‘তোরা আঁর বুকের ধনরে হিরাই আনি দে’
Published: 12th, April 2025 GMT
জমিতে মাটি কাটার কাজ চলছিল। ছেলে আশরাফুলকে (১২) নিয়ে সেই কাজ তদারকি করতে গিয়েছিলেন মনির হোসেন। কাজের ফাঁকে পরিশ্রান্ত শ্রমিকদের নাশতা এগিয়ে দিতে যায় আশরাফুল। আর তখন হঠাৎ মাটি নিতে আসা পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে সে। সেখান থেকে আর উঠে দাঁড়াতে পারেনি। বাবা মনির হোসেনের চোখের সামনেই মুহূর্তের মধ্যে নিথর হয়ে পড়ে আশরাফুলের দেহ। পরে স্থানীয় লোকজন উদ্ধার করে স্থানীয় এক পল্লিচিকিৎসকের কাছে নিয়ে গেলে তিনি তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ঘটনাটি গতকাল শুক্রবার দিবাগত রাত একটার দিকে নোয়াখালীর চাটখিল উপজেলার মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের মোহাম্মদপুর সড়কের পাশে পরানপুর এলাকায়। নিহত আশরাফুল মোহাম্মদপুর ইউনিয়নের জনতা বাজার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণির ছাত্র ছিল। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে আশরাফুল ছিল সবার বড়। খবর পেয়ে চাটখিল থানার পুলিশ রাতেই নিহত শিশুর লাশ উদ্ধার করে থানায় নিয়ে যায়। পরে লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য আজ শনিবার সকালে ২৫০ শয্যার নোয়াখালী জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।
ছেলের মৃত্যুর খবর শোনার পর থেকে আহাজারি করতে করতে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা কোহিনুর বেগম। ছেলের জন্য বিলাপ করে তিনি বলেন, ‘আঁর আশরাফুল কই? তোরা আঁর বুকের ধনরে আঁর বুকে হিরাই আনি দে। আঁর মানিকেরে যে কিল্লাই আঁই হিগার বাপের লগে যাইতে দিলাম। আঁর মানিকেরে ছাড়া আঁই কেন্নে থাকুম। ও আল্লাহ কেন আঁর বুক এইভাবে খালি করি দিল গো।’ কোহিনুরের বিলাপে কাঁদেন প্রতিবেশীরাও।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, রাতে জমির মাটি কাটার কাজ তদারকি করতে গিয়েছিলেন মনির হোসেন। সঙ্গে ছেলেকে নিয়ে যান তিনি। আর তখনই দুর্ঘটনাটি ঘটে।
আশরাফুলের স্বজন ইউপি সদস্য মো.
হাতিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ফিরোজ উদ্দিন চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, মাটিবাহী পিকআপ ভ্যানের ধাক্কা লেগে শিশু আশরাফুল মারা গেছে। তাঁরা খবর পেয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠিয়েছেন। এ ঘটনায় পরিবারের অভিযোগের আলোকে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: মন র হ স ন আশর ফ ল
এছাড়াও পড়ুন:
প্রতিষ্ঠার দেড় যুগ পর ইতিহাসের সাক্ষী হতে যাচ্ছে বেরোবি
বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ব্রাকসু) নিয়ে অপেক্ষার প্রহর শেষ হতে চলেছে শিক্ষার্থীদের। গত ২৮ অক্টোবর রাষ্ট্রপতির অনুমোদনের মাধ্যমে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদের গেজেট প্রকাশ হয়ছে গঠনতন্ত্র।
এরই মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার ১৭ বছর পর হতে যাচ্ছে কাঙিক্ষত কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ তথা ব্যাকসু নির্বাচন। তবে এর জন্য আমরণ অনশন থেকে শুরু করে সব ধরনের কর্মসুচিই পালন করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।
আরো পড়ুন:
‘আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক নির্বাচন করতে চাই’
বেরোবিতে শহীদ আবু সাঈদ স্মৃতিস্তম্ভের মডেল প্রদর্শন
জুলাই অভ্যুত্থান পর গণরুম ও গেস্ট রুমের যে সাংস্কৃতি ছিল, তা এখন বন্ধ হয়েছে। কোনো রাজনৈতিক দলের কমকাণ্ডে সামিল হওয়াও বাধ্যতামুলক নয়।
তাই শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এ ছাত্র সংসদ। যাতে শিক্ষার্থীদের অধিকার ও স্বার্থ সুরক্ষিত হবে।
কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ বেরোবির বিধিমালা অনুযায়ী, ১৩টি পদে সরাসরি নির্বাচন ও হল সংসদে নয়টি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যাতে শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিনিধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে সব ধরনের কথা তুলে ধরতে পারবেন।
পরিসংখ্যান বিভাগের শিক্ষার্থী শেখর রায় বলেন, “সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও লেজুরবিত্তিক রাজনীতি ব্যতীত একটি নির্বাচন হোক। যোগ্য, আদর্শ, উত্তম চরিত্র ও মনের প্রার্থী বিজয়ী হোক। নির্বাচিত হয়ে তারা হয়ে উঠুক বেরোবির একেকজন যোগ্য প্রতিনিধি। তারা ন্যায়ের পক্ষে থাকুক । তাদের হাত ধরেই এগিয়ে যাক বেরোবি।”
গণিত বিভাগের শিক্ষার্থী জাওয়াদ সাজিদ বলেন, “ছাত্র সংসদ শিক্ষার্থীদের দাবি, অধিকার ও স্বার্থ রক্ষার প্রধান মঞ্চ। এটি প্রশাসন ও শিক্ষার্থীদের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করে, যাতে প্রতিটি শিক্ষার্থীর কণ্ঠ পৌঁছে যায় সিদ্ধান্ত গ্রহণের টেবিলে। কিন্তু এজন্য সংসদকে দলীয় প্রভাবমুক্ত, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হতে হবে। প্রকৃত অর্থে ছাত্র সংসদ তখনই সফল, যখন তা শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি হয়ে তাদের সমস্যার সমাধান ও কল্যাণে কাজ করে।”
অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী আতিকুর রহমান বলেন, “আমরা এমন ছাত্র সংসদ চাই, যেখানে যোগ্য নেতৃত্ব আসবে এবং সব শিক্ষার্থীর সমস্যা সমাধানের হাতিয়ার হয়ে কাজ করবে। সবমিলিয়ে সবার বিশ্বস্ত জায়গা হবে এই ছাত্র সংসদ।”
ঢাকা/সাজ্জাদ/মেহেদী