‘ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকা থেকে যখন বাংলাদেশে আসি, মা তখন ভালোভাবে বিদায় জানাতে পারেননি, সুযোগ ছিল না। শরণার্থীশিবিরের গেটের ভেতর দাঁড়িয়ে ছিলেন। আমার অপেক্ষায় মা এখনো সেখানে দাঁড়িয়ে থাকেন কি না, জানি না। সাড়ে তিন বছর পেরিয়ে গেছে, দেশে ফিরতে পারিনি। কত দিন জানেন! বহুদিন হলো মায়ের মুখ দেখা হয়নি। মা কেবল হৃদয়ে আছে। আর চোখের ভেতর যুদ্ধ-বোমা-শেল-আর্তনাদ ও অগণিত মৃত্যুর দৃশ্য।’

উদ্বিগ্নতা ও টলটলে চোখ নিয়ে নিদারুণ কষ্টের এই কথাগুলো বলেছেন মোহাম্মদ জিহাদ আবু সাকের নামের ফিলিস্তিনের গাজা উপত্যকার ২২ বছর বয়সী এক তরুণ। বৃত্তি পাওয়া সূত্রে তিনি ঢাকা ডেন্টাল মেডিকেল কলেজে পড়েন। চতুর্থ বর্ষের এই শিক্ষার্থী থাকেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্যার পি জে হার্টগ ইন্টারন্যাশনাল হলে।

যুদ্ধ, বোমা ও শেলের শব্দের সঙ্গে সাকেরের পরিচয় শৈশব থেকেই। সেই যুদ্ধের ভেতরও মা–বাবার ছায়ার কাছে তাঁর শান্তি ছিল। মনে হতো, কিছু হলে সবার একসঙ্গে হবে। কিন্তু ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর শুরু হওয়া ফিলিস্তিন-ইসরায়েল যুদ্ধ তাঁকে এক অন্য যুদ্ধের মধ্যে ফেলে দিয়েছে। একা করে দিয়েছে। মা–বাবা নেই, কোনো পরিচিত মুখ নেই কাছে। কারও খবরও ঠিকঠাকভাবে নেওয়ার উপায় নেই। গাজায় কেউ কখনো ইন্টারনেটের আওতায় এলে শুধু টেলিগ্রাম অ্যাপে একটু যোগাযোগ হয়। এতেই খবর পান, যুদ্ধে স্বজন ও বন্ধু হারিয়েছেন তিনি। এসব খবর তাঁকে উতলা করে দেয়। দেশে ফিরতে আশকারা দেয়। কিন্তু সে উপায়ও নেই। এই ভিনদেশে নিজের সঙ্গে প্রতিনিয়ত তাঁকে অন্য রকম যুদ্ধ করে চলতে হচ্ছে।

সাকের বলেন, তাঁদের পূর্বপুরুষের বাস ছিল গাজা থেকে ২৪ কিলোমিটার উত্তরে হামামা শহরে। ১৯৪৮ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধের সময় তাঁরা বাস্তুচ্যুত হন। এর পর থেকে তাঁরা আশ্রয় নেন গাজার আলমাগাজি শরণার্থীশিবিরে। এই শিবিরেই সাকেরের জন্ম। তাঁর পরিবারে মা-বাবাসহ ১০ সদস্য।

সাকেরের শৈশব মানেই ছিল সশস্ত্র যুদ্ধের ভয়, বোমা হামলা আর বেঁচে থাকার জন্য এক স্রোতে দৌড়ানো। প্রায় সময় যুদ্ধ লেগে থাকত। তাই তিনি অনেক দিন স্কুলে যেতে পারেননি। অন্য শিশুদের মতো হেসেখেলে বেড়ে ওঠেননি তিনি। ছোটবেলা থেকেই বেঁচে থাকার তাড়নায় বড় হয়ে গেছেন সাকের।

সাকের প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা শুধু সংখ্যা নই, আমরাও মানুষ। আমার এক স্কুলবন্ধু বাস্কেটবল খেলোয়াড় হতে চেয়েছিল, একজন চিকিৎসক হতে চেয়েছিল। গাজার রক্তাক্ত জমিনে তারা চিরদিনের জন্য হারিয়ে গেছে।’

এই বাংলাদেশে রাতে যখন সাকেরের ঘুম ভেঙে যায়, তখন প্রথমেই তাঁর বাবা-মায়ের কথা মনে হয়। সারা দিন ঘুরঘুর করা ছোট্ট বাগানের কথা মনে হয়। তাঁর মনে পড়ে মায়ের হাতের প্রিয় খাবার মাখলুবার কথা। এসব মনে পড়ে আর মন পুড়ে যায় তাঁর।

আরও পড়ুনগাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসনের প্রতিবাদে ঢাকার মার্কিন দূতাবাসের কাছে বিক্ষোভ০৭ এপ্রিল ২০২৫

