টাঙ্গাইলের ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালে নববর্ষের প্রথম প্রহর সকাল ৬টা ৩০মিনিটে মাওলানা আবু ইউসুব আলী ও জুমা খাতুন দম্পতি একটি কন্যা সন্তানের জন্ম দেন। ইউসুবের বাড়ি টাঙ্গাইল সদর উপজেলার অলোয়া তারিনী।
হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সকাল ৬টা সময় প্রসব ব্যথা নিয়ে জুমা খাতুন হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা বেগম স্বাভাবিকভাবেই কোনো অপারেশন ছাড়াই প্রসবের চেষ্টা করেন। পরে ৬টা ৩০ মিনিটে স্বাভাবিকভাবেই মায়ের কোল আলো করে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। জুমা খাতুনের তিন বছরের আরও একটি কন্যা সন্তান রয়েছে। তার নাম নিহলা।
নবজাতক শিশুর বাবা ইউসুব আলী টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শহর বাইপাস নগড়জলফই জামিয়া আশরাফিয়া দারুল উলুম মাদ্রাসার শিক্ষক ও আশেকপুর বাইতুল মামুর জামে মসজিদের ইমাম ও খতিব। তিনি হাফেজ মওলানা ও মুফতি। স্ত্রী জুমা খাতুন এসএসসি পাস। তিনি গৃহিনী। নববর্ষের দিনে কন্যা সন্তানের জন্ম হওয়াতে তিনি খুবই খুশি। তিনি মেয়েকে কোরআনের হাফেজ শিক্ষা দিয়ে খাটি মুমিন বানাতে চান।
জুমা খাতুন ছবি তুলতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, আমি খুব খুশি। বাংলা বছরের প্রথমদিন সন্তানের জন্ম হয়েছে। সন্তানকে আমি ধর্মীয় শিক্ষার পাশাপাশি উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করতে চাই। মেয়ে যেন মানুষ হয়।
তিনি আরও জানান, গর্ভবতীকালীন পুরো সময়টাই তিনি সুস্থ ছিলেন। সিরাজগঞ্জ জেলার এনায়েতপুর থানা সংলগ্ন ব্রাহ্মণ গ্রামে তার বাবার বাড়ি। সন্তান গর্ভে আসার পাঁচ মাস পর বাবার বাড়ি চলে যান। সেখানে বাড়ির সবাই তার যত্ন নিয়েছে। যেহেতু আগে তার একটি মেয়ে সন্তান রয়েছে তাই বাচ্চা পেটে থাকলে কিভাবে চলতে হবে তার নিয়ম কানুন আগেই জানা ছিল। তাছাড়া পাশেই একটি ক্লিনিকে একজন গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়ে দুইবার পরীক্ষা নিরীক্ষা করিয়েছেন। ডাক্তার সামান্য কিছু ওষুধ লিখে দিয়েছিল তাই খেয়েছেন। এপ্রিল মাসের ১৭ তারিখে ডেলিভারির তারিখ ছিল। একমাস আগেই বাবার বাড়ি থেকে স্বামীর বাড়ি টাঙ্গাইলের অলোয়া তারিনীতে চলে আসে।
