জেলায় জেলায় অবরোধ, ট্রেনের সূচি এলোমেলো
Published: 17th, April 2025 GMT
পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক ও রেলপথ অবরোধে রাজধানীসহ সারাদেশে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে যান ও ট্রেন আটকে তারা বিক্ষোভ করেন। এতে লন্ডভন্ড হয় ট্রেনের শিডিউল।
গতকাল রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল। কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আবার কোনো এলাকায় শহরের মূল কেন্দ্রস্থল অবরোধ করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে।
হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অনেক সড়ক-মহাসড়কে যানজটে দুর্ভোগ হয়েছে। কিছু এলাকায় বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।
ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা, রাজশাহী ও দিনাজপুরে রেলপথ অবরোধ করা হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে খুলনা রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা খুলনা-চিলাহাটি রুটের রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন নগরের বয়রা জংশন এলাকায় আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে খুলনা স্টেশন থেকে খুলনা-ঢাকা পথের চিত্রা, খুলনা-পার্বতীপুর পথের রকেট ও খুলনা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পথের মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে যায়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।
দিনাজপুরে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও রাজশাহীমুখী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস আটকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল যান চলাচল। রাজশাহীর তিনটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত রাজশাহীর নগরের ভদ্রা এলাকায় রেলপথ অবরোধের কারণে পাঁচটি ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যায়নি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একাংশ ভদ্রা মোড়ে সড়কে বসে পড়ে। আরেকটি অংশ রেললাইনে আগুন দেয়।
সরেজমিন দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী নন্দনপুরে জড়ো হন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিলে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় সেনাসদস্যরা বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান এবং হুড়াহুড়ি করতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সালেহ আকরাম বলেন, পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল যান চলাচল। এ ছাড়া গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণঞ্জ-ঢাকা সড়ক বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়েছে।
সিলেটে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চণ্ডীপুল এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে দুপুর ১টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান। পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এ ছাড়া যশোরে শহরের মণিহার চৌরাস্তা এলাকা অবরোধ করে রাখায় অন্যান্য জেলার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে বাস চলাচল। এদিকে চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটে অবস্থান নিয়ে প্রায় দু্ই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা।
বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের মাসকান্দা এলাকায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।
এর আগে শিক্ষার্থীরা ‘যাদের হাতে স্ক্রু ড্রাইভার, তাদের হাতে চক-ডাস্টার মানায় না’, ‘মামা থেকে মাস্টার, মামা বাড়ির আবদার’, ‘১১৩-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আসো মামা খেলা হবে’, ‘ক্রাফট মামা হঠাও, পলিটেকনিক শিক্ষা বাঁচাও’, ‘তুমি কে, আমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন।
বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শহরের বনানী এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বসে পড়েন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।
পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের বড় চৌরাস্তায় অবস্থান নেন। এতে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
চাঁপাইনবাবগঞ্জে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু) এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ঘটনায় সেতুর দুই পাড়ে আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।
বরিশালের বিভিন্ন পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে নগরের নথুল্লাবাদে জড়ো হন। তারা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বরিশাল-ঢাকা, বরিশাল-খুলনা, বরিশাল-কুয়াকাটাসহ দূরপাল্লা ও অন্যান্য পথের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য যানবাহন আটকে পড়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এতে শহরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।
নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নওগাঁ-বগুড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নওগাঁ-বগুড়া রুটসহ শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নওগাঁ-বগুড়া রুটে চলাচল করা দূরপাল্লার কোচ এবং আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করা বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে পড়ে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা সকালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু) এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন।
(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিরা)
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র লপথ অবর অবস থ ন ন দ প র ১২ট র ধ কর ন বর শ ল এল ক য় এ সময় য নজট নগর র শহর র গতক ল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানে প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য হটলাইন চালু
তেহরানের বাংলাদেশ দূতাবাসে বাংলাদেশি নাগরিকদের জন্য হটলাইন চালু করা হয়েছে।
রোববার তেহরান দূতাবাস এক বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বর্তমান উদ্ভূত পরিস্থিতিতে জরুরি প্রয়োজনে যোগাযোগের জন্য দূতাবাস ইমার্জেন্সি হটলাইন স্থাপন করেছে। ইরানে বসবাসরত সব বাংলাদেশি নাগরিকদের নিম্নোক্ত মোবাইলফোন নম্বরগুলোতে হোয়াটসঅ্যাপসহ সরাসরি যোগাযোগ করতে অনুরোধ করা হয়েছে।
+ ৯৮৯৯০৮৫৭৭৩৬৮ ও +৯৮৯১২২০৬৫৭৪৫।