ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটে বেশি ফোকাস থাকে সুপার লিগে। প্রতিটি ম্যাচই শিরোপার রেসে গুরুত্ব বহন করে। ফলে দলগুলোর মধ্যে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আকাঙ্ক্ষা থেকে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয় ম্যাচে। এই লড়াই খুবই ভালো হতে পারত জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা খেললে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থাকায় ১৫ ক্রিকেটার ক্যাম্পে চলে গেছেন। তাদের ছাড়াই আজ মাঠে গড়াবে ডিপিএলের সুপার লিগ।
নাজমুল হোসেন শান্তরা চলে যাওয়ায় দলগুলোতে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছিল, নানাভাবে তা পূরণও হয়ে গেছে। মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব যেমন সুপার লিগের জন্য দলে টেনেছে মুস্তাফিজুর রহমানকে। বাঁহাতি এ পেসার লিগ পর্বে খেলেননি। সম্মানী কম দিতে চাওয়ায় খেলতে রাজি হননি তিনি। জাতীয় দলের পাকিস্তান সফরের আগে মুস্তাফিজের সুপার লিগ খেলা ভালো হয়েছে। তাঁকে দিয়ে তাসকিন আহমেদের জায়গা পূরণ করতে পারবে সাদাকালো শিবির।
মোহামেডান খেলবে লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জের বিপক্ষে মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে। লিগ টেবিলে ১৮ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে সাদাকালো দল জয় দিয়ে শুরু করতে চায়। ক্লাব কর্মকর্তারা আশা করছেন, আবাহনীর বিপক্ষে শৃঙ্খলা ভঙ্গের জন্য দুই ম্যাচ নিষিদ্ধ হওয়া তাওহীদ হৃদয়কে সুপার লিগে খেলার সুযোগ দেওয়া হবে। তাঁকে না পেলে মোহামেডানের নেতৃত্বে থাকবেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। হৃদয় না খেললেও ব্যাটিং অর্ডারে খুব যে সমস্যা হবে তা না। নিয়ম মানা হলে হৃদয়ের খেলার সুযোগ নেই। কারণ, সিসিডিএম মোহামেডান অধিনায়কের দুই ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার চিঠি ইস্যু করেছে। সুপার লিগের জন্য নাবিল সামাদ, ফরহাদ হোসেন আর তৌফিক খান তুষারকে দলে নিয়েছে। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ খুব বেশি তারকা খেলোয়াড়কে জাতীয় দলের জন্য ছাড়তে হয়নি।
জাতীয় দলের জন্য আবাহনী অনেকগুলো তারকা ক্রিকেটার হারিয়েছে। নাজমুল হোসেন শান্ত, মুমিনুল হক, নাহিদ রানাকে পাচ্ছে না তারা। সীমাবদ্ধতার মাঝেও আবাহনী শক্তিশালী। কোচ হান্নান সরকারের আশা, সামর্থ্যের মধ্যে ভালো খেলবে তাঁর দল। বিকেএসপির ৩ নম্বর মাঠে অগ্রণী ব্যাংক ক্রিকেট ক্লাবের বিপক্ষে আবাহনীর ম্যাচ। তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষ পেয়েছে সুপার লিগের প্রথম ম্যাচে। আরেক ম্যাচে গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের প্রতিপক্ষ গুলশান ক্রিকেট ক্লাব। তারুণ্যনির্ভর গুলশান ক্লাব লিগে ভালো খেলেছে। বড় দলের বিপক্ষে ম্যাচ জিতেছে তারা। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সের জন্য চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেবে খালেদ মাহমুদের দল।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড প এল জ ত য় দল র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না
নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় ছাড়া আর্থিক খাতের সংস্কার টেকসই হবে না। এ জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) নিয়মিত সভা করে বিভিন্ন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। দীর্ঘমেয়াদি পুঁজির জোগান ও ব্যাংকের মূলধন কীভাবে বাড়ানো যায়, সে বিষয়ে রূপরেখা তৈরি করে বাস্তবায়ন করতে হবে। মূলধন জোগান দেওয়া ছাড়া শুধু সংকটে পড়া ব্যাংক নয়, ভালো ব্যাংকগুলোকেও ভুগতে হতে পারে।
‘বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাতে আস্থা পুনরুদ্ধার: মূলধন এখন কেন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ’ শীর্ষক এক গোলটেবিল আলোচনায় এমন অভিমত উঠে আসে। পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশ আজ সোমবার রাজধানীর একটি হোটেলে এই গোলটেবিল আলোচনার আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী, ব্যাংকার, পুঁজিবাজারের অংশীজনেরা উপস্থিত ছিলেন। আলোচনা সঞ্চালনা করেন পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান এম মাসরুর রিয়াজ।
বক্তারা বলেন, ব্যাংকে পর্যাপ্ত মূলধন হলো আর্থিক স্থিতিশীলতার ভিত্তি, যা আমানতকারীদের সুরক্ষা দেয়, তারল্য বজায় রাখে এবং বিনিয়োগকারীদের আস্থা টিকিয়ে রাখে।