পরিবারটি অত্যন্ত রক্ষণশীল। সবাই পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়েন। পর্দা করেন। একারণে শিশুটির মায়ের ছবি তুলতে বার বার নিষেধ করেছেন বাবা ইউসুব আলী। স্ত্রীর কোনো ভিডিও করতে দেননি। ইউসুব আলী মাদ্রাসায় থাকেন। সন্ধ্যার সময় জানতে পারেন স্ত্রীর প্রসব ব্যথা উঠেছে। তখনি চলে আসেন বাড়িতে। রাত দুইটা তিনটার দিকে ব্যথা একটি বেশি উঠলে চাচী ও এক ফুপু নরমাল ডেলিভারির চেষ্টা করেন। তবে ঝুঁকি নিতে চাননি পরিবারের কেউ। তাই পহেলা বৈশাখ ভোর ৫টার দিকে একটি অটোরিকশায় চড়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসেন। ৬টা সময় ভর্তি হন গাইনি বিভাগে। পরে ৬টা ৩০ মিনিটে নরমালি মায়ের কোল আলো করে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।
ইউসুব আলী বলেন, স্ট্রেচারে করে স্ত্রীকে ডেলিভারি রুমে নেওয়ার সময় খুবই উত্তেজনায় ছিলাম। আর আল্লাহর কাছে শুধু দোয়া করেছি সন্তান ও মা যেন সুস্থ থাকে। নার্স এসে যখন বললেন আপনার কন্যা সন্তান হয়েছে তখন কি যে আনন্দ বলে বোঝাতে পারব না। আমার মা রোমেছা খাতুন প্রথম তার নাতনীকে কোলে তুলে নেয়। এর পর আমি ইসলামীর বিধান মতে কন্যার ডান কানে আযান ও বাম কানে একামত দেই। বাচ্চা ও তার মা সুস্থ রয়েছে। তাকে মায়ের দুধ খাওয়ানা হচ্ছে। ওজন হয়েছে পৌনে তিন কেজি। প্রথম মেয়ের নাম আমি রেখেছিলাম। বাড়িতে নিয়ে আমি কন্যার নাম রাখব। তবে যেহেতু সাতদিনের মধ্যে নাম রাখতে হয়। তাই চিন্তা ভাবনা করে দ্বীনি ইসলামের দেওয়া একটি সুন্দর নাম রাখবো। এছাড়া সাত দিনের মধ্যে মাথার চুল ফেলে দিয়ে একটি ছাগল জবাই দিয়ে আকিকা করব। বছরের প্রথম দিন বাচ্চা হবে এটা ভাবেনি। আমি খুব খুশি হয়েছি যে পহেলা বৈশাখ জন্ম নিয়েছে। মেয়ের আর জন্ম তারিখ বলতে হবে না শুধু বলবে বছরের প্রথম দিন আমার জন্ম।
তিনি বলেন, মেয়ের মায়ের স্বাস্থ্য ভালো ছিল। ভালোভাবেই খাওয়া দাওয়া করতে পারত। তেমন কোনো আশঙ্কা ছিল না। হাসপাতালের সবাই আন্তরিক ছিল। নার্স ওয়ার্ডবয় সবাই সহযোগিতা করেছে। তবে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ থেকে কেউ নববর্ষের শুভেচ্ছা জানায়নি। এছাড়াও হাসপাতাল থেকে পহেলা বৈশাখের কোনো অনুষ্ঠান শোনা যায়নি। সমকালের পক্ষ থেকে প্রজন্ম বরণ উৎসব উপলক্ষে আমাদেরকে পহেলা বৈশাখের শুভেচ্ছা জানানো হয়েছে। একারণে সমকালের এমন উদ্যোগকে তিনি সাধুবাদ জানান।
২০১৯ সালে পারিবারিকভাবে তাদের বিয়ে ঠিক হয়। হঠাৎ করে চলে আসে করোনা মহামারি। চিন্তায় পরে যান বাড়ির সবাই বিয়ে হবে কি হবে না। ইমামতি ও মাদ্রাসায় শিক্ষকতা করে সংসার চালান। হঠাৎ করে সব বন্ধ হয়ে যায়। কি করবেন দিশেহারা হয়ে পড়েন। এদিকে বিয়েও ঠিক হয়েছে। পরে ঝুঁকি নিয়েই করোনা মহামারির মধ্যেই ২০১৯ সালের শেষের দিকে বিয়ে করেন। দুই বছর পর তাদের কোলে আসে প্রথম কন্যা সন্তান। এটি তাদের দ্বিতীয় সন্তান।
