বর্ষবরণে নারায়ণগঞ্জে বর্ণিল বৈশাখী শোভাযাত্রা
Published: 14th, April 2025 GMT
নারায়ণগঞ্জে ব্যাপক আয়োজনে ও উৎসব মূখর পরিবেশের মধ্যদিয়ে বরন করা হল বাংলা নববর্ষ ১৪৩২। বর্ণিল সাজে বৈশাখী শোভাযাত্রায় হরেক রঙের মুখোশ, হাতি, বাঘ, ফুল, পাখির প্রতিকৃতিগুলো ছিল নজর কাড়ার মত।
বৈশাখী শোভাযাত্রায় ছিল সমৃদ্ধির প্রতীক কালো হাতি, ঘোড়ার গাড়ি, পালকি, কৃষক সাজে হিন্দু মুসলিম খ্রিষ্ঠান বৌদ্ধ সকল ধর্মের প্রদর্শন ও শিশুদের যেমন খুশি তেমন সাজো রুপে বাংলা সংস্কৃতির বিভিন্ন প্রতিকৃতি। যার মাধ্যমে তুলে ধরা হয় বাংলার ঐতিহ্যকে।
সোমবার ( ১৪ এপ্রিল) সকাল ৯টায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে দল, মত, র্নিবিশেষে ছোট থেকে বড় সকলের উপস্থিতিতে এই বৈশাখী শোভাযাত্রাটি বেশ আনন্দঘণ পরিবেশের সৃষ্টি করে। বাঙ্গালী সাজে ও ঢোলের তালে মাতোয়ারা ছিল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহনকারী সকলেই।
শোভাযাত্রায় হাতি, ঘোড়া, পালকি, ঢেকি ও বাঙালি সংস্কৃতিক বিভিন্ন অনুষঙ্গ নিয়ে শোভাযাত্রাটি জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে গিয়ে শেষ হয়।
এ শোভাযাত্রায় অংশ নেওয়া পুরুষদের গায়ে ছিল পাঞ্জাবী ও নারীরা পরেছিলেন শাড়ি। এসময় অনেককেই লাল ও সাদা রং কে বেশ প্রাধান্য দেয়ার পাশাপশি ছিল নীল ও হলুদ রংয়ের সংমিশ্রন। রমনীদের হাত ভর্তি ছিল কাচের চুড়ি। চুলে বেলি ফুল।
শিশুরাও সেজেছে লাল, সাদার সাজে। সাধারণ পোষাকে পুরুষদের সাজও বেশ পরিপাটি ছিল। যা পুরুষদের সৌর্ন্দযকে অসাধারণ ভালা লাগা এনে দেয় রমনীদের মাঝে। বাঙ্গালীর এমন সাজ দেখার এক সুবর্ণদিন এবং পহেলা বৈশাখের হাওয়ায় গোটা নারায়ণগঞ্জ ছিল উৎসবমূখর।
এছাড়া বাংলার এই ঐতিহ্যকে বহাল রাখতে শহর ও শহরের বাইরে বসেছে বিভিন্নস্থানে লোকজ মেলা। এবং নাচে গানে মুখরিত করতে ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ব্যাপক আয়োজন।
শোভাযাত্রা শেষে জেলা প্রশাসনের প্রাঙ্গনে জেলা শিল্পকলা একাডেমীর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। এরপর সাপের খেলা, বানর খেলা, পুতুল নাচসহ বিভিন্ন দেশীয় খেলা ও ম্যাজিক শো দেখানো হয়।
এদিকে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষ্যে জেলা প্রশাসনের প্রাঙ্গণে লোকজ মেলার আয়োজন করা হয়েছে। মেলায় উদ্যোক্তারা নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন ঐতিহ্যবাহী পোশাক, পণ্য সামগ্রী নিয়ে পসরা সাজিয়েছে।
অন্যদিকে বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জ পুলিশের পাশাপাশি, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), সেনাবাহিনী এবং বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরাও তিন স্তরের বিশেষ নিরাপত্তায় নিয়োজিত ছিলেন।
বৈশাখী শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন, নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা, নারায়ণগঞ্জ স্থানীয় সরকার বিষয়ক উপ-পরিচালক ( উপ- সচিব) ড.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ইসল ম
এছাড়াও পড়ুন:
সিদ্ধিরগঞ্জে সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি খাল দখল করে চাঁদাবাজি!
