একগুচ্ছ ওয়াক্ফ মামলার শুনানি গতকাল বুধবার শুরু হলেও সুপ্রিম কোর্ট কোনো অন্তর্বর্তী নির্দেশ দেননি। গতকাল বৃহস্পতিবার বেলা দুইটায় এই মামলার শুনানি আবার শুরু হবে। গতকাল শুনানি চলাকালে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্নার নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের বেঞ্চ সরকারের কাছে জানতে চান, হিন্দুধর্মীয় সংগঠন বা প্রতিষ্ঠানে মুসলমানরা অংশ নিতে পারেন কি না। সংশোধিত ওয়াক্ফ আইন অনুযায়ী ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও ওয়াক্ফ বোর্ডে দুজন করে অমুসলিম সদস্য করার কথা বলা হয়েছে।

বুধবার অন্তর্বর্তী কোনো আদেশ না দিলেও প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না, বিচারপতি সঞ্জয় কুমার ও বিচারপতি কেভি বিশ্বনাথনের বেঞ্চ তিনটি বিষয়ের ওপর অন্তর্বর্তী আদেশ দেওয়ার কথা বিবেচনা করছেন বলে জানিয়েছেন। এর মধ্যে প্রথমটি হচ্ছে আদালত যে সম্পত্তিকে ইতিমধ্যে ওয়াক্ফ সম্পত্তি বলে ঘোষণা করেছেন, তা ব্যবহারকারীর হোক বা না হোক, বাতিল করা যাবে না। দ্বিতীয়টি হচ্ছে নতুন আইন মোতাবেক জেলা শাসক বিবাদগ্রস্ত সম্পত্তির চরিত্র নিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করতে পারলেও সিদ্ধান্ত কার্যকর করা যাবে না। তৃতীয়টি হচ্ছে কেন্দ্রীয় পর্যায়ে ওয়াক্ফ কাউন্সিল ও রাজ্য পর্যায়ে ওয়াক্ফ বোর্ডে পদাধিকার বলে নিয়োগ করা গেলেও অন্য সদস্যদের মুসলমান হতেই হবে।

গতকাল সওয়াল-জবাব চলাকালে দেশের বিভিন্ন অংশে ওয়াক্ফ আইনকে কেন্দ্র করে ছড়িয়ে পড়া হিংসায় বিচারপতিরা উদ্বেগ প্রকাশ করেন। প্রধান বিচারপতি সঞ্জীব খান্না বলেন, যে হিংসা চলছে, তা অত্যন্ত উদ্বেগের। এমন হওয়া উচিত নয়।

নতুন ওয়াক্ফ আইনের সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে একগুচ্ছ মামলা দাখিল করা হয়। এসব মামলাকে একত্র করে বুধবার শুনানি শুরু হয়। শুরুতেই প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, সব মামলায় সবার বক্তব্য শোনা সম্ভবপর নয়।

আবেদনকারীদের পক্ষ থেকে বিশিষ্ট আইনজীবী কপিল সিব্বাল, রাজীব ধাওয়ান, অভিষেক মনু সিংভি, সঞ্জয় হেগড়ে, হুজেফা আহমেদি, নিজাম পাশা, শাদান ফরসাত, পি উইলসন, সি ইউ সিংয়েরা নানান বিষয়ে প্রশ্ন তোলেন।

কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা। আইনের পক্ষে তিনি বলেন, ‘অনেক বিচার বিবেচনার পর সরকার এই আইন প্রণয়ন করেছে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গতক ল সদস য

এছাড়াও পড়ুন:

প্রযুক্তি কি ডিমেনশিয়া বাড়িয়ে দিচ্ছে? ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় উঠে এসেছে বিস্ময়কর তথ্য

প্রযুক্তির কল্যাণে হুটহাট বড় পরিবর্তন আসা নতুন কিছু নয়। করোনা মহামারির আগে বাসা থেকেও যে অফিস করা সম্ভব, সেটা মানতে চাইতেন না অনেকে। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে হোম অফিস হয়েছে স্বাভাবিক। একই ঘটনা ঘটেছে ডিজিটাল দুনিয়ায়। একসময় যেকোনো তথ্য খুঁজে বের করার জন্য শরণাপন্ন হতে হতো সার্চ ইঞ্জিনের; এআই সেই উত্তর সবিস্তারে দিয়ে দিচ্ছে মুহূর্তেই। ফলে প্রযুক্তিগত উন্নয়ন শুধু জীবনকে সহজতর করছে না, বাঁচিয়ে দিচ্ছে সময় ও পরিশ্রমও। কিন্তু এই বেঁচে যাওয়া সময় ও পরিশ্রম মস্তিষ্কের ওপর ঠিক কীভাবে প্রভাব ফেলছে?