লেবার রুম থেকে প্রথমবার বাচ্চাকে কোলে তুলে নেন দাদি রোমেচা খাতুন। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমি খুব খুশি হয়েছি। পহেলা বৈশাখ নাতনির জন্ম হবে এটা ভাবতেও পারেনি।
হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স নাছিমা বেগম বলেন, প্রসব ব্যথা নিয়ে তিনি আমাদের কাছে আসেন। এখানে ভর্তি হওয়ার আধা ঘণ্টার মধ্যে চেষ্টা করার পর কন্যা সন্তানের জন্ম হয়। শিশুর পৌনে তিন কেজি ওজন হয়েছে। মা ও শিশু সুস্থ আছে। শিশুকে মায়ের বুকের দুধ খাওয়া হচ্ছে। বিকেলেই তাদের ছুটি দেওয়া হয়েছে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র প রথম বছর র প রসব
এছাড়াও পড়ুন:
ভালো ফলনের আশায় গাছকে খাওয়ান তাঁরা
চীনের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের পাহাড়ি প্রদেশ গুইঝৌতে প্রাচীনকাল থেকে ‘গেলাও’ জনগোষ্ঠীর বসবাস। ভিয়েতনামেও এই জনগোষ্ঠীর মানুষ বাস করেন। চীনে তাঁদের সংখ্যা প্রায় ৬ লাখ ৭৭ হাজার।
কৃষিনির্ভর গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা আজও প্রাচীনকালের পুরোনো এক ঐতিহ্য আগলে রেখেছেন। বছরের নির্দিষ্ট দিনে তাঁরা গাছকে খাওয়ান, যা চীনা ভাষায় ‘ওয়েই শু’ রীতি নামে পরিচিত।
এই প্রাচীন রীতি মূলত একধরনের প্রার্থনা। স্থানীয় অধিবাসীদের বিশ্বাস, এতে প্রকৃতি তুষ্ট হয়, ফসল ভালো হয়, পরিবারে শান্তি ও সমৃদ্ধি আসে। প্রতিবছর দুটি উৎসবের সময় এই অনুষ্ঠান পালন করা হয়—চীনা নববর্ষে, যা বসন্ত উৎসব নামে পরিচিত। আর গেলাও নববর্ষে, যা চান্দ্র পঞ্জিকার তৃতীয় মাসের তৃতীয় দিনে পালিত হয়।
অনুষ্ঠানের দিন সকালে আত্মীয়স্বজন ও গ্রামবাসী পাহাড়ের ঢালে জড়ো হন। তাঁরা সঙ্গে করে চাল থেকে তৈরি মদ, শূকরের মাংস, মাছ ও লাল আঠালো চাল নিয়ে আসেন। পাহাড়ে পৌঁছে প্রথমে আতশবাজি পোড়ানো হয়। এতে করে উৎসবমুখর পরিবেশের সৃষ্টি হয়।
এর মধ্যেই একটি পুরোনো ও শক্তিশালী গাছ বাছাই করা হয়। এরপর সবাই ধূপ জ্বালিয়ে নতজানু হয়ে প্রার্থনা করেন। সবশেষে মূল পর্ব ‘গাছকে খাওয়ানো’ শুরু হয়।
একজন কুঠার বা ছুরি দিয়ে গাছে তিনটি জায়গায় ছোট করে কেটে দেন। সেই ক্ষতস্থানে চাল, মাংস ও মদ ঢেলে দেওয়া হয়, যাতে গাছ তাঁদের দেওয়া ভোগ গ্রহণ করতে পারে। পরে ওই জায়গা লাল কাগজে মুড়ে দেওয়া হয়।
এ ছাড়া গাছের গোড়া ঘিরে আগাছা পরিষ্কার করা হয়, মাটি আলগা করে দেওয়া হয়। এতে নতুন জীবনের বার্তা মেলে বলে মনে করেন গেলাও জনগোষ্ঠীর সদস্যরা।
যে গাছকে খাওয়ানো হয়, সেটি যদি ফলদ হয়, তাহলে ভোগ দানকারীরা একটি আশাব্যঞ্জক শ্লোক উচ্চারণ করেন। বলেন, ‘তোমায় চাল খাওয়াই, ফল দিয়ো গুচ্ছ গুচ্ছ; তোমায় মাংস খাওয়াই, ফল দিয়ো দলা দলা।’