পুঁজিবাজারের সমস্যা সমাধানে অ্যাকশন প্ল্যান দেওয়ার নির্দেশ
Published: 16th, April 2025 GMT
দীর্ঘদিন ধরে সংকটপীড়িত দেশের পুঁজিবাজারের সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে সেগুলো সমাধানের পথ বাতলে দিয়ে এক মাসের মধ্যে একটি অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।  
সমস্যায় জর্জরিত পুঁজিবাজার কেন ঘুরে দাঁড়াতেই পারছে না, তা নিয়ে অংশীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করে এই সিদ্ধান্ত দেন ড.                
      
				
বুধবার (১৬ এপ্রিল) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন ভবনের মাল্টিপারপাস হলে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির উদ্যোগে সংশ্লিষ্ট ১০টি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে সভায় বসেন তিনি।
আরো পড়ুন:
ড. আনিসুজ্জামানের সঙ্গে পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টদের বৈঠক বুধবার
আইডিএলসি ফাইন্যান্সের পর্ষদ সভার তারিখ আবারো পরিবর্তন
সভায় অংশীজনরা তাদের সমস্যাগুলো তুলে ধরেন। তাদের কথা শোনেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী। সে অনুযায়ী, সমস্যাগুলো চিহ্নিত করা এবং সেগুলোর সমাধানের উপায় তুলে ধরে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করে আগামী ১৫ মের মধ্যে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির কাছে তা জমা দিতে নির্দেশ দেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।
মতবিনিময় সভা শেষে পুঁজিবাজারের একাধিক অংশীজন রাইজিংবিডি ডটকমকে এই বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন।
বিএসইসির চেয়ারম্যান খন্দকার রাশেদ মাকসুদ, কমিশনার মু. মোহসিন চৌধুরী, মো. আলী আকবর ও ফারজানা লালারুখ এবং পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির সদস্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাইন্যান্স বিভাগের অধ্যাপক সাদেকুল ইসলাম ও কমিটির সদস্য আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের বিমা ও পুঁজিবাজার অনুবিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. সাঈদ কুতুব সভায় উপস্থিত ছিলেন।
মতবিনিময় সভায় উঠে আসা পুঁজিবাজারের প্রধান প্রধান সমস্যার মধ্যে রয়েছে- চলমান নেগেটিভ ইক্যুইটির বোঝা না কমা, ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ও স্কিম রিভিউ না করা, প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) প্রক্রিয়া বন্ধ রাখা ও সহজীকারণ না করা, সরকারি ও বহুজাতিক মৌলভিত্তি সম্পন্ন কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত না হওয়া।
আলোচনায় আসা গুরুত্বপূর্ণ আরো কয়েকটি সমস্যার মধ্যে রয়েছে- লোকসানে না থাকা সত্ত্বেও ব্রোকারেজ হাউজগুলোর বাধ্যতামূলক উৎস কর প্রদান, সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বেশি থাকায় বন্ড মার্কেটের উন্নয়ন না ঘটা, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) জনবল সংকট।
অংশীজনরা শুধু সমস্যার কথাই বলেননি, তারা সমস্যা সমাধানের কথাও তুলে ধরেন।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) চেয়ারম্যান মমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আজকের সভায় প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আমাদের কথা শুনেছেন। জানতে চেয়েছেন কী কী করা যেতে পারে। সব ইস্যু একসঙ্গে করে একটি অ্যাকশন প্ল্যান তৈরি করে জমা দিতে বলেছেন তিনি।”
