‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যটির অর্থ, ‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে।’ যে কাজটি আমরা করব, বা করতে চাই, তা যে মহান আল্লাহর নামে সম্পাদন হচ্ছে, এটা বলাই এই বাক্যের উদ্দেশ্য। সুরা তাওবা ছাড়া কোরআনের প্রতিটি সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর নামে’ বাক্যটি আছে।
নবী নুহকে (আ.) আল্লাহ জাহাজে ওঠার আদেশ দেন। কোরআনে আছে, তখন ‘তিনি [নুহ] বলেন, এতে ওঠো, আল্লাহর নামে যার গতি ও স্থিতি হয়। আমার প্রতিপালক তো ক্ষমা করেন দয়া করেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪১)।
প্রথম ‘বিসমিল্লাহ’
চিঠিতে বা বাণীতে প্রথম বিসমিল্লাহ লিখেছেন সুলাইমান (আ.
আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) লিখেছেন, ‘এই আয়াতে তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। এর একটি হলো, চিঠি বা বার্তায় ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা। আয়াতের ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রেরকের নামের পরে বিসমিল্লাহ লেখা ফকিহরা বৈধ বলেছেন। তবে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে চিঠি, বার্তা বা বাণীর শুরুতে প্রথমে বিসমিল্লাহ লেখা উত্তম।’ (তাফসিরে কুরতুবি, সুরা নমল, আয়াত: ৩০)
আরও পড়ুনদোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫বিসমিল্লাহ’র আগে
ইসলামের প্রথম দিকে রাসুল (সা.) লিখতেন ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা। সুরা নমলে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পূর্ণাঙ্গ বাক্য নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি সেটাই লেখার প্রচলন ঘটান। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পুরোটা ঐতিহাসিক মদিনা সনদেও লেখা হয়েছিল। সমকালীন রাজা-বাদশাহদের কাছে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা চিঠি পাঠিয়েছেন মহানবী (সা.)। হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রেও তিনি পুরো বিসমিল্লাহ লিখতে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অবিশ্বাসীদের আপত্তির কারণে পরে ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ লেখা হয়। (তাফসিরে রুহুল মাআনি; আহকামুল কোরআন)
বিসমিল্লাহ বলার বিধান
‘বিসমিল্লাহ’ বলে সব শুরু করা সুন্নত। ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো, যেকোনো ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা। কোরআনে আছে, ‘আর যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা তোমরা খেয়ো না, কেননা, তা তো অনাচার । আর শয়তান তো তার বন্ধুদের উসকানি দেয় তোমাদের সঙ্গে বিবাদ করতে। যদি তোমরা তাদের কথামতো চল তবে তোমরা তো অংশীবাদী হয়ে যাবে। (সুরা আনআম, আয়াত: ১২১)
রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ওই কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু করা হয়; তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৪০)
রাফি ইবনে খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত, জুল-হুলাইফায় অবস্থানকালীন একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি বাঁশের ধারালো ফলা দিয়ে জবাই করব? রাসুল (সা.) বললেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং (যা জবাই করার সময়) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে; তা আহার করো। (বুখারি, হাদিস: ৩,০৭৫)
আরও পড়ুনকাজের শুরুতে কেন বিসমিল্লাহ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪‘বিসমিল্লাহ’ ভুলে গেলে
ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো, ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া ছাড়া কোনো প্রাণী জবাই করা হলে তা খাওয়া ‘হালাল’ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাওয়া শুরু করে, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। আর যদি সে (খাওয়ার শুরুতে) বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে সে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৭৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫,১০৬)
৭৮৬ মানে কী
প্রথমে মনে রাখতে হবে, ‘৭৮৬’ বিসমিল্লাহর বিকল্প নয়। বিসমিল্লাহ উচ্চারণে কাজে বরকত আসার সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হয়। পাশাপাশি আল্লাহর আদেশ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতও পালন হয়। বিভিন্ন নবী-রাসুলসহ সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা ‘বিসমিল্লাহ’ বলেছেন এবং লিখেছেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর পরিবর্তে অনেকেই ‘৭৮৬’ সংখ্যার ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বলেন, যেহেতু ‘বিসমিল্লাহ’ নির্মিত এবং আরবি বর্ণ ‘বা’, ‘সিন’ ও ‘মিম’-এর সংখ্যা মানের যোগফল ‘৭৮৬’। কিন্তু ইসলামের মূলনীতির আলোকে এ ব্যবহারের কোনো বৈধতা পাওয়া যায় না। তা ছাড়া এর মাধ্যমে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ ও লেখার সওয়াব তো অর্জিত হবেই না । (আহসানুল ফতোয়া)
আরও পড়ুনবিসমিল্লাহ এর ফজিলত০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আল ল হ বল ছ ন প রথম ক রআন ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।