এম মাসরুর রিয়াজ বলেন, ‘আমাদের জাতীয় বিনিয়োগ কৌশল নেই। ফলে বিনিয়োগ বাড়াতে যেসব বাধা রয়েছে, সেগুলোর সমাধান হচ্ছে না। বিনিয়োগ বাড়াতে নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোও বিভিন্ন বাধা তৈরি করে রেখেছে। এসব দূর করা জরুরি। ব্যাংক থেকে দীর্ঘমেয়াদি বিনিয়োগ বন্ধ করে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলতে হবে। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আন্তর্জাতিক চর্চা অনুযায়ী নতুন পথের সন্ধান করতে হবে।
মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের (এমটিবি) ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান বলেন, আর্থিক স্থিতিশীলতা ও আস্থা পুনরুদ্ধারের জন্য মূলধন বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দুর্বল পরিচালন ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের কারণে ব্যাংক খাতে ঝুঁকি বেড়ে গেছে। গত বছরের ৫ আগস্টের পর প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসছে। আগে যে ভুল হয়েছে, তা শোধরাতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় খুবই জরুরি। তবে সব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
প্রাইম ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) হাসান ও. রশিদ বলেন, ব্যাংকের শেয়ারধারণে ২ শতাংশ কোনো ইস্যু নয়। সমস্যা হলো সুশাসন ছিল না। একটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদে এক পরিবার থেকে একজনের বেশি পরিচালক না দিলেই হয়। খেলাপি ঋণ আদায়ে আইনি কাঠামো শক্তিশালী করা দরকার। ব্যাংকের মূলধন বাড়াতে আর বন্ড নয়, শেয়ারবাজার থেকে টাকা তুলতে হবে। এ জন্য নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোকে এক টেবিলে বসে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এসেছে।
আল–আরাফাহ ইসলামী ব্যাংকের স্বতন্ত্র পরিচালক আবদুল ওয়াদুদ বলেন, নিয়ন্ত্রণ সংস্থাগুলোর মধ্যে যে শীতল যুদ্ধ চলে, তার অবসান হওয়া দরকার। এনআই অ্যাক্টে মামলা হলে শুনানির তারিখ পেতে এক বছর পর্যন্ত সময় লেগে যাচ্ছে। এতে খেলাপি ঋণ আদায়ে সমস্যা হচ্ছে। ব্যাংকের মূলধনে বাড়াতে দেশের পাশাপাশি বিদেশি তহবিলের দিকেও নজর দিতে হবে। বিদেশ থেকে এখনো কম খরচে তহবিল পাওয়া সম্ভব। এ জন্য সরকারকে ভূমিকা রাখতে হবে।
সিটি ব্যাংকের অতিরিক্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এএমডি) মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বলেন, ‘আগে অনেক ভালো নিয়মকানুন ছিল। আমরা ধীরে ধীরে তা থেকে সরে এসেছি। সুদের হারে ৬/৯–এর মতো তত্ত্ব চালু করে আমরা সারা বিশ্বকে শিখিয়েছি। এর প্রতিদান এখন আমরা পাচ্ছি। এ জন্য আন্তর্জাতিক চর্চা মেনে চলতে হবে। যেসব ব্যাংকে মূলধন জোগান দিয়েও ঠিক করা যাবে না, সেগুলোতে টাকা ঢালা ঠিক হবে না। যেসব ব্যাংক ঠিক হওয়া সম্ভব সেগুলোর এবং ভালো ব্যাংকগুলোর মূলধন বাড়াতে হবে।’ নিয়ন্ত্রক সংস্থার বাধার কারণ দেশে নতুন আর্থিক পণ্য চালু করা যায় না বলে জানান তিনি।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ডিবিএ) সভাপতি সাইফুল ইসলাম বলেন, মূলধন বাড়াতে সরকারের গ্যারান্টি–নির্ভর বন্ড চালু করতে হবে। তবে দেশের মানুষের বন্ডে বিনিয়োগের অভিজ্ঞতা ভালো না। ১৯৯৫ সালে চালু হওয়া বন্ডের টাকা এখনো ফেরত পাওয়া যায়নি। ব্যাংকগুলোর বন্ড এখন ক্লাব নির্ভর হয়ে গেছে। এক ব্যাংকের বন্ড অন্য ব্যাংক কিনছে। বন্ডে বিনিয়োগে ৩০ শতাংশ উদ্যোক্তাদের কিনতে বলা হয়েছে, এর মাধ্যমে তাদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
হোদা ভাসি চৌধুরী অ্যান্ড কোম্পানির সিনিয়র পার্টনার এ এফ নেছারউদ্দিন বলেন, ব্যাংক খাতে এই দুরবস্থার জন্য প্রধানত দায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাংক একীভূতকরণই যথেষ্ট নয়, বরং দীর্ঘমেয়াদে টেকসই হওয়াটা নিশ্চিত করতে সময়োপযোগী সংস্কার, স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রকাশ, স্বতন্ত্র মূল্যায়ন এবং একটি বিশ্বাসযোগ্য মূলধন পুনর্গঠন কাঠামো দরকার।
সৈয়দ ইশতিয়াক আহমেদ অ্যান্ড অ্যাসোসিয়েটসের ব্যবস্থাপনা অংশীদার সৈয়দ আফজাল হাসান উদ্দিন বলেন, ধীর আইনি প্রক্রিয়া বিনিয়োগকারীদের আস্থা ক্ষুণ্ন করছে। খেলাপি ঋণ পুনরুদ্ধার এবং বাংলাদেশের আর্থিক ব্যবস্থায় বিনিয়োগকারীদের শক্তিশালী আস্থা নিশ্চিত করার জন্য কার্যকরী বাণিজ্যিক আদালত দরকার। যারা অর্থ তছরুপ করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দেওয়ানি মামলা দেওয়া হচ্ছে। অথচ তাদের বিরুদ্ধে অর্থ পাচার ও খেলাপির মামলা দিয়ে শেয়ার বাজেয়াপ্ত করলে কিছুটা ফলাফল পাওয়া যেত।