কমিউনিটিতে আগুন নিয়ন্ত্রণে ওয়ালটন ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট টিমের অনবদ্য ভূমিকা
Published: 10th, April 2025 GMT
কর্মস্থলের নিরাপদ পরিবেশ এবং কর্মীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর ওয়ালটন। এছাড়াও ওয়ালটন লোকাল কমিউনিটির নিরাপত্তা বিষয়েও প্রতিনিয়ত কাজ করছে।
গত বুধবার আনুমানিক বিকেল ৫টা ৪৫ মিনিটে লোকাল কমিউনিটিতে (হরতকিতলা, কালিয়াকৈর, গাজীপুর) হাফিজ এন্টারপ্রাইজ, আরিশা-আনিছা এন্টারপ্রাইজ, তাজ ওয়ান এন্টারপ্রাইজ নামের তিনটি ঝুটের গুদামে লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে ওয়ালটন ইএইচএস বিভাগের ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট সেকশন কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সঙ্গে কাজ করেছে।
ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ পিএলসির অ্যাডিশনাল ম্যানেজিং ডিরেক্টর মোহাম্মদ ইউসুফ আলী বলেছেন, ওয়ালটন পরিবার সর্বদা অন্যের বিপদে পাশে দাঁড়ায়। ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা নিজেদের পাশাপাশি আশপাশের সকলকে নিরাপদ রাখতে আমাদের সাধ্য অনুযায়ী কাজ করে যাব।
এনভায়রনমেন্ট, হেলথ অ্যান্ড সেফটি (ইএইচএস) বিভাগের প্রধান মো.
ওয়ালটন ইএইচএস বিভাগের ফায়ার সেফটি ম্যানেজমেন্ট সেকশনের ইনচার্জ মো. ইশাদুল ইসলাম বলেছেন, খবর পেয়ে আমরা ওয়ালটন ব্যবস্থাপনা কর্তৃপক্ষের অনুমোদনসাপেক্ষে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই এবং অগ্নিনির্বাপণকাজে অংশগ্রহণ করি। ওয়ালটনের ২৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি এবং কালিয়াকৈর ও কোনাবাড়ি ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের তিনটি ইউনিটসহ মোট চারটি ইউনিট দেড় ঘণ্টার প্রচেষ্টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়। আগুনে তিনটি গুদামের মালামাল পুড়ে গেছে। তাৎক্ষণিকভাবে আগুন লাগার কারণ ও ক্ষতির পরিমাণ জানা যায়নি। এতে কেউ হতাহত হননি।
ওয়ালটন ইএইচএস বিভাগ অগুন নিয়ন্ত্রণের জন্য বাংলাদেশের সবচেয়ে অত্যাধুনিক TTL (Turn Table Ladder) 5000-liter water Tank & 300-liter foam system-সজ্জিত নিজস্ব গাড়ি ব্যবহার করেছে।
ওয়ালটন পরিবার সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে নিরাপদ কমিউনিটি গড়ে তোলার এই কর্মকাণ্ড সর্বদা অব্যাহত রাখবে।
ঢাকা/একরাম/রফিক
উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
অভ্যুত্থানের অনবদ্য দলিল
বাংলাদেশের সম্প্রচার সাংবাদিকতার পুরোধা ব্যক্তিত্ব সাইমন জন ড্রিংয়ের সঙ্গে কাজ করার সুযোগ হয়েছিল যমুনা টিভিতে। সে সময় কাজের ফাঁকে তিনি শুনিয়েছিলেন ১৯৭৯ সালে ইরানের ইসলামি বিপ্লবের শ্বাসরুদ্ধকর ঘটনাপ্রবাহ। সাইমন তখন বিবিসির প্রতিবেদক হিসেবে তেহরানে কর্মরত। তাঁর চোখের সামনেই ঘটেছিল সেই গণবিপ্লব। সাইমন বলেছিলেন, সাংবাদিকতা পেশার একটি বিশেষ সুবিধা আছে। একজন সাংবাদিক পেশাগত দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি ইতিহাসকে রচিত হতে দেখেন।
ফটোসাংবাদিক জীবন আহমেদের উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং গ্রন্থটি হাতে পাওয়ার পর সাইমনের কথা খুব মনে হচ্ছিল। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের বর্ষা বিপ্লবের ঘটনাগুলো খুব কাছে থেকে দেখার সুযোগ পেয়েছেন জীবন। নেত্রনিউজের সংবাদকর্মী হিসেবে তিনি শুধু এই অভ্যুত্থান কাছ থেকেই দেখেননি, পেশাগত দায়িত্বের অংশ হিসেবে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে ক্যামেরায় ধারণ করেছেন অভ্যুত্থানের অভূতপূর্ব সব মুহূর্ত।
