পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ, সড়ক ও রেলপথ অবরোধে রাজধানীসহ সারাদেশে চরম দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে। গতকাল বুধবার দেশের বিভিন্ন স্থানে যান ও ট্রেন আটকে তারা বিক্ষোভ করেন। এতে লন্ডভন্ড হয় ট্রেনের শিডিউল।

গতকাল রাজশাহীর সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ ছিল। কুমিল্লায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ী এলাকায় বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়। মহাসড়কের উভয়মুখী লেনে অন্তত ২০ কিলোমিটার এলাকায় যানজটে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। আবার কোনো এলাকায় শহরের মূল কেন্দ্রস্থল অবরোধ করায় ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকতে হয়েছে। 

হাইওয়ে পুলিশের প্রধান দেলোয়ার হোসেন মিঞা সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের কর্মসূচিতে অনেক সড়ক-মহাসড়কে যানজটে দুর্ভোগ হয়েছে। কিছু এলাকায় বিকল্প পথে যানবাহন চলাচলের ব্যবস্থা করা হয়।  

ভুক্তভোগী ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, খুলনা, রাজশাহী ও দিনাজপুরে রেলপথ অবরোধ করা হয়। সকাল সোয়া ৯টার দিকে খুলনা রেলস্টেশন থেকে ছেড়ে আসা খুলনা-চিলাহাটি রুটের রূপসা এক্সপ্রেস ট্রেন নগরের বয়রা জংশন এলাকায় আটকে দেন শিক্ষার্থীরা। এ কারণে খুলনা স্টেশন থেকে খুলনা-ঢাকা পথের চিত্রা, খুলনা-পার্বতীপুর পথের রকেট ও খুলনা-চাঁপাইনবাবগঞ্জ পথের মহানন্দা এক্সপ্রেস ট্রেন আটকে যায়। পরে দুপুর সাড়ে ১২টা দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ তুলে নেন।

দিনাজপুরে ঢাকাগামী দ্রুতযান এক্সপ্রেস, পঞ্চগড় এক্সপ্রেস ও রাজশাহীমুখী বাংলাবান্ধা এক্সপ্রেস আটকে দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া দিনাজপুর-গোবিন্দগঞ্জ মহাসড়কে বিকেল ৩টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল যান চলাচল। রাজশাহীর তিনটি কারিগরি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা গতকাল দ্বিতীয় দিনের মতো সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। দুপুর ১২টা থেকে বিকেল পৌনে ৪টা পর্যন্ত রাজশাহীর নগরের ভদ্রা এলাকায়  রেলপথ অবরোধের কারণে পাঁচটি ট্রেন সময়মতো ছেড়ে যায়নি। বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের একাংশ ভদ্রা মোড়ে সড়কে বসে পড়ে। আরেকটি অংশ রেললাইনে আগুন দেয়।   

সরেজমিন দেখা গেছে, বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী নন্দনপুরে জড়ো হন। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। পুলিশ ও জেলা প্রশাসনের লোকজন ঘটনাস্থলে গিয়ে শিক্ষার্থীদের অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ করেন। এ সময় ‘ভুয়া ভুয়া’ স্লোগান দিলে পরিস্থিতি কিছুটা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সেনাবাহিনীর সদস্যরা ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসে। এ সময় সেনাসদস্যরা বেশ কয়েকটি ফাঁকা গুলি ছোড়েন। এতে শিক্ষার্থীরা মহাসড়ক থেকে সরে যান এবং হুড়াহুড়ি করতে গিয়ে কয়েকজন আহত হন। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী সালেহ আকরাম বলেন, পুলিশ লাঠিচার্জ করলে ১০-১২ জন আহত হয়েছেন। 

এদিকে গোপালগঞ্জে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক অবরোধ করা হয়। এতে দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল যান চলাচল। এ ছাড়া গতকাল বেলা সাড়ে ১১টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত মুন্সীগঞ্জ-নারায়ণঞ্জ-ঢাকা সড়ক বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। এতে ষষ্ঠ বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর উভয় পাশে শত শত গাড়ি আটকা পড়েছে। 

