বিচার ব্যবস্থায় গতি আনতে আসছে ই-জুডিশিয়ারি
Published: 11th, April 2025 GMT
তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত ও স্বচ্ছ বিচার নিশ্চিত করতে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ বাস্তবায়ন কার্যক্রম শুরু হয় ২০১৫ সালে। সারাদেশে দুই হাজার ১০০ ই-আদালত কক্ষ প্রতিষ্ঠাই এর লক্ষ্য। এ জন্য দফায় দফায় প্রকল্পের সমীক্ষাসহ অনুষঙ্গিক কাজ সম্পন্ন করে আইন মন্ত্রণালয় ও পরিকল্পনা কমিশন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায়ও কয়েক দফা প্রকল্পটি উত্থাপিত হয়। তবে এটি আলোর মুখ দেখেনি এক দশকেও। এবার সেই প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
ই-জুডিশিয়ারি সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজ ব্যবস্থা। এর অধীনে উচ্চ এবং অধস্তন আদালত অর্থাৎ নিম্ন আদালতের বিচারপ্রার্থীরা ঘরে বসেই মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাঁর মামলার গতি-প্রকৃতি ও রায় জানতে পারবেন। যাদের মোবাইল ফোন নেই, তারা নিকটবর্তী যে কোনো মোবাইল ফোন বা কম্পিউটার সেবাকেন্দ্র থেকে এ সুবিধা নিতে পারবেন। মামলার তথ্য সংরক্ষণের মাধ্যমে খুবই কম সময়ের মধ্যে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের মধ্যে বিচার-সংশ্লিষ্টরা পারস্পরিক কার্যক্রমও সম্পাদন করতে পারবেন। প্রকল্পের আওতায় পুরোনো মামলার রেকর্ড এবং সংশ্লিষ্ট রায়গুলো ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ করা হবে। ২০২৯ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ২০৯ কোটি টাকা।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সর্বশেষ গত বছরের জুনে প্রকল্পটি একনেক সভায় অনুমোদনের জন্য আইন মন্ত্রণালয় থেকে পরিকল্পনা কমিশনে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু পরে পর্যবেক্ষণসহ ডিপিপি (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) পুনর্গঠনের জন্য ফাইলটি ফেরত দেয় পরিকল্পনা কমিশন। এর আলোকে ডিপিপি পুনর্গঠন চূড়ান্ত করার কাজ শেষ হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে আইন মস্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (পরিকল্পনা) মোহাম্মদ মেহেদী হাসান সমকালকে বলেন, ‘দ্রুততম সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি অনুমোদনের জন্য একনেক সভায় উত্থাপনের যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। একনেক অনুমোদন দিলে আগামী অর্থবছরেই প্রকল্প বাস্তবায়নের কাজ শুরু হবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আদালতগুলোর কার্যক্রমে গতিশীলতা বৃদ্ধির জন্য সরকার ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্প নিয়েছে। এটি বাস্তবায়ন হলে আদালতগুলো ডিজিটালাইজ হবে এবং বিচার প্রক্রিয়া আরও সহজ, স্বচ্ছ ও গতিশীল হবে।’
জানা গেছে, ২০১৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রকল্পটি পাঁচবার প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় উত্থাপন করা হয়েছে। তবে ‘আমলাতান্ত্রিক’ জটিলতাসহ পরিকল্পনা কমিশনের নানা প্রশ্নের কারণে এটি বাস্তবায়ন হয়নি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এক প্রকল্পের জন্য ৫টি পিইসি সভার ঘটনা বিরল।
আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রকল্পটির মূল কার্যক্রমে ১৪টি বিষয় নির্ধারণ করা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– বিচার ব্যবস্থার জন্য এন্টারপ্রাইজ আর্কিটেকচার উন্নয়ন, এন্টারপ্রাইজ রিসোর্স প্ল্যানিং (ইআরপি) সফটওয়্যার উন্নয়ন, বিচার ব্যবস্থাধীন সব অফিসের জন্য ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক (ভিপিএন) স্থাপন, ৬৪ জেলায় মোট দুই হাজার আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, সুপ্রিম কোর্টে ১০০ আদালত কক্ষকে ই-আদালত কক্ষে রূপান্তর, বিচারকদের জন্য দুই হাজার ট্যাব/ল্যাপটপ কম্পিউটার সরবরাহ, আগের মামলার রেকর্ড ও রায় ডিজিটাল পদ্ধতিতে সংরক্ষণ, কর্মকর্তাদের ডেস্কটপ কম্পিউটার সরবরাহ এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান। প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য ৩৮৯ জন বিভিন্ন স্তরের জনবল (আইটি পারসন) নিয়োগ করা হবে বলেও প্রকল্পের কার্যবিবরণীতে উল্লেখ করা হয়েছে।
সুপ্রিম কোর্ট সূত্রে জানা যায়, দেশের উচ্চ ও অধস্তন আদালতে বর্তমানে প্রায় ৪৫ লাখ মামলা বিচারাধীন। অথচ মামলা নিষ্পত্তির জন্য উচ্চ আদালতে ৯৬ জন এবং অধস্তন আদালতে প্রায় দুই হাজার ২৫০ বিচারক কর্মরত। নিষ্পত্তির তুলনায় প্রতিদিন নতুন মামলার সংখ্যা বাড়ছে। এ প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের পরামর্শে মামলাজট নিরসনে সরকার ও আইন মন্ত্রণালয় দীর্ঘ মেয়াদে বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। এর মধ্যে ‘ই-জুডিশিয়ারি’ ব্যবস্থা চালুর বিষয়টি উল্লেখযোগ্য।
এ প্রসঙ্গে সুপ্রিম কোর্টের বিশেষ কর্মকর্তা (অতিরিক্ত জেলা জজ) মোয়াজ্জেম হোছাইন বলেন, এ ব্যবস্থা কার্যকর হলে ই-ফাইলিং
অর্থাৎ ডিজিটাল পদ্ধতিতে মামলা দায়ের, মামলা-সংক্রান্ত নথিপত্র (রেকর্ড) এবং রায় ও আদেশ সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকবে। এর ফলে উচ্চ আদালত ও অধস্তন আদালতের মধ্যে দৈনন্দিন কার্যক্রম সম্পাদন আরও সহজতর হবে। কমবে বিচারপ্রার্থীদের দুর্ভোগ।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরসেদ সমকালকে বলেন, ‘ই-জুডিশিয়ারি প্রকল্পটি বাস্তবায়নে বিগত সরকারের আমলে অজ্ঞাত কারণে উদাসীনতা দেখা গেছে। অন্তর্বর্তী সরকার বিচার বিভাগ সংস্কারে উদ্যোগ নিয়েছে। সরকার প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে পারলে তা বিচার বিভাগের জন্য অবশ্যই ইতিবাচক হবে।’
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব চ র ব যবস থ প রকল প র র ব যবস থ র জন য সরক র একন ক
এছাড়াও পড়ুন:
নাটোরে ছুরিকাঘাতে প্রাণ গেল একজনের
নাটোরে ছুরিকাঘাতে খোরশেদ আলম (৫৫) নামের এক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। বুধবার (৩০ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৬টায় সদর উপজেলার তেগাছি এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
নিহত খোরশেদ ওই এলাকার ইউনুস আলীর ছেলে ও পেশায় রিকশাচালক ছিলেন। অভিযুক্ত সালমান (১৭) একই এলাকার সিরাজুল ইসলামের ছেলে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, সালমানের বিরুদ্ধে মোবাইল চুরির অভিযোগ আনেন খোরশেদ আলম। এ ঘটনায় সালমান ক্ষিপ্ত হয়ে খোরশেদকে কুপিয়ে জখম করে। স্বজনেরা তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
আরো পড়ুন:
নোয়াখালীর মাদরাসায় শিক্ষার্থীর মৃত্যু, পরিবারের দাবি হত্যা
পুলিশ পরিদর্শক মাসুদুর রহমান আত্মগোপনে
নাটোর সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মাহাবুর রহমান বলেন, ‘‘খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে। অভিযুক্ত সালমানকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা করছে। এ বিষয়ে মামলাসহ পরবর্তী আইনি কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।’’
ঢাকা/আরিফুল/রাজীব