহলে দুর্ঘটনা অনেকাংশে কমে আসবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: য সব স প র শ দ র ঘটন য় ত মন ক ন সরক র ব আরট
এছাড়াও পড়ুন:
যমুনা সেতুতে ঈদের ছুটির শেষ ৪৮ ঘণ্টায় ৭ কোটি টাকার টোল আদায়
ঈদের ছুটি শেষে গত দুই দিনে সড়কে কর্মস্থলগামী মানুষের চাপ বেড়ে যায় বহুগুণ। বেড়ে যায় যমুনা সেতুর ওপর দিয়ে যানবাহন পারাপারও। বেড়েছে টোল আদায়ও। গত বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় ১ লাখ ৭৭৭টি যানবাহন সেতু পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৬ কোটি ৯১ লাখ ৪৯ হাজার ৪৫০ টাকা।
যমুনা সেতু টোলপ্লাজা সূত্র জানায়, শুক্রবার রাত ১২টা থেকে শনিবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৫১ হাজার ৫৯৫টি যানবাহন পারাপার হয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৮ লাখ ৩৬ হাজার ২৫০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গগামী ১৮ হাজার ২৬৬টি যানবাহন রয়েছে। এতে টোল আদায় হয়েছে ১ কোটি ৪৪ লাখ ৫২ হাজার ২০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী ৩৩ হাজার ৩২৯টি যানবাহন পার হয়েছে। টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩৮ লাখ ৪ হাজার ৫০ টাকা।
এর আগে বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ৪৯ হাজার ১৮২টি যানবাহন পারাপার হয়। এতে টোল আদায় হয়েছে ৩ কোটি ৪৩ লাখ ১৩ হাজার ২০০ টাকা। এর মধ্যে উত্তরবঙ্গের দিকে ১৮ হাজার ৩৬৫টি যানবাহন পার হয়। এতে টোল আদায় হয় ১ কোটি ৪৮ লাখ ৩৮ হাজার ৩০০ টাকা। অপর দিকে ঢাকাগামী যানবাহন ছিল ৩০ হাজার ৮১৭টি। এর বিপরীত টোল আদায় ১ কোটি ৯৪ লাখ ৭৪ হাজার ৯০০ টাকা।
বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ যমুনা সেতু সাইট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আহসানুল কবির জানান, স্বাভাবিক সময়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার যানবাহন প্রতিদিন পারাপার হয়। এবার ঈদের ছুটির শুরুতে এবং শেষে যানবাহন পারাপার কয়েক গুণ বেড়ে যায়।