মমিনুল ইসলাম বলেন, “পুঁজিবাজার ছাড়া ইকোনমি আগাতে পারবে না। বিশেষ করে এলডিসি থেকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নিত হতে গেলে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো আছে, সেগুলোকে যদি আমাদের মোকাবিলা করতে হয়, তাহলে শক্তিশালী পুঁজিবাজার ছাড়া কোনোভাবে সম্ভব নয়।”
“আমাদের দিক থেকে কিছু মেজর ইস্যু নিয়ে কথা বলেছি। বিশেষ করে আমাদের যে নেগেটিভ ইক্যুইটি আছে, সেটি প্রোভিশনিংয়ের জন্য প্রতি বছর একটু একটু করে কমিয়ে ২০৩০ সালের মধ্যে যাতে শেষ করা যায়, সেটি বলেছি। ব্রোকারেজ হাউগুলোর টার্নওভারের ওপর এআইটি কাটা হয়, সেটি রেশনালাইজ করার কথাও বলেছি। সরকারি এবং মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিগুলো পুঁজিবাজারে যাতে বাধ্যতামূলক তালিকাভুক্ত করা যায় এবং যাতে তারা এক বছরের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়; সে বিষয়ে আলোচনা হয়েছে,” বলেন তিনি।
আইপিও নিয়েও অনেক আলোচনা হয়েছে জানিয়ে মমিনুল ইসলাম বলেন, “ভালো আইপিও আনার জন্য আমাদের কী কী করতে হবে, আইপিওর সময় কমাতে হবে, আইপিওর প্রাইজ ডিসকভারিটা মার্কেটের ওপর ছেড়ে দিতে হবে; এসব নিয়ে কথা হয়েছে।”
মমিনুল ইসলাম বলেন, “স্টক এক্সচেঞ্জকে আইপিও হ্যান্ডেল করতে দিতে হবে। আমরা অনেকগুলো ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেছি। তিনি (ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী) সব শুনেছেন। তিনি সব বিষয়ই পজেটিভলি নিয়েছেন।”
সভার সিদ্ধান্তের বিষয়ে তিনি বলেন, “রিকমেন্ডেশনগুলো তিনি (ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী) ১৫ মের মধ্যে একটি অ্যাকশন প্ল্যান আকারে পুঁজিবাজার উন্নয়ন কমিটির কাছে পাঠাতে বলেছেন।”
মমিনুল ইসলাম রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, ‘এতদিন সরকারের মধ্যে পুঁজিবাজার নিয়ে যথেষ্ট ফোকাস করার মতো কোনো পারসন ছিলেন না। এখন থেকে তিনি সরকারের সঙ্গে পুঁজিবাজার নিয়ে ফোকাস করবেন। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী জানিয়েছেন, এখন থেকে ক্যাপিটাল মার্কেট সরকারের কাছে কি-প্রাইওরিটি পাবে, যার মধ্যস্থতাকারী হবেন তিনি নিজেই।”
পুঁজিবাজার সংস্কার প্রসঙ্গে কী আলোচনা হয়েছে, জানতে চাইলে তিনি বলেন, “এটি একটু ফ্রাস্ট ট্রাকে করতে হবে। অন্তবর্তী সরকার থাকা অবস্থায় সংস্কারের অধিকাংশই যাতে বাস্তবায়ন করা যায়; সংস্কার কার্যক্রম যাতে দ্রুত হয়, সেজন্য তাগিদ দিয়েছেন ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী।”
অংশীজনদের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরীর ‘খুবই ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে’ বলে মন্তব্য করেছেন ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম।
তিনি রাইজিংবিডি ডটকমকে বলেন, “আমাদের কাছে খুবই পজেটিভ মনে হয়েছে। ক্যাপিটাল মার্কেট না থাকলে তো অর্থনীতি বলতে কিছু থাকে না। ক্যাপিটাল মার্কেট ছাড়া এলডিসি গ্রাজুয়েশন সম্ভব নয়। তাই মার্কেট টিকিয়ে রাখতে প্রথমত ডিমিউচ্যুয়ালাইজেশন অ্যাক্ট ও স্কিম রিভিউ করতে হবে। এটা না হওয়ার কারণে ডিএসইকে অকার্যকর করে ফেলা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, আইপিও বাড়াতে হবে। এই দুটি এখনই করতে হবে।”