যুক্তরাষ্ট্রের ইউনিভার্সিটি অব টেক্সাস ও বেলোর ইউনিভার্সিটির এক যৌথ গবেষণায় দেখা গেছে, এত দিন প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে মানব মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা কমার যে গুঞ্জন ভেসে বেড়িয়েছে, তার কোনো সত্যতা নেই। ‘নেচার হিউম্যান বিহেভিয়ার’ জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ নামে যে হাইপোথিসিস আছে, তার কোনো প্রমাণ নেই গবেষকদের কাছে। বরং পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষদের স্মার্টফোন, কম্পিউটার কিংবা ইন্টারনেট ব্যবহার তাঁদের স্বাভাবিক স্মৃতিভ্রম অনেকটা স্তিমিত করে।

ডিজিটাল ডিমেনশিয়া কী

২০১২ সালে প্রথম ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ তত্ত্ব নিয়ে হাজির হন জার্মান স্নায়ুবিজ্ঞানী ও মনোবিদ ম্যানফ্রেড স্পিৎজার। মূলত যে হারে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়ছে এবং মানুষ যান্ত্রিক পর্দার সামনে প্রতিদিনের বেশির ভাগ সময় কাটাচ্ছে, তাতে প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীলতা বাড়ছে অনেকটাই। এতে নিত্যপ্রয়োজনীয় তথ্যগুলোও মনে রাখতে ব্যর্থ হচ্ছে অনেকে। যেমন ফোন নম্বর। একসময় প্রিয়জনের ফোন নম্বর আমাদের মুখস্থ থাকত। এখন ফোন নম্বর ঠাঁই পায় মুঠোফোনের কনটাক্ট লিস্টে। ফোন নম্বর মনে রাখার চেষ্টাই করে না কেউ। আবার অনেকক্ষণ যান্ত্রিক পর্দার সামনে থাকলেও সেখান থেকে শেখার ইচ্ছা থাকে না অনেকের। চোখের সামনে যা আসছে, স্ক্রল করে চলে যাচ্ছে পরের কোনো কনটেন্টে। এতে মনোযোগ হারিয়ে যায় দ্রুত। আর প্রযুক্তির এমন অতিব্যবহার যে স্মৃতিশক্তি কমিয়ে দিচ্ছে, একেই ধরা হয় ‘ডিজিটাল ডিমেনশিয়া’ হিসেবে।

আরও পড়ুনডিজিটাল স্ক্রিন ব্যবহারের সময় ২০-২০-২০ নিয়ম মানাটা কেন জরুরি২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩গবেষণা যা বলছে

প্রায় ৪ লাখ ১১ হাজার পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের ওপর চালানো ৫৭টি ভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে যে স্মৃতিভ্রম দেখা দেয়, তার অনেকটাই হ্রাস করে প্রযুক্তির ব্যবহার। প্রযুক্তির যথাযথ ব্যবহারের ফলে স্মৃতিশক্তি কমে আসার আশঙ্কা প্রায় ৫৮ শতাংশে নেমে আসে।

স্মৃতিশক্তি কমে যাওয়া বরং আরও কিছু সূচকের (যেমন সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পারিবারিক অবস্থা) ওপর নির্ভর করে। মজার ব্যাপার হলো, নিয়মিত শারীরিক ব্যায়াম ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার থেকেও বেশি কার্যকর প্রযুক্তির ব্যবহার।

তবে এর সবকিছুই নির্ভর করছে প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারের ওপর। পঞ্চাশোর্ধ্ব ব্যক্তিরা বেশির ভাগ সময়ই অনলাইনে কাটান ইউটিউব ভিডিও অথবা ফেসবুক স্ক্রল করে। এতে তাঁদের মস্তিষ্কের ব্যবহার হয় না বললেই চলে। মস্তিষ্ক সচল রাখতে পারে এমন কনটেন্টে তাঁদের মনোযোগ সরিয়ে নিতে পারলে আনন্দ যেমন পাবেন, তেমনই ডিজিটাল দুনিয়া সম্পর্কে তাঁদের দৃষ্টিভঙ্গিও পালটে যাবে। এ ছাড়া অনলাইনের হাজারো গুজব ও উসকানি থেকে মুক্ত থাকবেন তাঁরা।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

আরও পড়ুনমাত্রাতিরিক্ত স্ক্রিনটাইম যেভাবে নিয়ন্ত্রণ করবেন০১ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সম্পর্কিত নিবন্ধ