ময়মনসিংহের নান্দাইলে কৌশলে নিলাম দেখিয়ে বিদ্যালয়ের টিনের ঘর বিক্রির অভিযোগ উঠেছে। একই বিদ্যালয়ের বিদায়ী প্রধান শিক্ষক নিজের লোক দিয়ে সেই ঘর কিনিয়ে নেন। এর পর সেই ঘর তিনি কিনে নিজ বাড়িতে স্থাপন করছেন। এলাকাবাসীর কাছে এমন অভিযোগ পেয়ে গতকাল রোববার সরেজমিনও সত্যতা মিলেছে। 
উপজেলার জাহাঙ্গীরপুর ইউনিয়নের কিছমত বনগ্রামে অবস্থিত আব্দুল হোসেন উচ্চ বিদ্যালয়ে ঘটেছে এ ঘটনা। স্থানীয় সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালে স্থাপিত বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাকালীন প্রধান শিক্ষক একই এলাকার বাসিন্দা এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া রতন। তিনি কিছু দিনের মধ্যেই অবসরে যাবেন। নিয়ম অনুযায়ী, ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক হওয়ার কথা জ্যেষ্ঠ শিক্ষক এমদাদুল হকের। কিন্তু রতন ভূঁইয়া কৌশলে ৩১ মার্চ এই দায়িত্ব দিয়েছেন তাঁরই স্ত্রী শামছুন্নাহারকে। 
এরই মধ্যে সম্প্রতি বিদ্যালয়ের সিমেন্টের পিলারের ওপর স্থাপিত ৬৪ হাত লম্বা টিনের চাল ও বেড়াবিশিষ্ট একটি ঘর ভেঙে নিজের বাড়িতে নিয়ে যান রতন ভূঁইয়া। এ জন্য লোক-দেখানো নিলামও ডাকা হয়। রোববার সরেজমিন বিদ্যালয়ের ওই ঘরের টিনের চাল, বেড়া ও অন্যান্য উপকরণ প্রধান শিক্ষক রতন ভূঁইয়ার ভিটার আশপাশে জড়ো করে রাখতে দেখা যায়। এসব দিয়েই তিনি নিজের পুরোনো বাড়ির কাছাকাছি নতুন বাড়িতে লম্বালম্বি দোচালা ঘর তৈরি করেছেন।
ঘরটি নিলামে বিক্রির বিষয়ে জানতে চাইলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাবেক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) অরুণ কৃষ্ণ পালের সই করা একটি রেজুলেশন দেখান। এতে ঘর বিক্রির সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে বলে দেখা যায়। কিন্তু জানা গেছে, অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক আজিজুল হক ও প্রধান শিক্ষক এনায়েত হোসেন বর্তমান ইউএনও বা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে না জানিয়েই লোক-দেখানো নিলামের আয়োজন করেন। স্বল্পদামে ঘরটি নিলামে কেনা এক ব্যক্তির কাছ থেকে কিনে নেন প্রধান শিক্ষক রতন ভূঁইয়া। ঘর বিক্রির টাকা কোথায় আছে জানতে চাইলে তিনি দাবি করেন, ওই টাকা বিদ্যালয়ের তহবিলে জমা দেওয়া হয়েছে।
নিলামে ঘরটি ৩২ হাজার টাকায় কিনে নেওয়া হয় হিমেল মিয়ার নামে। তাঁর ভাষ্য, বৈধতা দেখানোর জন্য প্রধান শিক্ষক কাগজে-কলমে লিখে রেখেছেন। তবে কবে-কখন নিলাম হয়েছে, সেটা তাঁকে জানানো হয়নি।
এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষক এনায়েত হোসেন ভূঁইয়া রতন বলেন, ২৭ মার্চ বিদ্যালয়ের টিনের ঘরটি নিলামে তোলা হয়। সর্বোচ্চ ডাককারী হিমেল মিয়া ৩২ হাজার টাকায় ঘরটি পান। পরে তিনি ৫০ হাজার টাকায় হিমেলের কাছ থেকে ঘরটি কিনেছেন। এতে দোষের কিছু দেখছেন না। নিলামের কাগজপত্র বিষয়ে তিনি বলেন, হিমেল তাঁর নিজের লোক। যে কোনো সময় চাইলে কাগজ করে দিতে পারবেন।
বিদ্যালয়ের অ্যাডহক কমিটির আহ্বায়ক আজিজুল হকের ভাষ্য, সবকিছুই নিয়মের মধ্যে করেছেন বলে প্রধান শিক্ষক তাঁকে জানিয়েছেন। এর বেশি কিছু জানেন না।
নান্দাইলের ইউএনও সারমিনা সাত্তার রোববার বিকেলে সমকালকে বলেন, বিষয়টি তাঁর জানা নেই, খতিয়ে দেখবেন।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ঘর ত র রতন ভ

এছাড়াও পড়ুন:

আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা

রাজশাহীর বাগমারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে (ইউএনও) ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা দিয়ে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।

মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টায় উপজেলার তাহেরপুর পৌরসভার হরিতলা মোড়ে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে ইউএনওর অপসারণের দাবি জানানো হয়।