“আমরা আরো ১১টি বিষয়ের ওপর লিখিত প্রস্তাব দিয়েছি। এসব বিষয় নিয়ে আবার আলোচনা করা হবে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী ড. আনিসুজ্জামান চৌধুরী আমাদের কথাগুলো শুনেছেন। এতে আমার মনে হয়েছে, পুঁজিবাজার নিয়ে একটি বসার জায়গা তৈরি হয়েছে,” যোগ করেন সাইফুল ইসলাম।
উচ্চ পর্যায়ের এই মতবিনিময় সভায় অন্যান্যের চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ পিএলসির (সিএসই) চেয়ারম্যান একেএম হাবিবুর রহমান, সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো. আবদুল মোতালেব, সেন্ট্রাল কাউন্টারপার্টি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিসিবিএল) বাবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আ স ম খায়রুজ্জামান, ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ সহ-সভাপতি মো. সাইফুদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
অংশীজনদের মধ্যে সভায় উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মাজেদা খাতুন, অ্যাসোসিয়েশন এব আাসেট ম্যানেজম্যান্ট কোম্পানি আন্ড মিউচুয়াল ফান্ডসের সহ-সভাপতি ওয়াকার আহমেদ চৌধুরী, অ্যাসোসিয়েশন অব ক্রেডিট রেটিং এজেন্সির সভাপতি এনকেএ মবিন এফসিএ এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব পাবলিকলি লিস্টেড কোম্পানিজের (বিএপিএলসি) সভাপতি জনাব রুপালী হক।
ঢাকা/এনটি/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অ য কশন প ল য ন আম দ র ক কম ট র অ শ জন সরক র আইপ ও ড এসই সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘মাস্তান’কে ছাড়া রিয়ালের অ্যানফিল্ড–অভিযান এবং সালাহর রেকর্ডের হাতছানি
অ্যানফিল্ডে যাওয়ার ঠিক আগে হঠাৎ দুঃসংবাদ পেল রিয়াল মাদ্রিদ। লিভারপুলের বিপক্ষে আজ রাতে খেলতে পারবেন না ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো। দলের মেডিকেল বিভাগ জানিয়েছে, আর্জেন্টাইন এই মিডফিল্ডার ভুগছেন ‘স্পোর্টস হার্নিয়া’-তে। স্প্যানিশ সংবাদমাধ্যম মার্কা লিখেছে, মাস্তানতুয়োনো কবে ফিরতে পারবেন, তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে আজকের ম্যাচে তাঁর না থাকার বিষয়টি নিশ্চিত।
গতকাল অনুশীলনেও ছিলেন না মাস্তানতুয়োনো। সাধারণত প্রতিপক্ষের মাঠে গিয়ে ম্যাচের আগের দিন অনুশীলন করে রিয়াল। কিন্তু এবার কোচ জাবি আলোনসো একটু ভিন্ন পথ বেছে নিয়েছেন। অ্যানফিল্ডে সাংবাদিকদের সামনে কৌশল প্রকাশ না করে তিনি শেষ অনুশীলন সেরেছেন ক্লাবের নিজস্ব মাঠ ভালদেবাসে। মার্কার বিশ্লেষণ, প্রতিপক্ষ যেন শেষ মুহূর্তে কিছু বুঝে না ফেলে, সে জন্যই আলোনসোর এ সিদ্ধান্ত।
রিয়ালের বর্তমান ফর্ম অবশ্য কোনোভাবেই লুকানো যাচ্ছে না। লা লিগায় গত পরশু রাতে ভ্যালেন্সিয়াকে ৪-০ গোলে উড়িয়ে দিয়েছে তারা। এ মৌসুমে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৪ ম্যাচে এটি তাদের ১৩তম জয়। একমাত্র হারের স্বাদ লিগে। ১২৬ বছরের ইতিহাসে রিয়ালের এর চেয়ে ভালো সূচনা হয়েছে মাত্র দুবার, সর্বশেষ ১৯৬১-৬২ মৌসুমে।