সিদ্ধিরগঞ্জের হীরার্ঝিল আবাসিক এলাকায় বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর উদ্ধারকৃত ডিএনডি (ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা) খাল দখল করে দোকান বসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে কয়েকজন বাড়ির মালিকের বিরুদ্ধে। এর ফলে ডিএনডি খালটি ফের সংকুচিত হতে শুরু করেছে। পাশাপাশি তৈরি হচ্ছে জলাবদ্ধতা।
এদিকে এই এলাকাটি শিমরাইল পাম্প স্টেশনের নিকটবর্তী এলাকা হওয়ায় দোকানগুলোর কারণে ঠিকমতোন পানি সরবরাহ হতে পারছে না। তবে প্রশাসনের ভাষ্য, খুব শিগগিরই এখানে উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে।
বুধবার (৩০ জুলাই) বিকেলে নাসিক ১নং ওয়ার্ডের হীরাঝিল আবাসিক এলাকায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বালু খালপাড় দখল করে হরেক রকমের ছোট-বড় প্রায় ২৫টি দোকান বসানো হয়েছে। হাবিবুল্লাহ হবুলের মালিকানাধীন হাবিবুল্লাহ টাওয়ার থেকে শুরু করে মোক্তার হোসেন সরকারের মালিকানাধীন বিএম ভবন, সিদ্দিকুর রহমানের মালিকানাধীন মমতাজ ভিলা, নূর মোহাম্মদ টাওয়ার, নুরুল হুদা’র বাড়ির সামনে এসব স্থাপনা নির্মাণ করা হয়েছে।
এর বিনিময়ে প্রতি দোকান থেকে টাকা তুলছেন স্ব স্ব বাড়ির মালিকরা। চাঁদা তোলার বিষয়টি কয়েকজন বাড়িওয়ালা অকপটে স্বীকারও করেছেন।
এদিকে, দোকানগুলোর কারণে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নির্মিত ওয়াকওয়ে দিয়ে চলাচল করতে গিয়ে পথচারীদের চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে। পাশাপাশি হীরাঝিল এলাকাবাসীকেও ভোগান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, হীরাঝিল আবাসিক এলাকা একটি ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা। যানবাহন ও মানুষের চাপ বেশি থাকায় এই এলাকায় সবসময় যানজট লেগেই থাকে। চলাচলের সুবিধার্তে এলাকাবাসী ডিএনডি খালের পাড় দিয়ে নিজ নিজ গন্তব্যস্থলে যেতেন। কিন্তু কয়েকজন বাড়িওয়ালা এহেন কর্মকান্ডের কারণে হাজার হাজার মানুষ দুর্ভোগের মধ্যে পড়েছেন।
এসব দোকানের কারণে খালের সৌন্দর্য নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি পানি নিষ্কাশন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এসব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ এবং চাঁদাবাজি প্রশাসন বন্ধ করতে না পারলে আগামীতে ফের বন্যা হওয়ার শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। তাই এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত প্রদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এমন অভিযোগের প্রেক্ষিতে ‘কাবাব বাড়ি’ ভবনের মালিক মো. রফিক বলেন, আমার বাড়ির সামনে ডিএনডি খাল দখল করে আমি কোনো দোকান বসাই নি। আমি নিজেও চাই এখানে কোনো দোকান না বসুক। কিন্তু আমি যতটুকু শুনেছি টিএইচ তোফা নামের এক ব্যক্তি এই দোকানগুলো বসিয়েছেন। আমি অনেক চেষ্টা করেছে দোকানগুলো সরিয়ে দেওয়ার। আর এখানে দোকান বসিয়ে টাকা তোলার প্রশ্নই উঠে না।
একই অভিযোগ স্বীকার করে মমতাজ ভিলার মালিক সিদ্দিকুর রহমান বলেন, অন্যসবাই দোকান বসিয়েছে। আমি তা দেখাদেখি ২টি দোকান বসিয়েছি। এটা আমার অপরাধ হয়েছে তা আমি নিজেও বুঝি। আমি মূলত সবার দেখাদেখি দোকান বসিয়েছি।
নুরুল হুদা নামের আরেক বাড়িওয়ালা বলেন, আমি দোকান বসিয়েছি। কিন্তু ওইখান থেকে কোনো অর্থ আদায় করি না। চাইলে এ বিষয়ে তদন্ত করা হতে পারে। আর এখানে দীর্ঘদিন ধরেই দোকান ছিল।
নারায়ণগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহিনূর আলম বলেন, চাঁদাবাজির বিষয়টি আমাদের জানা নেই। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
নারায়ণগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শুভ আহমেদ বলেন, এ বিষয়ে আমি অবগত ছিলাম না। তবে অভিযোগ যেহেতু পেয়েছি তাহলে অবশ্যই ঘটনাস্থলে লোক পাঠানো হবে। ডিএনডি খালপাড় থেকে স্থাপনা সরিয়ে নেওয়ার জন্য প্রথমে আমরা একাধিকবার তাদের নোটিশ পাঠাবো।
যদি তারা কথা না শোনেন তাহলে আইন অনুযায়ী উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হবে। খাল দখলের বিরুদ্ধে আমরা সবসময় জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছি।
নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসক (ডিসি) জাহিদুল ইসলাম মিঞা বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে আমরা এরই মধ্যে নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন খাল পরিষ্কার করা শুরু করেছি। ডিএনডি খালসহ যেকোনো খাল এভাবে দখল হয়ে থাকলে দখলকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমি শিগগিরই এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নিচ্ছি।
উল্লেখ্য, ২০১৭ সালে ৮ ডিসেম্বর ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ-ডেমরা (ডিএনডি) পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা উন্নয়নে ডিএনডি প্রকল্প হাতে নেয় পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। শুরুতে প্রকল্পের বাজেট ৫৫৮ কোটি টাকা ধরা হলেও তা বাস্তবায়নে সবমোট ১৩০০ কোটি টাকা খরচ হয়।
২০২৫ সালের জুন মাসে এই প্রকল্পের কাজ শেষ করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। সেনাবাহিনীর প্রকল্প বাস্তবায়ন করাকালে তখন খালটি দখল না হলেও প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার পর পরই হীরাঝিল এলাকার কয়েকজন বাড়িওয়ালা ডিএনডি খাল দখল করে দোকান বসানো শুরু করে।