বাংলা নববর্ষ পয়লা বৈশাখকে সামনে রেখে ব্যস্ততা বেড়েছে হবিগঞ্জের মৃৎশিল্পীদের। দিন-রাত কঠোর পরিশ্রম করে তৈরি করা মাটির খেলনা, পুতুল ও ব্যাংকসহ নানান জিনিসপত্র আগুনে পুড়িয়ে ও রংতুলির আঁচড় শেষে বৈশাখী মেলায় তোলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছেন শিল্পীরা।

জেলার শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার সুরাবই গ্রামে পালপাড়ায় গিয়ে দেখা যায়- বাড়ির সামনে সারিবদ্ধভাবে সাজানো রয়েছে মাটি দিয়ে তৈরি হাঁড়ি-পাতিল, ব্যাংক, কলস, দইয়ের কাপ ও সরাসহ বিভিন্ন ধরনের সামগ্রী। এসব জিনিসপত্র তৈরি করার পর তা রোদে শুকানো হচ্ছে। আবার কেউ কেউ রংতুলির আঁচড় দিচ্ছেন। 

পালপাড়ার ছোট-বড় ছেলেমেয়ে সবাই উৎসবের মতো করে এ কাজটি চালিয়ে যাচ্ছেন। ছোট ছোট শিশুরাও তাদের বাবা-মায়েদের এই কাজে সহযোগীতা করছে।

শিল্পীরা বলছেন, পয়লা বৈশাখকে সামনে রেখে তারা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। বছরের এই সময়টাতেই তাদের ভালো আয় রোজগার হয়।

স্থানীয়রা জানান, বাজারে প্লাস্টিক পণ্যের ছড়াছড়ির কারণে এক সময়ে গ্রামগঞ্জের জনপ্রিয় মাটির তৈরি জিনিসপত্র এখন তাদের ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। এ কারণে মৃৎশিল্পীদের আগের সুদিন নেই। পালপাড়ায় একসময় এই পেশার সঙ্গে ৫০টিরও অধিক পরিবার জড়িত ছিল। কিন্তু কালের বিবর্তনে এখন মাত্র ১০ থেকে ১৫টি পরিবার এই পেশার সঙ্গে জড়িত রয়েছে। উপকরণের দাম বাড়ায় এ কাজে আগ্রহ হারাচ্ছেন অনেকেই। ঐতিহ্যবাহী এ শিল্পটিকে টিকিয়ে রাখতে সরকারের সহযোগিতা কামনা করেন তারা।

পালপাড়ার বাসিন্দা শিক্ষার্থী অনন্যা রানী পাল জানান, এটা আমাদের পূর্বপুরুষের ঐতিহ্য। পড়ালেখার পাশাপাশি তিনি মা-বাবাকে এই কাজে সহযোগিতা করেন। কারণ, এই মাটির জিনিসপত্র বিক্রি করেই তার পড়ালেখাসহ সংসারের খরচ চলে।

রনজিত পাল নামে এক মৃৎশিল্পী বলেন, “এ পেশায় এখন টিকে থাকা মুশকিল। সরকার সহযোগিতা না করলেই অচিরেই এই পেশা থেকে নতুন প্রজন্ম মুখ ফিরিয়ে নেবে। ইতোমধ্যে অনেকেই এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে। আমরা যারা এই পেশায় রয়েছি, খুব কষ্টে আছি। আমাদের সহযোগিতা প্রয়োজন।”

হবিগঞ্জ বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক মো.

বিল্লাল হোসেন ভূঁইয়া বলেন, “মৃৎশিল্প গ্রামবাংলার ঐতিহ্যের একটি অংশ। মাটির তৈরি এসব জিনিসপত্র আধুনিকায়নে এবং মৃৎশিল্পীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি ঋণ প্রদানসহ সার্বিক সহযোগিতা করার চেষ্টা করা হবে।”

ঢাকা/মামুন/এস

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর জ ন সপত র সহয গ ত এই প শ

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