Prothomalo:
2025-05-01@00:14:02 GMT

কেন ‘বিসমিল্লাহ’ বলতে হয়

Published: 12th, April 2025 GMT

‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ বাক্যটির অর্থ, ‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে।’ যে কাজটি আমরা করব, বা করতে চাই, তা যে মহান আল্লাহর নামে সম্পাদন হচ্ছে, এটা বলাই এই বাক্যের উদ্দেশ্য। সুরা তাওবা ছাড়া কোরআনের প্রতিটি সুরার শুরুতে ‘বিসমিল্লাহ’ বা ‘আল্লাহর নামে’ বাক্যটি আছে।

নবী নুহকে (আ.) আল্লাহ জাহাজে ওঠার আদেশ দেন। কোরআনে আছে, তখন ‘তিনি [নুহ] বলেন, এতে ওঠো, আল্লাহর নামে যার গতি ও স্থিতি হয়। আমার প্রতিপালক তো ক্ষমা করেন দয়া করেন।’ (সুরা হুদ, আয়াত: ৪১)।

 প্রথম ‘বিসমিল্লাহ’

চিঠিতে বা বাণীতে প্রথম বিসমিল্লাহ লিখেছেন সুলাইমান (আ.

)। কোরআনে আছে, সাবার রানি বললেন, ‘নিশ্চয় এটা সুলাইমানের কাছ থেকে আসা [চিঠি]। তাতে লেখা, ‘পরম করুণাময় দয়ালু আল্লাহর নামে।’’ (সুরা নমল, আয়াত: ৩০)

আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম কুরতুবি (রহ.) লিখেছেন, ‘এই আয়াতে তিনটি নির্দেশনা রয়েছে। এর একটি হলো, চিঠি বা বার্তায় ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা। আয়াতের ধারাবাহিকতা অনুসারে প্রেরকের নামের পরে বিসমিল্লাহ লেখা ফকিহরা বৈধ বলেছেন। তবে রাসুল (সা.)-এর আদর্শ অনুসরণ করে চিঠি, বার্তা বা বাণীর শুরুতে প্রথমে বিসমিল্লাহ লেখা উত্তম।’ (তাফসিরে কুরতুবি, সুরা নমল, আয়াত: ৩০)

আরও পড়ুনদোয়া কুনুত: বাংলা উচ্চারণ, অর্থ, ফজিলত ও পড়ার নিয়ম১২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

বিসমিল্লাহ’র আগে

ইসলামের প্রথম দিকে রাসুল (সা.) লিখতেন ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা। সুরা নমলে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পূর্ণাঙ্গ বাক্য নাজিল হওয়ার পর থেকে তিনি সেটাই লেখার প্রচলন ঘটান। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ পুরোটা ঐতিহাসিক মদিনা সনদেও লেখা হয়েছিল। সমকালীন রাজা-বাদশাহদের কাছে ‘বিসমিল্লাহ’ লেখা চিঠি পাঠিয়েছেন মহানবী (সা.)। হুদাইবিয়ার সন্ধিপত্রেও তিনি পুরো বিসমিল্লাহ লিখতে আদেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু অবিশ্বাসীদের আপত্তির কারণে পরে ‘বিসমিকাল্লাহুম্মা’ লেখা হয়। (তাফসিরে রুহুল মাআনি; আহকামুল কোরআন)

 বিসমিল্লাহ বলার বিধান

‘বিসমিল্লাহ’ বলে সব শুরু করা সুন্নত। ইসলামি শরিয়তের মূলনীতি হলো, যেকোনো ভালো কাজ ‘বিসমিল্লাহ’ বলে শুরু করা। কোরআনে আছে, ‘আর যাতে আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি তা তোমরা খেয়ো না, কেননা, তা তো অনাচার । আর শয়তান তো তার বন্ধুদের উসকানি দেয় তোমাদের সঙ্গে বিবাদ করতে। যদি তোমরা তাদের কথামতো চল তবে তোমরা তো অংশীবাদী হয়ে যাবে। (সুরা আনআম, আয়াত: ১২১)

রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রত্যেক ওই কথা বা কাজ যা আল্লাহর নাম ছাড়া শুরু করা হয়; তা লেজবিহীন বা অসম্পূর্ণ।’ (আবু দাউদ, হাদিস: ৪,৮৪০)

রাফি ইবনে খাদিজ (রা.) থেকে বর্ণিত, জুল-হুলাইফায় অবস্থানকালীন একটি ঘটনার প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, আমরা রাসুলকে (সা.) জিজ্ঞাসা করলাম, আমরা কি বাঁশের ধারালো ফলা দিয়ে জবাই করব? রাসুল (সা.) বললেন, যা রক্ত প্রবাহিত করে এবং (যা জবাই করার সময়) আল্লাহর নাম উচ্চারণ করা হয়েছে; তা আহার করো। (বুখারি, হাদিস: ৩,০৭৫)

আরও পড়ুনকাজের শুরুতে কেন বিসমিল্লাহ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২৪