সিলেটে পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা দুপুর ১২টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের চণ্ডীপুল এলাকায় সড়ক অবরোধ করেন। এতে ওই মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। পরে দুপুর ১টার দিকে তারা সড়ক থেকে সরে যান। পরে মহাসড়কে যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এ ছাড়া যশোরে শহরের মণিহার চৌরাস্তা এলাকা অবরোধ করে রাখায় অন্যান্য জেলার সঙ্গে কয়েক ঘণ্টা বন্ধ থাকে বাস চলাচল। এদিকে চট্টগ্রাম নগরের দুই নম্বর গেটে অবস্থান নিয়ে প্রায় দু্ই ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ করে দেন শিক্ষার্থীরা। 

বেলা সাড়ে ১১টায় ময়মনসিংহের মাসকান্দা এলাকায় পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় মহাসড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে দুর্ভোগে পড়েন সাধারণ মানুষ। এতে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে ১০ কিলোমিটার যানজট তৈরি হয়। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের কর্মকর্তারা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন। বিকেল ৪টার দিকে শিক্ষার্থীরা অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন।

এর আগে শিক্ষার্থীরা ‘যাদের হাতে স্ক্রু ড্রাইভার, তাদের হাতে চক-ডাস্টার মানায় না’, ‘মামা থেকে মাস্টার, মামা বাড়ির আবদার’, ‘১১৩-এর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘আসো মামা খেলা হবে’, ‘ক্রাফট মামা হঠাও, পলিটেকনিক শিক্ষা বাঁচাও’, ‘তুমি কে, আমি কে, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার’, ‘জ্বালোরে জ্বালো, আগুন জ্বালো’ প্রভৃতি স্লোগান দেন। 

বগুড়া পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা বেলা সাড়ে ১১টা থেকে শহরের বনানী এলাকায় ঢাকা-বগুড়া মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। শিক্ষার্থীরা সড়কে আগুন জ্বালিয়ে বসে পড়েন এবং বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। এতে মহাসড়কে তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়।

পটুয়াখালী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা গতকাল বেলা ১১টার দিকে শহরের বড় চৌরাস্তায় অবস্থান নেন। এতে কুয়াকাটা-ঢাকা মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। 

চাঁপাইনবাবগঞ্জে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা বেলা ১১টার দিকে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু) এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ ঘটনায় সেতুর দুই পাড়ে আটকা পড়ে অনেক যানবাহন। প্রায় দুই ঘণ্টা পর দুপুর ১টার দিকে সড়ক অবরোধ কর্মসূচি প্রত্যাহার করেন শিক্ষার্থীরা।

বরিশালের বিভিন্ন পলিটেকনিক কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে দুপুর ১২টার দিকে নগরের নথুল্লাবাদে জড়ো হন। তারা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনালসংলগ্ন ঢাকা-বরিশাল মহাসড়ক অবরোধ করেন। এতে বরিশাল-ঢাকা, বরিশাল-খুলনা, বরিশাল-কুয়াকাটাসহ দূরপাল্লা ও অন্যান্য পথের যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। অসংখ্য যানবাহন আটকে পড়ায় যাত্রীরা দুর্ভোগে পড়েন। এতে শহরজুড়ে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হয়।

নওগাঁ পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের দুই শতাধিক শিক্ষার্থী শহরের ঢাকা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নওগাঁ-বগুড়া সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ শুরু করেন। এ সময় নওগাঁ-বগুড়া রুটসহ শহরের প্রধান সড়কে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। নওগাঁ-বগুড়া রুটে চলাচল করা দূরপাল্লার কোচ এবং আন্তঃজেলা রুটে চলাচল করা বাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশা আটকে পড়ে। এ ঘটনায় শহরজুড়ে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়। চাঁপাইনবাবগঞ্জে পলিটেকনিক শিক্ষার্থীরা সকালে বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (মহানন্দা সেতু) এলাকায় অবস্থান নিয়ে বিক্ষোভ শুরু করেন। 

(প্রতিবেদনে তথ্য দিয়ে সহায়তা করেছেন বিভিন্ন ব্যুরো ও জেলা প্রতিনিধিরা)  

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র লপথ অবর অবস থ ন ন দ প র ১২ট র ধ কর ন বর শ ল এল ক য় এ সময় য নজট নগর র শহর র গতক ল

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