৭ এপ্রিল গাজার পক্ষে বাংলাদেশের হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমেছিলেন। সাকের বলেন, পৃথিবী মূলত এটাই। এই সমর্থন, এই ভালোবাসা তাঁকে সাহস দিয়েছে, শক্তি দিয়েছে।

সাকের বলেন, যুদ্ধ কোনো সমাধান নয়। আলোচনার মাধ্যমে ফিলিস্তিন একদিন মুক্ত হবে। গাজা মুক্ত হবে। আর তিনি ফিরবেন নিজের ঘরে; মা-বাবার কাছে—এটাই তাঁর স্বপ্ন। তিনি চান, পৃথিবী শান্তিপূর্ণ হোক। সবাই ফিরে পাক সেই সকালটা, যেখানে বোমা আর গোলাগুলি নেই, যুদ্ধে মৃত্যুর ভয় নেই। গুলির বদলে ডানা মেলে উড়বে শান্তির অজস্র পায়রা।’

আরও পড়ুনইসরায়েলের কারাগারে ‘অপুষ্টিতে’ ফিলিস্তিনি কিশোরের মৃত্যু০৬ এপ্রিল ২০২৫আরও পড়ুন‘আমি নিতান্তই কোনো সংখ্যা হতে চাই না, আমি গাজার এক বাস্তব গল্প’০৭ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

লামিনে ‘মেসি’ ইয়ামাল

১৭ বছর বয়সী ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো: ১৯ ম্যাচ, ৫ গোল, ৪ গোলে সহায়তা।

১৭ বছর বয়সী লিওনেল মেসি: ৯ ম্যাচ, ১ গোল, গোলে সহায়তা নেই।

১৭ বছর বয়সী লামিনে ইয়ামাল: ১০০ ম্যাচ, ২২ গোল, ৩৩ গোলে সহায়তা।

মেসি–রোনালদোর সঙ্গে তুলনা নয়, লামিনে ইয়ামালের শুরুটা বোঝাতে এই পরিসংখ্যান হাজির করেছে টিএনটি স্পোর্টস। ধূমকেতুর মতো শুরু হলেও ধূমকেতুর মতোই মিলিয়ে যাওয়ার পাত্র তিনি নন।

বার্সেলোনার এস্তাদি অলিম্পিক লুইস কোম্পানিসে  গত রাতের ম্যাচটি স্মরণ করতে পারেন। ৬ গোলের থ্রিলার, যেখানে বার্সেলোনা–ইন্টার মিলান সেমিফাইনাল প্রথম লেগের ‘ক্লাসিক’ লড়াই ৩–৩ গোলে অমীমাংসীত। দুই দলের হয়েই ‘সুপার হিরো’ ছিলেন বেশ কজন। ইন্টারের যেমন ডেনজেল ডামফ্রিস ও মার্কাস থুরাম, বার্সার তেমনি রাফিনিয়া, ফেরান তোরেসরা। কিন্তু সবাইকে ছাপিয়ে ঠিকই রবির কিরণের মতো আলো দিয়েছেন এক কিশোর—লামিনে ইয়ামাল নাসরাউয়ি এবানা। সংক্ষেপে লামিনে ইয়ামাল।

আরও পড়ুন৬ গোলের থ্রিলারে বার্সেলোনা–ইন্টার সেয়ানে সেয়ানে টক্কর৮ ঘণ্টা আগে

২৪ মিনিটে ইয়ামালের করা গোলটির প্রসঙ্গে পরে আসা যাবে। যেভাবে খেলেছেন তাতে গোলটি না করলেও লোকে কাল রাতে তাঁর পারফরম্যান্স মনে রাখতেন। পরিসংখ্যান বলছে ১০২টি টাচ, একটি গোল, ২টি গোল হওয়ার মতো পাস, ৬টি শট (পোস্টে মেরেছেন দুবার) এবং ১০টির মধ্যে ৬টি সফল ড্রিবলিং।

কিন্তু পরিসংখ্যানে এ তথ্য নেই—মাঠে ডান প্রান্তকে ইয়ামাল ফাইনালে ওঠার হাইওয়ে বানিয়ে যতবার কাট–ইন করে ইন্টারের বক্সে ঢুকেছেন, সেটা আসলে ইতালিয়ান ক্লাবটির রক্ষণের জন্য দুঃস্বপ্নের। প্রতিবারই মৌমাছির মতো ছেঁকে ধরা হয়েছে ইয়ামালকে। কিন্তু আটকানো কি সম্ভব হয়েছে? রাত থেকেই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিওগুলো ভাসছে। সেসব আসলে ইয়ামালের পায়ের কারুকাজে ইন্টারের রক্ষণকে স্রেফ খোলামকুচির মতো উড়িয়ে দেওয়ার ভিডিও।

ইয়ামাল কত ভয়ংকর সেটা এই এক ছবিতেই পরিস্কার। সবাই ছেঁকে ধরেও তাঁকে আটকাতে পারেননি

সম্পর্কিত নিবন্ধ