‘বিসমিল্লাহ’ ভুলে গেলে

ইসলামি শরিয়তের বিধান হলো, ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া ছাড়া কোনো প্রাণী জবাই করা হলে তা খাওয়া ‘হালাল’ নয়। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যখন তোমাদের কেউ খাওয়া শুরু করে, তখন সে যেন বিসমিল্লাহ বলে। আর যদি সে (খাওয়ার শুরুতে) বিসমিল্লাহ বলতে ভুলে যায় তবে সে যেন বলে, ‘বিসমিল্লাহি আওয়ালাহু ওয়া আখিরাহু’। (আবু দাউদ, হাদিস: ৩,৭৬৭; মুসনাদে আহমাদ, হাদিস: ২৫,১০৬)

৭৮৬ মানে কী

প্রথমে মনে রাখতে হবে, ‘৭৮৬’ বিসমিল্লাহর বিকল্প নয়। বিসমিল্লাহ উচ্চারণে কাজে বরকত আসার সম্ভাবনা ত্বরান্বিত হয়। পাশাপাশি আল্লাহর আদেশ ও রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সুন্নতও পালন হয়। বিভিন্ন নবী-রাসুলসহ সর্বশেষ রাসুল মুহাম্মদ (সা.) এবং তাঁর সাহাবিরা ‘বিসমিল্লাহ’ বলেছেন এবং লিখেছেন। ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’-এর পরিবর্তে অনেকেই ‘৭৮৬’ সংখ্যার ব্যবহার করেন। কেউ কেউ বলেন, যেহেতু ‘বিসমিল্লাহ’ নির্মিত এবং আরবি বর্ণ ‘বা’, ‘সিন’ ও ‘মিম’-এর সংখ্যা মানের যোগফল ‘৭৮৬’। কিন্তু ইসলামের মূলনীতির আলোকে এ ব্যবহারের কোনো বৈধতা পাওয়া যায় না। তা ছাড়া এর মাধ্যমে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ ও লেখার সওয়াব তো অর্জিত হবেই না । (আহসানুল ফতোয়া)

আরও পড়ুনবিসমিল্লাহ এর ফজিলত০৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: আল ল হ বল ছ ন প রথম ক রআন ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

করিডোরের জন্য দু’দেশের সম্মতি লাগবে: জাতিসংঘ 

রাখাইন রাজ্যের বেসামরিক নাগরিকের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠাতে করিডোরের বিষয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের সম্মতি প্রয়োজন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। 

ঢাকার জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারীর কার্যালয় সমকালকে এক বিবৃতিতে জানায়, বাংলাদেশে জাতিসংঘ রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা অব্যাহত রেখেছে। একই সঙ্গে রাখাইনে মানবিক পরিস্থিতির অবনতি নিয়েও উদ্বিগ্ন তারা।

জাতিসংঘ অন্য অংশীদারকে সঙ্গে নিয়ে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়দাতা হিসেবে বাংলাদেশের প্রতি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সমর্থন জোরদার করবে। বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমার সীমান্ত পেরিয়ে যে কোনো মানবিক সহায়তা বা সরবরাহের জন্য প্রথমে দুই সরকারের মধ্যে সম্মতি প্রয়োজন। সীমান্ত অতিক্রম করে সহায়তা দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের সংশ্লিষ্ট সরকারগুলোর অনুমতি নেওয়ার আইনি বাধ্যবাধকতা রয়েছে। এটি ছাড়া জাতিসংঘের সরাসরি ভূমিকা সীমিত।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গত রোববার এক ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেছিলেন, ‘নীতিগতভাবে আমরা রাখাইন রাজ্যে মানবিক করিডোরের ব্যাপারে সম্মত। কারণ এটি একটি মানবিক সহায়তা সরবরাহের পথ হবে। তবে আমাদের কিছু শর্ত আছে। সেই শর্ত যদি পালন করা হয়, অবশ্যই আমরা জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে সহযোগিতা করব।’ 

এ খবর চাউর হলে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়। সরকারের এমন সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নের শঙ্কা করছে রাজনৈতিক দলগুলো। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা ছাড়া সরকার কীভাবে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

তথাকথিত মানবিক করিডোর স্থাপন নিয়ে জাতিসংঘ বা অন্য কারও সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের আলোচনা হয়নি বলে দাবি করছেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম।

গত অক্টোবরে জাতিসংঘের উন্নয়ন প্রকল্প (ইউএনডিপি) রাখাইন পরিস্থিতি নিয়ে ১২ পাতার একটি প্রতিবেদন তৈরি করে। প্রতিবেদনে রাখাইনের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির অবনতির কথা উল্লেখ করা হয়। রাখাইনের পণ্য প্রবেশের জন্য আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ সীমান্ত বন্ধ রয়েছে, আয়ের কোনো উৎস নেই। ভয়াবহ মূল্যস্থিতি, অভ্যন্তরীণ খাদ্য উৎপাদনে ধস, জরুরি সেবা এবং সামাজিক সুরক্ষায় ঘাটতি দেখা দিয়েছে। কয়েক মাসের মধ্যে সেখানে ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা করছে জাতিসংঘ। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