যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপের পাল্টা জবাব দিয়েছে চীন। এবার তারাও মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্কের ঘোষণা দিয়েছে। আজ শনিবার থেকে এ সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে। গত বুধবার তারা মার্কিন পণ্যে ৮৪ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছিল। এর পরপরই যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক বাড়িয়ে ১২৫ শতাংশ করে। পাশাপাশি আগের আরোপিত ২০ শতাংশ মিলিয়ে চীনের পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে প্রায় ১৪৫ শতাংশ শুল্কের মুখোমুখি হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ আরও প্রকট হয়ে উঠল। 

যুক্তরাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিচ্ছে, চীন তার পাল্টা পদক্ষেপই নিচ্ছে বারবার। তবে চীন এটাও বলেছে, এর পর যুক্তরাষ্ট্র আবার পাল্টা শুল্ক দিলে তারা আর ‘সাড়া দেবে না’। বিশ্বের বৃহত্তম দুই অর্থনীতির মধ্যকার এ বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে বিশ্বজুড়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে। এর প্রভাবে গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও এশিয়ার পুঁজিবাজারগুলোর সূচকে আবারও পতন হয়। 
বেইজিং বলেছে, ওয়াশিংটনের আরোপিত অস্বাভাবিক উচ্চ শুল্ক আরোপের বিষয়টি আন্তর্জাতিক ও অর্থনৈতিক বাণিজ্যের নিয়মনীতি, মৌলিক অর্থনৈতিক আইন ও সাধারণ জ্ঞানকে গুরুতরভাবে লঙ্ঘন করছে। এটি সম্পূর্ণ একতরফা হুমকি-ধমকি ও জবরদস্তি। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেন, যুক্তরাষ্ট্রে চীনের পণ্য রপ্তানির ওপর আরোপিত শুল্ক অর্থনীতিতে বাস্তবিক কোনো তাৎপর্য ছাড়াই একটি সংখ্যার খেলায় পরিণত হয়েছে। বারবার শুল্ক বৃদ্ধি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের ‘গুন্ডামি ও জবরদস্তি’কে আরও উন্মোচিত করবে। এটি রসিকতায় পরিণত হবে। 

মাত্র এক সপ্তাহ আগেও চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ছিল ২০ শতাংশ। সেটা এখন বেড়ে ১৪৫ শতাংশে পৌঁছেছে। এরই মধ্যে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) কাছে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে আরেকটি অভিযোগ দিয়েছে চীন। প্রশ্ন তৈরি হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধ চীনের জনগণকে কীভাবে প্রভাবিত করছে? বিবিসির সাংবাদিক স্টিফেন ম্যাকডোনেল বলেন, চীনের ক্রেতাদের স্থানীয় ব্র্যান্ড কেনার জন্য উৎসাহিত করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ অব্যাহত থাকায় বেইজিং এখনও অনিশ্চিত পরিস্থিতিতে রয়েছে।

চীনের শুল্ক আরোপের ঘোষণার পর যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পুঁজিবাজারগুলোয় ফের পতন হয়েছে। প্রারম্ভিক লেনদেন সামান্য বাড়ার পর প্রধান পুঁজিবাজারগুলোর সূচক এখন নিম্নমুখী। পতনশীল বাজারে বিনিয়োগকারীরা মনে করছেন, বেশির ভাগ কোম্পানি মুনাফা হারাচ্ছে। তারা বিশ্বাস করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপের প্রবণতা পণ্যের চাহিদা কমিয়ে দেবে ও দাম বাড়িয়ে দেবে। এ ছাড়া ডলারের দাম তিন বছরের মধ্যে সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছে। অর্থনৈতিক অনিশ্চতায় স্বর্ণের দাম সর্বকালের সর্বোচ্চে উঠে গেছে। 
এদিকে বেইজিং-ওয়াশিংটনের চলমান শুল্কযুদ্ধ নিয়ে প্রথম মুখ খুললেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। শুক্রবার তিনি বেইজিং সফররত স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে বৈঠক করেন। সেখানে তিনি বলেন, শুল্ক যুদ্ধে কেউ জয়ী হবে না। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অনুরোধ করেন চীনের সঙ্গে হাত মেলাতে, যেন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ মোকাবিলা করা যায়।
শিকে উদ্ধৃত করে চীনের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সিনহুয়া জানায়, চীন ও ইউরোপের উচিত যৌথভাবে আন্তর্জাতিক দায়িত্ব পালন করা এবং একতরফা দমনমূলক নীতির বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া। এতে কেবল নিজেদের বৈধ অধিকার রক্ষা হবে না, বরং বৈশ্বিক ন্যায্যতা ও সুবিচারও রক্ষা পাবে।