গ্রন্থটি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অনবদ্য দলিল। জুলাই অভ্যুত্থানের শ্বাসরুদ্ধকর মুহূর্তের সংবাদ, ছবি ও স্মৃতিকথা। একথা সত্য যে সাংবাদিকের ক্যামেরা ও কলমে কোনো অভ্যুত্থানেরই পুরো চিত্র তুলে ধরা সম্ভব নয়। নিশ্চিতভাবেই ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের বহু আত্মত্যাগের অনবদ্য গল্প এখনো অজানা। গ্রন্থটির ভূমিকায় ছবিশিল্পী জীবন আহমেদ লিখেছেন, জুলাই আন্দোলন চলাকালে ঢাকার রাজপথে, অলিতেগলিতে এমন সব দৃশ্যের জন্ম হয়েছে, যা কোনো ভিজ্যুয়াল মিডিয়া বা ফটোগ্রাফির সব সক্ষমতা দিয়েও ধারণ করা সম্ভব নয়।
জুলাই অভ্যুত্থানের আবেগ, ব্যাপকতা ও মাহাত্ম্য উল্লেখ করে নিজের অক্ষমতার কথা তুলে ধরলেও ফটোসাংবাদিক জীবন তাঁর ক্যামেরার লেন্সের মাধ্যমে ঠিকই এক জরুরি দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৭৬টি সংবাদছবিতে জুলাই অভ্যুত্থানের রক্তাক্ত ঘটনাগুলোকে চিরযৌবন দান করেছেন। পুলিশের সাঁজোয়া যান, গুলি, কাঁদানে গ্যাস, আগুন বা প্রতিবাদের বহ্নিশিখা ধারণ করেছেন ক্যামেরার লেন্সে। মৃত্যু, আর্তনাদ, অভিশাপ, প্রতিবাদ, প্রত্যাখ্যান ও পতন জীবন্ত হয়ে উঠেছে বইটির পাতায় পাতায়।
গ্রন্থটি যে কাউকে এক পরাবাস্তব জগতে নিয়ে যেতে পারে। প্রতিটি ছবিই যেন একেকটি গল্প। নির্যাতন-নিপীড়ন-বলপ্রয়োগ–হত্যাযজ্ঞের এক রক্তাক্ত ইতিহাস। যে ইতিহাসের ধারাক্রম শুরু মধ্য জুলাই থেকে। ৩৬ পৃষ্ঠায় স্থান পাওয়া ১৪ জুলাইয়ের একটি ছবি বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ। যাকে বলা যায় আইকনিক, মোড় পরিবর্তনকারী। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জিরো পয়েন্টে যাওয়ার পথে পুলিশের প্রতিরোধ ভেঙে ফেলার এক অসাধারণ মুহূর্ত যে কাউকে স্পর্শ করবে। খুব সম্ভবত এটাই ছিল প্রতিরোধ ভাঙার সূচনা। এ ছাড়া ১৪ জুলাইয়ের স্মৃতিকথাতেও জীবন আহমদ এক ঐতিহাসিক ঘটনার উল্লেখ করেছেন। তিনি লিখেছেন, রাত সাড়ে ১০টার দিকে শামসুন্নাহার হলের মেয়েরা থালাবাসন দিয়ে আওয়াজ করতে শুরু করে, তুমি কে? আমি কে? রাজাকার! রাজাকার! পরে পুরো বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হলেও এই থালাবাসন দিয়ে বিভিন্ন আওয়াজ ও স্লোগান শুরু হয়। (পৃষ্ঠা: ৩৪)
পরের দিনগুলো অগ্নিগর্ভ, শ্বাসরুদ্ধকর। রাজু ভাস্কর্যের সামনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রসমাজের আন্দোলনে ছাত্রলীগ-যুবলীগের বর্বর আক্রমণ, গায়েবানা জানাজা, শিক্ষার্থীদের জোর করে হল ত্যাগ করানো আর সংঘাতের জীবন্ত বিবরণ। মাঝখানে কয়েক দিন বিরতির পর আবার গণবিস্ফোরণ। তখন দিন-রাত এক করে ক্যামেরা হাতে ঢাকার রাজপথে ছিলেন জীবন। কখনো তাঁর ক্যামেরা ধারণ করেছে অগ্নিদগ্ধ যানবাহন, উত্তরার রাজপথ বা ঢাকা মেডিকেলে লাশের সারি। মাঝেমধে৵ আছে কয়েকটি হৃদয়বিদারক মৃত্যুর এপিটাফ। রিকশার পাদানিতে গোলাম নাফিজ, স্ট্রেচারে লাল-কালো চাদরে ঢাকা রিয়া গোপের মরদেহ, সমন্বয়ক নাহিদ ইসলামের আঘাত–জর্জরত পিঠ ও অন্যান্য। এই ছবিগুলোর প্রতিটিই মৌষলকালের একেকটি মর্মান্তিক গল্প।
৫ আগস্ট বিজয়ের দিনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যের ছবিটি অনবদ্য। এই সংবাদছবিটির দিকে দীর্ঘ সময় তাকিয়ে থাকা যায়। লাল-সবুজের পতাকায় ছাত্র-জনতার উল্লাস, পটভূমিতে পতিত স্বৈরাচারের ক্ষতবিক্ষত অবয়ব। যেন এই একটা ছবিই ৩৬ দিনের আন্দোলনের সব কথা বলে দিয়েছে। এখানেই শেষ নয়, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে নৈরাজ্য ও অরাজকতার এক খণ্ডচিত্রও ধরা পড়েছে জীবন আহমদের চোখে। ১৫ আগস্ট ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের সামনে এক নারীকে নির্যাতন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, পরের দিকে গুঁড়িয়ে দেওয়ার স্থিরচিত্রও স্থান পেয়েছে বইটিতে, যা একজন সাংবাদিকের পেশাদারত্ব ও দলনিরপেক্ষতার প্রমাণ দেয়।
উইটনেস টু দ্য আপরাইজিং
জীবন আহমেদ
প্রকাশক: ইউপিএল
প্রকাশ: আগস্ট ২০২৫
প্রচ্ছদ: জীবন আহমেদের ছবি অবলম্বনে সুবিনয় মোস্তফি ইরন
পৃষ্ঠা: ৩২৩
মূল্য: ২৫০০ টাকা