কাজির আগে হাজির ইউএনও, বন্ধ হলো স্কুলছাত্রীর বিয়ে
Published: 28th, July 2025 GMT
বাড়ির উঠানে প্যান্ডেল, রান্নার গন্ধে ম–ম করছে চারপাশ। আত্মীয়স্বজনের আসা-যাওয়া আর গানের সুরে জমে উঠেছিল বিয়েবাড়ি। এমন সময় বিয়েবাড়িতে হাজির উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)। তিনি বন্ধ করে দেন বাল্যবিবাহ। জরিমানা ও মেয়ের বাবার মুচলেকা নেওয়া হয়।
রংপুরের তারাগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়ারকুঠি ইউনিয়নের একটি গ্রামে গতকাল রোববার রাতে সাড়ে ১১টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামে এক স্কুলছাত্রীর (১৪) বিয়ের আয়োজন করা হয়েছিল। খবর পেয়ে গতকাল রাতে ওই বাড়িতে যান ইউএনও রুবেল রানা। এ সময় বাড়ির লোকজন পালিয়ে যান। পরে ইউএনওর কাছে এসে মেয়ের বাবা বাল্যবিবাহের আয়োজন করার কথা স্বীকার করেন। এ সময় ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে মেয়ের বাবাকে ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়। এ ছাড়া ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা নেওয়া হয়।
ইউএনও রুবেল রানা বলেন, ‘বাল্যবিবাহ একটি শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এর মাধ্যমে কিশোরীদের ভবিষ্যৎ চিরতরে অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়। গোপনে খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক সেখানে অভিযান চালাই। গ্রামবাসী ও জনপ্রতিনিধিদের সহযোগিতায় বাল্যবিবাহ বন্ধ করা হয়। এ সময় ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয় এবং ১৮ বছরের আগে মেয়েকে বিয়ে না দেওয়ার মুচলেকা দেন মেয়ের বাবা।’
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
‘লাল পরি’ হয়ে ঘরে ফিরল হারিয়ে যাওয়া শিশুটি
ঠিকমতো চোখে দেখে না আট বছরের শিশু মরিয়ম। মাদ্রাসা থেকে ঘরে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় সে। নানা ঘটনাচক্রে একসময় পৌঁছায় কক্সবাজার সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তার ( ইউএনও) কার্যালয়ে। পরে ইউএনওর সহায়তায় ঘরে ফিরেছে শিশুটি। ঘরে ফেরার আগে তার ‘লাল পরি’ সাজার ইচ্ছাপূরণও হয়েছে।
শিশু মরিয়মের বাড়ি কক্সবাজারের ঈদগাঁও উপজেলায় পূর্ব পোকখালী চরপাড়া গ্রামে তার বাড়ি। সেখানেই একটি মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। গত বুধবার মাদ্রাসা ছুটির পর মায়ের জন্য অপেক্ষায় ছিল সে। তবে বাড়ি পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে এক ব্যক্তি তাকে গাড়িতে তুলে নিয়ে যায় কক্সবাজার সদরে।
ইউএনও কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মরিয়ম কক্সবাজার পৌরসভার কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় চোখেমুখে ভয় আর আতঙ্কের ছাপ নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিল। কৌতূহলী এক পথচারী কথা বলে তার নিখোঁজ হওয়ার বিষয়টি জানতে পারেন। ওই পথচারী মরিয়মকে নিয়ে যান তিন কিলোমিটার দূরে উপজেলা পরিষদের কার্যালয়ে। সেখান থেকে এক আনসার সদস্য মরিয়মকে ইউএনও কার্যালয়ে নিয়ে আসেন।
ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী এ সময় শিশু মরিয়মের সঙ্গে কথা বলে তার বিস্তারিত ঠিকানা জানার চেষ্টা করেন। শিশুটি কেবল তার বাড়ি ঈদগাঁওয়ের পোকখালী এতটুকুই বলতে পারছিল। পরে ঈদগাঁওয়ের ইউএনওর মাধ্যমে শিশুটির বাড়ির ঠিকানা নিশ্চিত হওয়া যায়।
কাপড় কিনে দেওয়ার সময় মরিয়ম বলল, সে লাল পরি সেজে বাড়ি ফিরবে। তাকে লাল জামা, লাল চুড়ি, লাল লিপস্টিক ও লাল ওড়না দিয়ে লাল পরি সাজানো হয়। নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী, ইউএনও, কক্সবাজার সদর উপজেলাশিশুটি প্রথমে পাচারকারীদের খপ্পরে পড়েছিল বলে সন্দেহ ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিনের। তিনি বলেন, আলাপে শিশুটি জানায়, সে তার তিন-চার বছর বয়স পর্যন্ত ভালোভাবেই চোখে দেখত। এরপর থেকে ক্রমে তাঁর চোখের আলো ঝাপসা হতে শুরু করে। এখন সে তেমন দেখতে পায় না। তার বাবা মারা গেছেন। মা ও বড় ভাই অন্ধ। পরিবারে অষ্টম শ্রেণিপড়ুয়া একটি বোন আছে, সে–ই কেবল চোখে দেখতে পায়। ঘরের কাজ সব বোনই সামলায়। তাদের পরিবার থাকে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের ঘরে।
শিশুটির কাছ থেকে চোখের বিষয়টি জেনে তাকে কক্সবাজার শহরের পানবাজার এলাকার কমিউনিটি চক্ষু হাসপাতালে নেওয়া হয় বলে জানান ইউএনও। তিনি বলেন, ‘শিশুটির সঙ্গে কথা বলে মনে হলো তার চোখের সমস্যা এত জটিল না। হাসপাতালে নেওয়ার পর চক্ষুবিশেষজ্ঞ চিকিৎসক বিমল চৌধুরী তার চোখের পরীক্ষা করেন। এরপর বিনা মূল্যে শিশু মরিয়মকে চশমা ও এক মাসের ওষুধ কিনে দেওয়া হয়। চশমা চোখে দিয়ে সে জানিয়েছে, আগের চেয়ে অনেক ভালো দেখতে পাচ্ছে।’
শিশুটিকে মায়ের হাতে তুলে দেন কক্সবাজার সদরের ইউএনও নিলুফা ইয়াছমিন চৌধুরী