একই সময় হোয়াইট হাউসে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বলেন, আমি প্রেসিডেন্ট জিনপিংকে ভালো করেই চিনি। তিনি নিজের দেশের জন্য নিবেদিতপ্রাণ। আমি নিশ্চিত, আমরা একটা চুক্তিতে পৌঁছাতে পারব। এ চুক্তি কেবল যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের জন্য নয়, বরং সারাবিশ্বের জন্য ভালো কিছু বয়ে আনবে।
শুল্কযুদ্ধের আবহে প্রতিবেশীদের সঙ্গে সম্পর্ক জোরদার করতে মনোযোগ দিয়েছে বেইজিং। এর অংশ হিসেবে আগামী সপ্তাহে ভিয়েতনাম, মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়া সফর করবেন চীনের প্রেসিডেন্ট। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, সোমবার ভিয়েতনাম দিয়ে এ সফর শুরু করবেন শি জিনপিং। এর পর মঙ্গল থেকে শুক্রবার পর্যন্ত মালয়েশিয়া ও কম্বোডিয়ায় অবস্থান করবেন। চলতি বছর জিনপিংয়ের প্রথম বিদেশ সফর হতে যাচ্ছে এটি। 

 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র র জন য ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ঢাকায় অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে শনিবার

ঢাকায় দুই দিনব্যাপী অটোমোবাইল ও কৃষি যন্ত্রপাতির প্রদর্শনী শুরু হচ্ছে আগামী শনিবার। এতে অটোমোবাইল, কৃষি যন্ত্রপাতিসহ হালকা প্রকৌশল খাতের ২৬টি স্টল থাকবে। পাশাপাশি শিল্পের সহায়ক প্রতিষ্ঠানের স্টল থাকবে আরও ১২টি। প্রদর্শনীর উদ্বোধন করবেন শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

বাংলাদেশ অটোমোবাইলস অ্যাসেম্বলার্স অ্যান্ড ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন ও অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সহযোগিতায় এই প্রদর্শনীর আয়োজন করছে বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ (বিসিআই)। ঢাকার তেজগাঁও শিল্প এলাকায় এডিসন প্রাইম ভবনের ছাদে এই প্রদর্শনী অনুষ্ঠিত হবে। এই ভবনেই বিসিআইয়ের কার্যালয় অবস্থিত।

আজ বৃহস্পতিবার বিসিআই কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনব্যাপী এই প্রদর্শনী নিয়ে বিস্তারিত জানান চেম্বারটির সভাপতি আনোয়ার-উল আলম চৌধুরী। আরও উপস্থিত ছিলেন অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী, বিসিআইয়ের পরিচালক মো. শাহেদ আলম, এস এম শাহ আলম, জিয়া হায়দার প্রমুখ।

বিসিআইয়ের সভাপতি বলেন, হালকা প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশে বর্তমানে ছোটবড় প্রায় ৫০ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে। এই খাতে কাজ করেন ১০ লাখ মানুষ। হালকা প্রকৌশল খাতে স্থানীয় বাজার ১২ বিলিয়ন ডলারের হলেও দেশীয় উৎপাদকেরা অর্ধেক পূরণ করতে পারছেন। তা ছাড়া হালকা প্রকৌশল খাতের বৈশ্বিক বাজারের আকার প্রায় ৮ ট্রিলিয়ন ডলার। তিনি আরও বলেন, তৈরি পোশাক খাত আর বেশি মূল্য সংযোজন করতে পারবে না। ফলে আমাদের অর্থনীতিকে টেকসই করতে হলে আমাদের অন্য খাতে যেতে হবে। সে ক্ষেত্রে হালকা প্রকৌশল খাত পারে বড় সম্ভাবনার।

অ্যাগ্রিকালচার মেশিনারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের সভাপতি আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, প্রতিবছর কৃষিজমি কমছে। কৃষকের বয়স বাড়ছে, তার কারণ তরুণেরা খুব কম কৃষিকাজে আসছেন। বিশ্বের অনেক দেশেই মোট জনগোষ্ঠীর ১০ শতাংশের কম কৃষিকাজে নিয়োজিত। ১০ শতাংশ মানুষ বাকি ৯০ শতাংশের জন্য খাদ্য জোগান দিচ্ছে। সে কারণে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। বাংলাদেশেও কৃষিকাজে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। তবে বড় অংশই আমদানি করতে হচ্ছে।

আলিমুল আহসান চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে ১২০০ থেকে ১৫০০ কোটি টাকার কৃষি যন্ত্রপাতির বাজার আছে। তার মধ্যে দেশীয় কোম্পানিগুলো সরবরাহ করছে মাত্র ৪০০ থেকে ৪৫০ কোটি টাকার যন্ত্রাংশ। নীতিসহায়তা পেলে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর সক্ষমতা বাড়বে বলে মন্তব্য করেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