এলাকার সচেতন নাগরিক, ব্যবসায়ী মহল, অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী, কর্মচারী-শিক্ষকমণ্ডলীর ব্যানারে এ মানববন্ধন করা হয়। এতে এলাকাবাসী ছাড়া তাহেরপুর কলেজের অধিকাংশ শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। মানববন্ধন থেকে কলেজের সম্পত্তি অন্যত্র ইজারা দেওয়ার চেষ্টার প্রতিবাদ জানানো হয়।

তাহেরপুর পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মাহাবুর রহমানকে সঙ্গে নিয়ে মানববন্ধন করা হয়। পৌরসভার নির্মিত দোকানঘর থেকে তাহেরপুর কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ায় এ কর্মসূচি পালন করা হয় বলে অভিযোগ। আওয়ামী লীগের নেতার দাবি, তিনি দলীয় পরিচয়ে নয়, কলেজশিক্ষক হিসেবে মানববন্ধনে যোগ দিয়েছেন। তবে ব্যানারে ফ্যাসিবাদ শব্দটি প্রথমে দেখেননি। পরে দেখেছেন।

মানববন্ধনে তাহেরপুর কলেজের শিক্ষক রইচ আহমেদ, সুরাইয়া আক্তার, তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর ইসমাইল হোসেন প্রমুখ বক্তব্য দেন। বক্তারা বাগমারার ইউএনওকে ফ্যাসিবাদের দোসর ও চব্বিশের চেতনাবিরোধী অভিযোগ তুলে তাঁদের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেওয়ার নিন্দা জানান।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তাহেরপুর কলেজ–সংলগ্ন স্থানে পৌর কর্তৃপক্ষ দোকানঘর নির্মাণ করেছে। পৌরসভার পক্ষে নিয়মিত ভাড়া আদায় করা হয় ওই প্রতিষ্ঠান থেকে। ৫ আগস্টের পর থেকে কলেজের পক্ষ থেকে ৪১টি দোকানঘর নিয়ন্ত্রণে নিয়ে সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করা হয়।

পৌরসভার প্রশাসক হিসেবে বাগমারার ইউএনও দোকানঘর থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষের ভাড়া আদায় বন্ধ করে দেন। দোকানঘরগুলো পৌরসভার হওয়ায় তারাই সেখান থেকে ভাড়া আদায় করবে বলে জানানো হয়। সেখান থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ আর ভাডা আদায় করবে না জানিয়ে ২২ এপ্রিল পৌরসভার প্রশাসককে লিখিতভাবে জানান কলেজের অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম। এর পর থেকে কর্তৃপক্ষ ইউএনওর ওপর ক্ষুব্ধ হয়।

তাহেরপুর কলেজের সহকারী অধ্যাপক সুরাইয়া আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, কলেজের জায়গায় তাহেরপুর পৌরসভার সাবেক মেয়ব ও সাবেক সংসদ সদস্য আবুল কালাম আজাদ দোকানঘর নির্মাণ করে মোটা অঙ্কের টাকায় ভাড়া দেন। ৫ আগস্টের পর তাঁরা (কলেজ কর্তৃপক্ষ) সেগুলো নিয়ন্ত্রণে নেন। তবে ২২ এপ্রিল ইউএনও সাদা কাগজে কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছ থেকে ভাড়া আদায় বিষয়ে একটি লিখিত নিয়েছেন। এর প্রতিবাদে মূলত তাঁদের এই কর্মসূচি।

পৌরসভার দোকানঘর থেকে কেন পৌরসভা ভাড়া আদায় করবে না জানতে চাইলে সুরাইয়া আক্তার বলেন, ‘জায়গাগুলো কলেজের ছিল।’ ব্যানারে ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে বক্তব্য রাখা হলেও কেন আওয়ামী লীগের নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করলেন, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘কলেজের স্বার্থে আমরা এক।’

জানতে চাইলে ইউএনও মাহাবুবুল ইসলাম বলেন, দোকানগুলো তাহেরপুর পৌরসভার। সেগুলো থেকে ভাড়া আদায় করে পৌরসভার কোষাগারে জমা করা হয়। তিনি প্রশাসক হিসেবে ভাড়া আদায়ের উদ্যোগ নিয়েছেন। কলেজের অধ্যক্ষ নিজেই জানিয়েছেন, এখন থেকে কলেজ কর্তৃপক্ষ ভাড়া আদায় করবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় রাতে ‘টর্চলাইট জ্বালিয়ে’ দুই পক্ষের সংঘর্ষ, ইউএনও-ওসিসহ আহত ৩০
  • পড়াশোনায় ফিরছেন দিনাজপুরের ‘ইংলিশম্যান’ হৃদয়, শেখাবেন ইংরেজি
  • আ.লীগ নেতাকে নিয়ে মানববন্ধন করে ইউএনওকে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ আখ্যা
  • নারায়ণগঞ্জে ৩০ স্কুলে চালু হলো ‌‘মিড ডে মিল’
  • গাজীপুরে ১০ মাটি খেকোকে কারাদণ্ড
  • পাঠাগার থেকে লুট হওয়া বই ফেরত পেলো কর্তৃপক্ষ
  • দমদমিয়া আলোর পাঠশালায় গিয়ে শিক্ষার্থীদের খোঁজখবর নিলেন ইউএনও